আমরা নারীরা কম-বেশি সবাই ই পরিপাটি থাকতে পছন্দ করি। আল্লাহ তায়ালা যেন মানব বাগানে আমাদের ফুলের ন্যায় সৃষ্টি করেছেন, যারা নিজেদের জ্ঞান-গরিমা আর সৌন্দর্য দ্বারা পৃথিবীর শোভা বর্ধন করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে।
সাজসজ্জা করতে আমাদের ভালো লাগলেও সেটির প্রদর্শন এবং সামগ্রীর ব্যবহার, উপকরণ এসব বিষয়ে আমরা কতটুকু সচেতন? নিজেকে সাজাতে গিয়ে আমরা কোনোভাবে মহান আল্লাহপাকের দেয়া নিয়ম ভঙ্গ করছি নাতো? সর্বোপরি সৌন্দর্য যার দান, তার বিধান নিয়েই আজ আমরা জানব।
হালাল সামগ্রী দিয়ে সাজগোজ
হালাল সামগ্রী দিয়ে তৈরি যেকোনো সাজসজ্জার জিনিসই নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে ব্যবহার করা যায়।যেমন-
মেহেদী
ঈদের সময় থেকে শুরু করে বিবাহ উৎসব – সবখানেই নারীরা হাত রাঙাতে পছন্দ করেন। আর মেহেদীর যেন সেক্ষেত্রে কোনো বিকল্প নেই। ইসলামে শরীয়তের নিয়মানুযায়ী এই বিষয়টিকে উৎসাহিত করা হয়েছে। হাতে মেহেদী পরিধান করা জায়েজ আছে।
সুগন্ধি
সুগন্ধি কে না পছন্দ করে? আজকাল তো বাজারে গেলেই দোকানে মেলে হরেক নামীদামী ব্র্যান্ডের পারফিউম, বডি স্প্রে ইত্যাদি। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন পারফিউমের মূল উপাদান হলো অ্যালকোহল। শরীয়তের বিধান থেকে পাই, ইসলামে সম্পূর্ণরূপে এটিকে হারাম গণ্য করা হয়েছে, যদি তাতে আঙুর বা কিশমিশের নির্যাস থাকে (ইমাম আবু হানিফা (রহ:) এর মতে)।
তাই এমন কোনো সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবেন না যাতে অ্যালকোহল বিদ্যমান। তাজা সুগন্ধিযুক্ত ফুল পরিধান করতে পারেন। তবে অবশ্যই কোনো পরপুরুষ যেন সেই সুগন্ধি না পায়। যদি তা কোনো পরপুরুষকে আকর্ষণ করে গুণাহ এর খাতা কিন্তু আপনারও ভারী হবে।
সাজসজ্জা করতে আমাদের ভালো লাগলেও সেটির প্রদর্শন এবং সামগ্রীর ব্যবহার, উপকরণ এসব বিষয়ে আমরা কতটুকু সচেতন? নিজেকে সাজাতে গিয়ে আমরা কোনোভাবে মহান আল্লাহপাকের দেয়া নিয়ম ভঙ্গ করছি নাতো?
নেইলপালিশ
সাজসজ্জার নিত্য অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে আরেকটি জিনিস তা হলো নেইলপলিশ। রাঙা নখ তো আপনাকে সুন্দর করে তুলবেই৷ কিন্তু নেইলপলিশ যে উপাদান দিয়ে তৈরি হচ্ছে তা যদি হারাম হয় তবে অবশ্যই ওই নেইলপলিশ আপনার জন্যেও নিষিদ্ধ।
নিয়মিত সালাত আদায় করলেই শুধু হয় না, কায়েম করতে হয়। সালাত কায়েম করতে হলে ওযু খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ওযু এর সময় নখে পানির স্পর্শ থাকা জরুরি। কিন্তু নেইলপলিশ পরিধানরত অবস্থায় পানি পৌঁছাতে পারেনা বিধায় ওযু যাতে কবুল হয় সেজন্য নখ সঠিকভাবে পরিষ্কার করে নেইলপলিশবিহীন অবস্থায় ওযু করবেন।
ফরজ গোসলের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাহলে প্রশ্ন হলো আপনি নেইলপলিশ পরবেন কখন? কেমিকেলের জন্য বারবার যদি নেইলপলিশ ব্যবহার করে ওযুর সময় ধুয়ে ফেলেন তবে তাতে আপনার নখেরই ক্ষতি। তাই সহজ উপায় হলো হায়েজ (পিরিয়ড) চলাকালীন সময়ে নেইলপলিশ পরা।
চুল বাঁধা
রকম-বেরকমের বেণী বাঁধা, তেল লাগানো, নিয়ম করে আঁচড়ানো- হ্যাঁ আপনাদের চুলের কথাই বলছি। আমরা নারীরা এই একটা বিষয়ে খুব সচেতন থাকি বলা চলে। চুলের কত রকম যত্ন যে আমরা করি! নানারকম কাট দিয়ে চুলের ভোল পাল্টাই। কিন্তু অনেকে আছেন যারা চুল এতটাই ছোট করে কাটেন যে পুরুষ সদৃশ দেখা যায়।
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী, একজন নারী হিসাবে চুলের সাজসজ্জা কখনোই এমন হওয়া যাবেনা যাতে আপনাকে পুরুষের মতো দেখায়। আর চুল মাহরাম ব্যতীত অন্যরা দেখলে তো গুণাহ হচ্ছেই।
অনেকে জানতে চান হিজাব পরার কারণে অতিরিক্ত গরমের সময় অনেক ক্ষেত্রে চুল পড়ছে তাহলে কী করে চুল ঢেকে রাখব? পাতলা সুতির ওড়না ব্যবহার করতে পারেন। পর্দাই সৌন্দর্য! অনেকে চুল সাদা হলে কলপ ব্যবহার করেন। এটিও না-জায়েজ। প্রাকৃতিক থাকার চেষ্টা করুন, আল্লাহ পাক আপনাকে যথেষ্ট সুন্দর করে পাঠিয়েছেন।
ভ্রু প্লাক করা
ভ্রু চিকন করে নিজেকে ফ্যাশনেবল তুলতে গিয়ে যে হারাম কাজে লিপ্ত হচ্ছি সে বিষয়ে আমরা সচেতন থাকিনা। ভ্রু প্লাক করা থেকে বিরত থাকুন। তবে মুখে অবাঞ্চিত লোম থাকলে তা আসলেই অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এগুলো অপসারণ করা জায়েজ আছে।
চুড়ি পড়া
চুড়ি সংগ্রহ নারীদের অন্যতম শখ। শরিয়ত অনুযায়ী যেকোনো ধাতুর চুড়িই আপনি ব্যবহার করতে পারবেন যা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করবেনা। কাঁচ, সোনা, পিতল, তামা, রুপা ইত্যাদির তৈরি চুড়ি পরিধান করতে পারেন। সেই সাথে কান ও নাক ফুঁড়িয়ে সেখানে বিভিন্ন অলংকার পরতে পারে।
নূপুর
নূপুর পরলে তাতে যদি বাজনা থাকে সেটি যেন মাহরাম ব্যতীত কেও না শোনেন।
পোশাক
পোশাকের ক্ষেত্রে সবসময় যেন লক্ষ রাখা হয় যে সেগুলো অতিরিক্ত চাপা বা স্বচ্ছ হচ্ছে কী না। এধরনের পোশাক পরা নারীদের জন্য হারাম।
বর্তমানে হরহামেশাই ট্রেন্ড এর জোয়ার ওঠে। যেসব নারী ব্যভিচারে জড়িত, তাদেরই আমরা বেশি অনুসরণ করি সাজসজ্জার ক্ষেত্রে। তারাই যেন আমাদের আইডল। শরিয়তের বিধান অনুসারে বিধর্মী এবং পাপাচারী নারীদের সাজসজ্জা অনুকরণ করা নিষিদ্ধ।
রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, “শেষ জামানার আমার উম্মতের মধ্যে কিছু এমন লোক হবে, যাদের নারীরা হবে অর্ধনগ্ন। তাদের মাথা কৃশ (খোঁপা) উটের কুঁজের মতো হবে। তোমরা তাদের অভিশাপ করো, কারণ তারা অভিশপ্ত” তাই বলা যায়, সাজসজ্জা যেন কখনোই আপনাকে জাহান্নামের তপ্ত অগ্নিশিখায় নিক্ষেপের কারণ না হয়।
নারীরা হালাল সাজসজ্জা করতে পারবে ১৪ জন মাহরাম পুরুষের সামনে। আর বাকিদের সামনে অবশ্যই পর্দা করতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ قُلۡ لِّاَزۡوَاجِکَ وَ بَنٰتِکَ وَ نِسَآءِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ یُدۡنِیۡنَ عَلَیۡهِنَّ مِنۡ جَلَابِیۡبِهِنَّ ؕ ذٰلِکَ اَدۡنٰۤی اَنۡ یُّعۡرَفۡنَ فَلَا یُؤۡذَیۡنَ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا ﴿۵۹﴾یایها النبی قل لازواجک و بنتک و نساء المؤمنین یدنین علیهن من جلابیبهن ذلک ادنی ان یعرفن فلا یؤذین و کان الله غفورا رحیما ﴿۵۹﴾
বাংলা অনুবাদ: হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আল আহযাব,আয়াত ৫৯)
দৈনন্দিন জীবনে উপরোক্ত নিয়মানুসারে সাজসজ্জা করলে আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্ট হবেন এবং আপনিও পূন্যবতী হবেন নেক ওসিলায়। শরীয়তের বিধান মেনে জীবনকে সুন্দর করে তুলুন, পর্দা করুন, সফল হবেন ইনশাআল্লাহ।
GIPHY App Key not set. Please check settings