in

স্ত্রীদের প্রতি মুমিনের আচরণ কেমন হবে?

স্ত্রীদের প্রতি মুমিনের আচরণ

একজন আদর্শ মুমিন দাম্পত্য জীবনে ইসলামের নির্দেশনাগুলো মেনে চলে। স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরণ করে। স্ত্রীর মেয়েলি আচরণগুলো সহ্য করে তো বটেই, সেগুলোকে উপভোগও করে। তার মান-অভিমানগুলোকে মূল্যায়ন করে। কুরআনে এসেছে,

তাদের সাথে দয়া ও সততার সঙ্গে জীবন যাপন কর। [সুরা নিসাঃ ১৯]

অর্থাৎ তাদের সাথে উত্তম ও সম্মানজনক কথা বলতে হবে। কথায়, কাজে, চলাফেরায় সর্বোচ্চ সুন্দর ব্যবহারটা তাদেরকে দিতে হবে। তাদের কাছে আমরা যেমন প্রেমময় আচরণ প্রত্যাশা করি, তাদের সাথেও অনুরূপ আচরণ করতে হবে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

তোমাদের মধ্যে উত্তম হলো ঐ ব্যক্তি যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে উত্তম। [সুনানু তিরমিজিঃ ৩৮৯৫]

একটি হাদীসে আয়াতের এই অর্থটাকে ঠিক এভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে,

(لاَ يَفْركْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ)

অর্থাৎ, ‘‘কোন মুমিন পুরুষ যেন কোন মুমিন নারীকে ঘৃণা না করে। তার কোন একটি অভ্যাস তার কাছে খারাপ লাগলেও অপরটি ভাল লাগবে।’’ [সহিহ মুসলিম: ১৪৬৯]

অর্থাৎ, অশ্লীলতা ও অবাধ্যতা ব্যতীত অন্য কোন এমন দোষ যদি স্ত্রীর মধ্যে থাকে, যে দোষের কারণে স্বামী তাকে অপছন্দ করে, তাহলে সে যেন তাড়াহুড়া করে তাকে তালাক না দেয়, বরং সে যেন ধৈর্য ও সহ্যের পথ অবলম্বন করে। হতে পারে এতে মহান আল্লাহ তার জন্য অজস্র কল্যাণ দান করবেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চারিত্রিক সৌন্দর্যের মধ্যে এটা ছিল যে, তিনি সদাহাস্য সুন্দর ব্যবহার করতেন। পরিবারের সাথে হাস্যরস, নরম ব্যবহার ইত্যাদি করতেন। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে কখনো কখনো দৌড় প্রতিযোগিতা করতেন।

আবু হুরায়রা রা. কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

اسْتَوْصُوا بالنِّساءِ خَيْرًا؛ فَإِنَّ المرأة خُلِقَتْ مِن ضِلعٍ، وَإنَّ أعْوَجَ مَا في الضِّلَعِ أعْلاهُ، فَإنْ ذَهَبتَ تُقيمُهُ كَسَرْتَهُ، وإن تركته، لم يزل أعوج، فاستوصوا بالنساء

তোমরা স্ত্রীদের জন্য মঙ্গলকামী হও। কারণ নারীকে পাঁজরের (বাঁকা) হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের সবচেয়ে বেশী বাঁকা হল তার উপরের অংশ। যদি তুমি এটাকে সোজা করতে চাও, তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তাকে ছেড়ে দাও তাহলে তো বাঁকাই থাকবে। তাই তোমরা নারীদের জন্য মঙ্গলকামী হও। [সহিহ বুখারিঃ ৩৩৩১]

একজন বিচক্ষণ স্বামী তার স্ত্রীর অসংলগ্ন আচরণ সহ্য করে। স্ত্রীদের ছোটখাটো ভুল ক্ষমা করে দেয়। এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম উম্মতকে বারবার সতর্ক করেছেন। এমনকি বিদায় হজের ভাষণে তিনি স্ত্রীদের অধিকারের ব্যাপারে আলাদাভাবে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন,

শোনো, আমি তোমাদের স্ত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহারের উপদেশ দিচ্ছি। তারা তোমাদের নিকট বন্দীর মতো। তাদের ওপর তোমাদের কোনো কর্তৃত্ব নেই যদি না তারা কোনো প্রকাশ্য অশ্লীলতায় জড়িয়ে পড়ে। যদি তারা তাই করে, তাহলে তোমরা তাদের বিছানা পৃথক করে দাও। এবং একান্ত প্রয়োজন হলে হালকাভাবে প্রহার করো। যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়ে যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ির পথ অনুসরণ করো না। জেনে রেখো, তোমাদের যে রূপ অধিকার রয়েছে স্ত্রীদের ওপর, তোমাদের স্ত্রীদেরও তেমন অধিকার রয়েছে তোমাদের ওপর। তোমাদের স্ত্রীদের ওপর তোমাদের অধিকার এই যে, তারা তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে স্থান দেবে না, যাদের তোমরা পছন্দ করো না। এবং তোমাদের অপছন্দনীয় লোককে তোমাদের ঘরে প্রবেশ করতে দেবে না। তোমাদের ওপর তাদের অধিকার হলো, তোমরা যথাযথ পোশাক-পরিচ্ছদ ও উত্তম খাবার-দাবার প্রদান করবে।

একজন আদর্শ স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকে। তার সাথে অন্তরঙ্গ সময় কাটায়। তার আবেগ-অনুভূতিগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল থাকে। তার অপছন্দনীয় বিষয়গুলো এড়িয়ে চলে। তার সুন্দর গুণগুলোর প্রশংসা করে। সহিহ মুসলিমে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন, কোনো মুমিনের জন্য তার মুমিন স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। কারণ তার কোনো বৈশিষ্ট্য যদি তার অপছন্দ হয়, তাহলে তার অন্য কোনো গুণ তাকে নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট করবে।

আপনি যেমন আপনার স্ত্রীকে সাজগোজ ও সুন্দর অবস্থায় দেখতে পছন্দ করেন, তেমনি আপনার স্ত্রী-ও আপনাকে সুন্দর ও পরিপাটি অবস্থায় দেখতে পছন্দ করে। আপনার অপরিচ্ছন্ন থাকা, নোংরা থাকাটা তারা পছন্দ করে না। ইবনু আব্বাস রা. বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর জন্য সুসজ্জিত হতে এমন পছন্দ করি যেভাবে আমার জন্য তার সুসজ্জিত হওয়া পছন্দ করি।’

স্ত্রীকে সাধ্যমতো তার কাজ-কর্মে সহায়তা করুন। এটা আপনার জন্য একান্ত কর্তব্য। তিনি অসুস্থ হলে তার দেখভাল করুন। তার জন্য কোনো কাজ করা কঠিন হয়ে পড়লে আপনি নিজে তার জন্য কাজটা করে দিন অথবা তাকে সহযোগিতা করুন। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন,

তিনি [সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম] পরিবারের কাজ করতেন, যখন সালাতের সময় হতো তখন তিনি সালাতের জন্য বের হয়ে যেতেন। [সহিহ বুখারি : ৬৭৬]

প্রকৃত মুসলমান বৈবাহিক জীবনকে খুব উপভোগ করে। স্ত্রীর সাথে হাসি-কৌতুক, রসিকতা ও সুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে জীবনটাকে অনেক উপভোগ্য করে তোলে। কারণ, এটাও রাসুলুল্লাহ সালাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মুসলিম উম্মাহকে সুসংগঠিত করা এবং তার দীনি দায়িত্ব নিয়ে প্রচুর ব্যস্ত থাকার পরেও তিনি স্ত্রীদের সাথে আমোদ-প্রমোদ ও সুস্থ বিনোদন করতেন।

প্রিয় ভাই, আপনার স্ত্রী আপনার জীবনসাথী। কেবল দুনিয়াতে নয়, জান্নাতেও সে আপনার সাথী। তাই দাম্পত্য জীবনে পরস্পরকে সুন্দর ও পরিশুদ্ধ করে গড়ে তুলুন। উভয়ে মিলে জান্নাতের পাথেয় অর্জন করুন।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র দাম্পত্য জীবন ও সুখ-সমৃদ্ধি দান করুন এই কামনাই করছি। আমিন, ইয়া রাব।

What do you think?

Written by শাহেদ হাসান

আমি লেখালেখি করতে বরাবরই ভালোবেসেছি। বর্তমানে গ্রন্থ অনুবাদ ও মৌলিক লেখার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন ব্লগেও লেখালেখি করছি। পড়াশোনা করছি রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

One Comment

Super food in Bangladesh

দেশে সহজলভ্য কিছু সুপার ফুড ও তাদের উপকারিতা

Different SKin Types

নিজের স্কিন টাইপ বুঝার সহজ উপায়