in

সুপেয় পানির সংকট এবং সমস্যা সমাধানে ডিস্যালিনেশন

Fresh water crisis and desalination

বিশ্বের নানা বড় বড় শহরে যে সমস্যাটি দিন দিন প্রকট হচ্ছে তা হলো সুপেয় পানির সংকট। এ সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছে পানি বিশুদ্ধকরণ (Desalination)। বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ যে অসীম নয় তা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে সাউথ আফ্রিকার কেপ টাউনে বর্তমানে চলমান পানি সংকট। উন্নত নানা জায়গাতেও পানির সমস্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের হার যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি এই সমস্যার একটি স্থায়ী ও টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা তত জরুরী হয়ে পড়ছে। Desalination বা বিশুদ্ধকরণ হলো লবণাক্ত পানিকে পানযোগ্য পানিতে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া। যেসব জায়গায় পানির সমস্যা আছে সেখানে আলোকবর্তিকা হয়ে দেখা দিয়েছে এই প্রক্রিয়াটি। আমাদের এই তৃষ্ণার্ত পৃথিবীতে ডিস্যালিনেশনের ভূমিকা, উপকারিতা, চ্যালেঞ্জ কেমন হবে তা নিয়েই আজ আলোচনা করব।

পানি বিশুদ্ধকরণের ইতিহাস

প্রাচীন যুগেও পানির বিশুদ্ধকরণ (Desalination) হতো। গ্রিক ও রোমান সভ্যতা বিশাল সমুদ্র থেকে পানীয় জল তৈরি করতে তাপ ও পরিস্রাবণের মৌলিক নীতি ব্যবহার করত। সময়ের সাথে সাথে ও প্রযুক্তিগত উন্নতিতে এসব পদ্ধতিগুলোও রিফাইন হয়েছে। যা থেকে এসেছে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ব্যবহৃত দুটো ডিস্যালিনেশন প্রক্রিয়াঃ

  • থার্মাল ডিস্যালিনেশন (তাপীয় বিশুদ্ধকরণ) এবং
  • মেমব্রেন ডিস্যালিনেশন (ছাঁকন বিশুদ্ধকরণ)

থার্মাল ডিস্যালিনেশন তাপের মূলনীতি ব্যবহার করে। লবণের স্ফুটনাঙ্ক পানির চেয়ে অনেক বেশি, তাই আপনি যদি লবণাক্ত পানি ফুটান, তাহলে শুধুমাত্র মিঠা পানি বাষ্পীভূত হয়ে যাবে এবং লবণগুলো নিচে পড়ে থাকবে। মেমব্রেন ডিস্যালিনেশন বা ছাঁকন বিশুদ্ধকরণে চাপ ব্যবহার করা হয়। লবণাক্ত পানি একটি ঝিল্লির মধ্যে দিয়ে পাস করানো হয়। ঝিল্লিটি আংশিক ভেদনযোগ্য। ফলে ঝিল্লির ভেতর দিয়ে পরিষ্কার পানি প্রবাহিত হয়ে যায় এবং লবণ ঝিল্লির এ পাশে আটকে থাকে।

পানি বিশুদ্ধকরণের প্রয়োজনীয়তা

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা, নগরায়ণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অনেক অঞ্চলে পানির ঘাটতিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিবেশ বিজ্ঞানী মনজুর কাদির উদাহরণ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকাকে তুলে ধরেছেন। সেখানে উচ্চ জনসংখ্যার সাপেক্ষে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নেই। এই পরিস্থিতির কারণে সেখানে প্রচুর পরিমাণে পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্ট স্থাপিত হয়েছে। বর্তমানে এর সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। প্রতিদিন এসব প্ল্যান্ট প্রায় ১০ কোটি কিউবিক মিটার বিশুদ্ধ পানি তৈরী করে।

চ্যালেঞ্জ এবং জটিলতা

ডিস্যালিনেশন বা বিশুদ্ধকরণ এক সম্ভাবনাময় পদ্ধতি হলেও এরও আছে নানা চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর জ্বালানি লাগে। সমুদ্রের পানিকে ফুটানো এবং প্রেশারাইজ করার জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণ  জ্বালানিশক্তির প্রয়োজন হয়, যেগুলো আসে সাধারণত জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। এতে পরিবেশের ক্ষতি হয় তো বটেই। আর এর পেছনে খরচ বেশী বিধায় নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জনগণের জন্য এর ব্যয়ভার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ ছাড়া ডিস্যালিনেশন প্রক্রিয়ায় ব্রাইন জমা হয়। ব্রাইন হচ্ছে লবণমেশানো পানি। স্বচ্ছ পানি থেকে লবণাক্ত পানি আলাদা হয়ে যে লবণ-পানি জমা হয় সেটাই ব্রাইন। এর লবণাক্ততা অতি তীব্র। এর আছে নানা রাসায়নিক ঝুঁকি।

টেকসই সমাধান

কীভাবে ডিস্যালিনেশনের পরিবেশগত প্রভাব কমিয়ে আনা যায় তা নিয়ে নানা প্রচেষ্টা চলছে। এগুলোর মধ্যে আশার আলো দেখিয়েছেন বার্লিন-ভিত্তিক স্টার্টআপ বোরিয়াল লাইট। যেসব জায়গায় ইলেকট্রিসিটি নেই, তারা সেসব জায়গায় সোলার প্যানেলের মাধ্যমে ডিস্যালিনেশন সিস্টেম চালু করেছেন। রিনিওয়েবল এনার্জি ব্যবহারের মাধ্যমে বোরিয়াল লাইট একইসাথে পানি বিশুদ্ধিকরণের খরচ এবং কার্বন ফুটপ্রিন্ট উভয়ই কমাতে সক্ষম হয়েছে। কোম্পানির উদ্দেশ্য হচ্ছে আরো অনেক নিম্ন আয়ের মানুষের আছে ডিস্যালিনেশন প্রক্রিয়াকে পৌঁছে দেওয়া এবং সমাজের উপকার সাধন করা।

বর্জ্য যেভাবে সম্পদ

একটু আগেই ব্রাইনের সমস্যাটি নিয়ে কথা বলেছি, যেটা ডিস্যালিনেশন প্রক্রিয়ার একটি বড় নেতিবাচক দিক। এটা নিয়েও সৃজনশীল কাজ হচ্ছে। যেমন, বোরিয়াল লাইট কোম্পানিটি লবণ-সহনশীল ফসল ও মাছ চাষের জন্য ব্রাইন পানি ব্যবহার করছে। এতে বর্জ্য পরিণত হচ্ছে সম্পদে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে ব্রাইনের আরো নানা উপযোগী ব্যবহার জানতে পারব আমরা।

প্রযুক্তিগত অগ্রযাত্রা ও টেকসই প্রযুক্তির মধ্যে সমন্বয়সাধন

পানির সমস্যা দূর করতে ডিস্যালিনেশন সুন্দর ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এটি হতে পারে বিশ্বস্ত এক উৎস সেসব জায়গার জন্য, যেখানে আছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র অভাব। এতে এর সাফল্য নানা সূত্রের ওপর নির্ভর করছে। ডিস্যালিনেশনের জন্য টেকসই ভবিষ্যত গড়তে হলে এই ইন্ডাস্ট্রিকে অবশ্যই প্রক্রিয়াটির কার্যক্ষমতা নিয়ে আরো কাজ চালিয়ে যেতে হবে, জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে রিনিওয়েবল এনার্জি ব্যবহার করতে হবে এবং ব্রাইন নিয়ে কি করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। প্রযুক্তিগত অগ্রযাত্রা ও টেকসই প্রযুক্তির মধ্যে সমন্বয়সাধনের জন্য সরকার, শিল্প-কারখানা এবং সমাজের ঐকান্তিক ভূমিকা প্রয়োজন।

What do you think?

Written by শাহেদ হাসান

আমি লেখালেখি করতে বরাবরই ভালোবেসেছি। বর্তমানে গ্রন্থ অনুবাদ ও মৌলিক লেখার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন ব্লগেও লেখালেখি করছি। পড়াশোনা করছি রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Different SKin Types

নিজের স্কিন টাইপ বুঝার সহজ উপায়

5 online shopping tips

অনলাইন শপিংয়ের জন্য পাঁচটি টিপস