in

ইসলামে নারীর শালীন পোশাক

নারীর শালীন পোশাক

কথায় আছে, লজ্জা নারীর ভূষণ। অন্যদিকে, ইসলামে هيا‎‎ অর্থাৎ হায়া বলতে শালীনতাকে বোঝায়, যার অন্যতম অর্থ হলো লজ্জাশীলতা। রুপক অর্থে ‘ভূষণ’ শব্দটি দিয়ে একজন নারীর শারীরিক এবং মানসিক দুরকম আব্রুকেই বোঝানো হয়েছে। মানসিক আব্রু রক্ষার জন্য আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে নিয়োজিত হয়ে তাঁর সকল আদেশ-উপদেশ মেনে চলা যথেষ্ট। পক্ষান্তরে এই বান্দাদের জন্য উপহার হিসাবে আল্লাহ তায়ালা তাদের পোশাকে আবৃত হওয়ার সুযোগ দান করেছেন, যা মানবজাতির মর্যাদাকে নির্দেশ করে।

বর্তমান যুগে আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে নারীরা সর্বপ্রথম যেভাবে মর্যাদা হারাচ্ছেন তা হলো পোশাকে পাশ্চাত্যের প্রাধান্য দিয়ে শালীনতা খর্ব করা। আজকে তাই আমাদের আলোচনায় তুলে ধরব শালীনতার মাপকাঠি পোশাকের ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ বা নারীর শালীন পোশাক কেমন হওয়া উচিত, এর গুরুত্বই বা আসলে কতটা। 

প্রথমে আল- কুরআন এর পবিত্র বাণী তুলে ধরছি-

یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ قَدۡ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡکُمۡ لِبَاسًا یُّوَارِیۡ سَوۡاٰتِکُمۡ وَرِیۡشًا ؕ وَلِبَاسُ التَّقۡوٰی ۙ ذٰلِکَ خَیۡرٌ ؕ ذٰلِکَ مِنۡ اٰیٰتِ اللّٰہِ لَعَلَّہُمۡ یَذَّکَّرُوۡنَ

বাংলা অনুবাদঃ ‘হে মানব সন্তান, আমি তোমাদের পোশাক দান করেছি, যেন তোমরা তোমাদের আব্রু ঢাকতে পারো এবং তা (তোমাদের জন্য) সৌন্দর্য। আর খোদাভীতির পোশাকই উত্তম। এটা (পোশাক) আল্লাহর নিদর্শন, যদি তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ২৬)

ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ তায়ালা নারী-পুরুষ প্রত্যেককেই শালীন পোশাক পরিধানের নির্দেশ দিয়েছেন, একই সাথে যা প্রকৃত আল্লাহর বান্দার নিদর্শন। কেননা মহান আল্লাহ তায়ালার আদেশক্রমে পারলৌকিক শাস্তি এবং নৈতিকতার জন্য যখন বান্দা শালীন পোশাক পরবে তাতে তার আল্লাহভক্তি আরও বেশি প্রকাশিত হবে।

এবার দেখে আসা যাক মহানবী (স) এ সম্পর্কে কী বলেছেন-

صنفان من أهل النار لم أرهما: قوم معهم سياط كأذناب البقر يضربون بها الناس، ونساء كاسيات عاريات، مائلات مميلات، رؤوسهن كأسنمة البخت المائلة، لا يدخلن الجنة، ولا يجدن ريحها، وإن ريحها ليوجد من مسيرة كذا وكذا

বাংলা অনুবাদঃ ”জাহান্নামের দুই প্রকার লোক রয়েছে যাদের আমি এখনো দেখিনি- এক সম্প্রদায়, তাদের সাথে গরুর লেজের মত চাবুক থাকবে, তা দিয়ে তারা মানুষদের আঘাত করবে। আর বস্ত্র পরিহীত উলঙ্গ নারী, নিজেরা ধাবিত হয় ও অপরকে ধাবিত করে। উটের ঝুঁকে পড়া কুজের ন্যায় তাদের মাথা। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তার ঘ্রাণও পাবে না, যদিও তার ঘ্রাণ এতো এতো দূরত্ব থেকে পাওয়া যায়।”

ইসলামে নারীর পোশাকে শালীনতার মাপকাঠিঃ

১. প্রত্যেকটি মানুষের পরিচয় তার ব্যক্তিত্বে। তাই নারীদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য যে তারা এমন পোশাক পরবেন যাতে সুচরিত্র ও ব্যক্তিত্ব প্রস্ফুটিত হয়।

২.আল্লাহ পাক বলেছেন, ‘নারীরা যেন তাদের গায়ে ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখে।’ ( সূরা-নূর) 

তিনি আরও বলেন, ‘আপনি আপনার স্ত্রীদের ও আপনার কন্যাদের এবং মুমিনদের নারীদের বলে দিন, তারা যেন তাদের সারা গায়ে জিলবাব (অর্থ- লম্বা বোরকা) জড়িয়ে চলাফেরা করে।’ – বাণীটি মহানবি (স) এর উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয়, যাতে তিনি সকলকে জানাতে পারেন।

এখানে, হাত এবং চেহারা নিয়ে কোনো কোনো বর্ণনায় কিছু দ্বিমত রয়েছে। বর্তমানের ফেতনা ও নারীর সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষার তাগিদে মুখ ঢেকে পর্দা করার ব্যাপারে ফকীহগণ পরামর্শ দেন।

৩. মুসলিম ভাইবোনগণ, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন সত্য কী। প্রত্যেকেই জীবনে কোনো না কোনো অবস্থায়, অন্তত সালাত শিক্ষার সময় সতরের গুরুত্ব জেনেছেন।

জ্ঞাতার্থে বলে রাখি, পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত আর নারীর পুরো শরীর সতর। পোশাকের প্রধান উদ্দেশ্যই হল সতর ঢাকা। পোশাক এমন হতে হবে যা পুরোপুরি সতর আবৃত করে তাই যে পোশাক এই উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ তা কি শরিয়তের দৃষ্টিতে পোশাক হওয়া সম্ভব? অবশ্য সম্ভব নয়। এগুলো নাজায়েয পোশাক। এটা পরিত্যাগ করে পূর্ণরূপে সতর আবৃত করে এমন পোশাক গ্রহণ করা জরুরি। 

৪. পুরুষের সদৃশ পোশাক পরতে ইসলামে খুবই কঠিন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। নারীদের জন্য পুরুষের সদৃশ পোশাক হারাম। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। একজন ঐ মহিলা, যে পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে।’

৫. আধুনিক জীবনযাপনে মানুষের জীবন দিন দিন রঙিন হয়ে উঠছে। সেই সাথে আধুনিকতার নামে যোগ হচ্ছে নোংরা সংস্কৃতি। মানুষের প্রবৃত্তিই হলো আকর্ষণীয় উপস্থাপন। কিন্তু তা যদি নগ্নতার প্রচার করে এবং শালীনতার শেষ সীমাটুকুও ছাড়িয়ে যেতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনা তবে তা কেমন সংস্কৃতি? ইসলামে বলা আছে নারীরা যেন অত্যধিক রঙিন পোশাক পরে গায়রে মাহরাম (যাদের সামনে পর্দা করা ফরজ) তাদের সামনে না যায়। ১৪ জন মাহরাম ব্যতীত প্রত্যেক পুরুষের সামনেই পর্দা আবশ্যক। 

প্রসঙ্গত, ১৪ জন মাহরাম হলেন – 

বাবার সমপর্যায়ের জন

১. বাবা ২. চাচা ৩. মামা ৪. শ্বশুর

ভাইয়ের সমপর্যায়ের জন 

৫. সহোদর ভাই ৬. নিজ দাদা ৭. নিজ নানা ৮. নিজ নাতি ৯. দুধ-ভাই

ছেলের সমপর্যায়ের জন– ১০. ছেলে ১১. ভাইয়ের ছেলে ১২. বোনের ছেলে ১৩. মেয়ের জামাই ১৪. দুধ-ছেলে। 

এছাড়াও অতিরিক্ত আঁটসাট পোশাক না পরাই শ্রেয়।

কন্যাসন্তান আল্লাহর দেয়া নেয়ামত। এই নারীই নিজের সুশৃঙ্খল চিন্তাভাবনা দিয়ে সংসারের শৃৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারেন। শালীন পোশাকই আপনাদের অলংকৃত করুক, প্রিয় বোনেরা।

What do you think?

Written by নুসরাত জাহান

পেশায় একজন নার্স হলেও ইসলামিক বিষয় নিয়ে পড়তে ও লিখতে ভালো লাগে। আমার লেখা থেকে যদি কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় তবেই আমার প্রশান্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

islamic-guidelines-for-baby-naming

শিশুর নামকরনের ইসলামিক গাইডলাইন

খাবার গ্রহনে ইসলামের বিধান

খাবার গ্রহনে ইসলামের বিধান