পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় হালাল খাদ্য গ্রহণ ও এর গুরুত্ব সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর তাই প্রত্যেক মুমিন মুসলমানদের উচিত হালাল খাদ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা। কারণ হালাল খাদ্য গ্রহণ করা ইবাদতের বড় একটি অংশ।
কুরআনে আল্লাহতায়ালা নির্দেশ করেন “হে মানবকুল, পৃথিবীতে যা বৈধ-পবিত্র, তা হতে ভক্ষণ করো” [সূরা বাকারা ২:১৬৮]। মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, “যে সমস্ত পবিত্র জিনিস তোমাদের জন্য বৈধ সেগুলো খাওয়া জায়েজ” [সূরা মায়িদা ৫:৪]।
চিকিৎসা শাস্ত্র ও ইসলামের বিধান অনুসারে যে খাবারগুলি শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর সেইসব খাদ্যই গ্রহণ করা উচিত। তবে যে খাদ্য বা খাদ্যপণ্য স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর যেমন, নেশা জাতীয় সব ধরনের খাবার বর্জন করতে ইসলামে নির্দেশ এসেছে।
হালাল কি?
হালাল শব্দের অর্থ হচ্ছে, ‘জায়েজ’। অপরদিকে হালালের বিপরীত সব খাদ্য এবং খাদ্য উপাদান হল হারাম। সহজ কথায়, হালাল শব্দটি ‘অনুমতিপ্রাপ্ত’ বোঝায়, এবং এর বিপরীত অর্থ হলো হারাম।
খাবার কে হালাল করতে ‘জাবিহা’ নামে একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। সর্বোপরি, মাংসকে জায়েয করার জন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তাই জাবিহার অন্তর্ভুক্ত। মনে রাখতে হবে, জাবিহার নিয়ম অনুযায়ী জবাই করার সময় পশুদের সুস্থ থাকতে হবে।
সুতরাং সঙ্গতভাবে প্রশ্ন আসতেই পারে, শরিয়তসম্মত উপায়ে হালাল কিনা তা কীভাবে বুঝবেন। আর এজন্য অবশ্যই হালাল পশু যেমন-গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া, মুরগি ইত্যাদি বাছাই করতে হবে। কারণ এই জীব- জন্তুর মাংস খাওয়া হালাল।
তবে এগুলোকে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোনো নামে বা নিয়তে জবেহ করা হয়, তাহলে তা হালাল বলে গণ্য হয় না। খাবার হালালের উদ্দেশ্যে জবাই করার আগে পশুদের ভালোভাবে খাওয়াতে হবে। তবে শূকর খাওয়া, লালন পালন করা ইসলামে কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সুতরাং সুনিশ্চিতভাবেই বলা যায়, হালাল খাবারের প্রচুর স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে এবং মানুষের আত্মার পরিতৃপ্তি ঘটায়।
ইসলামে হালাল খাদ্যের গুরুত্ব
হালাল খাদ্য মূলত ইসলামি খাদ্যতালিকাগত আইন ও বিধান অনুসরণ করে তৈরি করা হয়। যা নির্ধারণ করে কোনটি জায়েয, বৈধ এবং পরিষ্কার। স্বভাবতই, হালাল খাদ্য নিরাপদ এবং এতে ক্ষতিকর কিছু প্রয়োগ করা হয় না।
পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা অনুসারে জাবিহা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। অতঃপর জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা, পশুটি পবিত্র কাবার দিকে মুখ করা এবং একটি ধারালো ব্লেডের মাধ্যমে দ্রুত নড়াচড়া করে জবাই প্রক্রিয়া শেষ করা হয়।
ইসলামিক নিয়মে পশু জবাইয়ে পশুর ঘাড়ের শিরা এবং ধমনি ছিন্ন করে রক্ত নিষ্কাশনের অনুমতি দেয়। আর এই জাবিহা প্রক্রিয়া মাংসের স্বাদ এবং উন্নত স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।
মোটকথা, হালাল হিসাবে চিহ্নিত খাবারগুলোতে এমন উপাদান রয়েছে যা ইসলামিক বিশ্বাস দ্বারা খাওয়ার জন্য সম্পূর্ণরূপে অনুমোদিত।
হালাল খাদ্যের উদাহরণ
- জাবিহা মাংস (গরুর মাংস এবং ভেড়ার মাংস) এবং মুরগি।
- আঁশ সহ মাছ
- জাবিহা প্রাণী থেকে প্রাপ্ত পশু-উৎপাদিত পণ্য
- সমস্ত অনুমোদিত প্রাণী প্রজাতির দুধ এবং ডিম
- সবজি, ফল, শস্য এবং যেগুলি নেশা সৃষ্টি করে না।
- নেশা সৃষ্টিকারী উপাদান ছাড়া সমগ্র সবজি উপাদান।
- কোনো প্রকার অ্যালকোহল নেই সেই সব পানীয় ।
হালাল খাবারের ৩টি উপকারী দিক
১। স্বাস্থ্য সুবিধা
শরীর সুস্থ্য রাখার জন্য স্বাস্থকর খাবার নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই জন্য প্রথমে নিশ্চিত করতে হবে যে খাবারটি গ্রহণ করব তা যেন বিশুদ্ধ, স্বাস্থ্যকর এবং ভাল মানের হয়। এ ক্ষেত্রে হালাল খাবারের বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যকর হালাল খাবার গ্রহণের ফলে শরীর সুস্থতার পাশাপাশি মন ও ভাল থাকে।
২। হালাল মাংস স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ
ইসলামিক বিধিমালা অনুযায়ী খাবার হালাল করতে পশুর মৃতদেহ থেকে রক্ত সম্পূর্ণরূপে নিষ্কাশন বা পরিষ্কার করতে হয়। ফলশ্রুতিতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া মুক্ত স্বাস্থ্যকর খাবারের নিশ্চয়তা দেয়। এটি সবারই জানা যে মাংসে অবস্থিত দূষিত টক্সিন মানুষের অসুস্থতা এবং অস্বস্তির সবচেয়ে বড় কারণ। তাই মাংস দূষন মুক্ত করতে হয়। সুতরাং এই দূষণ মুক্ত হালাল মাংসকে খাবারের উপযোগী করে রান্না করা হয় যা স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ।
৩। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হালাল খাবার গ্রহণ
শুরুতেই বলেছি হালাল খাবার গ্রহণ ইবাদতের অংশ। সুতরাং হালাল খাবার মহান আল্লাহর ভালোবাসা এবং জান্নাত লাভের রাস্তা। যেহেতু ইসলামে খাবারের বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া আছে সুতরাং আমাদের উচিত হালাল খাবার খাওয়া। হালাল খাবার গ্রহণে মানুষের দোয়া কবুল হয়।
বাচাই করে হালাল খাবার গ্রহণ করলে সবকিছুতে বরকত হয় এবং ধনসম্পদ বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও দুনিয়ায় সৌভাগ্য এবং আখেরাতে জান্নাত লাভে সহায়ক হতে সবাইকে অবশ্যই ইসলামের দেয়া নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হবে।
সর্বোপরি হালাল খাদ্য বলতে সেইসব পণ্যকে বোঝায়, যেগুলি ইসলামিক খাদ্যতালিকাগত আইন এবং বিধিবিধান অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হয়। এমনকি এগুলোকে নির্ধারণ করে যে কোনটি অনুমোদিত, বৈধ এবং পরিষ্কার। অবাক হওয়ার মতো হলেও সিত্য যে, স্বাস্থ্যগত উপকারীতার দিক বিবেচনা করে অনেক অমুসলিমও হালাল খাবার গ্রহণ করতে পছন্দ করে।
সুতরাং এটি স্পষ্ট যে, আমরা কী খেতে পারি আর কী খেতে পারি না, এ বিষয়ে কুরআন ও সুন্নাহ সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। আর এই নির্দেশিকাগুলি বাস্তব জীবনে অনুসরণ করে মুসলমানগণ আল্লাহ্ তাআলার আনুগত্য লাভ করে। আমরা যদি হালাল-হারাম বাছাই করে খাদ্য গ্রহণে অভ্যস্ত হই তাহলে তার বিনিময়ে মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের অবশ্যই পুরস্কৃত করবেন। কারণ কোরআন ও সুন্নাহ অনুসরণ করা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে।
GIPHY App Key not set. Please check settings