৫ টি বীজ জাতীয় খাবার যা আপনার হেলদি ডায়েটে রাখতে পারেন। কারণ উদ্ভিদের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত প্রাথমিক উপকরণ বীজে থাকে। এই কারণে এসব বীজ অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার।
বীজ ফাইবারের বড় উৎস। এতে স্বাস্থ্যকর মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। বিভিন্ন বীজ বা শস্যদানা আপনার হেলদি ডায়েটের অংশ হিসাবে খাওয়া হলে তা আপনার রক্তে শর্করা, কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন এবং ফাইটোকেমিক্যাল। বীজ উন্নত কার্ডিওভাসকুলার, হজম, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত; গবেষণায় জানা যায় যে বীজের নিয়মিত ব্যবহার রক্তে শর্করা এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি হাড়ের খনিজ ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখতে পারে, স্থূলতা এবং নির্দিষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
বীজ জাতীয় খাবার কি?
উদ্ভিদের বংশবিস্তারের মূল উপকরণ হচ্ছে বীজ। যেকোন বীজই উদ্ভিদ জগতের ধারক ও বাহক। এটি ফসল উৎপাদনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। বীজ বলতে ফসলের যে কোনো অংশ, দানা অথবা অঙ্গ যেটি অনুরূপ একটি ফসল পুনঃ উৎপাদনে সক্ষম তাকেই বোঝায়। ফল, ফুল বা ফসলের বীজ যেমন নতুন গাছের বংশ রক্ষায় ব্যবহৃত হয় তেমনি কিন্তু খাবার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। তবে সব বীজই খাওয়া যায় না। কিছু কিছু বীজকে আমরা খেয়ে থাকি যার স্বাদও অনেক। যেমন তিল, তিসি, কুমড়ার বীজ, তোকমা ইত্যাদি। সেইসাথে এসব বীজ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি।
এই আর্টিকেলটিতে খাওয়ার উপযুক্ত এমন ৫টি স্বাস্থ্যকর বীজের পুষ্টি উপাদান এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা বর্ণনা করব।
বীজ উন্নত কার্ডিওভাসকুলার, হজম, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের সাথে যুক্ত; গবেষণায় জানা যায় যে বীজের নিয়মিত ব্যবহার রক্তে শর্করা এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি হাড়ের খনিজ ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে অবদান রাখতে পারে, স্থূলতা এবং নির্দিষ্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
১/ চিয়া বীজ
টিভি বিজ্ঞাপনে সর্বপ্রথম একটি মৃৎপাত্রে অঙ্কুরিত হওয়ার দৃশ্য দেখানোর পর চিয়া সীড বা বীজ খাওয়া অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বর্তমানে এই বীজগুলি একটি সুপার ফুড হিসাবে পরিচিত। মাত্র ১ আউন্স বা ২টেবিল চামচ চিয়া বীজে প্রায় ১০ গ্রাম ফাইবার রয়েছে। এ বীজ ব্লেন্ডারে পিষে দই বা শাকসবজিতে মিশিয়ে খাওয়া যায়। আবার এগুলিকে তরল পদার্থে যেমন পানি, দুধে ভিজিয়ে রেখেও খাওয়া যায়। বিশেষ করে জুস বা বাদাম দুধে। কারণ এ বীজ ভেজালে নরম হয়ে যায়।
২/ কুমড়োর বীজ
বাংলাদেশের পাশাপাশি সারা বিশ্বেই মিষ্টিকুমড়া একটি জনপ্রিয় সবজি। এ সবজিটি কাচা পাকা দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়। তবে পাকা কুমড়ার একটি লাভ হল এটা অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায় এবং এর বীজ খাওয়া যায়। কারণ মিষ্টিকুমড়ার বীজ অনেক উপকারি একটি খাদ্যবীজ। কুমড়োর বীজে আছে ম্যাগনেসিয়াম ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যা আপনার হৃদপিণ্ড ভালো রাখে, শরীরে শক্তি তৈরি করতে সাহায্য করে এবং পেশীকে শক্তি দেয়। বাংলাদেশে সাধারণত এ বীজ উপরের খোসা বেছে ভেতরের শাস হালকা ভেজে ভর্তা করে বা খালি খাওয়ার রীতি আছে। তবে অন্যান্য দেশে এগুলি সারা বছর ধরে স্যুপ বা সালাদ টপার হিসাবে এবং সিরিয়ালে মিশিয়ে খাওয়া হয়।
৩/ ডালিম বীজ বা বেদানা
ডালিম বা বেদানা নিজেই পুরোটা ফল। তবে উপরের খোসা ফেলে ভেতরের দানাদার অংশটিই মুলত খাওয়া হয়। এটিই ডালিম বীজ। এর থেকে সুস্বাদু রস বের করে জুস বানিয়ে খাওয়া যায়। এগুলি খেতে মিষ্টি। এগুলিতে আছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এক কাপ ডালিমের বীজে মাত্র ১৩০ ক্যালোরি থাকে।
৪/ তিল বীজ
তিল এমন একটি খাবার যা সারাবিশ্বেই খাওয়া হয়। আমাদের দেশে সাধারণত তিল ভর্তা বেশি খাওয়া হয়। এছাড়া তিল থেকে তেলও হয়। সাথে তিলের খাজা, নাড়ু, হালকা ভেজে খালিও খাওয়া হয়। তবে এখনকার ফাস্টফুডের জামানায় খাবারে তিলের ব্যবহারেও নতুনত্ব এসেছে। বার্গার বা কোন বানরুটির উপরে সাদা তিল যেন থাকবেই। এছাড়া সালাদ বা নানারকম খাবারে তিলের ব্যবহার হয়ে থাকে। আর সবজির বা ফলের সালাদে তিলের তেল ব্যবহার করেও খাওয়া যায়। তিলে আছে উচ্চ পরিমাণে এক ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড যা খারাপ ধরনের কোলেস্টেরল কমাতে পারে। পুরো তিল বীজই ফাইবার এবং প্রোটিনে সমৃদ্ধ যা আমাদের পেশি থেকে হরমোন পর্যন্ত সমস্ত কিছু তৈরিতে সাহায্য করে। এছাড়া তিল বীজে লাইসিন, মেথিওনিন, ট্রিপটোফেন নামের গুরত্বপূর্ণ অ্যামিনো অ্যাসিডও বিদ্যমান। তিল আমাদের থাইরইয়েড গ্রন্থি ভালো রাখে। তিলের তেল এ্যালার্জিজনিত শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে।
৫/ তোকমার দানা বা বীজ
বীজ জাতীয় খাবারের মধ্যে তোকমা অন্যতম। এ খাবারটি খুবই সাধারণ, সস্তা এবং পুষ্টিকর যা আপনার হেলদি ডায়েটে রাখতে পারেন। তোকমা হল ছোট কালো রঙের ডিম্বাকৃতির একটি বীজ, যা পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর জেলির মত থকথকে হয়। এটা বিভিন্ন মিষ্টি পানীয় কিংবা শরবতে মিশিয়ে খওয়া হয়। বিভিন্ন ভেষজ চিকিৎসায় তোকমা বীজ অন্যতম একটি উপাদান।
১০০ গ্রাম তোকমার বীজে পুষ্টি উপাদান রয়েছে-
- ১৪.৮ গ্রাম প্রোটিন, লিপিড ১৩.৮ গ্রাম, ৬৩.৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার ২২.৬ গ্রাম, ৪৪২ গ্রাম ক্যালোরি এবং প্রতি টেবিল চামচ তকমায় আছে (১৩ গ্রাম) প্রায় ৭৫.৫ ক্যালোরি।
আর ১০০ গ্রাম তোকমার বীজে থাকা প্রধান খনিজগুলি হল-
- ২.২৭ মিলিগ্রাম আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ৩১.৫৫ মিলিগ্রাম, ১.৫৮ মিলিগ্রাম জিঙ্ক।
তোকমার বীজে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার থাকে। ফাইবারের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলোর মধ্যে একটি হল এটি কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম বা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, যা এখনকার দিনে সবচেয়ে সাধারণ পাকস্থলীর সমস্যা। কারণ আঁশযুক্ত খাবার কার্ডিওভাসকুলার রোগ, কোলোরেক্টাল ক্যান্সার এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো অবস্থার ঝুঁকি কমাতে পারে। সেইসাথে অতিরিক্ত ওজন কমাতেও এর জুড়ি নেই।
ALA (আলফা-লিনোলিক অ্যাসিড) একটি অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড। শরীর এটি তৈরি করতে পারে না, তাই মানুষকে এটি খাদ্য উৎস থেকে পেতে হবে। তোকমার দানায় ALA বেশি থাকে। এজন্য তোকমার দানা খেয়ে আমরা এ উপাদানটি পেতে পারি।
আজকে জানালাম ৫ টি বীজ জাতীয় খাবার নিয়ে যা আপনার হেলদি ডায়েটে রাখতে পারেন। আকারে ছোট কিন্তু পুষ্টিমান অনেক এরকম একটি খাবারই হল বীজ। তবে কোনটি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া ঠিক নয়। নির্দিষ্ট পরিমাণে এসব বীজ গ্রহণ করলে তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর হবে আশা করি। যেমন আপনার যদি ডাইভার্টিকুলাইটিস থাকে তবে আপনার বীজ খাওয়া এড়ানো উচিত। এছাড়া এ্যালার্জিজনিত সমস্যা থাকলেও এড়িয়ে চলুন।
GIPHY App Key not set. Please check settings