আপনার পরিবারে আসা ছোট্ট নতুন অতিথির নাম কি রাখবেন তা নিয়ে চিন্তিত? চিন্তিত হওয়ারই কথা কারণ নাম একজন মানুষের জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। নাম মানুষের পরিচয় বহন করে। তাই শিশুর নামকরণে ইসলামিক গাইডলাইন নিয়ে আজকে আমরা আলোচনা করবো।
নাম কী, এটির গুরুত্ব ঠিক কতটা তা খুব একটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নাম আমাদের স্বত্তাকে পৃথক করে। অনেকের মধ্যে নিজেকে আলাদা করে পরিচয় দেয়ার প্রাথমিক মাধ্যম হল নাম। পৃথিবীর শুরু যখন নামের শুরুও তখন থেকেই। নাম আমাদের ধর্মীয় পরিচয়ও বহন করে। ইসলামে তাই সুন্দর ও অর্থবোধক নাম নির্বাচনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ইসলামিক অর্থবোধক নাম রাখা পিতামাতার উপর সন্তানের এক প্রকারের হকও। তাই আমাদের উচিত সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার পর যত শীঘ্র সম্ভব সন্তানের ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই, চমৎকার অর্থ সম্বলিত ইসলামিক নাম রাখা। সম্ভব হলে শিশুর জন্মের ৭ম দিনেই এই গুরুত্বপূর্ন কাজটি করে ফেলা উচিত। নাম রাখার কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই তবে নাম নির্ধারনের সময় কিছু বিষয় বিবেচনা করা জরুরী। চলুন দেখি সেগুলো কি কি।
১। শিশুর জন্য মুসলিম নাম নির্বাচন করুন
মুসলিম নাম কি? মুসলিম নাম হচ্ছে এমন যেটা শোনার সাথে সাথে শিশুটি যে মুসলমান সেটা বোঝা যাবে। আমরা বাঙ্গালীরা অনেকসময় এমন নাম নির্বাচন করি বিশেষ করে ডাক নাম যেটা শুনে বোঝা যায় না শিশুটি মুসলমান নাকি অন্য ধর্মের। যেমন একটি শিশুর ডাক নাম রাখা হল রনি। এই নাম দিয়ে শিশুটির ধর্মীয় পরিচয় জানা কঠিন। কিন্তু শিশুটির নাম যদি আলিফ হত তাহলে আমরা শোনার সাথে সাথেই বুঝে যেতাম সে মুসলিম।
পৃথিবীর শুরু যখন নামের শুরুও তখন থেকেই। নাম আমাদের ধর্মীয় পরিচয়ও বহন করে। ইসলামে তাই সুন্দর ও অর্থবোধক নাম নির্বাচনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ইসলামিক অর্থবোধক নাম রাখা পিতামাতার উপর সন্তানের এক প্রকারের হকও। তাই আমাদের উচিত সন্তান ভুমিষ্ট হওয়ার পর যত শীঘ্র সম্ভব সন্তানের ব্যক্তিত্বের সাথে মানানসই, চমৎকার অর্থ সম্বলিত ইসলামিক নাম রাখা।
২। সুন্দর নাম নির্বাচন করুন
ইসলামে শিশুর সুন্দর নাম নির্বাচনে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ভালোভাবে বোঝার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি হাদিস উল্লেখ করছি-
تَسَمّوْا بِأَسْمَاءِ الْأَنْبِيَاءِ، وَأَحَبّ الْأَسْمَاءِ إِلَى اللهِ عَبْدُ اللهِ، وَعَبْدُ الرّحْمَنِ، وَأَصْدَقُهَا حَارِثٌ، وَهَمّامٌ، وَأَقْبَحُهَا حَرْبٌ وَمُرّةُ.
অর্থঃ- তোমরা নবিদের নামে নাম রেখো। আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় নাম আবদুল্লাহ ও আব্দুর রহমান। সবচেয়ে সত্য নাম হারেস ও হাম্মাম আর সবচেয়ে খারাপ নাম হারব ও মুররাহ। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৪৯৫২
এই হাদিস থেকে আমরা যে বিষয়গুলো বুঝতে পারি সেগুলো হলঃ
- নাম হিসেবে নবীদের নাম উত্তম
- আল্লাহর নামে নামকরণ করা উত্তম
- সবচেয়ে সত্য নাম
- সবচেয়ে খারাপ নাম
এই হাদিস থেকে আমরা বুঝতে পারি ইসলামে সুন্দর অর্থ সহ নামের গুরুত্ব কতটা বেশী।
৩। একাধিক নাম রাখা থেকে বিরত থাকুন
আমরা মুসলিম হলেও আমাদের সংস্কৃতি কিছুটা মিশ্র। আর এই কারনে আমাদের সমাজে সন্তানের একাধিক নাম রাখার একটা প্রচলন আছে। এই নাম মূলত দুটি অংশে বিভক্ত, একটি হল ভালো নাম বা পোশাকি নাম যেটা সুন্দর ও অর্থবোধক হয়ে থাকে। এই নামের সাথে সাধারনত পদবিও যুক্ত থাকে। আর আরেকটি নাম হল ডাক নাম। যেটা উচ্চরনে সহজ হবে এবং এটি অর্থপূর্ন হওয়াও জরুরী নয়। কিন্তু ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে এইভাবে নাম রাখাটা পরিত্যাজ্য। এখানে লক্ষনীয় যে, ইসলামে একাধিক নাম রাখতে নিরুৎসাহিত করা হয়নি বরং সবকটি নামই যেন শ্রুতিমধুর ও সুন্দর অর্থবোধক হয় সেটার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
৪। নামের দৈর্ঘের দিকে খেয়াল রাখুন
আমাদের দেশে স্কুল কলেজের পরীক্ষার পাশাপাশী অফিস আদালতে বিভিন্ন কাজে হর হামেশাই ফর্ম পূরণ বা পরীক্ষায় বৃত্ত ভরাট করার মাধ্যমে নিজের নাম লিখতে হয়। তাই একাধিক নাম রাখতে গিয়ে নামের দৈর্ঘ্য খুব বেশী বড় না করায় ভালো। যেমন কারো নাম যদি এমন হয় যে, আবু আদনান ইবনে মোহাম্মাদ খালিদ বিন ফয়সাল তাহলে নামটির সৌন্দর্যও যেমন কিছুটা কমে যায় সাথে প্রয়োজনীয় যায়গায় লিখতেও সমস্যায় পড়তে হতে পারে। আরবি সংস্কৃতি ইসলামী ঐতিহ্য এবং অনন্য নাম সমৃদ্ধ। তবে অঞ্চল ভেদে আরবী শব্দ থেকে নাম নির্বাচনের নিজস্ব স্বতন্ত্র স্টাইল দেখা যায়। যেমন বাংলাদেশ মুসলমান প্রধান দেশ হলেও ইরান, আফগানিস্থান বা পাকিস্তানের নাম ও পদবি থেকে ভিন্নতা রয়েছে। তাই আপনার সন্তানের নামকরণের সময় শুধুমাত্র শ্রুতিমধুর এমন একটি নাম পছন্দ না করে তার সুন্দর একটা অর্থ আছে এমন একটি নাম নির্বাচন করুন। আপনি নিজে যদি অর্থ নিয়ে সন্ধিহান হন সেক্ষেত্রে কোন আলেম বা বুজুর্গ ব্যক্তির নিকট সঠিক অর্থ জেনে নিয়ে তবেই শিশুর নামের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিন।
GIPHY App Key not set. Please check settings