in

ডায়াবেটিস রোগী যে উপায়ে রমজানে রোজা রাখবেন

ডায়াবেটিস রোগীর রোজা

পবিত্র রমজান মাসে, বেশিরভাগ মুসলমানই তেমন কোন কষ্ট ছাড়াই রোজা রাখতে পারেন। কিন্তু সমস্যা হয়ে যায় অসুস্থ ব্যক্তিদের বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কারন এই রোগীদের কিছু চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হয়। তাই আপনার ডায়াবেটিস থাকলে রমজান মাসে কীভাবে রোজা রাখবেন সেটা ভালোভাবে জেনে নেয়া জরুরী।

ডায়াবেটিস রোগীরা যারা রমজানে রোজা রাখতে পছন্দ করেন তাদের রোজা না থাকার সময় প্রচুর পানি পান করা উচিত। হাইড্রেটেড থাকা ডিহাইড্রেশন এবং এর সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য  জটিলতাগুলো প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের রমজানের রোজায় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একটি সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা মেনে চলা উচিত। তাদের সেহেরিতে সুষম খাদ্য খাওয়া উচিত এবং গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম এমন খাবার বেছে নেওয়া উচিত। একই সাথে এইসব রোগীদের ইফতারে একসাথে বেশী খাবার না খেয়ে কয়েক ভাগে অল্প অল্প করে খাবার খাওয়া উচিত এবং চিনিযুক্ত খাবার এবং ভাজা খাবার এড়ানো উচিত। আজকে আমরা ডায়াবেটিস রোগীরা কিভাবে শারীরিক জটিলতা এড়িয়ে রোজা রাখবেন সে বিষয়ে এখানে কিছু টিপস দিব।

পর্যাপ্ত পানি পান

সারাদিন হাইড্রেটেড রাখা অপরিহার্য। তাই রোজা ভাঙার পর আপনাকে প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। আপনার প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। আপনার যদি আরও বেশী হাইড্রেশনের প্রয়োজন হয় তবে সাধারন পানির সাথে ডাবের পানিও পান করতে পারেন। যে কোন এনার্জি ড্রিংস এর সাথে তুলনা করলে ডাবের পানির একই রকম হাইড্রেটিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে কারণ এতে কার্বোহাইড্রেট, ইলেক্ট্রোলাইট সহ অনেক ধরনের মিনারেলের সংমিশ্রণ রয়েছে।

এছাড়াও শরীরের পানির চাহিদা পূরনের জন্য পানির পাশাপাশি গ্রীন টি, পুদিনা পাতার চা ইত্যাদিও পান করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, এই সব কিছুই খাবেন চিনি ছাড়া।

ইফতারে সতর্কতা

আপনার ইফতার এমন খাবার দিয়ে শুরু করুন যাতে সাধারণ কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে এবং শরীরে সহজেই শোষিত হয়, যেমন ১-২টি খেজুর। আপনি চাইলে যে কোনো উদ্ভিদ-ভিত্তিক দুধ যেমন- বাদাম দুধ, নারকেলের দুধ ইত্যাদিও খেতে পারেন। তারপর কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ লাল চলের ভাত বা লাল আটার রুটি খেতে পারেন।  

ঔষধ সমন্বয়ে ডাক্তারের পরামর্শ

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঔষধ ঠিক মত খাওয়া খুব জরুরী। যেহেতু রোজা থাকার কারনে দিনের একটা বড় সময় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে তাই শুরুতেই আপনার ঔষধ খাওয়ার বিষয়টা সমন্বয় করে নিতে হবে। কোন বেলার ঔষধ কখন খাবেন সেটা আগেই ঠিক করে নিন। প্রয়োজনে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করুন।

রক্তে সুগার পরিমাপ করুন

রোজা শুরুর অন্তত প্রথম ৫ দিন নিয়মিত দুইবেলা রক্তে সুগার পরিমাপ করুন। এতে আপনার শারীরিক অবস্থা বোঝা সহজ হবে। রোজা থাকা অবস্থায় আপনার সুগারের পরিমান কত থাকছে তার উপর নির্ভর করে আপনার ঔষধের মাত্রা নির্ধারন করে নিন। এছাড়াও রোজা থাকার কারনে অনেকেই বিকালের দিকে দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন এমনকি হাইপোও হয়ে যেতে পারেন। তাই নিয়মিত সুগার চেক করা জরুরী।

সেহেরিতে সুষম খাবার

কোনভাবেই রাতে সেহেরি খাওয়া বাদ দেয়া যাবে না। বরং এই সময় পরিপূর্ন সুষম খাবার খাওয়া উচিত। লাল চালের ভাত বা লাল আটার রুটি, সাথে পর্যাপ্ত প্রোটিন, শাক-সবজি ও ডাল খেতে হবে। সেই সাথে আপনার ইনসুলিনের ডোজ কতটা নিতে হবে সেটাও আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিতে হবে।

এখন যেহেতু গরমের মধ্যে রোজা হয় তাই হাইড্রেটেড থাকার জন্য শুধু পানীয় পান না করে রসালো ফলও খেতে পারেন। যেমন তরমুজ, বাতাবিলেবু, শসা ইত্যাদি কারণ এগুলোতে পানি ও ফাইবার উভয়ই উচ্চ মাত্রায় থাকে। এছাড়াও ভাত বা রুটি সেহেরিতে খেতে ইচ্ছা না করলে স্যুপ, দই, বা ওটমিলও খেতে পারেন।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম

ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা থাকা অবস্থায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ন। ঘুমের তারতম্য ক্ষুধার হরমোনকে পরিবর্তন করে ফলে ইফতারিতে প্রচুর পরিমানে উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহন করা হয়ে যায়। ঘুম বিপাকীয় প্রক্রিয়ার জন্যও উপকারী কারণ এটি রক্তে গ্লুকোজের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য অপরিহার্য। সেহেরি বা ইফতারে অতিরিক্ত আহার করবেন না। উভয় খাবারেই, ডুবো তেলে ভাজা খাবার এবং উচ্চ চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।

হালকা ব্যায়ামই যথেষ্ট

রোজার সময় অতিরিক্ত ব্যায়াম এড়ানো উচিত কারণ এটি হাইপোগ্লাইসেমিয়া সৃষ্টি করে। খাওয়ার পরে অল্প সময় হাঁটা খাবারের পরে স্পাইক উন্নত করতে সাহায্য করবে। মেডিটেশন, হালকা যোগব্যায়াম এবং হাঁটা সবই হালকা ব্যায়াম যা আপনার শরীরকে সচল রাখবে এবং আপনার শক্তির মাত্রা বেশি রাখবে। তবে আপনার যদি ওজন কমানোর প্রয়োজন না থাকে তবে এসব কিছুর পরিবর্তে তারাবির নামাজ নিয়মিত পড়লেও প্রয়োজনীয় শারীরিক শ্রম করা হয়ে যাবে।

আর মাত্র কিছুদিন পরেই রমজান মাস শুরু হচ্ছে। ডায়াবেটিস রোগীরা উপরে আলোচিত টিপসগুলো ফলো করুন এবং রোজা করেও সুস্থ থাকুন।

What do you think?

Written by সানজিদা আলম

একজন ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার। টেকনোলজি, স্বাস্থ্য, প্রোডাক্ট রিভিউ এবং ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। লেখালেখির পাশাপাশি ভালোবাসি পড়তে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

ইসলামে ঘুমের নিয়ম

শরিয়া পদ্ধতিতে ঘুমানোর নিয়ম

খাবার গ্রহণে ইসলামী নির্দেশনা

কোন খাবার খাবেন, কিভাবে খাবেন