in , ,

সন্তান অতিমাত্রায় স্ক্রিনে আসক্ত হলে করণীয় কী

স্ক্রিন টাইমঃ ৩য় পর্ব

screen-time-addiction-need-awarness

সন্তান অতিমাত্রায় স্ক্রিনে আসক্ত হলে অভিভাবক হিসেবে আপনার করনীয় কি এই বিষয়ে আমরা আগের পর্বে কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। সন্তানকে বিকল্প কাজে উৎসাহিত করে একই সাথে পরিবারের বড়রা নিজেদের স্ক্রিন টাইম কমিয়ে নিলে তার স্ক্রিনে আসক্তি অনেকটায় কমে আসবে। এছাড়াও আসক্ত শিশুর স্ক্রিনের টাইম কমিয়ে তাকে ধীরে ধীরে বই পড়া বা অন্য কোন সৃজনশীল কাজে উৎসাহিত করলেও স্ক্রিনের প্রতি আগ্রহ কমে আসবে। সন্তানের স্ক্রিনে আসক্তি দূর করতে অভিভাবক হিসেবে আপনার করনীয় কি এই বিষয়ে আমরা আগের পর্বে বেশ কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজকে আমরা এই বিষয়ে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ন আলোচনা করবো।  

১। প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক ধারনা দিন

বর্তমান সময়ে আমরা প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকতে পারবো না। কারণ প্রযুক্তির ভেতরেই আমাদের বসবাস। তাই এর সঠিক ব্যবহার নিজে শিখা ও সন্তানকে শিক্ষা দান করা জরুরী। মনে রাখতে হবে আমাদের জীবনকে সহজ করার জন্য প্রযুক্তি, প্রযুক্তির জন্য আমরা না। তাই কোন ডিভাইসটি আমাদের জীবনে কতটুকু গুরুত্বপূর্ন এবং সেটার সঠিক ব্যবহার জানতে হবে। যেমন প্রাথমিকভাবে একটি স্মার্টফোন আমাদের যোগাযোগ রক্ষার জন্য প্রয়োজন। তবে এটি যেন এমন একটি বস্তুতে পরিনত না হয় যেটা আমাদের দিনের অধিকাংশ সময় দখল করে নিবে।

২। সৃজনশীল কাজে উৎসাহিত করুন

আপনার সন্তানকে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে উৎসাহিত করুন। তার আগ্রহের বিষয়টি প্রথমে জেনে নিন। এর পর সম্ভব হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দিন। শিশুরা সাধারনত সৃজনশীল কাজে আগ্রহ বোধ করে। এতে তাদের মানসিক বিকাশও সঠিকভাবে হবে।

শিশুকে ঘরের কোনায় ডিভাইস হাতে না বসিয়ে মাঠে ঘাম ঝরানো খেলা খেলতে দিন। সমবয়সীদের সাথে খেলাধুলা করলে তাদের সামাজিকতা, বন্ধুত্ব, সহনশীলতা ইত্যাদি বোধ বৃদ্ধি পাবে।

৩। সন্তানকে পারিবারিক কাজে অংশগ্রহন করতে উৎসাহ দিন

আমরা অনেকেই অতিরিক্ত আদরবশত সন্তানকে সাংসারিক কাজে অংশগ্রহন করতে দেই না। কিন্তু আপনার সন্তানকে যদি তার নিজের ছোট খাট কাজগুলো উদ্বুদ্ধ করেন তাহলে সে নিজেকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে আরো অনেক বেশী সম্পৃক্ত করতে পারবে। ভাই বোনের সাথে একত্রে ছোট খাট কাজগুলো করলে শিশু আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠবে না। আপনার শিশুটিকে তার ভাই বোনের সাথে মিলে নিজের টেবিল বা বই খাতা, খেলনা গুছিয়ে রাখতে বলুন। স্কুল থেকে ফিরে স্কুলের পোশাক সঠিক যায়গায় গুছিয়ে রাখতে বলুন। সন্তান কিছুটা বড় হলে নিজ নিজ ঘর, এবং পোশাক গুছিয়ে রাখার প্রশিক্ষন দিন। সাপ্তাহিক কিছু কাজের দায়িত্ব দিন। এতে শিশু নিজেকে পরিবারের বড়দের মতই দায়িত্বশীল ভাবতে শুরু করবে।

৪। সন্তানের হাতে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল নয়

আপনার সন্তানের বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোনভাবেই মোবাইল দেয়া যাবে না। একান্তই যোগাযোগের প্রয়োজন হলে সন্তানের হাতে স্মার্টফোন না দিয়ে সাধারন ফোন দিন। একেবারে ছোট শিশু খেতে না চাইলে তাকে গল্প বলে অথবা খেলতে খেলতে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন কিন্তু কোন ভাবেই হাতে ট্যাব বা স্মার্টফোন দিবেন না।

৫। সন্তানকে দৈনন্দিন রুটিনে আবদ্ধ রাখুন

সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত একটি রুটিন অনুস্মরন করুন। প্রতিদিন একই সময় উঠবে, নাস্তা খাওয়া থেকে শুরু করে পড়তে বসা, স্কুলে যাওয়া, খেলার সময় সব কিছুই রুটিন অনুযায়ী করার চেষ্টা করুন। একইসাথে সন্তানকে পুষ্টিকর খাবারে অভ্যস্ত করুন। খাবার তালিকায়  পুষ্টিকর ও ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার রাখুন। এতে আপনার সন্তানের সব রকমের পুষ্টির চাহিদা পূরন হবে এবং প্রানবন্তভাবে বেড়ে উঠবে।

৬। সন্তানকে স্ক্রিনের ক্ষতিকরদিক সম্পর্কে ধারনা দিন

উঠতি বয়সের সন্তানদের সাথে অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করুন। অতিরক্ত স্ক্রিন টাইম কিভাবে তাদের চোখের ক্ষতি করে, মনোযোগ নষ্ট করে, স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দেয়, সৃজনশীলতাকে নষ্ট করে ইত্যাদি বুঝিয়ে বলুন। এই ভয়ংকর আসক্তি তাকে কিভাবে সকলের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে কেবলমাত্র একটি ছোট্ট স্ক্রিনে আটকিয়ে ফেলবে সে বিষয়ে সতর্ক করুন। কিভাবে তার স্বপ্নপূরনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে এই নেশা তা বলুন। এভাবে ধীরে ধীরে তাকে স্ক্রিনের আগ্রাসন থেকে সরিয়ে নিয়ে আসুন। সন্তান যখন অনাকাঙ্ক্ষিত কোন বিষয়ের সাথে জড়িয়ে পড়ে তখন তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসার গুরুভার পিতামাতার উপরেই বর্তায়। তাই অভিভাবক হিসেবে আপনার দায়িত্বগুলো পালন করুন এবং সন্তানকে স্ক্রিনের নেশা থেকে সরিয়ে আনতে সচেষ্ট হোন। আশাকরি স্ক্রিন টাইম ও আসক্তি নিয়ে লেখা এই ধারাবাহিক আর্টিকেলগুলো আপনার সন্তানকে এই ভয়ানক নেশা থেকে সরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, সমৃদ্ধ ও স্ক্রিন মুক্ত হোক।

What do you think?

Written by সানজিদা আলম

একজন ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার। টেকনোলজি, স্বাস্থ্য, প্রোডাক্ট রিভিউ এবং ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। লেখালেখির পাশাপাশি ভালোবাসি পড়তে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Screen-Time-Addiction

সন্তান অতিমাত্রায় স্ক্রিনে আসক্ত হলে করণীয় কী

foods to avoid in winter

শীতকালে যে খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত