in

হিট ওয়েব কি? হিট ওয়েভ থেকে বাঁচার উপায়

হিট ওয়েব

চৈত্র শেষ হতে না হতেই গরমে (হিট ওয়েব) অতীষ্ট হয়ে পড়েছে দেশবাসী। ইতোমধ্যেই চুয়াডাঙ্গায় ৪০ ডিগ্রির উপর তাপমাত্রা বেড়েছে। ঢাকা সহ সারা দেশের উপর দিয়েই বয়ে চলেছে তীব্র দাবদাহ। হিট ওয়েভের কারনে মানুষের বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের হিট স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে। আর হিট স্ট্রোক কখনও কখনও মৃত্যুর কারনও হতে পারে। তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো চলমান হিট ওয়েভ থেকে কীভাবে বাঁচবেন তা নিয়ে।

হিট ওয়েভ কি?

গ্রীষ্মকালে আমাদের দেশে এপ্রিল মাস থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী গরম অনুভূত হয়। কয়েক বছর ধরেই আমাদের দেশের তাপমাত্রা পুরোনো সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা গত কয়েক বছর ধরেই রেকর্ড করা হচ্ছে। চলতি বছরেও দেশে চুয়াডাঙ্গা সহ আর বেশ কিছু জেলার তাপমাত্রা ইতোমধ্যে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে।   

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (World Meteorological Organization) এর মতে কোন একটা স্থানের প্রতিদিনের গড় তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি পরিমান বৃদ্ধি পেলে এবং সেটা যদি একটানা ৫ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে তাহলে ঐ আবহাওয়াকে দাবদাহ বা হিট ওয়েভ বলে।

অবস্থান ভেদে এই সংগা ভিন্ন হতে পারে। কেননা এই তাপমাত্রার উঠানামা সব যায়গায় এক রকম নাও হতে পারে। তবে যেহেতু পরিবেশের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির উপরে উঠলে শরীরের নিজেকে ঠান্ডা রাখার প্রক্রিয়া ব্যহত হয় সেহেতু এর উপরে তাপমাত্রা উঠলেই সচেতনতা বাড়াতে হবে। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে তাপমাত্রা যদি ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় তাহলে তা মৃদ দাববাহ এবং ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি হলে মধ্যম দাবদাহ এবং ৪০ থেকে ৪২ হলে তা তীব্র দাবদাহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাপ বৃদ্ধির এই পর্যায়ে মানুষজন অসুস্থ হতে শুরু করে। বিশেষ করে বয়স্ক, শিশু, ও স্বাস্থ্যবান লোকেরা।

হিট ওয়েভের সাথে এল নিনোর সম্পর্ক

এল নিনো হচ্ছে সমুদ্রের উপরিভাগের পানির তাপমাত্রার গড় পরিমানের একটি দীর্ঘ সময়ের জন্য পরিবর্তন হয়ে যাওয়া। আরো পরিস্কারভাবে বলতে গেলে পূর্ব কেন্দ্রীয় গ্রীষ্মমন্ডলীয় সমুদ্রের পানির গড় তাপমাত্রা যখন কমপক্ষে ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ০.৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট বৃদ্ধি ঘটে এবং এই বৃদ্ধি যদি পাঁচ মাস বা তার চেয়েও বেশী সময় ধরে চলতে থাকে তখন ঐ পরিস্থিতিকে এল নিনো বলে।  

এল নিনোর প্রভাবে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়, যার কারনে স্থানীয় জেলেদের মাছ শিকার ব্যাহত হয়। এছাড়াও এল নিনোর কারনে বন্যা, সাইক্লোন, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংঘটিত হওয়ার পরিমান অনেক বেড়ে যায়। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশ যেগুলো কৃষিকাজ এবং মৎস্য ব্যবসার উপর নির্ভরশীল সেগুলো এল নিনোর দ্বারা মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।

হিট ওয়েভ থেকে বাঁচার উপায়

চলতি বছরে তাপমাত্রা ইতোমধ্যে ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে দেয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কবার্তা। ইতোমধ্যে সকল সরকারী বেসরকারী স্কুল ও কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলা ঘরের বাইরে বের না হতেও সতর্ক করা হয়েছে। কেননা প্রতিবছর হিট স্ট্রোকে আমাদের দেশে অনেক মানুষ অসুস্থ হয়, মারাও যায়। হিট ওয়েভ থেকে তাই বাঁচতে যা করতে পারেন তা হলঃ

  • একেবারেই বাধ্য না হলে দিনের বেলা ঘরের বাইরে না বের হওয়া। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের বাইরে বেরুতে দেয়া যাবে না। 
  • তাপ কম শোষণ করবে এমন ঢিলে ঢালা আরামদায়ক পোশাক পরিধান করা।
  • এসি থেকে বের হয়ে সরাসরি রোদে না যাওয়া।
  • বাইরে বের হলে সাথে ছাতা, সানগ্লাস ও শরীর ঢেকে থাকবে এমন কাপড় পড়া।
  • বাজারে বহনযোগ্য রিচার্জেবল ফ্যান বা হ্যান্ড ফ্যান কিনতে পাওয়া যায়। ব্যাগে বহন করা যায় এরকম ফ্যান গরমে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।
  • সাথে সবসময় পানির বোতল রাখা।

হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে কী করবেন

আমাদের শরীরের ভেতরের কার্যকলাপ সম্পাদনের জন্য তাপমাত্রা বেশি থাকে। এই তাপমাত্রার অনেকটায় ঘামের সাথে বের হয়ে যায়। তবে বাইরের তাপমাত্রা যখন অনেক বেশী হয়ে যায় এবং তীব্র রোদে দীর্ঘসময় অবস্থান করলে এই অতিরিক্ত তাপ শরীর বের করে দিতে পারে না। যার ফলে মানুষ হিট স্ট্রোকে বা সান স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারে।

হিট স্ট্রোক
হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মাথায় ও শরীরে পানি দিয়ে স্পঞ্জ করে দিতে হবে এবং জরুরী ভিত্তিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে নিম্ন লিখিত কাজগুলো করা জরুরিঃ

  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রথমে খুব দ্রুত রোদ থেকে সরিয়ে ছায়াযুক্ত স্থানে নিয়ে যেতে হবে। এর পর তাকে ঠান্ডা, ছায়াযুক্ত স্থানে এবং পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে রাখতে হবে।
  • মাথায় পানি দিতে হবে এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর স্পঞ্জ করে দিতে হবে।
  • পানি শূণ্যতা রোধে দ্রুত খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে। সম্ভব না হলে লবন চিনি মিশ্রিত ঠান্ডা পানি পান করাতে হবে।
  • প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেয়ার পর রোগীকে নিকষ্টস্থ হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যেতে হবে।

পরিশেষে, হিট স্ট্রোকে মানুষের বড় ক্ষতির পাশাপাশি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই দ্রুততার সাথে চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হবে। সাথে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করলে এই বিপদ এড়িয়ে যাওয়াও সম্ভব হবে। আশকরি হিট ওয়েভ থেকে কীভাবে বাঁচবেন তা আজকের এই কন্টেন্ট থেকে জানতে পেরেছেন। তাই সতর্ক থাকুন, নিজে বাঁচুন অন্যকেও বাঁচান।   

What do you think?

Written by সানজিদা আলম

একজন ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার। টেকনোলজি, স্বাস্থ্য, প্রোডাক্ট রিভিউ এবং ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। লেখালেখির পাশাপাশি ভালোবাসি পড়তে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

গরমে ভালো ঘুমের উপায়

গরমে ভালো ঘুমের ৫টি উপায়