রমজান হচ্ছে রহমতের মাস, বরকতের মাস, তাওবা করার মাস, ক্ষমার মাস, কুরআনের মাস। সিয়াম (সিয়াম) কিয়ামতের দিবসে বলবে, ‘হে আমার রব! আমি তাকে দিনের বেলা খাবার-দাবার ও যৌনকাজ থেকে বিরত রেখেছি। আমি তাঁর জন্য সুপারিশ করতে চাই।’ কুরআন বলবে, ‘হে রব, আমি তাকে রাতের বেলা ঘুমানো থেকে বিরত রেখেছি। আমি তাঁর জন্য সুপারিশ করতে চাই।’
সিয়াম ও কুরআনের সুপারিশ আল্লাহ গ্রহণ করবেন।
আল্লাহ আমাদের কত ভালোবাসেন তা কি আমরা বুঝি? গত বছর যদি রমজান মাসের যথাযথ কদর না করে থাকি, তাহলে এই রমজান যেন আমরা নষ্ট না করি। আমাদের রমজান মাসের প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রতি দিনের পরিকল্পনা করে রাখা দরকার। মহিমান্বিত রমজান মাসের একটা দিন নষ্ট হলে সেটা আর কখনোই ফিরে পাওয়া যাবে না। কত মানুষই আছে যারা গত বছরের রোজা পেয়েছিলেন, কিন্তু এই বছর আল্লাহর কাছে ফিরে গিয়েছেন। হয়তো কারো বাবা মারা গিয়েছে, কারো মা মারা গিয়েছে। তাদের ঠাঁই আজ কেবল স্মৃতির চিলেকোঠায়।
রামাদান আমাদের কাছে অতিথি হয়ে আসে। আমাদের অবশ্যই এই অতিথির আগমনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। রমজান মাসের জন্য ভালভাবে প্রস্তুতি নিলে আল্লাহর কাছে বিস্ময়কর উপহার রয়েছে। এমনকি রমজানের প্রস্তুতি না নিলেও, অলসতার সাথে কাটালেও রমজান আমাদের সাথে দয়ালু ও উদার আচরণ করে।
প্রিয় দীনি ভাইবোনেরা, আসুন আমরা রমজানের জন্য সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিই। এমন রমজান মাস কাটাবো আমরা, যা বিগত সকল রমজান মাসকে ছাড়িয়ে যাবে।
আগের রমজান আমরা কীভাবে কাটিয়েছি? হয়তো নিয়ত ছিল পুরো কুরআন তিলাওয়াতের, কিন্তু অর্ধেকও পারিনি। কোনো ইয়াতিমকে খাওয়ানোর কিংবা ভালো কোনো কাজ করার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু করতে পারিনি। এই রমজান সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দেওয়ার সুযোগ আমাদের সামনে এসে উপস্থিত। রামজানের জন্য আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী লক্ষ্যপূরণ করতে হবে, ইনশাআল্লাহ।
রমজান মাস দোরগোড়ায় এসে পড়েছে। রমজান নিয়ে বাচ্চাদের সাথে, স্ত্রীর সাথে কথা বলুন। নষ্ট করার মতো সময় নেই। এখন প্রস্তুতি নেওয়ার সময়। ফজর কাজা করা যাবে না। ঘুমিয়ে রাত নষ্ট করা বিলাসিতা। সময় খুব কম, জীবনটাও সংক্ষিপ্ত। দুনিয়ার ফিতনায় প্রতারিত হওয়া যাবে না। দুনিয়ার জীবন সংক্ষিপ্ত হলেও আখিরাতের জীবন চিরস্থায়ী।
আল্লাহর প্রতি আমাদের সৎ হতে হবে। বিগত ১১ বছরে যে যে পাপ করেছি তার জন্য তাওবা করতে হবে। হৃদয়কে সকল সংশয় কিংবা প্রবৃত্তির চাহিদা থেকে পবিত্র করতে হবে। স্মরণে রাখতে হবে, আল্লাহ সব জানেন।
আমরা গুনাহ করার সময় ভাবি, কেউ তো আমার এই অপকর্মের কথা জানছে না। নিশ্চিন্তে গোপন গুনাহ করে চলেছি। চুরি করেছি, কিন্তু কেউ দেখেনি।
কিন্তু প্রিয় ভাই, আল্লাহ তো সব জানেন, সব দেখেন। আমাদের হৃদয়ের গোপন খবরও তাঁর জানা। তাই আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করুন, “হে আল্লাহ! আমাদের মনের সকল বাজে চিন্তার জন্য, সকল অপকর্মের জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাই। হে আল্লাহ, বছর ঘুরে আবারও রামাদান আসছে। আমাকে শক্তি-সামর্থ্য দান করুন। যেন রমজানের সকল লক্ষ্য আমি পূরণ করতে পারি। হে আল্লাহ, আমি সালাতে গাফিলতি করেছি। আমাকে গাফিলতি থেকে মুক্তি দিন, আমাকে দৃঢ়চেতা করুন। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে জামাআতের সাথে আদায়ের তাওফিক দিন। তাহাজ্জুদের সালাত আদায়ের তাওফিক দিন।”
আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশেই এই মাসে ইবাদতে নিজেকে ডুবিয়ে রাখুন। আমরা জানি না পরকালে আমাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে। জান্নাতে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত নেক আমল নেই আমাদের। আল্লাহ পুনরায় আমাদের জীবনে রামাদানের বারাকাহ দান করেছেন। আগামী রামাদান পাব কী না জানি না। হয়তো গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যাব কিংবা হার্ট অ্যাটাকে। তাই এখনই নিয়ত করে রাখতে হবে।
আমরা কি প্রস্তুত? প্রস্তুত আল্লাহর সাথে মিলিত হতে? আল্লাহ যদি আমাদের রামাদানের বরকত দিয়ে থাকেন, তবে দু হাত মেলে সেই বরকতকে গ্রহণ করতে হবে। আমাদের অনেকের স্ত্রী-সন্তান আছে। রামাদানে পরিবারের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আছে। আমরা একসাথে সিয়াম রাখব, একসাথে সালাত আদায় করব, সবাই সিয়ামের সময়টুকু খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকব। ইফতারির সময় একসাথে টেবিলে বসে খাব। কারণ, এই রামাদানে শুধু আমি একাই জান্নাত লাভ করতে চাই না। আমি আমার স্ত্রীর জন্য জান্নাত চাই, সন্তানের জন্য জান্নাত চাই, পুরো পরিবারের জন্যই জান্নাত কামনা করি।
আসুন, মানুষদের আসন্ন মহিমান্বিত রামাদানের গুরত্ব স্মরণ করিয়ে দিই। নিজেদের জীবনটাকে বদলে ফেলি। চারিত্রিক ত্রুটি থাকলে দূর করে ফেলি। অন্তরে অহংকার থাকলে আল্লাহর কাছে দুআ করি, তিনি যেন অন্তর থেকে অহংকার দূর করে দেন। নিশ্চয়ই ইসলামে অহংকারের কোনো স্থান নেই। আপনার বিপুল টাকা-পয়সা থাকতে পারে, তাই বলে আপনি অন্যের চেয়ে উত্তম নন। সম্পদ কখনো ভালো-খারাপের মানদণ্ড হতে পারে না। সুন্দর চেহারা ভালো-খারাপের মানদণ্ড নয়। অর্থকড়িই যদি সফলতার মাপকাঠি হতো, তবে দুনিয়ার সবচেয়ে সফল মানুষ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হতেন। কিন্তু তিনি ধনী ছিলেন না। এর অর্থ, টাকা কামানো সফলতা নয়।
আমাদের সাফল্য নিহিত রয়েছে আল্লাহর আজ্ঞাপালনে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মানবজাতি এবং জিনদেরকে শুধুমাত্র তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। যদি আমরা রমজানে হারামের বিরুদ্ধে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, যদি আমরা রমজানে আমাদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, জিহ্বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, প্রবৃত্তির চাহিদা দমিয়ে রাখতে পারি, তাহলে ইনশাআল্লাহ এই রামাদান সফল হবে। এই মাসে আমরা যা শিখব, যা চর্চা করব তা বাকি ১১ মাসেও ধরে রাখার চেষ্টা করতে পারি ইনশাআল্লাহ।
আমরা এমন মানুষদের সংস্পর্শে থাকব যারা আমাদের আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। রামাদান মাসে প্রত্যেক আদম সন্তানকে প্রত্যেক নেক আমলের বিপরীতে বহুগুণে সাওয়াব বৃদ্ধি করা হবে। তবে সিয়ামর সাওয়াব ব্যতীত। তিনি এর সাওয়াব কতগুণ বর্ধিত করবেন, তা শুধু তিনিই জানেন, সুবহানআল্লাহ।
আল্লাহর কাছে আমাদের গুনাহের জন্য তাওবা করতে হবে। যে গুনাহগুলো আমরা জেনে বা অজান্তেই করে ফেলি। আল্লাহ যেন আমাদের পিতামাতাকে ক্ষমা করে দেন। তিনি যেন আমাদের সন্তানকে ক্ষমা করেন, তাদের হিদায়াতের পথে রাখেন। আমাদের সুস্বাস্থ্য দান করেন। অসুস্থদের আরোগ্য দান করেন। আমাদের যেসব বন্ধুবান্ধবরা, কলিগরা, আত্মীয়স্বজনরা দুনিয়া থেকে আখিরাতের পথে গমন করেছেন, আল্লাহ তাদের জান্নাতে উঁচু স্থানে আসীন করুন। ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়ামেনে আমাদের ভাইবোনদের জন্য শান্তিপূর্ণ সমাধান দান করুন। উম্মাহ যেসব জায়গায় নির্যাতিত, আল্লাহ তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করে দিন। আমিন।
GIPHY App Key not set. Please check settings