in

সুপার ফুড কী? সুপার ফুডের উপকারিতা

১ম পর্ব

সুপার-ফুড

গত দশ বারো বছর আগেও মানুষ নিজের শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে খুব বেশী সচেতন ছিল না। বিশেষকরে আমরা বাঙ্গালীরা এমনিতেই ভোজন রসিক হওয়ায় স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাই না। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। এখন প্রায় সব বয়সের মানুষই নিজের স্বাস্থ্য ফিট রাখার ব্যাপারে অনেক বেশী আগ্রহী। ফলে পরিবর্তন এসেছে খাদ্যাভাসের। সেই সাথে ধীরে ধীরে চাহিদা বেড়েছে সুপার ফুডের। কারণ এই খাবারগুলোতে উচ্চ মাত্রায় মিনারেল, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে থাকে। তাই এই খাবারগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকগুন বাড়িয়ে দিতে পারে। আর এই কারনেই মূলত সুপার ফুডের এত বেশি জনপ্রিয়তা। আজকে আমরা সুপার ফুড নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। চলুন তাহলে শুরু করি।

সুপার ফুড কী?

সুপার ফুড হল এমন কিছু খাবার যেগুলোতে পুষ্টির পরিমান অনেক বেশী থাকে। এর মানে হল এই খাবারগুলোতে ক্যালোরির পরিমান থাকে খুব কম আর পুষ্টির পরিমান থাকে খুব বেশী। এগুলোতে প্রচুর পরিমানে খনিজ, ভিটামিন, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হল প্রাকৃতিক অণু যা কিছু নির্দিষ্ট খাবারে থাকে। তাই পুষ্টিবিদদের মতে এই খাবারগুলো নানাবিধ রোগের বিরুদ্ধে আমাদের শরীরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। যেমনঃ  

  • হৃদরোগ
  • ক্যান্সার
  • আর্থরাইটিস
  • স্ট্রোক
  • শ্বাসতন্ত্রের রোগ
  • ফুস্ফুসের রোগ
  • পারকিনসন্স
  • ইমিউনিটির অভাব ইত্যাদি

সুপার ফুড বিশেষ কোন একটি খাবার নয়, এমনকি সুপার ফুড (Super Food) বৈজ্ঞানিকভাবে অনুমোদিত কোন শব্দও নয়। পুষ্টি বিজ্ঞানের ভাষায় বিশেষ কিছু খাবার যেগুলোর পুষ্টিগুণ অনেক বেশী তাদের ভিন্নভাবে পরিচিত করানোর জন্যই মূলত প্রথম এই নামটির প্রচলন ঘটানো হয়। এটি ছিল তৎকালীন সময় একটি বিপননের কৌশল মাত্র। তবে ধীরে ধীরে সুপার ফুড নিয়ে গবেষণা বাড়তে থাকে এবং এর পরিধি ও জনপ্রিয়তাও বাড়তে থাকে। এভাবে ২০১৫ সালের পর থেকেই সুপার ফুড সাধারন জনগণের মাঝে ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। বর্তমানে স্বাস্থ্য সচেতন প্রায় সবাই নিজের পছন্দের সুপার ফুডগুলোকে তাদের খাদ্য তালিকাতে নিয়মিত রেখে থাকেন। চলুন দেখি এই সুপার ফুডগুলো আমাদের কি কি উপকারে আসে।

সুপার ফুড বিশেষ কোন একটি খাবার নয়, এমনকি সুপার ফুড (Super Food) বৈজ্ঞানিকভাবে অনুমোদিত কোন শব্দও নয়। পুষ্টি বিজ্ঞানের ভাষায় বিশেষ কিছু খাবার যেগুলোর পুষ্টিগুণ অনেক বেশী তাদের ভিন্নভাবে পরিচিত করানোর জন্যই মূলত প্রথম এই নামটির প্রচলন ঘটানো হয়।

সুপার ফুডের উপকারিতা

১। প্রদাহ কমায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

বেশীরভাগ সুপার ফুডেই প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা আমাদের ক্যান্সার এবং হৃদরোগ থেকেও নিরাপদ রাখতে ভূমিকা রাখতে পারে। তাই কোন সাপ্লিমেন্ট বা ঔষধ সেবনের চেয়ে যে সব খাবারে প্রাকৃতিকভাবেই অধিক পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে সেগুলো খাওয়ায় নিরাপদ। পুষ্টিবিদদের মতে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট সবচেয়ে সাধারন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি, ই, ক্যারোটেনইড, ফ্ল্যাভোনইড, ট্যানিন ইত্যাদি। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো কিছু সুপার ফুডে উচ্চ মাত্রায় থাকে। যেমনঃ ব্লুবেরি, লাল আঙ্গুর, বাদাম, পালং শাকের মত গাঢ় সবুজ শাক ইত্যাদি।

২। কিছু সুপার ফুড কার্ডিওভাস্কুলার রিস্ক ফ্যাক্টর কম করে

২০০৮ সালে ৩২ জন উচ্চ কোলেস্টেরলে আক্রান্ত পুরুষের উপর একটি পরীক্ষা চালানো হয়। তাদের ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত ১৫০ মিলি পাতাকপি (Kale- বাঁধাকপির একটি জাত) জুস খেতে দেয়া হয়। এই পরীক্ষায় তাদের শরীরে পাতাকপির জুসের উল্লেখযোগ্য প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। তাদের সিরাম লিপিড প্রোফাইলে ইতিবাচক পরিবর্তন হয় যার কারনে তাদের করোনারি আর্টারি ডিজিজের রিস্ক কমে আসে। এছাড়াও ২০১৫ সালের একটি স্টাডি থেকে দেখা যায়, কাঠ বাদাম লিপিড মেটাবলিজম উন্নত করে এবং ওজন ও ডায়াটারি প্যাটার্ন-এ কোন পরিবর্তন ছাড়াই ভালো কোলেস্টেরলের উপাদান বৃদ্ধি করে।

৩। সুপার ফুড স্তন এবং ফুস্ফুসের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে

কিছু সুপার ফুডের ক্যান্সার প্রতিরোধ করার অসাধারন ক্ষমতা রয়েছে। ২০০২ সালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় বলা হয় স্ট্রবেরি, রশুন, পাতাকপি শরীরে NDMA কমাতে সাহায্য করে যেটা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

আরো একটি স্টাডিতে দেখা যায় যে, অন্যতম সুপার ফুড গ্রীন টি-ও একই কাজ করে। গ্রীন টি শরীরে ক্যান্সারাস টিউমারের বৃদ্ধি রোধ করে। এছাড়াও গ্রীন টি ত্বক, ফুস্ফুস, মুখ, এসোফেগাস, পাকস্থলি, অন্ত্র, ব্লাডার, লিভার, অগ্ন্যাশয়, প্রোস্টেট, ও ম্যামারি গ্ল্যান্ডের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখে বলে বিভিন্ন স্টাডি থেকে জানা যায়।

৪। স্মৃতি উন্নত করতে সাহায্য করে

বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ডিমেনশিয়া, অ্যালঝেইমারের মত সমস্যাগুলো দেখা দিতে শুরু করে। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে এই সমস্যাগুলো বেশী দেখা দেয়। কিছু সুপার ফুড যেমন ব্লু বেরির জুস নিয়মিত সেবনে স্মৃতি অনেকটায় উন্নত হয় বলে বিভিন্ন স্টাডি থেকে জানা গেছে।

৫। সুপার ফুডে প্রদাহ-বিরোধী উপাদান থাকে

যুগ যুগ ধরে আমাদের দেশে আয়র্বেদিক চিকিৎসায় হলুদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পুষ্টিবিদদের মতে হলুদ ভীষণ উপকারী সুপার ফুডগুলোর অন্যতম। এতে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান রয়েছে যা মানব শরীরে প্রদাহ কমাতে দারুন কাজ করে। হলুদ ছাড়াও যে সব খাবারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে সেগুলোও প্রদাহ কমাতে ভালো কাজ করে।

এছাড়াও বিভিন্ন সুপার ফুড ত্বকে বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। এমনকি ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে।

পরিশেষে,

সুপার ফুডের স্বাস্থ্য উপকারীতা এত বেশী যে পুষ্টিবিদরা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাতে কিছু সুপার ফুড রাখার পরামর্শ দেয়। ধারাবাহিক আলোচনায় আজকে আমরা সুপার ফুডের উপকারীতা নিয়ে আলোচনা করলাম। পরবর্তী পর্বে আমরা পুষ্টিগুনে ভরপুর কিছু সুপার ফুডের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব। তাই আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

What do you think?

Written by সানজিদা আলম

একজন ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার। টেকনোলজি, স্বাস্থ্য, প্রোডাক্ট রিভিউ এবং ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। লেখালেখির পাশাপাশি ভালোবাসি পড়তে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

বাজেট পিসি

২০ হাজার টাকায় বাজেট পিসি বিল্ড

রাসুলুল্লাহ (সা.) ও আয়িশা রা. -এর দাম্পত্য জীবন