in

খাবার গ্রহনে ইসলামের বিধান

খাবার গ্রহনে ইসলামের বিধান

ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। এটি সবথেকে শ্রেষ্ট ধর্ম। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যত জটিল সমস্যার উদ্ভব ঘটে সবকিছুর সমাধান সুন্দর ভাবেই পূর্বেই নিধারণ করা রয়েছে। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ইসলাম ধর্মের আদর্শ। তাঁর দেখানো পথ অনুসরণ করেই আমাদের জীবনে পথ চলতে হয়। কারণ এ পথই আমাদের জন্য অতি উওম। আর তিনি আমাদের পথপ্রদর্শক। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতদের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন এবং অনেক দুঃখ দুদর্শা কষ্ট তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে।

তিনি তার এ জীবনে তার প্রিয় সাহাবিদেরকে অনেক নিয়মকানুন শিখিয়েছেন যা অনুসরণ করা আমাদের জন্য অতি আবশ্যক। তাঁর শেখানো এ নিয়মকানুন আমাদের জীবনকে সুশৃঙ্খল ও লাবণ্যময় করে তোলে এবং আমাদের জীবনে বয়ে আনে কল্যাণ। এ নিয়মকানুন অনুসরণ করলে আমাদের জীবন পৌছে যাবে সফলতার উন্নতার শিখরে। অন্যসব নিয়মের মত 

নবী করিম (সা.) তার সাহাবিদেরকে খাবারেরও কিছু নিয়মকানুন বলেছেন। এসব নিয়মকানুন অনুসরণ করা আমাদের জন্য সুন্নত।

আমরা জানি খাদ্য প্রত্যেক মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ খাবারের সুব্যবস্থা মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর সৃষ্টির প্রত্যেক প্রাণীর জন্য করেছেন। তাই নবী করিম (সা.) তাঁর পাঠানো রাসূল এর আদেশ মোতাবেক নিয়মকানুন আমাদের জানা উচিত। নিম্নে তা দেওয়া হল-

হালাল খাদ্য গ্রহন ও হারাম বর্জন

মুমিন ব্যক্তির খাদ্য গ্রহণের পূর্বে সবসময় হালাল হারাম বিবেচনা করতে হবে। যেসব  খাবার মহান আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন যেমন শূকরের মাংস চর্রবি খাওয়া হারাম তাই প্রকৃত মুসলিমের এসব থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া আ্যলকোহল জাতীয় পানীয় যেটি সম্পূর্ণ হারাম এসব খাওয়া যাবে না।স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে।

খাবার পূর্বে পরিচ্ছন্নতা

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ এ কথা আমরা সবাই জানি। তাই আমাদের উচিত খাবার আগে হাত মুখ ভালোভাবে ধোয়া নিজেকে পাক পবিএ করা কেননা খাবার আল্লাহর নিয়ামত। এছাড়া আমাদের নবি করিম (সা.) যখন খেতে বসতেন তিনি ডান হাত ব্যবহার করতেন যেটি উওম। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বাম হাত দ্বারা খাবার খেয়ো না ও পান করো না। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় ও পান করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯১২) এছাড়া নবি করিম (সা.) অতিরিক্ত গরম খাবার ও খেতেন না। তাই আমাদেরও এটা পরিহার করা উচিত। খাবারে তিনি কখনো ফুঁক দিতেনও না। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কখনো খাবারে ফুঁক দিতেন না। ফুঁক দিতেন না কোনো কিছু পানকালেও। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৪১৩)। 

খাবারের পূর্বে ও পরে দোয়া

হযরত মুহাম্মাদ (সা.) খাবারের পূর্বে সাহাবিদের দোয়া শিখিয়েছেন। খাবারের আগে তাই বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতে হয়। এবং শুরুতে ভুলে গেলে মাঝে পরা যায়। এবং খাবার শেষে মহান রবের শুকরিয়া করার কথা ও তিনি আমাদের জানিয়েছেন।

খাবার খাওয়ার নিয়ম

খাবার খাওয়ার জন্য মুমিনের মাটিতে বসে দস্তারখানা বিছিয়ে দুই হাটু গেড়ে পায়ের পাতার উপর ভর করে, ডান পা দাড়া করিয়ে বাম পায়ের উপর ভর করে অথবা নামাযরত অবস্তায় যেভাবে বসি সেভাবে বসে খাওয়া যায়। নবি করিম (সা.) কখনও হেলান দিয়ে খাবার খেতেন না কারণ এতে পেট ভরে যায় তাই এভাবেও খাবার খাওয়া উচিত না। এছাড়া খাবার খাওয়া সময় সবটুকু খাবার চেটে পুটে খাওয়া দরকার কেননা প্রতিটি খাবারের দানায় বরকত আছে তাই যেটুকু খাবার খাওয়া সম্ভব তা অল্প নিয়ে খাওয়া উচিত। খাবারের প্লেট সাথে নিজের আঙ্গুলও চেটে খেতে হবে কেননা এ খাবার গুলা ঐ ব্যক্তির জন্য মাগফিরাত কামনা করে। অল্প খাবার নিয়ে খেতেন আমাদের নবি। তিনি কখনও পেট ভরে খেতেন না।

এছাড়া হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এটিও নির্দেশ দিয়েছেন যে কখনও খাবারের দোষ না ধরতে। যে খাবার পছন্দ না তিনি ঐ খাবার খেতেন না কিন্তু কখনও খাবারের খারাপ দিকগুলা বলতেন না। এছাড়া আমাদের প্রিয় নবি কখনো একাকি খাবার খেতেন না। তিনি তার সাহাবিদের সাথে একসাথে বসে এছাড়া আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী সবাইকে নিয়ে তিনি খেতেন। এ প্রসঙ্গ হাদিসে আছে “তোমরা সম্মিলিতভাবে তোমাদের খাবার খাও এবং আল্লাহর নামে খাও, দেখবে তোমাদের খাদ্যে বরকত হবে।”। তাই আমাদেরও উচিত সবাইকে নিয়ে একসাথে বসে খাওয়া কারণ এটি সুন্নত। এছাড়া তিন আঙ্গুল ব্যবহার করে খাওয়া সুন্নত।

খাবার খাওয়ার মাঝে খোশগল্পও করা যায় কিন্তু এমন কোন কথা বলা উচিত নয় যেটিতে ঐ খাবারের প্রতি ঘৃণা চলে আসে। খাবার পড়ে গেলে ঐ খাবার তুলে ধুয়ে খেতে হবে।

খাবার শেষে মিষ্টিমুখ করতেন আমাদের নবি (সা.)। তাই মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার শেষে খাওয়া যায়। এটিও আমাদের জন্য সুন্নত।

খাবার শেষে করণীয়

খাবার শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলতেন, দোয়া করতেন এবং ঐ খাবারের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করতেন আমাদের নবি (সা.)। এ ব্যাপারে হাদিসে রয়েছে আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) খাবার শেষ করে বলতেন, ‘আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসিরান ত্বয়্যিবান মুবারাকান ফিহি, গায়রা মাকফিইন, ওলা মুয়াদ্দায়িন ওলা মুসতাগনা আনহু রাব্বানা।’ তিনি কখনো এই দোয়া পড়তেন- ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আতআমানা ওয়াছাকানা ওয়াজাআলানা মিনাল মুসলিমিন।’  (বুখারি, হাদিস : ৫৪৫৮)।

পরিশেষে বলা যায় খাবারের সুন্নত গুলো জেনে ঐ মোতাবেক মেনে চলা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলো আমাদের প্রিয় নবি (সা.) এর আদর্শ।

What do you think?

Written by নুসরাত জাহান

পেশায় একজন নার্স। স্বাস্থ্য বিষয়ে লেখালেখি করতে ভালোবাসি। পাশাপাশি ইসলামিক বিষয় ও প্রযুক্তি নিয়ে পড়তে ও লিখতে ভালো লাগে। আমার লেখা থেকে কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হলে তবেই লেখার স্বার্থকতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

নারীর শালীন পোশাক

ইসলামে নারীর শালীন পোশাক

রুপচর্চায় মধু

রুপচর্চায় মধুর অবদান