in

প্রাকৃতিকভাবে হাঁটু ব্যথা নিরাময়ে ৫টি সহজলভ্য খাবার

হাঁটু ব্যথা নিরাময়ে প্রাকৃতিক উপায়

বয়স চল্লিশ ছুঁলেই হাঁটু ব্যথা বা জয়েন্ট ব্যথায় ভোগে না এমন মানুষ বিশেষ করে নারী খুঁজে পাওয়া কঠিন। হাটতে, বসতে, সিঁড়ী বেয়ে উঠতে এমনকি শুয়ে থাকার সময় হতে পারে এই যন্ত্রনাদায়ক সমস্যা। এই দীর্ঘস্থায়ী হাঁটু ব্যথা বারসাইটিস, আর্থ্রাইটিস, বা কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আঘাতের কারণে হতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে কেবলমাত্র বয়সের ফলে ক্ষয় জনিত কারনেও হাটুর ব্যাথা হতে পারে। তবে কারণ যেটাই হোক না কেন, এই ব্যাথা মারাত্বক যন্ত্রনাদায়ক হতে পারে এবং দৈনন্দিন জীবনকেও কষ্টদায়ক করে তুলতে পারে। পরিস্থিতি এমন হতে পারে যে, হাঁটতে, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে, এমনকি আরামদায়ক অবস্থানে শোয়ার সময়ও অসুবিধা হতে পারে। যার কারনে এই হাঁটুর ব্যথা সারাদিনের সব কাজকেই কষ্টদায়ক করে তুলতে পারে।

মজার ব্যাপার হল আপনি সারা দিন যা খান তাই কিন্তু আপনার শরীরে হওয়া ব্যথাকে প্রভাবিত করতে পারে বিশেষ করে যে কোন প্রদাহকে। তাই আমরা এখনে বিশেষ কিছু খাবার নিয়ে আলোচনা করবো যা প্রাকৃতিকভাবে হাঁটুর ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে। চলুন তাহলে শুরু করি।

১। গাজর

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে যুগ যুগ ধরে পুষ্টিবিদরা গাজর খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তবে এটা ছাড়াও গাজরের আরো অনেক উপকারীতা রয়েছে। পুরোনো চাইনিজ চিকিৎসা পদ্ধতিতে হাটুর ব্যাথা দূর করতে বহুদিন থেকেই গাজর খেতে বলা হয়ে থাকে। গাজরে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন এ এবং বিটা ক্যারোটিন থাকে এবং দুটোই প্রদাহবিরোধী উপাদান। যদিও গাজর রান্না করে খাওয়াই উত্তম তবে অনেকেই রান্না করা গাজর খেতে পছন্দ করেন না। নিয়মিত গাজর খেলে তাই উল্লেখযোগ্যহারে হাঁটুর ব্যথা কমতে পারে।

২। হলুদ

আমরা বাঙ্গালীরা এমনিতেই নিয়মিত তরকারি রান্নাতে হলুদ ব্যবহার করে থাকি যেটা হাঁটুর ব্যথা কমাতে দারুন কার্যকরী। এই হলুদে প্রচুর পরিমাণে কারকিউমিন থাকে। এই কারকিউমিন বহু শতাব্দী ধরে ওষুধে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, বিশেষ করে ভেষজ, কারণ এতে প্রদাহ-বিরোধী ক্ষমতা রয়েছে। এটি নিয়মিত খাওয়া আপনার হাঁটুর ব্যথা এবং অন্য যে কোনও ধরণের বেদনাদায়ক জয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে। এর ব্যথা নিরাময় করার ক্ষমতা প্রায় আইবুপ্রোফেনের মতোই।

৩। আপেল সিডার ভিনেগার

আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার কথা শুনলে প্রথমেই সালাদ খাওয়ার কথা মাথায় আসে। তবে শুধু সালাদ ছাড়াও আরো নানাভাবে আপেল সাইডার ভিনেগার খাওয়া যেতে পারে। এটি হাঁটুর ব্যথা উপশম করতে ব্যবহার করা যেতে পারে তবে আপনি যদি এটি পান করতে না চান তাহলে ব্যথা যুক্ত এলাকায় একে সরাসরি লাগাতে পারেন। বিশেষজ্ঞগণ প্রতিদিন কমপক্ষে দুই টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার পান করার পরামর্শ দেন কারণ এটি আপনার হাঁটুর চারপাশে বিষাক্ত পদার্থ দ্রবীভূত করতে সাহায্য করে যা প্রদাহের কারণ হিসাবে পরিচিত। আপনি আপেল সিডার ভিনেগার অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে আপনার হাঁটুতে অন্তত এক সপ্তাহের জন্য ম্যাসাজ করতে পারেন, এই জাদুকরী তরলের সুফল আপনি সাথে সাথেই অনুভব করতে পারবেন।  

৪। আদা

আদা আরেকটি অসাধারণ খাবার যা আপনি খেতে পারেন বা আপনার ব্যথাযুক্ত স্থানে সরাসরি ঘষতেও পারেন। আপনি যাই করুন না কেন, ফলাফল নিয়ে খুশি হবেন কারণ আদা শুধুমাত্র ভালো স্বাদই দেয় না, এর গন্ধও চমৎকার। আদার মধ্যে জিঞ্জেরল নামক একটি সক্রিয় উপাদান রয়েছে যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি পদার্থ। আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের উপর চালানো গবেষণা থেকে জানা যায় যে, যখন তাদের ওষুধ হিসেবে আদা সেবন করানো হয় তখন তাদের ব্যথা অনেকটাই কমে যায়। আপনি বিভিন্ন ধরণের সুস্বাদু খাবার বা চা তৈরিতে গ্রেট করা আদাও ব্যবহার করতে পারেন।

৫। সরিষার তেল

সরিষার তেল কেনার সময় তা খাঁটি কিনা তা ভালোভাবে পরখ করে কিনুন। সরিষার তেল অলিভ ওয়েল অথবা নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে হাঁটুতে ম্যাসাজ করতে পারেন। আবার খাঁটি সরিষার তেল রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন এতে খাবার একদিকে যেমন অনেক সুস্বাদু হবে অন্যদিকে ব্যথা যুক্ত স্থানে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে ব্যথা কমাতে পারে। আরও ভালো ফলাফলের  জন্য, সরিষার তেলের সাথে কিছু পেঁয়াজ এবং কিছু রসুন ভাজুন কারণ উভয়ই অ্যালিসিনে সমৃদ্ধ যা প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যে পরিপূর্ণ। এবার এই তেল হাঁটুতে মালিশ করুন।

উপরে উল্লেখিত প্রতিটা খাবারই প্রদাহ কমাতে অনেক কার্যকর। এই সহজলভ্য খাবারগুলো সাধারনত আমাদের সবার রান্নাঘরেই থাকে। তাই হাঁটু ব্যথা উপসম করতে কেবল মাত্র ঔষধের উপরে ভরসা না করে এই সাধারন খাবারগুলোও খেয়ে দেখতে পারেন। আশা করি এই সাধারন খাবারগুলো প্রাকৃতিকভাবে আপনার হাঁটুর ব্যথা নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।

What do you think?

Written by সানজিদা আলম

একজন ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার। টেকনোলজি, স্বাস্থ্য, প্রোডাক্ট রিভিউ এবং ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। লেখালেখির পাশাপাশি ভালোবাসি পড়তে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Disadvantage of sugar

চিনির মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি যা সম্পর্কে অবশ্যই জানা উচিত

Circadian rhythm

জৈবিক ঘড়ি সার্কেডিয়ান রিদম কী, লাইফস্টাইলে এর প্রভাব