ইসলামে গ্রহন এবং বর্জনের জন্য খাবার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। একই সাথে খাবার গ্রহনের জন্য একটি নির্দিষ্ট শিষ্টাচার অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এই সব নিয়ম পালন করা সব ক্ষেত্রেই বাধ্যতামূলক নয় তবে এগুলো পালন করলে রয়েছে আল্লাহর বরকত ও রহমত লাভের বিশেষ সুযোগ। আজকে কোন খাবার খাবেন, কিভাবে খাবেন তা নিয়ে ইসলামী নির্দেশনাগুলো নিয়ে আলোচনা করবো। বোঝার সুবিধার্থে এই নিয়মগুলোকে আমরা ৩টি পৃথক ভাগে ভাগ করে আলোচনা করব। চলুন তাহলে শুরু করি।
খাবার নির্বাচন
১। হালাল এবং হারাম সম্পর্কে জানুন
ইসলামে হালাল বলতে সেই সব খাবারকে বোঝানো হয়েছে যেগুলো খাওয়ার অনুমতি আছে আর হারাম দ্বারা সেই সব খাবারকে বোঝানো হয়েছে যেগুলো খাওয়ার অনুমতি নেই। তাই হালাল ও হারামের দিকে নজর রেখে খাবার নির্বাচন করুন।
২। শূকর এবং শূকরের মাংস খাওয়া থেকে দূরে থাকুন
আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে শুকরের মাংস বা শূকর থেকে তৈরি কোনো কিছু খাওয়া থেকে নিষেধ করেছেন কারণ তা অপবিত্র বলে বিবেচিত।
আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, “তিনি তোমাদের জন্য হারাম করেছেন শুধুমাত্র মৃত প্রাণী, রক্ত এবং শূকরের গোশত…” [আল-বাকারা ২:১৭৩]
৩। হিংস্র পশুর মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন
হিংস্র পশু যেমন বাঘ, কুমির, সিংহ, গন্ডার ইত্যাদিও খাওয়া উচিত নয়। তৃণভোজী প্রাণী যেমন গবাদি পশু, ভেড়া, গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি মুসলমানদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও যে সকল প্রানী আমাদের সহচর যেমন বিড়াল, কুকুর, গাধা, ঘোড়া ইত্যাদি পশুর মাংস খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
৪। ইসলামী আইন অনুযায়ী জবাই করা পশুর মাংস খান
ইসলামী আইন অনুসারে, একটি পশু জবাই করার সময়, আপনার বিসমিল্লাহ (بسم الله) বলে শুরু করা উচিত, যার অর্থ ‘আল্লাহর নামে’। মৃত কোন প্রানী বা ইসলামী আইন অনুযায়ী জবাই করা হয়নি এমন কোন প্রানীর মাংস মুসলমানদের জন্য হালাল নয়।
৫। রান্নায় অ্যালকোহল ব্যবহার এড়িয়ে চলুন
ইসলাম ও কুরআনে মদ হারাম বলা হয়েছে। আজকাল আমরা অনেকেই বিদেশী রান্নার প্রতি ঝুঁকে পড়েছি। বিদেশী বিভিন্ন রেসিপিতে অ্যালকোহলের প্রয়োজন হয়। তাই কোন রেসিপি তৈরি করার আগে তার উপকরনগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন। যদি অ্যালকোহলের পরিবর্তে অন্য কিছু ব্যবহার করে রেসিপিটি সম্পন্ন না করা যায় তবে রেসিপিটি পুরোপুরি বাতিল করাই উত্তম।
খাবার খাওয়ার নিয়ম
১। খাওয়ার আগে হাত ধুয়ে নিন
পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা সুন্নাত। তাই খাওয়া শুরু করার আগে অবশ্যই সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন।
২। খাবার শুরুতে আল্লাহর নাম নিন
মুখে কোন খাবার দেয়ার আগে আল্লাহর নাম নেয়া ওয়াজিব। তাই খাওয়া শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ (بسم الله) অর্থাৎ আমি আল্লাহর নামে শুরু করছি বলতে ভুলবেন না।
৩। ডান হাত দিয়ে খাবার খান
ইসলামে বেশিরভাগ কাজই ডান হাত দিয়ে করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শয়তান বাম হাতে খায়, তাই শয়তানের থেকে নিজেকে পৃথক করতে মুসলমানদের অবশ্যই ডান হাতে খাবার খাওয়া উচিত।
৪। সঠিকভাবে বসে খাবার খান
শুয়ে বা আধা শোয়া হয়ে খাবার খাওয়া ঠিক নয়, এতে খাবার গলায় আটকে যাওয়ার ভয় থাকে। তবে আপনি যদি খুব বেশী অসুস্থ থাকেন আর বসে খেতে অপারগ হন তবে শুয়ে খাবার খেতে পারেন।
৫। পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খান
খাওয়ার সময় কোন খাবার যদি ভুলে পড়ে যায় তাহলে তা তুলে খাওয়া উচিত। আপনার হাত থেকে কোন খাবার মাটিতে পড়ে গেলে তৎক্ষণাৎ তা তুলে ফু দিয়ে ধুলো ঝেড়ে খেয়ে নিন।
৬। দলভুক্ত হয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন
দলভুক্ত হয়ে খাবার খাওয়া সুন্নত। তাই চেষ্টা করুন পরিবারের সদস্যদের সাথে একসাথে বসে খাওয়ার। এতে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হয় এবং এটা বরকতময়ও।
৭। খাওয়ার পর আল্লাহর প্রশংসা করুন
খাওয়া শেষ হলে আল্লাহর প্রশংসা করার উদ্দেশ্যে “আলহামদুলিল্লাহ” বলুন। খাওয়া শেষ করে আপনি কিছু দুআ-ও করতে পারেন।
খাওয়ার শিষ্টাচার
১। খাবারের সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকুন
কোন খাবার সুস্বাদু না হলে তার সমালোচনা না করা, বা আপনি ওই খাবার খেতে পছন্দ করেন তা বলা থেকে বিরত থাকা উচিত।
২। পরিমিত পরিমানে খান
পেট পুরোপুরি ভর্তি করে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ এটি ইসলামে সঠিক শিষ্টাচার নয় এবং এটি অস্বাস্থ্যকরও।
৩। সোনা ও রুপার তৈরি পাত্রে খাওয়া এড়িয়ে চলুন
মুসলমানদের সোনা ও রুপার তৈরি পাত্রে খাবার ও পানীয় খাওয়া উচিত নয়। এর পরিবর্তে সিরামিক, কাচ বা কাগজের তৈরি প্লেট এবং কাপে খাবার খাওয়া যেতে পারে।
৪। অতিরিক্ত গরম খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন
খাবার গরম হলে তাতে ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করা জায়েজ নয়। তাই অতিরিক্ত গরম খাবার খাওয়ার চেষ্টা না করে তা সহনীয় মাত্রায় ঠান্ডা হতে দিন তারপর খান।
ইসলামী জীবনব্যবস্থা মানেই সহিহ ও সুন্দর জীবন ব্যবস্থা। তাই কোন খাবার খাবেন, কিভাবে খাবেন তা ইসলামী নির্দেশনা অনুযায়ী জেনে নিন সুস্থ, সুন্দর ও বরকতময় জীবন লাভ করুন।
GIPHY App Key not set. Please check settings