দুশ্চিন্তা ও মানসিক অশান্তি প্রতিটা মানুষের জীবনের সাথে জড়িত। আর এটা অস্বাভাবিক কিছু না কারন আল্লাহ পবিত্র কোরআনের (সুরা বালাদের ৪নং আয়াতে) ইরশাদ করেছেন যে, “নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কষ্ট – ক্লেশের মধ্যে”। তাই হতাশ হওয়ার কোনো কারন নেই।
কখনো সুখ আবার কখনো বা দূঃখ এই নিয়েই আমাদের জীবন পরিচালিত হয়। তবে আমরা দূঃখের সময় একটু বেশিই বিচলিত হয়ে পড়ি ও অল্পতেই হাল ছেড়ে দেই। আর এটা আমাদের মানসিক অশান্তির কারন হয়ে দাড়ায়। আজ আমি আপনাদের সাথে ৫ টি টিপস শেয়ার করবো যাতে করে আপনি দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবেন। ইন শা আল্লাহ।
অধিক পরিমাণে দোয়া করা
যে কোনো কিছু পাওয়ার জন্য দোয়ার কোনো বিকল্প নেই। সব কিছু দেওয়ার মালিক কেবল এক আল্লাহ, এই কথাটা মনে প্রানে বিশ্বাস করতে পারলে এবং এর উপর অটল থাকলে জীবনের অর্ধেক সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। বেশি বেশি দোয়া করলে অন্তর পরিষ্কার হয় এবং অহমিকা দূর হয়। ঠিক দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য ও বেশি বেশি দোয়া করা একান্তই জরুরি। সেগুলো হলোঃ
- বেশি বেশি ইস্তেগফার করা
- অধিকহারে দরুদ পড়া
- নামাজে অধিক যত্নবান হওয়া
- সর্বদা জিকির করা
- তাহাজ্জুদ, সালাতুল হাজত নামাজ পড়া
- বেশি বেশি কোরআন পাঠ করা
চিন্তা ও পেরেশানির সময় রাসুল (সাঃ) যে দোয়াটি পড়তেন তা হলোঃ “আল্লাহুম্মা ইন্নী আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজু বিকা মিম গালাবাতিদ দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল”
অর্থ হে আল্লাহ! নিশ্চিয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (বুখারি, হাদিসঃ ২৮৯৩)
আমরা চার পাশের মানুষের দিকে তাকিয়ে নিজের অবস্থানের কথা ভেবে কষ্ট পাই। মনে হয় এত অল্প সময়ে সে অনেক কিছু করে ফেলেছে আমি কিছুই করতে পারলাম না! এই যে একটা ধারনা, এই ধারনা আমাদের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। আপনার চারপাশে আরো অনেক মানুষ আছে, তাদের দিকে একটু তাকান। দেখেন আপনার চেয়ে কত দূরর্দশায় মানুষ জীবন কাটাচ্ছে।
ভালো মন্দ তাকদীরের উপর ছেড়ে দেয়া
মানুষের ভালো মন্দ সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে এক আল্লাহ। আর আল্লাহ যা করেন আমাদের মঙ্গলের জন্যই করেন। হয়তো সেটা মেনে নেওয়া আমাদের জন্য কষ্ট কর হয়ে যায়। তবে ধৈর্য্য ধরতে পারলে আমরা তার উত্তম ফল পাব ইন শা আল্লাহ।
মনে করুন যে, মাঝ রাস্তায় আপনার গাড়িটি নষ্ট হয়ে গেলো। এখন আপনি ভাবছেন যে আল্লাহ আমায় ভালোবাসে না যদি বাসত তাহলে এই বিপদটা দিতো না। কিন্তু আপনি একটু অন্য দিক দিয়ে ভেবে দেখুন তো। হয়তো আপনার গাড়িটি এখানে নষ্ট না হলে আপনি সামনে এগিয়ে যেতেন আর সেখানে গেলে আপনার বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারত? তার মানে এই যে আল্লাহ আপনাকে একটা ছোট বিপদ দিয়ে বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়েছেন এবং আল্লাহ আপনার মঙ্গল চান বলেই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন।
এজন্য আপনার কাছ থেকে যা চলে যায়, হোক সেটা সময়, হোক টাকা পয়সা অথবা আত্নীয়স্বজন, কিংবা বাড়ি গাড়ি এর জন্য আফসোস না করে আল্লাহর উপরে ছেড়ে দিয়ে দেখুন হাজারো বিপদের মধ্যে মনে এক অপার শান্তি পাবেন। আর আপনার মানসিক অশান্তি আপনাকে গ্রাস করতে পারবে না।
প্রত্যাশার পরিবর্তন
দুশ্চিন্তা আমাদের তখনই হয় যখন আমাদের আশা অনুরূপ ফল আমরা পাই না। আমরা ভাবি একরকম আর হয় অন্যরকম। কারো কোনো উপকার করে থাকলে মনে করি, আমি তার জন্য এতটুকু করলাম কিন্তু সে আমার জন্য কিছুই করল না। অন্তত উপকার স্বীকার টুকুও করল না। আর এই ভাবনাটা আমাদের ভিতরে বাসা বেঁধে এক বিশাল কষ্টের পাহাড় গড়ে তোলে।
কিন্তু এর জন্য দায়ী কেবল আমরা নিজেরাই। কারন কারো কোনো উপকার করে থাকলে তার কাছ থেকে কোনো প্রতিদান আশা করা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয় আপনি ভালো কাজের প্রতিদান আশা করবেন আল্লাহর কাছে। হোক সেটা নিজের প্রিয়জনের কাছে অথবা অন্য কারো কাছে। কারো কাছে কিছু পাওয়ার আশা করলে পরবর্তীতে আশানুরূপ প্রতিদান না পেলে ডিপ্রেশন শুরু হয়ে যায়। মনে হয় সে কেন আমার সাথে এমন করল বা কেন আমার সাথে এমন হলো!
আপনি যখন আপনার প্রতাশ্যা কমাবেন তখন আর কষ্ট লাগবে না কোনো কিছুতেই। শুধু মনকে শান্তনা দিবেন এই বলে যে, এটাই হওয়ার ছিলো। আপনার প্রত্যাশা থাকবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বাকি সব প্রত্যাশা বাদ দিয়ে দেখুন কারো জন্য কোনো কিছুর জন্য আপনার আর দুশ্চিন্তা হবে না। ইন শা আল্লাহ।
নিজেকে আর কারো সাথে তুলনা না করা
আমাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হওয়ার আরেকটা কারন হচ্ছে আমরা চার পাশের মানুষের দিকে তাকিয়ে নিজের অবস্থানের কথা ভেবে কষ্ট পাই। মনে হয় এত অল্প সময়ে সে অনেক কিছু করে ফেলেছে আমি কিছুই করতে পারলাম না! এই যে একটা ধারনা, এই ধারনা আমাদের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।
আপনার চারপাশে আরো অনেক মানুষ আছে, তাদের দিকে একটু তাকান। দেখেন আপনার চেয়ে কত দূরর্দশায় মানুষ জীবন কাটাচ্ছে। আল্লাহ তো তাদের তুলনায় আপনাকে ভালো রেখেছেন। এর জন্য শুকরিয়া আদায় করুন। কারো জীবনের উন্নতি নিয়ে ভেবে নিজের সময় নষ্ট করবেন না। সব মানুষেরই কোনো না কোনো অপূর্ণতা থাকে, কারোটা বুঝা যায় আবার কেউ লুকিয়ে রাখে।
তাই কারো সাথে নিজেকে তুলনা করে নিজেকে ছোট ভেবে মানসিক চাপ নিবেন না। সর্বঅবস্থায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন তাহলেই দেখবেন মানসিক শান্তি আর কোথাও খুঁজতে হবে না, আপনার নিজের কাছেই খুঁজে পাবেন।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরামর্শ করা
সমস্যার উর্ধে আমরা কেউ না। সমস্যা থাকবেই এবং তার সমাধান খুঁজে বের করাই বুদ্ধিমানের কাজ। হয়তো অনেক সময় আমরা সমস্যা কারো সাথে শেয়ার করি না, নিজের ভিতরে রেখে নিজে নিজে কষ্ট পাই। এতে আমাদের দূশ্চিতা ও মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। তবে ইসলাম আমাদের পরামর্শ নিতে নির্দেশ করে।
আপনি যে বিষয় নিয়ে চিন্তিত সে বিষয়টি একজন সৎ এবং আল্লাহ ভীরু মানুষের সাথে শেয়ার করুন। যে আপনাকে একটা সৎ উপদেশ দিতে সক্ষম। আপেক্ষিক ভাবে আপনার কাছে আপনার ভুলকেই সঠিক মনে হতে পারে। তবে কারো সাথে শেয়ার করলে সে আপনার ভুল ধরিয়ে দিতে পারবে। এরপর দেখবেন আপনার দুশ্চিন্তা অনেকটা হালকা হয়ে গেছে।
প্রিয় পাঠক/ পাঠিকা, আমার এই লেখা তখনি স্বর্থক যখন আপনি এর থেকে উপকৃত হবেন। মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা আমাদের অন্তরের একটা ব্যাধি। এ ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে। ইন শা আল্লাহ আল্লাহ আপনাকে সকল পেরেশানি থেকে মুক্তি দেবেন। মনে রাখবেন,”আল্লাহই অন্তরের পরিবর্তন কারী”।
GIPHY App Key not set. Please check settings