আল্লাহ তায়ালা উত্তম পরিকল্পনাকারী এবং আমাদের রিজিকদাতা। যে খাদ্য খেয়ে আমরা জীবনধারণ করি তা মূলত উদ্ভিজ্জ এবং প্রাণীজ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সব উদ্ভিদ বা সব প্রাণিই কি আমরা খাবার হিসাবে খেতে পারি? নিশ্চয়ই নয়।
আবার কিছু খাবার আছে যা হয়তো আমাদের খেতে খুব একটা অসুবিধা হয় না কিন্তু সেটা স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। আমাদের স্বাস্থ্যহানি যাতে না ঘটে তাই আল্লাহ খাবারকেও হালাল ও হারাম এ দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। হালাল খাবার খাওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য আমরা যেমন পেতে পারি, এর প্রভাব আমাদের শরীরের সুস্থতায় কতটুকু তা জানাও প্রয়োজন।
হালাল খাবারসমূহ
যেসব স্থলচর তৃণভোজী প্রাণী উষ্ণরক্তের অধিকারী (যারা ঘাস, বন্য লতাপাতা খেয়ে বেঁচে থাকে), শিকারী নয় সেইসব প্রাণীর গোশত খাওয়া হালাল। যেমন- উট, গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, হরিণ, খরগোশ ইত্যাদি।
হালাল খাদ্যের উপকারিতা
উটঃ উটের গোশত যদিও বাংলাদেশে সহজলভ্য নয়, তবে আরব বিশ্বে হালাল খাবার হিসেবে অন্যতম হলো এই গোশত। উটের গোশত অন্যান্য গোশতের তুলনায় পুষ্টিমানের দিক থেকে উৎকৃষ্ট। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আমিষ। তাছাও উপকারী ফ্যাটের উপস্থিতির জন্য রক্তে কোলেস্টেরল কমে ও হৃদরোগের প্রবণতা হ্রাস পেয়ে থাকে।
গরুঃ পরিমিত গরুর মাংস খেলে আপনার প্রোটিনের চাহিদা ভালোভাবে পূরণ হবে। তাছাড়াও জিংক, ফসফরাস, লৌহ এর পাশাপাশি এটি ভিটামিনের খুব ভালো একটি উৎস। গরুর দুধের উপকারিতাও তো আমরা ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি, ক্যালসিয়ামের চমৎকার একটা সমাধান।
ছাগল, ভেড়াঃ বেশি মাত্রায় লৌহ থাকায় ছাগলের গোশত রক্তস্বল্পতার সমস্যা দূর করায় সহায়তা করে। ছাগলের দুধ খাবার হজমে সাহায্য করে। খাবার হিসাবে ভেড়ার গোশতও যথেষ্ট পুষ্টিকর।
মহিষঃ মহিষের গোস্তে আছে প্রচুর আয়রন। গরুর গোশতের তুলনায় এতে কোলেস্টেরলও কম। আমিষ, খনিজ লবণ বেশি।
হরিণঃ আল্লাহ তায়ালার এক নান্দনিক সৃষ্টি এই চতুষ্পদী প্রাণী। দেখতে যেমন মনোহর তেমনই আল্লাহ পাক একে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী করে পাঠিয়েছেন। অনেক সময় আমাদের ওজন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায়। হরিণের গোশতে তুলনামূলক কোলেস্টেরল কম থাকে তাই ওজন কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি রোগ প্রতিরোধও করে।
খরগোশঃ ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ সমৃদ্ধ। খেতেও সুস্বাদু।
জলজ প্রাণির মধ্যে হালাল খাদ্য হলো মাছ। আমাদের দেশে মিঠা পানিতে, সমুদ্রে আল্লাহর রহমতে বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু, পুষ্টিকর মাছের সম্ভার রয়েছে।
উপকারীতাঃ ইলিশ মাছ হজম শক্তি বাড়ায়। রুই মাছ বাতরোগের সমস্যা কমায়। কাতলা মাছ পিত্ত ও কফ দূর করে। মাগুর মাছ রক্তস্বল্পতায় ভোগা রোগীদের জন্য ভালো। ছোটমাছ দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।তাছাড়া মাছে অবস্থিত ফ্যাটি এসিড আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। এটি স্মরণশক্তি বাড়াতে সক্ষম। এর মধ্যে থাকা প্রোটিন ব্রেইনে নতুন কোষ তৈরি করে। তবে প্রাকৃতিক ভাবে মারা যাওয়া মাছ খাওয়া হারাম। শিকারে মরা মাছ হলে খেতে পারবেন, এটি হালাল।
যেসব পাখি ফসল, শস্যদানা এগুলো খেয়ে জীবনধারণ করে আর থাবা দিয়ে শিকারী পাখির ন্যায় শিকার করেনা, এই সকল পাখিগুলো খাওয়া হালাল। যেমন -কবুতর, হাঁস, মুরগি, বক, কোয়েল ইত্যাদি।
কবুতরঃ কবুতরের গোশত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়,এনজাইমের কাজ বাড়ায়,শরীরে ক্লান্তি অনুভব করতে বাধা দেয় এবং চুল,নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
হাঁস, মুরগিঃ হাঁস-মুরগি বাংলাদেশে সবচেয়ে সহজলভ্য। এদের ডিমকে মাল্টিভিটামিনের সাথে তুলনা করা হয়। আমাদের দেহে তাৎক্ষণিক শক্তি দেয়।
কোয়েলঃ কোয়েল সব বয়সের মানুষ ই খেতে পারে।আল্লাহ পাক একে সার্বজনীন করে পাঠিয়েছেন।ছোট্ট এই পাখিটি অনেক দরিদ্র পরিবারের খাদ্যের চাহিদা মেটায়।পুষ্টিমান অনেক বেশি।
নানান পুষ্টিগুণের ফল বাজারে পাওয়া যায়। কখনো বা নিজের ক্ষেতের ফলও আমরা খেয়ে থাকি। সব ফল আমাদের জন্য উপকারী নয়। কিছু ফল আছে বিষাক্ত। সেগুলো হারাম। যে ফলগুলো আল্লাহ আমাদের জন্য হালাল করেছেন তার বেশ কিছু উদাহরণ দেখে নেই-
আমঃ এটি চুল পড়া, চোখের রোগ, হজমের সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়াও এই ফলটা শরীরে শক্তি জোগায়, মুখরোচক ও যকৃতের জন্য খুব উপকারী।
কাঁঠালঃ প্রচুর পরিমাণে ভিটামিনসমৃদ্ধ একটি ফল হলো কাঁঠাল। এটি রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে। কাঁঠাল উচ্চ রক্তচাপের উপশম ঘটায়।
তরমুজঃ তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, তাই সবসময় শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে তরমুজের ভূমিকা আছে। এটি শরীরকে সুস্থ-সতেজ করে তোলে। এই ফলে থাকা ক্যারোটিনয়েড চোখ ভালো রাখতে সহায়ক মনে করা হয়।
এছাড়াও হালাল যে ফলগুলো আছে তা হলো -জামরুল, লটকন, পেয়ারা, সফেদা, আমলকী ইত্যাদি।প্রত্যেকটি হালাল ফলেই আল্লাহ নিহিত রেখেছেন অশেষ গুণাবলী।
এছাড়াও বিভিন্ন শাকসবজি -আলু, মূলা, টমেটো, বেগুন এসব কিছুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল থাকে যা আমাদের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। এবার দেখে আসি ইসলামে হালাল খাদ্য খাওয়ার প্রতি কত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে-
أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لا يَقْبَلُ إِلا طَيِّبًا وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ …. ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ
বাংলা অনুবাদ:
“হে মানুষেরা, নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া কোনো কিছুই কবুল করেন না। আল্লাহ মুমিনগণকে সে নির্দেশ দিয়েছেন যে নির্দেশ তিনি রাসূলগণকে দিয়েছেন (পবিত্র খাদ্য ভক্ষণের)। এরপর তিনি একজন মানুষের কথা উল্লেখ করেন, যে ব্যক্তি (আল্লাহর পথে) দীর্ঘ সফরে রত থাকে, ধূলি ধূসরিত দেহ ও এলোমেলো চুল, তার হাত দুটি আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সে দোয়া করতে থাকে, হে প্রভু! হে প্রভু!কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পোশাক হারাম, তার পানীয় হারাম এবং হারাম উপার্জনের জীবিকাতেই তার রক্তমাংস গড়ে উঠেছে। তার দু‘আ কিভাবে কবুল হবে?”
তাই বলা যায়, হালাল খাদ্য যে আমরা শুধুমাত্র মহান আল্লাহর নির্দেশ হিসেবেই খাচ্ছি তা নয়, বরং তাঁর দেয়া উপহার হিসাবে গ্রহণ করছি। হারাম খাবার খেলে আমাদের বদহজম, ক্যান্সার, জটিল রোগব্যাধি হতে পারে বিধায় তা আমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে। যেমন -শূকরের মাংস।
আমরা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য যেন সবসময় হালাল খাদ্য গ্রহণ করতে পারি এবং ভুলক্রমেও যেন হারাম খাদ্য না খাই আল্লাহ তায়ালা তার তৌফিক দিন, আমিন।
GIPHY App Key not set. Please check settings