স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার সম্পর্ক দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সম্পর্কগুলোর অন্যতম। টোনাটুনির সংসারে যেখানে স্বামী-স্ত্রী একে-অপরকে সাপোর্ট দিয়ে যায়, দুনিয়ার নানা কঠিন পথ-পরিক্রমা পাড়ি দিতে একে-অপরকে সহায়তা করে। পোশাক যেমন মানুষকে ধুলোবালি থেকে বাঁচায়, লজ্জা নিবারণ করে তেমনি স্বামী-স্ত্রীও পোশাকের মতো একে-অপরকে নিরাপত্তার চাদরে, ভালোবাসা ও সহানুভূতির চাদরে আগলে রাখেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:
«الدنيا كلها متاع، وخير متاع الدنيا الزوجة الصالحة».
দুনিয়ার পূর্ণটাই সম্পদ [স্বরূপ] তবে দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ হল: সতী স্ত্রী”। [সহিহ আল-জামে আস-সাগির, আহমদ, হাদিস: ৬৫৬৭ নাসায়ি, হাদিস: ৩২৩২]
রাসুলুল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী আয়িশা রা. এর মধ্যকার ভালোবাসার গল্প কেবল ঐতিহাসিক কোনো বৃত্তান্ত নয়; বরং এটা এমন এক গল্প যা সুগভীর ভালোবাসা, বোঝাপড়া ও সুখ-দুঃখের মিশেল। ওনাদের দাম্পত্য জীবনের টুকরো টুকরো নানা ঘটনা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা আজও অসংখ্য দম্পতির জীবনে ঝরাচ্ছে সুখের ফুলঝুরি।
তাদের দুজনের মধ্যে ছিল দারুণ এক কেমিস্ট্রি। একটি বর্ণনায় এসেছে যেখানে আয়িশা রা. স্মরণ করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাথে উৎফুল্লভাবে খেলাধুলো করতেন।
আয়িশা রা. হতে বর্ণিত যে,
عَنْ عَائِشَةَ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّهَا كَانَتْ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي سَفَرٍ قَالَتْ فَسَابَقْتُهُ فَسَبَقْتُهُ عَلَى رِجْلَىَّ فَلَمَّا حَمَلْتُ اللَّحْمَ سَابَقْتُهُ فَسَبَقَنِي فَقَالَ “ هَذِهِ بِتِلْكَ السَّبْقَةِ
তিনি এক সময়ে নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সফরে ছিলেন। তিনি বলেন, তখন আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় তাঁর আগে বেড়ে গেলাম (অর্থাৎ জিতে গেলাম), তারপর যখন আমি মোটা স্থুলকায় হয়ে গেলাম, তখন পুনরায় তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হলাম। তখন তিনি আমার আগে বেড়ে (জিতে) গেলেন। তখন তিনি বললেন, এটা তোমার প্রথমবারে জেতার বদলা। [সুনানু আবু দাউদঃ ২৫৭০]
রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী আয়িশা রা. এর মধ্যকার ভালোবাসার গল্প কেবল ঐতিহাসিক কোনো বৃত্তান্ত নয়; বরং এটা এমন এক গল্প যা সুগভীর ভালোবাসা, বোঝাপড়া ও সুখ-দুঃখের মিশেল। ওনাদের দাম্পত্য জীবনের টুকরো টুকরো নানা ঘটনা থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা আজও অসংখ্য দম্পতির জীবনে ঝরাচ্ছে সুখের ফুলঝুরি।
ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে আয়িশা রা. -এর বুকে তাঁর প্রতি ভালোবাসার সঞ্চার করতেন রাসুলুল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম। আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত আছে যে তিনি বলেছেন, “আমি মাসিকের সময়েও একই গ্লাস থেকে [রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সাথে] পান করতাম। আমি যেখানে মুখ লাগিয়ে পান করতাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম পানির গ্লাস নিয়ে ঠিক সেখানে মুখ লাগিয়ে পান করতেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এমনকি আয়িশা রা. যেখানে মুখ লাগিয়ে হাড় থেকে চুষে খেতেন, তিনিও সেখান থেকেই হাড় চুষে খেতেন।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন:
«كنت أشرب وأنا حائض، فأناوله النبي – صلى الله عليه وسلم -، فيضع فاه على موضع في فيشرب، وأتعرق العرق فيتناوله ويضع فاه على موضع في».
আমি ঋতু স্রাবের অবস্থায় কিছু পান করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিতাম, আর তিনি আমার মুখ রাখার স্থানে মুখ রেখে পান করতেন এবং আমি হাড়ের মাংস খেয়ে শেষ করলে তিনি তা গ্রহণ করে আমার মুখ লাগানোর স্থানেই মুখ লাগাতেন”। [মুসলিম, হাদিস: ৩০০]
তারা পরস্পর একে অপরকে জড়িয়ে রেখেছিলেন ভালোবাসার চাদরে। আয়িশা রা. স্মৃতিচারণ করে বলেন,
كُنْتُ أُرَجِّلُ رَأْسَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا حَائِضٌ
আমি হায়িজ অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথা আঁচড়ে দিয়েছি। [সহিহ বুখারিঃ ৫৯২৫]
এ ছাড়া, আয়িশা রা. সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন,
انَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَسْتَاكُ فَيُعْطِينِي السِّوَاكَ لأَغْسِلَهُ فَأَبْدَأُ بِهِ فَأَسْتَاكُ ثُمَّ أَغْسِلُهُ وَأَدْفَعُهُ إِلَيْهِ
আল্লাহর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক করে তা ধোয়ার জন্য আমাকে দিতেন। আমি নিজে প্রথমে তা দিয়ে মিসওয়াক করতাম, অতঃপর সেটা ধুয়ে তাঁকে দিতাম। [সুনানু আবু দাউদঃ ৫২]
আয়িশা রা. -এর প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা কেবল একে অপরের জীবনসঙ্গীনি হওয়া ও ভালোবাসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। রাসুল ছিলেন আয়িশা রা. -এর জীবনে আলোকবর্তিকার ন্যায়। তিনি তাকে দেখিয়ে দিতেন হিদায়াতের পথ, অনুপ্রেরণা যোগাতেন সত্যের পথে চলতে। তিনি আয়িশা রা.-কে বলেন, “হে আয়িশা, তুমি আল্লাহর নিয়ামতের ব্যাপারে না-শুকরিয়া করো না। কারণ তোমাকে নিয়ামতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।”
কি সুন্দর করে আয়িশা রা. কে তিনি উপদেশ দিচ্ছেন। যা ইঙ্গিত করে, তিনি আয়িশা রা. এর দুনিয়া ও আখিরাতে সুন্দর জীবনযাপন ও দীনি উন্নতি নিয়ে কতটা চিন্তাভাবনা করতেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতকে শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন যে, স্ত্রীকে সাহায্য করা, স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা, তাদেরকে নানা কাজে সহায়তা করা এবং তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখা উত্তম কাজ, ম্যানহুডের বহিঃপ্রকাশ। তিনি বলেছেন,
«ألا واستوصوا بالنساء خيرًا».
ওহে আমার উম্মত! তোমরা নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। [বুখারি, হাদিস: ৫১৮৬; মুসলিম, হাদিস: ১৪৬৮]
আল্লাহ আমাদের দাম্পত্যজীবনে সুখী করুন। আমিন।
GIPHY App Key not set. Please check settings