in

CuteCute

অল্প বাজেটে প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার দুর্দান্ত কিছু টিপস

আয়-বুঝে-ব্যয়

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় বর্তমান দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তাতে সবথেকে বিপাকে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা। তবে মধ্যবিত্তের কথা তো বলাই বাহুল্য। প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোও লাগছে সম্মানের সাথে চলতে, আবার আয়ের সাথে ব্যয়ের হিসাবেও হয়ে যাচ্ছে মস্ত ফারাক। কী করা যায়? কোনো সমাধান আছে? অল্প বাজেটে প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার বেশ কিছু টিপস তাই আজ শেয়ার করব আপনাদের সাথে।

খাদ্যদ্রব্য

নতুন পোশাক ছাড়া মাসের পর মাস কাটানো যায়। হালকা জ্বর-সর্দি হলে ওষুধও মাঝেমধ্যে বাদ দেয়া যায়। কিন্তু খাদ্যদ্রব্য কেনা থেকে বিরত থাকার কোনো উপায় নেই। তাই এসব পণ্য কেনার কিছু কলাকৌশল রপ্ত করা থাকলে কিছুটা হলেও হাঁপ ছাড়ে বাঁচা যায়।

অল্প বাজেটে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য যেভাবে কিনবেন

  • প্রোটিনের ভালো উৎস হচ্ছে ডিম। মাছ, মাংসের চড়ামূল্য যদি হাতের নাগালের বাইরে যায় তাহলে ডিমই ভরসা। বর্তমানে যদিও ডিমের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে প্রয়োজনীয় খাবার হিসাবে অল্প বাজেটে ডিম চলনসই।
  • টিভিতে, অনলাইনে চোখ রাখুন কোন পণ্যের সাথে সত্যিকারে ভালো কোনো অফার পাওয়া যায় কিনা। যেমন একটি পণ্যের সাথে টিফিন বাটি ফ্রি। এটি আপনার জন্য অত গুরুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে। কিন্তু হারপিক কিনলে মগ ফ্রি, দুধ কিনলে চা পাতা ফ্রি, এগুলো কিন্তু মন্দ নয়। বাজেটও বাঁচলো, প্রয়োজনীয় জিনিসও পেলেন। তবে এক্ষেত্রে সুক্ষ একটি কৌশল মাথায় রাখা খুব জরুরী। উৎপাদনকারী কোম্পানি বা বিক্রেতা কেন ফ্রি অফার দিচ্ছে সেটা বুঝা গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রি অফারের বেশিরভাগ কারণগুলো নিম্নরুপ হয়ে থাকে –
    • নতুন কোনো পণ্য মার্কেটে ছাড়ার সময় মার্কেট ধরার জন্য একটির সাথে একটি ফ্রি অফার সবচেয়ে সহজ মার্কেটিং কৌশল। এ ধরনের ফ্রি অফার লুফে নিতে কোন ঝুকি নেই।
    • মার্কেটে প্রতিযোগীর সাথে টেক্কা দিতে ফ্রি অফার দেয়া হয়। এই ফ্রি অফারও লুফে নেয়া যায়।
    • পণ্যের মোড়ক বদলে গেলে বা রিব্রান্ডিংয়ের সময় কোম্পানিগুলো ফ্রি অফার দিয়ে থাকে যা নিশ্চিন্তে নেয়া যায়।
    • পণ্য উৎপাদনকারী অথবা বিক্রেতার স্টক খালি করার জন্য অনেক সময় ফ্রি অফার দেয়া হয়। পণ্যের মেয়াদ কাছাকাছি অথবা অতিরিক্ত স্টক থাকায় তা খালি করার জন্য এই ফ্রি অফার দেয়া হয়ে থাকে। ফ্রি অফারের এরকম কারন বুঝতে পারলে তা নেওয়ার জন্য অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
  • ছুটির দিনে কোনো সুপার শপে অফার না পাওয়া অব্দি খাবার কিনতে যাবেন না! বেশি মূল্যের পাশাপাশি ভ্যাটের বিষয় আছে। অল্প বাজেটে খুব সামান্য পরিমাণ টাকাও হিসেবের টাকা।
  • বাজারে নতুন আসা শাকসবজি, ফল এগুলো প্রথমেই কিনবেন না। বাজেট যেহেতু অল্প তাই কিছুদিন পর হাতের নাগালে এলে কিনবেন।
  • ধরুন, বেগুন বা গাজরের দাম এই মূহুর্তে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। ব্যাজেট কম, তাই এই মূহুর্তে বেগুন-গাজর খাওয়ার কথা চিন্তাও করবেন না। দাম কমে যাওয়ার জন্য কটাদিন অপেক্ষা করুন। এরজন্য আপনার শরীরে পুষ্টি ঘাততি হবে না বা কোন প্রভাবই পরবে না। বরং কিছু টাকা বেঁচে যাবে।
  • কাঁচা মরিচ বা এ জাতীয় কিছু পণ্যের দাম অনেক দ্রুত উঠানামা করে। কখনও ৩০ টাকা আবার কখনও ১৩০ টাকা কেজি। এক্ষেত্রে একটু কৌশলী হলেই অনেক টাকা বাচানো যায়। যখন ৩০ টাকা কেজি হবে, দেরি না করে সামনের কয়েক মাসের জন্য বেশি করে কিনে তা বেটে বা প্রক্রিয়াজাত করে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। বেঁচে গেল কিছু টাকা। এরকম কিছু সিজনাল খাবার যেমন টমেটো কেটেও ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখলে অফ সিজনেও খেতে পারবেন।
  • যদি পণ্যের এক্সপায়ার ডেট অনেক লম্বা থাকে এবং সেটি সবসময় লাগে, এমন ক্ষেত্রে হোলসেলে পণ্য কেনার কৌশল নেয়া যেতে পারে। উদাহরনস্বরুপ, আপনার রান্নার তেল সারা বছরই লাগে। তাই মেয়াদ হিসেব করে যদি হোলসেল মার্কেট থেকে একবারে তেল কেনা হয় তাহলে প্রতি লিটারে অন্তত ২০-২৫ টাকা কমে কেনা যাবে। এই কৌশল অন্য কিছু কেনার ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যেতে পারে।

অল্প বাজেটেই মিলবে পোশাক

  • নিউমার্কেট চলে আসুন! ঢাকায় যারা আছেন এর চেয়ে ভালো সমাধান আর হয় না। দরদাম করে অল্প বাজেটেই সম্মানজনক পোশাক পেয়ে যাবেন।
  • যারা ঢাকার বাইরে থাকেন লোকাল মার্কেট টার্গেট করবেন। হোলসেলের দোকানগুলো থেকে পরিবারের সব সদস্যের জন্য একসাথে কিনলে বাজেটে পোষাবে।
  • ফুটপাতে কিন্তু দামে কম, মানে ভালো জিনিসের অভাব নেই। বাজেট যেহেতু অল্প, কেন আপনি অল্প বাজেটে খুব বেশি দামি কিছু খুঁজতে গিয়ে সময় নষ্ট করবেন? যেমন একটা প্যান্ট এর রং হয়তো কিছুদিন পরার পর ফেড হয়ে যাবে। কিন্তু আপনার বাজেট এবং প্রয়োজনীতার মিল হিসাবে এটি ঠিক আছে। একটু দেখেশুনে নিলেই চলবে।

সাধ্যের মধ্যেই ইলেকট্রনিকস পণ্য

  • হুট করে হাতের মোবাইলটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে? বাজেট যা আছে তাতে মোটামুটি ভালো মানের ফোন কেনা যাবে। কিন্তু তাতে সংসারের অন্য কোনো চাকা অচল হয়ে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে করণীয় হলো ফোন আপনার ঠিক কী কী কাজে লাগে সেটা বুঝে জুৎসই একটা ফোন কেনা। এটা কেউই প্রায় চিন্তা করেনা যে, বিশেষ করে ফোন কেনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনের থেকে শুধুমাত্র লোক দেখানো বা স্টাটাস মেইনটেইনের জন্য মানুষ দামি ফোন কিনে। আইফোনের লোগে দেখানো না গেলে আইফোন ব্যবহারকারীরা অস্বস্তিতে ভোগেন! এটা প্রমাণিত সত্য।

    তাই শুধুমাত্র যোগাযোগের কাজে লাগলে বাটন ফোন কিনে নিন। হাজার-বারোশ এর মধ্যে পাবেন। ছবি তোলার ব্যাপার থাকলে ১০ হাজারের মধ্যে কিছু ব্র‍্যান্ডের ফোন পাবেন। এসব ফোনে টুকটাক অনলাইনে কাজ করাও সম্ভব।
  • ইয়ারফোন, চার্জার এগুলো লাগেই। ইয়ারফোন খুব দ্রুত নষ্ট হয় দাম যেমনই হোক। তাই বেশি দামের না কিনে কিছু ফিক্সড ব্র‍্যান্ড বাছুন যেগুলোর দাম ২৫০-৩০০ এর মধ্যে। ফোনের ডিফল্ট চার্জারটি সংরক্ষণ করবেন।
  • নির্ভরযোগ্য সাইট অথবা গ্রুপ থেকে ব্যবহৃত পুরনো পণ্য কিনতে পারেন। কন্ডিশন মোটামুটি ভালো থাকলে কম বাজেটে প্রয়োজনীয় জিনিস পেয়ে গেলেন।

অল্প বাজেটে শপিং এর সময় চটজলদি কিছু পদক্ষেপ

১. কোনো দোকানে প্রয়োজনীয় জিনিসটি পেয়ে গেলে শুরুতেই সেখান থেকে নিয়ে নিবেন না।

আরও কয়েকটা দোকান ঘুরুন আশেপাশের। এতে দোকানীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে যেন তাদের দোকান থেকে পণ্য নেয়া হয়। এই প্রতিযোগিতার ফাঁকে আপনি দরকষাকষিতে সুবিধা আদায় করে নিতে পারবেন।

২. যেকোনো পণ্যের দাম কমানোর সময় ৬০% কমিয়ে বলবেন। লোকাল মার্কেটের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। ফিক্সড প্রাইসের দোকান এড়িয়ে চলুন।

৩. এমন কোনো পণ্য অনলাইন থেকে কিনবেন না যেটা অল্প পরিমাণে লাগবে। পণ্যের দামের সাথে ডেলিভারি চার্জ যোগ হয়ে পোশাবে কিনা সেটি আগেই হিসেব করে নিবেন। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে যদি বেশি পণ্য একসাথে কিনেন তবে বাকি সব ঠিক থাকলে অনলাইনে অর্ডার করাই যায়।

৪. বাজেট যখন কম তখন বাজেটের ৩০% আলাদা করে রেখে শপিং এ বের হবেন। এতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু কিনতে ইচ্ছে হলেও কেনা হবেনা। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জিনিসের দামদর করা ও ঘুরে ঘুরে কেনার মানসিকতা থাকবে।

৫. যারা নতুন সংসার শুরু করেছেন তাদের অনেক ইচ্ছে থাকে ঘর এভাবে সাজাবো, ওভাবে সাজাবো। আপনারা যদি সেল্ফ ডিপেন্ডেন্ট হয়ে থাকেন এবং আপাততঃ আয় কম থাকে তাহলে শখের থেকে প্রয়োজনীয়তাকে বেশি গুরুত্ব দিন। যেমন খাট কেনায় টাকা খরচ না করে প্রথমে ফ্লোর বেডিং করতে পারেন। এক কালারের কিছু কুশন অল্প দামে পাওয়া যায়। সেগুলো দিয়ে সাজালে খারাপ লাগবেনা।

৬. দোকানে গেলে সেলসম্যানরা নানা লোভনীয় কথা বলবেন। প্রভাবিত না হওয়ার জন্য আগে থেকেই বাজেট অনুসারে ছোট্ট একটা লিস্ট করে সাথে রাখুন যা রিমাইন্ডার হিসাবে কাজ করবে।

৭. যে আসবাবগুলো ভবিষ্যতে ভালোটা কেনার ইচ্ছে আছে সেটার কোনো অল্প দামি ভার্সন নেবেন না। এতে টাকা অপচয় রোধ হবে। বাজেট মাথায় রেখে খুব জরুরি কিছু আসবাব কিনুন যা একটা অপরটার পরিপূরক হিসাবে কাজ করে। যেমন -প্লাস্টিকের র‍্যাক।

সর্বোপরি, অল্প বাজেটে প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আয়-ব্যয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা, সেই সাথে ভেবে কাজ করার ক্ষমতা। বাস্তবমুখী এমন লেখা পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।

What do you think?

Written by নুসরাত জাহান

পেশায় একজন নার্স হলেও ইসলামিক বিষয় নিয়ে পড়তে ও লিখতে ভালো লাগে। আমার লেখা থেকে যদি কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় তবেই আমার প্রশান্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

অস্থির গরমে স্বস্তির ৬টি উপায়

কম দামে সেরা উপহার

কম দামে উপহার দেয়ার মতো দারুণ কিছু পণ্য