in ,

রোজায় স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য কিছু টিপস

স্তন্যদানকারী মায়েদের রোজা

ইসলামে সন্তানকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এমনকি মাতৃদুগ্ধের উপর সন্তানের অধিকারের কথাও বলা হয়েছে। সামনে আসছে পবিত্র রমজান মাস। এই সময় অনেক মা প্রশ্ন করেন যে রোজা থাকা অবস্থায় সন্তানকে দুধ পান করানো যাবে কিনা? এর উত্তর হল, নিশ্চয় যাবে এবং এতে রোজা বা মায়ের শরীরের কোন ক্ষতিও হবে না। আবার অনেক মা এই প্রশ্ন করেন যে, তাদের বাচ্চা এত ছোট যে সম্পূর্নরূপে মায়ের দুধের উপর নির্ভরশীল। সেক্ষেত্রে তারা রোজা থাকলে সন্তানের দুধের ঘাটতি হবে কিনা। এক্ষেত্রেও পুষ্টিবিদরা বলেন, সেহেরি ও ইফতারিতে সতর্কতার সাথে খাবার নির্বাচন করলে এই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে না। এই সমস্যাগুলোর কথা মাথায় রেখে রোজা থেকে শিশুকে স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করব। চলুন তাহলে শুরু করি।  

১। নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন

রোজায় সুস্থ থাকার জন্য নিজেকে হাইড্রেটেড রাখার কোন বিকল্প নেই। অনেকেই শুধু সেহেরিতেই বেশী করে পানি পান করেন। এটা না করে ইফতার ও সেহেরির মধ্যেবর্তী সময় টুকুতে প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন। আপনার শরীর ডিহাইড্রেড হলেই কেবল শিশুর জন্য দুধের সরবরাহ কম হতে পারে। ইফাতারের পর থেকেই তাই অল্প অল্প করে পানি পান করা শুরু করে দিন। শুধু পানি খেতে ভালো না লাগলে সরবত, ডাবের পানি বা ফলের রসও পান করতে পারেন।   

২। সেহেরিতে মনোযোগ দিন

স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য সেহেরি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। এটি কোন ভাবেই বাদ দেয়া যাবে না। আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা সেহরি খাও, কেননা সেহরিতে বরকত রয়েছে”। (আল বুখারী)

ধীরে ধীরে হজম হবে এবং শক্তি বাড়াবে এমন খাবার যেমন গমের আটার রুটি, লাল চালের ভাত, ওটস ইত্যাদি খেতে পারেন। কিছু প্রোটিন ও সাথে শাকসবজি এবং ফলও সেহেরিতে খাওয়া দরকার।  

৩। স্বাস্থ্যকর ডায়েট

অতি বেশী ভাজা খাবার ইফতারে পরিহার করুন। স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য ইফতার অন্যদের তুলনায় আলাদা হওয়া বাঞ্ছনীয়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনি স্বাভাবিক সময়ে যেমন খাবার দুপুরে খেতেন তেমন খাবারই ইফতারে খাওয়ার চেষ্টা করেন। অর্থাৎ ভাত, সাথে বিভিন্ন রকমের শাকসবজি ও কিছু মাছ অথবা মাংস খেতে পারেন। আর পানির চাহিদা পূরনের জন্য পান করুন পানি, সরবত, এবং ফলের রস। ইফতারিতে এমন সব খাবার নির্বাচন করুন যেগুলো দ্বারা সকল প্রকার খাদ্য উপাদানের চাহিদা পূরন হয়। একই সাথে অবশ্যই বেশী ভাজা ও মশলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন। সাথে অতিরিক্ত মাত্রায় ডেজার্ট খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। এই ভাবে ইফতারির খাবার নির্বাচন করলে মায়ের স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে আর শিশুও পর্যাপ্ত দুধ পাবে।   

৪। ল্যাকটোজেনিক খাবার

কিছু ল্যাকটোজেনিক খাবার স্তন দুগ্ধ বৃদ্ধিতে দারুন কার্যকর। যেমন মেথি, মৌরি, ওটমিল, কালিজিরা, ল্যাক্টেশন চা, বার্লি ওয়াটার, বাদামী চাল, কাজু, বাদাম ইত্যাদি। এই ধরনের খাবার মায়ের খাদ্য তালিকাতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যাতে দুধ সরবরাহ বজায় থাকে।

৫। খেজুর খেতে হবে

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু তাজা খেজুর দিয়ে নামায পড়ার আগে ইফতার করতেন। খেজুর এবং রোজার একটি দীর্ঘ ইসলামী ঐতিহ্য রয়েছে। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং পটাসিয়াম রয়েছে এবং এটি প্রাকৃতিকভাবে শরীরে দ্রুত শক্তি বাড়াতে পারে। তাই ইফতার এবং সেহরির সময় দু-চারটে খেজুর খেতে ভুলবেন না।

৬। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন

সারাদিন রোজা থাকার পর স্বাভাবিকভাবেই সন্ধ্যায় আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। তাই সাংসারিক কাজ কর্মগুলো বিকালে বা সন্ধ্যায় না করে সকালের দিকেই করে ফেলার চেষ্টা করুন। আপনি যদি স্তন্যদানকারী মা নাও হন তারপরেও চেষ্টা করুন গৃহস্থালির কাজগুলো সকালের দিকে করার।

৭। স্তন্যদান অব্যাহত রাখুন

মায়ের শরীরে চাহিদার উপর নির্ভর করে দুধের সরবরাহ থাকে। তাই শিশুকে বারে বারে স্তন্যদান অব্যাহত রাখুন। সন্তান পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখুন। শিশু যদি দিনে ৬/৭ বার প্রশ্রাব করে তাহলে ধরে নেয়া যায় যে সে পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে। তবে শিশু লাগাতার কান্না করলে, ওজন কমতে থাকলে এবং ২৪ ঘন্টায় ৬/৭ বারের কম প্রশ্রাব করলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শক্রমে শিশুর খাবার চাহিদা পূরন করতে হবে।

৮। চা-কফি এড়িয়ে চলুন

রোজা রেখে দুধ চা বা কফি না খাওয়ায় ভালো কারণ এই খাবারগুলো তরল হলেও শরীরে পানির পরিমান কমিয়ে দেয়। তবে একান্তই চায়ের তৃষ্ণা জাগলে হালকা লিকারের লাল চা খেতে পারেন। সেই সাথে নিয়ম করে এক গ্লাস দুধ অবশ্যই পান করুন। সব কিছুর পর আরো একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল ঘুম। ইবাদত ও সন্তান লালন পালনের পাশাপাশী নিজের জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের ব্যবস্থা করুন।

আশাকরি উপরের টিপসগুলো অনুসরণ করলে রোজা থেকেও শিশুকে স্তন্যদান করতে মায়েদের কোন সমস্যা হবে না।

What do you think?

Written by সানজিদা আলম

একজন ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার। টেকনোলজি, স্বাস্থ্য, প্রোডাক্ট রিভিউ এবং ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। লেখালেখির পাশাপাশি ভালোবাসি পড়তে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

ইসলামে নারীর সাজসজ্জা

নারীর সাজসজ্জায় শরিয়তের বিধান

ভ্রমণ সঙ্গী গ্যাজেট

ভ্রমণ সঙ্গী দরকারি স্মার্ট গ্যাজেট