in

বিয়ে ও দাম্পত্য জীবন – ২য় পর্ব

বিয়ে দাম্পত্য জীবন

সকল দীনদার নারী-পুরুষকে মনে রাখতে হবে যে, বিয়ে আল্লাহপ্রদত্ত একটি উপহার। কিন্তু বিয়ে নামক বাগানের ফুল আপনাআপনি প্রস্ফুটিত হয় না। আল্লাহ মানুষকে এই সুযোগ দিয়ে রাখেননি। কোনো আনন্দ অর্জন করতে হলে সেটার পেছনে মেহনত করতে হবে। এটাই আল্লাহর জগতের নিয়ম।

জীবনের সবকিছুই একটা উপহারের মতো। গিফট পাওয়ার জিনিস, এটা কারো অধিকার নয়। এমনকি আপনার দেহও একটা উপহার। আপনি একে কাজে লাগিয়ে নানা উপকারী কাজের দ্বারা জীবনকে উপভোগ করতে পারেন, কিংবা নির্জীব হয়ে অলসতায় জীবন কাটিয়ে দিতে পারেন।

দুনিয়ার কোনোকিছুই স্থায়ী নয়। এমনকি পাহাড়ের গায়ে যেসব পাথর লেগে থাকে সেগুলোও সেখানে চিরকাল ধরে ছিল না।

আল্লাহ আমাদের তার খলিফারূপে, প্রতিনিধিরূপে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। আমরা এই চমৎকার পৃথিবীর ও এতে অবস্থানরত জীব-জন্তুর অভিভাবক। জীবনে আমাদের পাশে যিনি ছায়ার মতো লেগে থাকেন তিনি হলেন জীবনসঙ্গিনী, ইংরেজিতে যাকে বলে লাইফ পার্টনার। সেই ব্যক্তির সাথে ভালোবাসার মিলনে দুনিয়ায় আসে আমাদের পরবর্তীতে প্রজন্ম। এই পরবর্তী প্রজন্ম আসার প্রক্রিয়াকে আল্লাহ অত্যন্ত সুখকর ও আনন্দময় করেছেন। আমাদের সন্তানদেরকেও আমরা উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে তাদের মতো করে ছেড়ে দিই। জীবনসঙ্গীর সাথে আমরা নিজেদের জীবন গড়ে তুলি। যেখানে থাকে না ভয়, অতৃপ্তি বা অনিশ্চয়তা। আমরা আমাদের জীবনের শুণ্যতা পূরণ করি আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে।

এ জন্যই বিয়েকে বলা হয় অর্ধেক দীন। ইসলাম আমাদের জীবনের প্রতিটা অংশ জুড়ে থাকবে, এটাই হওয়ার কথা। ২৪ ঘন্টা আমরা জীবনকে চালিত করব ইসলামের পথে। পরিবার ও জীবনসঙ্গীর সাথে আমরা জীবনের প্রায় অন্তত অর্ধেক সময় কাটাই। কারো কারো জীবনের শতভাগ সময় পরিবার ও জীবনসঙ্গীর পেছনেই কাটে।

আমরা আমাদের বিপদে আমাদের উপর ন্যস্ত এই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটিকে অবহেলা করি। একাকী জীবনযাপন করা কোনো মানুষেরই উদ্দেশ্য হতে পারে না। বিয়ে না করে নিজেকে অন্যদের চেয়ে উত্তম বা শ্রেষ্ঠতর ভাবার কোনো কারণ নেই। শোকগ্রস্ত বিচ্ছিন্নতায় সুন্দর জীবনকে অতিবাহিত করে কি লাভ? কেন জীবনকে তার স্বাদ থেকে বঞ্চিত করব? কেন আল্লাহ যে স্বাভাবিক চাহিদা আমাদের ভেতর দিয়ে দিয়েছেন বিপরীত লিঙ্গের প্রতি সেটার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করব না? আল্লাহ পুরুষ ও নারীকে এক আত্মা থেকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি চান নারী-পুরুষ উভয়ই যেন মিলেমিশে কাজ করে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে।

یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اتَّقُوۡا رَبَّکُمُ الَّذِیۡ خَلَقَکُمۡ مِّنۡ نَّفۡسٍ وَّاحِدَۃٍ وَّ خَلَقَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا وَ بَثَّ مِنۡهُمَا رِجَالًا کَثِیۡرًا وَّ نِسَآءً ۚ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ الَّذِیۡ تَسَآءَلُوۡنَ بِهٖ وَ الۡاَرۡحَامَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ عَلَیۡکُمۡ رَقِیۡبًا ﴿۱﴾

হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফ্স থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক। [সুরা নিসাঃ ১]

یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ ذَکَرٍ وَّ اُنۡثٰی وَ جَعَلۡنٰکُمۡ شُعُوۡبًا وَّ قَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوۡا ؕ اِنَّ اَکۡرَمَکُمۡ عِنۡدَ اللّٰهِ اَتۡقٰکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ ﴿۱۳﴾

হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি। যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত। [সুরা হুজুরাতঃ ১৩]

নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন আছে। নারীর দরকার পুরুষকে, পুরুষের দরকার নারীকে। কেউ হয়তো নিজের জীবনযাপন ও কর্ম আরেকজনকে ছাড়াই করতে পারবে। কিন্তু এই জীবন পূর্ণাঙ্গ হবে না। এ এক অর্ধেক জীবন।

কোনো সিঙ্গেল ব্যক্তি, বা একাকী বসবাসরত বিধবা নারী বা পরিত্যাক্তা নারী-পুরুষ আপনাকে  বলবে যে, একা একা বাস করা ও বেঁচে থাকা সম্ভব। এমনকি জীবনের কিছু আনন্দও পাওয়া সম্ভব। কারণ আপনি চাইলে স্বার্থপরের মতো একা একা বাঁচতে পারবেন। অন্যদের কথা তেমন না ভেবে যা করতে চান তা করতে পারবেন। কিন্তু এরকম জীবনযাপনের জন্য বিশাল মূল্য চুকাতে হয় যে!

মনে করুন, এক নিয়োগকর্তা আছেন যিনি অন্ধ। কিন্তু তাকে তো নিয়োগ দিতেই হবে। তাই তিনি প্রচুর চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে ভালো কর্মী না দেখেও নিয়োগ দেওয়ার মতো দক্ষতা অর্জন করলেন। অথবা একজন হুইলচেয়ারে ঘুরে বেড়ানো পক্ষাগাতগ্রস্ত ব্যক্তির কথাই ধরুন, সে হাতের ব্যায়াম করে হাতের পেশি বেশ ফুলালো যেন পা না থাকাটাকে সে কোনোভাবে হাত দিয়ে পুষিয়ে দিতে পারে। এ কাজগুলো তো করা সম্ভব। কিন্তু এটা হবে কষ্টদায়ক এবং সুদীর্ঘ প্রক্রিয়া।

বিবাহিত জীবন যেমন জীবনে নানা চাপ নিয়ে আসে। তেমনি জীবনে ভিন্ন রকম রিল্যাক্সের ব্যবস্থাও করে দেয়। ইমাম গাজালি দেখেছেন যেঃ

বিয়ের একটি উপকারিতা হল স্বামী-স্ত্রীর সান্নিধ্যে আনন্দলাভ করা, স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে সুখলাভ করা, আনন্দ ভাগাভাগি করা। এসবের দ্বারা হৃদয় প্রফুল্লতা অর্জন করে, ইবাদতের জন্য শক্তি পায়। কারণ আত্মার স্বভাব হলো বিরক্ত হয়ে যাওয়া, অলস হওয়া। এটা কাজ করতে পছন্দ করে না। যেন কাজ না করাটাই স্বাভাবিক বিষয়। অপছন্দনীয় কাজে নফসকে দীর্ঘসময় ঠেলে এটা কাজ থেকে পিছিয়ে যায়। কিন্তু যদি নফসকে সময়ে সময়ে চাঙ্গা ও পুনরুজ্জীবিত করা হয় তাহলে এটা নতুন প্রাণশক্তি ও উদ্দীপনা লাভ করে। [ইহইয়াও উলুমিদ্দিন]

আল্লাহ যেভাবে দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন ও এর নিয়মাবলি ঠিক করেছেন তাতেই রয়েছে কল্যাণ। বৈবাহিক জীবনে নারী-পুরুষ এটা টিমের মতো করে কাজ করে। মানুষ কিন্তু সব জায়গাতেই দলবদ্ধভাবে কাজ করে। এমনকি খেলাধুলাতেও। তারা এমন একটা কাজ করতে ঐক্যবদ্ধ হয় যা তাদের একার পক্ষে করা সম্ভব না। যেমন, একা একা একটা বিল্ডিং বানানো সম্ভব না। মানুষ নানা পদে ভাগ হয়ে যায়। কেউ ম্যানেজার হয়, কেউ কাজ করে। যেন একটা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দাঁড় করানো যায়। সেখান থেকে জীবিকা রোজকার করা যায়। কিন্তু এতসব দলের মধ্যেও সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ ও মৌলিক দল ও সুন্দর দল হলো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার পবিত্র দলটি। যারা উভয়ে মিলে এক আত্মা হয়ে বাকি জীবনটা হাসি-আনন্দে ও আল্লাহর সন্তুষ্টির মাঝে অতিবাহিত করার সিদ্ধান্ত নেয়।  

What do you think?

Written by শাহেদ হাসান

আমি লেখালেখি করতে বরাবরই ভালোবেসেছি। বর্তমানে গ্রন্থ অনুবাদ ও মৌলিক লেখার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন ব্লগেও লেখালেখি করছি। পড়াশোনা করছি রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

One Comment

বিয়ে-ও-দাম্পত্য-জীবন

বিয়ে ও দাম্পত্য জীবন – ১ম পর্ব

circadian-rhythm-reset

সার্কেডিয়ান রিদম রিসেট করার উপায়