in

সাশ্রয়ী বা ন্যায্য মূল্যে কেনাকাটার অব্যর্থ উপায়

ন্যায্য-দামে-কেনাকাটা-করার-উপায়

আজকাল বাজারের যে পরিস্থিতি, এতে সাশ্রয়ী মূল্যে কেনাকাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে, বাজারের পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, কিছু ব্যবসায়ী সবসময় কম দামি জিনিসগুলো দ্বিগুনেরও অধিক দামে বিক্রি করে থাকে।

যেমন ধরেন, ৫০০ টাকার জিনিস ২০০০ টাকায়! শুনে চমকে গেলেন? চমকাবেন আরও বেশি যখন ৫০০ টাকা সমমূল্যের পণ্যটি সত্যিকার অর্থেই বিক্রেতারা বানিয়ে ফেলেন ২০০০ টাকা। মার্কেটের অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে এই অবস্থা আর বদলাবেনা। তবে দামাদামির ক্ষেত্রে আপনাকে হতে হবে ব্যবসায়ীর চেয়ে আরও বেশি চতুর। তবেই আপনি সাশ্রয়ী মূল্যে জিনিস কিনতে পারবেন।

বড় শোরুম গুলো ব্যতীত দরদামের ভূমিকা সবখানেই থাকবে। দরদামের হ্যাপা থেকে বাঁচতে বড় শোরুমে গেলেও একইভাবে ভ্যাট সহ নানানরকম কারণ দেখিয়ে হাতানো হয় মোটা অংকের টাকা। তাহলে ২০০০ টাকার জিনিস ৫০০ টাকায় দরদাম করে কেনাই বরং বেশি ভালো।

মূলত প্রতীকী অর্থে আমরা আপনাদেরকে ২০০০ টাকার জিনিস ৫০০ টাকায় অর্থাৎ ন্যায্য মূল্যে কী করে পেতে হয় তা জানাবো। এর একমাত্র উপায় দরদাম করা আর তার আগে সঠিক দোকান বেছে নেয়া। শুধু বড় শোরুম দেখলেই চলবেনা। লোকাল মার্কেট ও পাবলিক শপিং মলগুলো ঘুরে দেখুন।

চটজলদি ট্রিক্স, সাশ্রয়ী/ন্যায্য মূল্যে হবে না জিনিস মিস

বিক্রেতার সাথে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ

প্রথমেই বিক্রেতা আপনাকে বলে বসবেন আকাশচুম্বী একটা দাম। সে দামে আদৌ ওই পন্য কতটি কেনা যাবে তার ঠিক নেই। দোকানদাররা ক্রেতার শরীরি ভাষা থেকে শুরু করে আত্মবিশ্বাস, প্রত্যেকটা জিনিস আত্মস্থ করে ক্ষণিকের মধ্যে একটা দাম বলে বসে। এটা দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ফল। এই অভিজ্ঞতাকে টক্কর দিয়ে যদি দু হাজার টাকার জিনিস পাঁচশ টাকায় কিনতে চান তাহলে প্রথমেই আপনার থাকতে হবে নিজের বলা দামের উপর আত্মবিশ্বাস। বলার ধরন ও শরীরি ভাষা দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে আপনিই ঠিক। বিক্রেতার সাথে মনস্তাত্ত্বিক প্রথম যুদ্ধ জিততে পারলে বাকিটা তুলনামূলক সহজ।

আসেন ভাই, নিয়ে যান। আরে শুনবেন তো ভাই, জিনিসটা আপনাকে দিতে চাই। চেনা চেনা লাগছে কথাগুলো? কখন হয় বলুন তো? যখন আপনি হাঁটা ধরেন যে আর নেবেনই না ওই দোকান থেকে। বিক্রেতা মরিয়া হয়ে উঠে বোঝাপড়া করতে চায়। এটাই মোক্ষম সুযোগ ২০০০ টাকার জিনিস ৫০০ টাকায় নিজের করে নেয়ার।

পুরনো কাস্টমার হওয়ার সুযোগ কাজে লাগানো

পুরোনো ক্রেতাদের প্রতি সম্মান দেখানো দোকানদারদের একটা বড়সড় সাইকোলজিকাল দূর্বলতা। পুরাতন কাস্টমার ধরে রাখলে তাদের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যও বজায় থাকলো। কারণ কাস্টমাররা রেফারেন্স হিসাবে কাজ করে। একজন কাস্টমার কোনো দোকান থেকে ভালো সার্ভিস পেলে সেটা পরিচিতজনদের জানান। বিক্রেতারা এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না। আর আপনাকেও ঠিক এটিই কাজে লাগাতে হবে। যে দোকানে যাবেন, বুঝিয়ে দেবেন আগেও বেশ কয়েকবার কেনাকাটা হয়েছে এখান থেকে! ব্যস, আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন ৫০০ টাকার পথে।

একাধিক পণ্য একসাথে কেনার সুবিধা

একটি দোকান থেকেই যদি ৩-৪ ধরনের বা তার বেশি পণ্য কেনেন আপনার জন্য ছাড় নেয়া সহজ। এই সুযোগ কাজে লাগান। বিক্রেতার ভাবতে বাধ্য করুন যে আপনি এতগুলো পণ্য নিচ্ছেন তাই ছাড় দিলে তাদের খুব বেশি ক্ষতি নেই! অবশ্যই ভালো ব্যবহার করবেন তাদের সাথে, তারাও মানুষ।

খুব পছন্দ হয়েছে, বিক্রেতা এটা টের পেলেই বিপদ!

২০০০ টাকার এত সুন্দর জিনিসটা ক্রেতার খুবই পছন্দ হয়ে গিয়েছে। আর ঘুণাক্ষরে তা টের পেয়েছেন বিক্রেতা। তাহলেই শেষ! সে পণ্যের দাম আর কমনো যাবে না নিশ্চিত থাকুন। পছন্দ-অপছন্দ খোলসা করতে যাবেন না। ৫০০ টাকায় নিতে হলে প্রথম কর্তব্য হলো বিক্রেতাকে আপনার মনের খবর বুঝতে না দেয়া।

দরকষাকষি বুদ্ধিমত্তার খেলা

দরাদরি বুদ্ধিমত্তার খেলা। বিক্রেতা এখানে প্রতিপক্ষ। আর দরাদরির খেলার নিয়ম কী জানেন? বুদ্ধিমত্তা প্রকাশ করে দেয়া। আপনি যে একই ধরনের পণ্য অনেকবার কিনেছেন এবং আপনার পরিচিত জনেরাও ২০০০ টাকার বদলে মাত্র ৫০০ টাকায় একই জিনিস পেয়েছেন এটা বুঝিয়ে দিতে হবে। বাজারদর সম্পর্কে ক্রেতার সঠিক ধারণা আছে এবং সে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তা বিক্রেতার মনে প্রতিষ্ঠা পেলে আপনাআপনি তার মনে দামাদামির থেকে স্বল্প লাভে হলেও জিনিসটা বিক্রি করার ঝোঁক বাড়বে। পাছে অন্য দোকান থেকে কিনে ফেলেন!

আসেন ভাই, আর একটু বাড়ান, নিয়ে যান!

আসেন ভাই, নিয়ে যান। আরে শুনবেন তো ভাই, জিনিসটা আপনাকে দিতে চাই। চেনা চেনা লাগছে কথাগুলো? কখন হয় বলুন তো? যখন আপনি হাঁটা ধরেন যে আর নেবেনই না ওই দোকান থেকে। বিক্রেতা মরিয়া হয়ে উঠে বোঝাপড়া করতে চায়। এটাই মোক্ষম সুযোগ ২০০০ টাকার জিনিস ৫০০ টাকায় নিজের করে নেয়ার।

এমন অবস্থা তৈরি করতে হবে যাতে বিক্রেতাই আগ বাড়িয়ে চায় কম দামে পণ্যটি দিতে। মাথায় রাখতে হবে, তারও কিন্তু বিক্রি করা প্রয়োজন। তার প্রয়োজনীয়তার জায়গাটা যখন অনুভব করাবেন এমনিই তার বিক্রি করতে হবে। দেখবেন বিভিন্ন অনলাইন পেজ স্টক ক্লিয়ারেন্স সেল দেয়। বেশ ছাড় দিয়ে এই পণ্যগুলো সেল দেয়া হয়। কারণ কী? কারণ স্টকে রেখে দিলে মেয়াদ গিয়ে টাকাগুলো জলে যাবে যেহেতু চাহিদা কম। তাই ছাড় দিয়ে যদি কিছুটা উশুল হয় সেটা অন্য খাতে ইনভেস্ট করে বাড়ানো যেতে পারে। বিক্রেতার মধ্যে এই মানসিকতা তৈরি করে দিতে পারলে আপনার জয় সুনিশ্চিত!

দামাদামিতে কাজ হচ্ছেনা! শেষ পেরেক এটা

দামাদামি করে যখন কোনভাবেই কাজ হবেনা তখন সবশেষ একটা পেরেক বসিয়ে দিয়ে দেখা যেতে পারে। একেবারেই বিক্রেতা রাজি না আর আপনারও ওই পণ্যই পছন্দ, কী করবেন? খুব সহজ! খানিকটা অন্যরকম দেখালেও আপনি যে দামে চাচ্ছেন সে দাম বিক্রেতার হাতে ধরিয়ে দিন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছোট্ট এই ট্রিক্সটি অনেক সময়ই কাজে লাগে। নূন্যতম লাভ থাকলে বিক্রেতা আর চক্ষুলজ্জার খাতিরে উচ্চবাচ্য করে না।

দামাদামি আমরা নিজের স্বার্থেই করি। তবে খেয়াল রাখব ২০০০ টাকার জিনিস ৫০০ টাকায় কিনলেও আমরা যেন কাওকে অসম্মান না করি। হ্যাপি শপিং!

What do you think?

Written by নুসরাত জাহান

পেশায় একজন নার্স হলেও ইসলামিক বিষয় নিয়ে পড়তে ও লিখতে ভালো লাগে। আমার লেখা থেকে যদি কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় তবেই আমার প্রশান্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Laptop Power Bank Buy in Bangladesh

ল্যাপটপেরও পাওয়ার ব্যাংক হয়!

shopping-list-Bangladesh

শপিং লিস্ট করার আগে যে জিনিসগুলো বিবেচনা করা জরুরী