in

LoveLove

ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার

ইসলামে অনিদ্রার নিরাময়

ইসলামে অনিদ্রার নিরাময়

ব্যক্তি জীবনের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য ঘুম একটি অপরিহার্য বিষয়। মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা সক্রিয় রাখার জন্য, নিয়মিত ঘুম একজন মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দৈনন্দিন জীবনে আমাদের বেশ কিছু কার্য সম্পাদনা করতে হয়। আর এ সকল কাজের জন্য সঠিক নিয়মে ঘুমানোর মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করা দরকার।

কিন্তু বিষয় হচ্ছে প্রতিদিন কোনো না কোনো কারণে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। যার কারনে আমাদের শারীরিক মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। আজ আমরা জানবো কেন ঘুম কম হয় এবং ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী এর সমাধান কি ও কোন নিয়মে ঘুমালে শান্তিতে ঘুমানো যায়।

ঘুম না আসার কারণ 

ঘুম না হওয়ার জন্য হাজারো কারণ থাকতে পারে তবে এর মধ্যে সচরাচর কয়েকটি বিষয়কেই বেশি বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আসলে আপনার ঘুম কেন হচ্ছে না তার কারন আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে এবং সেটা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ তায়ালা রাতকে অন্ধকার দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন মানুষের বিশ্রামের প্রয়োজন আছে এজন্য।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য ৮ ঘন্টা রাতে ঘুমানো প্রয়োজন। তাছাড়া ঘুমের গুরুত্ব বুঝাতে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার একজন সাহাবী ইবনে আমরকে বলেছেন যিনি সারা রাত সালাত আদায় করছিলেন: “নামায পড় এবং রাতে ঘুমাও, যেহেতু তোমার উপর তোমার শরীরের অধিকার রয়েছে”।

রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যদি নামায পড়ার সময় তন্দ্রা অনুভব করে তবে সে যেন ঘুমাতে যায় যতক্ষণ না তার ঘুম শেষ হয়।” সহীহ আল-বুখারী

তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে যেসব কারণে ঘুম কম হয় তার কিছু কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো:

১/  মানসিক অশান্তি

  •  কর্মক্ষেত্রে অসুবিধা
  •  অতিত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা
  • পারিবারিক অশান্তি 
  •  দৈনন্দিন ব্যাপারে সবসময় চিন্তা করা
  • বন্ধু বান্ধব, নিকটাত্মীয়র অস্বাভাবিক আচরণ 

২/  আনুষাঙ্গিক কারন

  • শোবার ঘরে বেশি শব্দ, বেশি গরম কিংবা বেশি ঠান্ডা
  •  বিছানা আরামদায়ক না হওয়া
  •  নির্দিষ্ট কোনো রুটিন না মেনে চলা
  •  অতিরিক্ত খাবার খাওয়া
  •  রাতে না খেয়ে থাকা (কারন পেটে খিদে থাকলে তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙ্গে যেতে পারে)
  •  সিগারেট, মদ বা ক্যাফিনযুক্ত কোনো পানীয় যথা চা বা কফি গ্রহণ করা 
  •  অসুখ, ব্যথা বা জ্বর ইত্যাদি রোগের পীড়া।

তবে কারণ যেটাই হোক না কেন, আপনার উচিত সে কারনের দ্রুত সমাধান করা এবং সঠিক নিয়মের মধ্য দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করা। ঘুমের জন্য উপযোগী কয়েকটি দিক নিচে আলোচনা করা হলো।

ঘুমের গুরুত্ব বুঝাতে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার একজন সাহাবী ইবনে আমরকে বলেছেন যিনি সারা রাত সালাত আদায় করছিলেন: “নামায পড় এবং রাতে ঘুমাও, যেহেতু তোমার উপর তোমার শরীরের অধিকার রয়েছে”।

ভালো ঘুম হওয়ার জন্য উপকারী কিছু টিপস 

শতকরা ৮০% মানুষ আজকাল ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। তারা সঠিকভাবে ঘুমাতে চান ঠিকই কিন্তু সঠিকভাবে ঘুমানোর নিয়ম অনুসরন করতে চান না। এটা সত্য যে সঠিক নিয়ম অনুসরন না করলে শান্তিপূর্ন ঘুম হয় না। তাই আসুন জেনে নেওয়া যাক শান্তিপূর্ণ ঘুম পাওয়ার উপায়গুলো: 

  • ভালো ঘুমের জন্য রাতে ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন। রাতে হালকা খাবার খেলে শরীর এটি দ্রুত হজম করতে পারে এবং ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে।
  • ঘুমানোর সর্বপ্রথম প্রস্তুতি হচ্ছে অযু করা। কেননা অযু করলে শারীরিক পবিত্রতা অর্জন হয় এবং শরীর পবিত্র থাকলে মন ও শান্ত থাকে। এ প্রসঙ্গে হযরত মোহাম্মদ সাঃ বলেছেন “যখনই তুমি বিছানায় যেতে চাও, তখন সালাতের (নামাযের) জন্য ওযু কর।” বুখারি ও মুসলিম।
  • এশা নামাজ আদায় করুন এবং সেই সাথে সুন্নত নামাজ হিসেবে তাহাজ্জুদ নামাজও আদায় করতে পারেন। 
  • আপনার যাবতীয় আনুসঙ্গিক কাজ সেরে ফেলুন। যেমন: ঢিলেঢালা পোশাক পড়া, দাঁত ব্রাশ করা যদিও মিসওয়াক করে অযু করা সুন্নত তবে অযুর আগে ভুলে গেলে ঘুমানোর আগে করে নিতে পারেন, এবং আরও কোন কাজ থাকলে সেটিও সেরে ফেলুন।
  • এশা নামাজ আদায়ের পর যত দ্রুত পারেন ঘুমিয়ে পড়ুন। কেননা জরুরী প্রয়োজন ছাড়া এশার নামাজের পড়ে রাত জাগতে ইসলাম নিরুৎসাহিত করে। কারন আপনি যত দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বেন তত সহজেই ভোর বেলা উঠতে পারবেন এবং ফজরের নামাজ আদায় করতে পারবেন।
  • প্রয়োজনে নামাজের এলার্ম দিয়ে রাখুন। অনেকেই দেখা যায় রাত জেগে কাজ করে ভোর বেলা আর উঠতে পারেনা। এজন্য কাজগুলো বরং ফজরের নামাজের পরে করার জন্য রেখে দিন। এতে যে নিয়ম তৈরি হবে তা শরীর ও মন সবকিছুর জন্যই অধিক উত্তম। 
  • শুয়ে পড়ার আগে আপনার বাড়ির নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন, বিছানা পরিপাটি করুন, আলো নিভিয়ে দিন, টিভি বা মোবাইল থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করুন, যাতে পরিবেশটা ঘুমানোর জন্য উপযোগী হয়।
  • ঘুমানোর পূর্বে নিজের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন এবং আপনি সকলকে ক্ষমা করে দিন। এতে আপনার মানসিক চাপ কমে যাবে এবং ভালো ঘুম হবে।
  • এরপর ঘুমানোর পূর্বে কয়েকটি ছোট ছোট কাজ করুন এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবেন এবং সেই সাথে শয়তানের প্ররোচনা থেকে বেঁচে গিয়ে একটি শান্তির ঘুমও পাবেন। যেমন: আয়াতুল কুসরী পাঠ করুন, সূরা মূলক পাঠ করুন, তিন কূল পাঠ করুন, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহুআকবার জিকির করুন এবং আরও বেশ কিছু আমল আছে সেগুলো করুন সবশেষে ঘুমানোর দোয়া (আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া) পড়ে ডান কাত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।

শ্রদ্ধেয় পাঠকগণ, আমাদের সকল ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই হওয়া উচিত। তবে ইবাদতের মধ্যে আল্লাহ মানব জাতির জন্য কিছু উপকার ও দিয়েছেন আমরা সেই উপকারী বিষয়গুলোই আপনাদের কাছে পোঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি মাত্র। আসলে ইসলাম মানেই শান্তি তাই এর বিধিবিধান গুলো যথা নিয়মে মেনে চললে আমরা দুনিয়ায় এবং পরকালে উপকৃত হবো।

আশা করি ঘুমানোর এই টিপস গুলো আপনার ভালো ঘুমের জন্য অনেক সহায়ক হবে। আসুন আমরা সকলে ইসলামের বিধান মত চলি এবং সুস্থ ও শান্তির জীবন গড়ি।

What do you think?

Written by নুসরাত জাহান

পেশায় একজন নার্স হলেও ইসলামিক বিষয় নিয়ে পড়তে ও লিখতে ভালো লাগে। আমার লেখা থেকে যদি কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় তবেই আমার প্রশান্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

how-to-become-an-ideal-muslim-woman

কিভাবে একজন আদর্শ মুসলিম নারী হয়ে উঠবেন

অশ্বগন্ধা

অশ্বগন্ধা কী? কেন খাবেন? কীভাবে খাবেন?