দিনভর ভালোই সময় কাটলো, কিন্তু দুপুর হতেই মনটা কেমন যেন দুঃখী দুঃখী হয়ে পড়লো। কিছুই যেন আর ভালো লাগছে না। যদিও দুঃখী হওয়ার কোন যৌক্তিক কারন নেই। এমনটা কি কখনো আপনার সাথেও হয়? একেই মুড সুইং বলে। আমাদের দেশে মুড সুইং নিয়ে তেমন আলোচনা হতে বা এই সমস্যাটিকে গুরুত্বের সাথে খুব বেশি একটা দেখা হয় না। কিন্তু সময়মত চিকিৎসা না করালে এটি মারাত্বক আকার ধারন করতে পারে। তাই আজকে কথা বলবো মুড সুইং এর কারন লক্ষন ও প্রতিকার নিয়ে।
মুড সুইং কী
মুড সুইং এর সহজ অর্থ হল কোন বিশেষ কারন ছাড়াই ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন হওয়া। আপনার মানসিক অবস্থা স্থিতিশীল না থাকলে অথবা হঠাত কোন কারন ছাড়া রাগ হলে এবং এমনটা ঘন ঘন হতে থাকলে বিষয়টাকে আর হালকাভাবে না নিয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। কেননা সমস্যা গুরুতর হলে দিনে রাতে একাধিকবারও মেজাজ পরিবর্তন হতে পারে। আর এতে শুধু রোগী নয় তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দৈনন্দিন জীবন ব্যহত হতে পারে। এমনকি সময় থাকতে চিকিৎসা না নিলে রোগী বাইপোলার ডিজঅর্ডার বা দ্বৈত স্বত্বার মত ভয়াবহ মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
মুড সুইং এর কারন
মুড সুইং শারীরিক ও মানসিক উভয় কারনেই হতে পারে। শারীরিক যে কারনে মুড সুইং হতে পারে তা হল হরমোনের ভারসাম্যহীনতা। আর মানসিক যে কারনে এই সমস্যা হতে পারে তা হল অতিরিক্ত আবেগ প্রবনতা।
মুড সুইং মেয়েদের বেশী হয় কারন মেয়েরাই মূলত হরমোন ভারসাম্যহীনতায় বেশি ভুগে থাকে। পিরিওডের সময় ও গর্ভধারনের সময় হরমোনের ভারসাম্য দারুনভাবে বিঘ্নিত হয়। প্রতিমাসে অভ্যুলেশনের পর এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্ট্রেরন হরমোন নিঃসরণ কমে যায়। এর ফলে মস্তিস্কে নিউরোট্র্যন্সমিটার নিঃসরণ বাধাগ্রস্থ হয়। এ কারনেই মূলত পিরিওডের সময় মেয়েদের রাগ, বিরক্তি, হতাশা, বিষণ্ণতা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়ার মত সমস্যা দেখা যায়। এছাড়াও পিরিওডের সময় হালকা থেকে প্রচন্ড রকম পেটে ব্যাথা হয়, আর এই কারনেও মুড সুইং হতে পারে।
সমস্যাগুলো গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পর আরো বড় আকার ধারন করে। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা গর্ভাবস্থায় অনেক বেড়ে যায় যার কারনে মুড সুইং-ও হয় মারাত্বক রকমের। এই সমস্যা সাধারণত গর্ভধারনের প্রথম ১০ সপ্তাহ ও শেষ ৩ মাসে প্রকট আকার ধারন করতে পারে।
নারীদের ক্ষেত্রে মুড সুইং এখানেই শেষ নয়। প্রসবের পরেও নবজাতকের যত্ন, নির্ঘুম রাত, শারীরিক কষ্ট ইত্যাদি কারনেও নারীদের মুড সুইং হয়।
মুড সুইং যে কেবল নারীদের হয় তা কিন্তু নয়, পুরুষদের ক্ষেত্রেও হতে পারে। নারীদের পাশাপাশি পুরুষরা মানসিক বা আবেগজনিত কারনে মুড সুইং এ আক্রান্ত হতে পারে। প্রেমে ব্যর্থতা, কর্মক্ষেত্রে সমস্যা, পারিবারিক দায়িত্ব, সংগীর সাথে বোঝাপড়ার অভাব ইত্যাদি আবেগজনিত কারনে নারীদের মত পুরুষরাও এই সমস্যায় পড়তে পারে।
মুড সুইং এর প্রতিকার
আগেই বলেছি আপাত দৃষ্টিতে সাধারন মনে হলেও, মুড সুইং কখনো কখনো মারাত্বক আকার ধারন করতে পারে। এমনকি রোগী আত্মঘাতীও হতে পারে। তাই এই রোগ শনাক্ত হওয়ার সাথে সাথেই দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে।
যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হরমোনের ভারসাম্য ঠিক হলে এই সমস্যা একা একাই দূর হয়ে যায় তবে যদি কোন কারনে দীর্ঘমেয়াদি হয় তাহলে একে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। তবে কিছু বিষয় মেনে চললে এই সমস্যা অল্প সময়ের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায়। এগুলো হলঃ
১। একটি স্বাস্থ্যকর রুটিন অনুস্মরণ করতে হবে।
২। দৈনিক কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
৩। নিয়মিত ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই চেষ্টা করতে হবে নিয়মিত অল্প সময়ের জন্য হলেও কিছু ব্যায়াম করা।
৪। সুষম খাদ্য খেতে হবে।
৫। প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে।
৬। নিজেকে চেষ্টা করতে হবে এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার জন্য।
৮। বাইরে ঘোরাঘুরি ও বন্ধু, আত্মীয়দের সাথে মেলামেশা মন হালকা করতে সাহায্য করে।
পরিশেষে, মুড সুইং এমন এক মানসিক জটিলতা যেটা লোক চক্ষুর আড়ালে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। ভয়ানক বিষয় হল, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে খুব কাছে মানুষরা বা পরিবারের সদস্যরাও বুঝে উঠার আগেই রোগীর মারাত্বক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই মুড সুইং এর লক্ষনগুলো প্রকাশ পাওয়ার সাথে সাথেই সচেতন পদক্ষেপ নেয়া খুব জরুরী। নিজে ভালো থাকুন, আপনার পরিবারের সদস্যদেরও ভালো রাখতে সাহায্য করুন।
GIPHY App Key not set. Please check settings