in

শরিয়া পদ্ধতিতে ঘুমানোর নিয়ম

ইসলামে ঘুমের নিয়ম

ঘুম মহান আল্লাহর নিয়ামত। নিয়মিত ভালো ঘুম হলে মানুষের মন প্রশান্ত হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে। মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার বিশ্রামের জন্য এ দিন রাত সৃষ্টি করেছেন। এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজিদে বলেন “তিনিই স্বীয় রহমতে তোমাদের জন্যে রাত ও দিন করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ কর ও তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” (সুরা কাসাস : আয়াত ৭৩)।

অতএব, আমাদের মহান রব কতই না দয়ালু কতই না চিন্তিত তার বান্দাদের জন্য এ আয়াত গুলো দিয়ে পরিষ্কার বোঝা যায়। এছাড়া যারা মুমিন ব্যক্তি তারা ঘুমের মধ্যেও ইবাদতে মশগুল থাকে কিছু আমলের মাধ্যমে অতএব ঘুমের মধ্যেও ইবাদত করা যায় যদি বান্দা কিছু নিয়মকানুন মেনে ঘুমায়। 

এছাড়া যাদের ঘুম আসে না তারা যদি নিম্নোক্ত নিয়মকানুন ও সুন্নাতি প্রথাগুলো অনুসরণ করে তাহলে মহান রবের দয়ায় কোনরকম ঘুমের ঔষধ ছাড়া ঘুম চলে আসবে কারণ এসব নিয়মকানুন নবি করিম (সা.) ও অনুসরণ করতেন যা নিশ্চয়ই উওম। হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, ‘আর আমি (রাতে) ঘুমাই এবং জাগ্রত হওয়ার পর নামাজ আদায় করি। জেগে থাকা অবস্থায় যেভাবে নামাজের মাধ্যমে সাওয়াবের আশা করি ঠিক সেভাবে ঘুমের মধ্যে সাওয়াবের আশা করি।’ (বুখারি) এখন নিম্নে সেই সুন্নাতি নিয়মগুলো বর্ণনা করা হল যা আমাদের পালন করা কর্তব্য।

১. ঘুমানোর আগে অযু করা

অযু পবিএতার মাধ্যম। অযু আমাদের শারীরিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখে। ঘুম যেহেতু আল্লাহর নিয়ামত তাই ঘুমের আগে পাক পবিত্র হয়ে অযু করা উচিত কারণ মানুষের মৃত্যু যেকোনো সময় হতে পারে যদি এ রাতের ঘুম আপনার জীবনের শেষ ঘুম তাহলে যেন আপনি মহান রবের নিকট পৌঁছাতে পারেন তার জন্য ওযু করে নেওয়া উওম। 

এক হাদিসে বিধৃত হয়েছে, ‘অজু থাকা অবস্থায় কেউ মারা গেলে, তাকে শহীদের মর্যাদা দেয়া হবে। এ সম্পর্কে আরও জানতে হযরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন জানাবাতের (অপবিত্রতা) অবস্থায় ঘুমাতে ইচ্ছা করতেন তখন তিনি লজ্জাস্থান ধুয়ে নামাজের ওজুর মতো ওজু করে ঘুমাতেন।’ (বুখারি)

২. আল্লাহর নামে ঘরের দরজা বন্ধ করা

সন্ধ্যায় যখন চারিদিক অন্ধকার হয়ে যায় শয়তানরা চলাফেরা করে তাই মহান আল্লাহর নাম নিয়ে দরজা বন্ধ করলে শয়তানরা ঘরে প্রবেশ করতে পারে না যার কারণে ঘর নিরাপদে থাকে।

এছাড়া ঘুমের পূর্বে বিছানা ঝাড়া উচিত যেন সারাদিনের ময়লা বিছানায় থেকে ঘুমের সময় মুমিন ব্যাক্তি কে কোন কষ্ট না দেয়। এ প্রসঙ্গে হাদিসে আসছে, হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি তোমাদের কোনো ব্যক্তি বিছানায় (ঘুমাতে) যায়, তখন সে যেন তার লুঙ্গির ভেতর দিক দিয়ে নিজ বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ, সে জানে না যে, বিছানার উপর তার অনুপস্থিতিতে পীড়াদায়ক কোনো কিছু আছে কিনা।’

৩. ঘুমের আগে দোয়া দরূদ পড়া

ঘুমানোর আগে দোয়া পড়ে মহান আল্লাহর নিকট মাফ চেয়ে ঘুমাতে হবে। দোয়াটি হল: আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনার নামেই মরি, আপনার নামেই জীবিত হই ’ 

এছাড়া সূরা ফাতিহা, সূরা ফালাক, সূরা কাফিরুন ও সূরা নাস পড়ে নিজের শরীরে ফুঁক দেওয়া উচিত। ‍ঘুমানোর আগে সূরা বাকারাহ’র শেষ দুই আয়াত, সূরা মূলক ও আয়াতুল কুরসী ও পড়তে হবে। আয়াতুল কুরসী পাঠ করলে ঐ ব্যাক্তি ও তার ঘর হেফাজতে থাকে।

ইসতেগফার পড়ে মহান আল্লাহর নিকট মাফ চেয়ে তিন তাসবীহ পড়ে ঘুমাতে হবে। মুমিন ব্যক্তিরা ডান কাত হয়ে সতর ঢেকে ঘুমাবে। এবং সবশেষে বাতি বন্ধ করতে হবে। অতএব, বলা যায় মুমিন ব্যক্তি এভাবে ঘুমালে তা ইবাদতে পরিণত হবে তাই ঘুমের এসব সুন্নাহ আমাদের অনুসরণ করা উচিত।

এছাড়া ঘুম থেকে উঠার পর ও দোয়া পড়তে হয়। দোয়াটি হল: আল-হামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।’

অর্থ: সেই আল্লাহ্‌র জন্য প্রশংসা, যিনি মৃত্যুর পর আমাদের জীবন দান করলেন এবং তাঁরই দিকে আমাদের পুনরুত্থান হবে।’ (বুখারি)।

What do you think?

Written by নুসরাত জাহান

পেশায় একজন নার্স হলেও ইসলামিক বিষয় নিয়ে পড়তে ও লিখতে ভালো লাগে। আমার লেখা থেকে যদি কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় তবেই আমার প্রশান্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

ত্বকের-যত্নে-টিপস

মেয়েদের ত্বকের যত্নে গুরুত্বপূর্ণ ৫টি টিপস

ডায়াবেটিস রোগীর রোজা

ডায়াবেটিস রোগী যে উপায়ে রমজানে রোজা রাখবেন