in

বিয়ে ও দাম্পত্য জীবন – ১ম পর্ব

বিয়ে-ও-দাম্পত্য-জীবন

وَ مِنۡ کُلِّ شَیۡءٍ خَلَقۡنَا زَوۡجَیۡنِ لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۴۹﴾

আমি প্রত্যেকটি বস্তু সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর। [সুরা জারিয়াতঃ ৪৯]

জোড়ায় জোড়ায় সৃজনের নীতির ভিত্তিতে পৃথিবীর সমস্ত বস্তু সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রতিটি উদ্ভিদ ও প্রাণীর সৃষ্টিতে আমরা পুরুষ ও নারী জোড়া জোড়া হিসেবে দেখতে পাই। অনুরূপভাবে প্রতিটি বস্তুরই বিপরীত দিক রয়েছে।

আপনি কি বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? শীঘ্রই বিয়ে করতে যাচ্ছেন? শুভেচ্ছা ও শুভকামনা আপনার জন্য। আল্লাহ আপনাদের ভবিষ্যত দাম্পত্য জীবনে বরকত দিন। একজন উত্তম জীবনসঙ্গী আপনাকে দান করুন।

জীবনের অন্যতম একটি বড় পদক্ষেপ হচ্ছে নিজের শৈশবকে পিছনে ফেলে দাম্পত্য জীবনের ভার নিজের কাঁধে তুলে নেওয়া। এতদিন বাবা-মা এর আদর-যত্নে বড় হয়েছেন, দায়-দায়িত্ব খুব একটা নিতে হয়নি। কিন্তু এখন আপনার কাঁধে বর্তাবে আরেক মানবীর দায়িত্ব। কিন্তু জীবনের প্রকৃতিই এরকম। জীবন এভাবেই এগিয়ে যায়। একদিন আপনিও বাবা-মা হবেন। আপনাদের জীবনে এসে ধরা দেবে সুখের জোয়ার। ভাসবেন আনন্দের ভেলায়।

وَ مِنۡ اٰیٰتِهٖۤ اَنۡ خَلَقَ لَکُمۡ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ اَزۡوَاجًا لِّتَسۡکُنُوۡۤا اِلَیۡهَا وَ جَعَلَ بَیۡنَکُمۡ مَّوَدَّۃً وَّ رَحۡمَۃً ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّتَفَکَّرُوۡنَ ﴿۲۱﴾

আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে। [সুরা রুমঃ ২১]

وَ الَّذِیۡنَ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ اَزۡوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّۃَ اَعۡیُنٍ وَّ اجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِیۡنَ اِمَامًا ﴿۷۴﴾

আর যারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন’। [সুরা ফুরকানঃ ৭৪]

বিয়ে জীবনের এমন গুরত্বপূর্ণ এক অনুষঙ্গ যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম একে অর্ধেক দীন বলেছেন। “যে বিয়ে করল সে দীনের অর্ধেক পূরণ করল; সে যেন বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে!” [বায়হাকি]

বিয়ে যে দীনের অর্ধেক এটা বোঝার জন্য চোখ-কান খোলা রাখাই যথেষ্ট। আপনার পরিবারের, আত্মীয়-স্বজনদের ও নেককার ব্যক্তিদের বৈবাহিক জীবন পর্যালোচনা করলে হাদিসের ভাষ্যের সত্যতা উপলব্ধি করবেন।

আপনার বৈবাহিক জীবন সুখ-সমৃদ্ধিতে পূর্ণ হলে আপনার জীবনে যে সমস্যাই আসুক না কেন, যে বিপদের মোকাবিলাই করা লাগুক না কেন, যে অসুস্থতাতেই আক্রান্ত হোন না কেন মনে হবে আপনার সাথে কোনো একটা শক্তি আছে। ভালোবাসার দুর্গের ভেতরে নিরাপদ আপনি। এই শক্তি ভালোবাসার শক্তি।

বিয়ের মাধ্যমে ব্যক্তির ইমানের চর্চা হয়, ইমানি হালত বৃদ্ধি পায়। বিয়েকে ‘অর্ধেক দীন’ বলাটা রাসুলুল্লাহর কথার কথা নয়। কোনো দম্পতি যখন সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালায় তাদের বিয়ে ও পরিবারকে দীনের ওপর টিকিয়ে রাখতে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে – তখন এটাই তাদেরকে জান্নাতের পথে চালিত করবে।

আমি এমন কোনো অবাস্তব রোমান্টিক ভালোবাসার কথা বলছি না যা আপনি টিভি-সিনেমায় দেখে থাকেন। বলছি সেই ভালোবাসার কথা যার অনুপ্রেরণার পাড়ি দিতে পারবেন সাত সমুদ্র তের তেপান্তর, যখন সবাই আপনার বিপক্ষে চলে যাবে তখন যে ভালোবাসা আঁকড়ে ধরে থাকবেন, কারণ আপনি আপনার সঙ্গীনির ব্যাপারে কনফিডেন্ট। তিনি চিরজীবন আপনাকে সাপোর্ট যুগিয়ে যাবেন। আপনার প্রতিরক্ষায় নির্দ্বিধায় এগিয়ে আসবেন।

কি? এমন ভালোবাসা পাওয়া খুব অসম্ভব লাগছে? আপনাদের মধ্যে যারা অসুখী পরিস্থিতিতে, হতাশা ও বিষণ্নতায় ভরপুর পরিবারে বেড়ে উঠেছেন, যেখানে বড়রা তিক্ত, নিষ্ঠুর ও কঠোর আচরণ করেছে, তারা হয়তো ভাবতে পারেন যে অন্য মানুষের সাথে এমন প্রেমময় সম্পর্ক গড়া সম্ভব কিনা।

আল্লাহর কসম, এটা অবশ্যই সম্ভব। যদি আল্লাহ এই বারাকাহ আপনার জীবনে নাজিল করেন। আপনি যদি আল্লাহকে সন্তুষ্ট রাখতে পারেন, যদি সর্বদা আল্লাহর কাছে দীনদার জীবনসঙ্গীনি প্রার্থনা করেন তাহলে আল্লাহ আপনাকে অবশ্যই শ্রেষ্ঠ জীবনসঙ্গী দেবেন ইনশাআল্লাহ।

কিন্তু সুখী বিয়ে আপনাআপনি গড়ে ওঠে না। এর জন্য মেহনত প্রয়োজন।

আপনি খুব সুন্দর একটা বাগানে গেলেন। ফুলের সৌন্দর্য ও প্রশস্ততা, পাখির কলকাকলী, বাগানের বিশালতা, ঘাসের পরিচ্ছন্নতা, পোকামাকড়ের অনুপস্থিতি – এ সবকিছু দেখলে আপনার একবারও মনে হবে না এই মোহনীয় বাগান এমনিএমনিই হয়ে গেছে। দেখলেই বুঝবেন, বাগানটা এমন কেউ বা একদল লোক যত্ন করে করেছে যারা বাগান পরিচর্যা করতে ভালোবাসে। বাগানকে সুন্দর করতে যত কষ্ট আর পরিশ্রমই করতে হোক না কেন, তারা করবে। কারণ এতেই তাদের আনন্দ। বৈবাহিক জীবনে সুখ আনতেও একই জিনিস প্রয়োজন।

ফুলের গাছ লাগানোর সময় যেমন কল্পনা করেন বাগানটা ফুলে ফুলে ভরে গেলে কেমন সুন্দর দেখাবে, তেমনি বিয়ে নিয়েও সুন্দর পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন। কল্পনায় থাকতে হবে, আমার বৈবাহিক জীবনটা ওরকম সুন্দর হোক। এরপর সেই লক্ষ্য পানে এগিয়ে যেতে হবে। বাস্তবতা যদি আপনার প্রত্যাশা থেকে কিছুটা ভিন্নও হয় তাতেও তেমন যায় আসবে না। কারণ আপনার মাস্টারপ্ল্যান হচ্ছে সঠিক দিকে এগিয়ে যাওয়া। যেসব অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটবে সেগুলোও আপনার পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

আবার বাগানের ঘটনায় ফেরা যাক। কি কি বীজ বপন করছেন তা খেয়াল করতে হবে। যে সব গুল্ম বা লতাপাতা আপনি চান না বাগানে থাকুক, সেগুলো উপড়ে ফেলতে হবে। কিছু বীজ থেকে সুন্দর ফুল হয়, আবার কিছু আছে যেগুলো থেকে আগাছা তৈরী হয়। এই আগাছাগুলো ফুল গাছকে ঘিরে ফেলবে এবং বাগানের বারোটা বাজিয়ে দেবে।

দূষিত কীটপতঙ্গের আক্রমণের জন্য আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। সেগুলোরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে। কিন্তু তারা বেঁচে থাকলে আপনার রোপণ করা গাছ নষ্ট হয়ে যাবে।

আপনাকে আবহাওয়ার দিকে নজর রাখতে হবে। যখন পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হবে না তখন বাগানে পানি দিতে হবে। সবকিছু ঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টিপাত না হলে পানি দেওয়ার পরিশ্রম আপনাকে করতে হবে। কিন্তু বাগানকে টিকিয়ে রাখতে হলে আপনাকে যে পরিশ্রম করতেই হবে।

What do you think?

Written by শাহেদ হাসান

আমি লেখালেখি করতে বরাবরই ভালোবেসেছি। বর্তমানে গ্রন্থ অনুবাদ ও মৌলিক লেখার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন ব্লগেও লেখালেখি করছি। পড়াশোনা করছি রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

cirkedian-ridhom-impact-on-lifestyle

সার্কেডিয়ান রিদম যেভাবে বদলে দিতে পারে আপনার জীবন

বিয়ে দাম্পত্য জীবন

বিয়ে ও দাম্পত্য জীবন – ২য় পর্ব