আমাদের খাদ্যতালিকায় সুষম খাদ্যের মাঝে একটি উপাদান হলো ভিটামিন৷ এই ভিটামিনের আবার বেশ কয়েকটি ভাগ আছে। তার মাঝে আমাদের শরীরের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন হলো ভিটামিন ডি (Vitamin D)। আজ আমরা এই লেখা থেকে, ভিটামিন ডি এর খাদ্যতালিকা সম্পর্কে জানতে পারব।
ভিটামিন ডি কী?
ভিটামিন ডি হলো এমন একটি সেকোস্টেরয়েড গ্রুপ যা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফেট এর আন্ত্রিক শোষণের জন্য দায়ী। এবং এটি মানবদেহে বিভিন্ন জৈবিক প্রভাব সৃষ্টি করে। এই ভিটামিন চর্বিতে দ্রবণীয়।
ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্যতালিকা
বেশ কিছু খাবার আছ, যা কিনা আমাদের দেহে ভিটামিন সরবরাহ করে। এগুলোর মাঝে শাকসবজি অন্যতম। আর, কোন খাবারগুলো আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি-র যোগান দেবে, তা আমরা এখন ধাপে ধাপে জানতে পারবো।
কোন কোন খাবারে ভিটামিন ডি আছে?
- সামুদ্রিক মাছ
- তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত মাছ
- মাশরুম
- কমলার জুস
- দুধ
- ওটমিল
- ডিমের কুসুম
- পনির
- মাখন
- ছানা
- দই
- গম
- বার্লি
- বাদাম
- গরুর কলিজা
১. সামুদ্রিক মাছ
সামুদ্রিক মাছ ভিটামিন ডি এর একটি উৎকৃষ্ট উৎস। এই সময়ে সামুদ্রিক মাছ খুঁজে পাওয়া কঠিন কিছু নয়। স্যামন মাছ একজন মানুষের দৈনিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি এর প্রায় ৬৬ ভাগ পুরণ করতে সক্ষম।
২. তৈলাক্ত ও চর্বিযুক্ত মাছ
তৈলাক্ত আর চর্বিযুক্ত মাছ খেলে শরীরের ভিটামিন ডি এর অনেকটা ঘাটতি পূরণ হয়। এসব তৈলাক্ত মাছের মাঝে আছ পাঙাশ মাছ, টুনা মাছ ইত্যাদি। স্যামন মাছ থেকেও কিন্তু ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। ‘USDA’ এর Database এর তথ্যানুযায়ী, প্রতি ১০০ গ্রাম স্যামন মাছে ৫২৬ IU ভিটামিন ডি আছে।
৩. মাশরুম
যারা মাছ খেতে একোবারেই পছন্দ করেন না, তারা বিকল্প হিসেবে মাশরুম খেতে পারেন। এটিও ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করতে সাহায্য করে। আমাদের দেশে এখন প্রচুর পরিমাণে মাশরুমের চাষ হয়।
৪. দুধ, ডিমের কুসুম
আমাদের শরীরের পুষ্টির জন্য ডিম আর দুধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদিন অন্তত এক গ্লাস দুধ পান করলে তা আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করে। দুধে থাকা ক্যালসিয়াম আমাদের হাড়ের গঠন দৃঢ় করে।
আবার, দৈনিক কমপক্ষে একটি করে ডিম খাওয়ার ফলে আমরা ক্যালসিয়াম ও নানারকম নিউট্রিশনের পাশাপাশি ভিটামিন ডি-ও পেয়ে থাকি। ডিমের সাদা আশের চেয়ে ডিমের কুসুমে অধিক পরিমাণে পুষ্টি এবং ভিটামিন ডি উপস্থিত।
৫. পনির, মাখন, ছানা, দই এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত খাদ্য
দুধে ভিটামিন ডি থাকার কারণে, দুধ থেকে তৈরিকৃত প্রায় সব খাবারেই ভিটামিন ডি এর উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। তবে পনিরে অধিক মাত্রায় ভিটামিন ডি আছে, যা আমাদের শরীরে পুষ্টি জোগায়।
৬. বাদাম
বাদাম আমাদের শরীরে নানা রকমের পুষ্টি জোগায়। এতে ভিটামিন ডি ছাড়াও রয়েছে-
- কার্বোহাইড্রেট,
- প্রোটিন,
- ক্যালসিয়াম,
- আয়রন,
- ক্যারোটিন,
- ভিটামিন বি১,
- ভিটামিন বি২।
বাদামে থাকা পুষ্টি উপাদান আমাদের ত্বক এবং চুল সুন্দর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পাঁচ থেকে ছয়টি চীনাবাদাম রাখা যেতেই পারে।
আবার, দৈনিক সকালবেলা দুই থেকে তিনটি করে কাঠবাদাম, কাজুবাদাম অথবা পেস্তাবাদাম রাখা যেতে পারে। কারণ, সকল বাদামই ভিটামিন ডি এর উৎকৃষ্ট উৎস।
৭. গরুর কলিজা
অনেক সময় সুবাসের কারণে অধিকাংশ মানুষই গরুর কলিজা খেতে চাননা। অথচ, গরুর গোশতের চেয়ে, গরুর কলিজাতে অধিক পরিমাণে পুষ্টি উপাদান উপস্থিত। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি। পাশাপাশি, ভিটমিন বি১ থেকে ভিটামিন বি১২ এর প্রতিটি উপাদানই গরুর কলিজাতে রয়েছে।
তাই, যাদের শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি আছে, তাদের উচিত গরুর কলিজা খাওয়া। অতিরিক্ত তেল মসলার পরিবর্তে সামান্য তেল মসলা ব্যবহার করে গরুর কলিজা ভুনা করলে তা বেশি স্বাস্থ্যসম্মত হয়।
৮. ওটমিল
ওটসকে পুষ্টিবিদরা প্রথম সারির সকালের নাশতা হিসাবে মর্যাদা দিয়েছেন। ওটসকে সবচেয়ে পুষ্টিকর শস্য বলা হয়। এটি এমন একটি খাবার, যেটাকে যখন তখন খাওয়া যায়। দুধের সাথে ওটস মিশিয়ে স্ট্রবেরি, জাম, নানারকম ফল দিয়ে খেতে পারেন।
আবার, ওটস দিয়ে তৈরি করা স্যুপ, খিচুড়ি, ফ্রাইড রাইসও খেতে পারেন। ওটসের তৈরি স্মুদি, কেক, বিস্কুটও স্বাস্থ্যসম্মত। ভিটামিম ডি এর দারুণ উৎস ওটস, যা হার্টকে সুস্থ রাখতে সহায়ক।
সবশেষে, আশা করি, আজকের এই লেখা থেকে আপনারা ভিটামিন ডি এর খাদ্যতালিকা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। যারা ভিটামিন ডি এর অভাবে বিভিন্ন সমস্যা এবং রোগের সম্মুখীন হচ্ছেন, তারা নিয়মিত উপরিউক্ত খাবারগুলে খেতে পারেন। স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল এবং এ সংক্রান্ত আরো তথ্য এবং লেখা পেতে আমাদের ব্লগ সাইটটিতে চোখ রাখুন।
GIPHY App Key not set. Please check settings