in

রাতে দেরিতে ঘুমানোর মারাত্বক কিছু সমস্যা

late-sleeping-problems

কর্মব্যস্ত জীবনে আমরা সবচেয়ে কম গুরুত্ব দেই ঘুমকে। রাতে দেরিতে ঘুমানো এবং ঘুম থেকে দেরিতে উঠাকে আমরা স্বাভাবিক রুটিনে পরিণত করেছি। অবস্থা এমনও দাঁড়িয়েছে যে সারাদিনের সকল কাজের ঝামেলা মিটাতে মিটাতে আমরা রাতে মাত্র ২/৩ ঘন্টা ঘুমানোর সময় পাই। আবার আমাদের অনেকেরই ঘুমের অভ্যাসে ভিন্নতা রয়েছে। যেমন কেউ ঘুমান সন্ধ্যা রাতে আবার কারো ঘুম আসে মাঝ রাত পেরিয়ে। কিন্তু আপনি জানেন কি, আপনার ঘুমের সময়ের উপর নির্ভর করে শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ন বিষয়? বর্তমানে আমাদের তরুন সমাজের হয়েছে আরো এক বড় সমস্যা- স্ক্রিন আসক্তি (স্ক্রিন টাইম)। এরা রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা স্ক্রিনে সময় কাটিয়ে ঘুমাতে যায় শেষ রাতে।

রাতে দেরি করে ঘুমাতে গেলে আমাদের শরীরে উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। সেই সাথে খাবার রুচি ও চাহিদার উপরেও পরিবর্তন আসতে পারে। ফলে দেখা দিতে পারে নানারকম শারীরিক সমস্যার। যেমন হৃদযন্ত্রের নানারকম সমস্যা। শুধু তাই নয়, দেরিতে ঘুমানোর কারনে রাতের ঘুম ৪/৫ ঘন্টার বেশী না হওয়ায় মানুষের যে দৈনিক নির্দিষ্ট সময়ের ঘুম দরকার হয় তা পূরন হয় না। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রাও বেড়ে যেতে পারে।

সাম্প্রতিক একটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে, নিয়মিত রাতে দেরিতে ঘুমাতে গেলে হার্টের সমস্যা এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা বেড়ে যায়। এছাড়াও আরো নানারকম শারীরিক সমস্যা বা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। আজকের আলোচনায় আমরা দেখবো নিয়মিত দেরিতে ঘুমানোর জন্য আমাদের কী কী শারীরিক সমস্যা হতে পারে।

১। আপনার শরীর সঠিকভাবে ডিটক্সিফাই করতে পারে না

আপনি কী জানেন যে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুম আপনার শরীর টক্সিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে? রাত ১১টা থেকে ভোর ৩টা পর্যন্ত আপনার লিভার টক্সিন বের করার কাজ করে। তাই রাতে আপনি যত দেরি করে ঘুমাবেন আপনার লিভার শরীর পরিস্কার করার সময় তত কম পাবে। আর আপনি যদি রাত ৩টার পর ঘুমাতে যান তাহলে লিভার একেবারেই তার কাজ করতে পারে না।

২। ঘুমের পরিমান কমে যায়

আপনি যদি অপ্রয়োজনে দিনের পর দিন রাত জেগে থাকেন তবে সবার আগে যে সমস্যাটি আপনার হবে তা হল আপনার ঘুমের পরিমান কমে যাবে। ঘুমের সমস্যা দেখা দিবে। আপনি চাইলেও আর দীর্ঘ সময় ঘুমাতে পারবেন না। নিয়মিত আপনার ঘুমের ঘাটতি থাকবে। এভাবে দীর্ঘদিন কম ঘুমের কারনে নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিবে।  

অসংখ্য শারীরিক ও মানসিক সমস্যার অন্যতম প্রধান কারন রাতে ভালো ঘুম না হওয়া। তাই এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া অত্যন্ত জরুরী।

৩। হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে

আপনি যখন দেরিতে ঘুমান তখন হরমোন নিয়ন্ত্রন ও এর ভারসাম্য রক্ষার জন্য আপনার শরীর পর্যাপ্ত সময় পায় না। এমনকি কম ঘুমের কারনে রক্তে সুগারের মাত্রাও সামঞ্জস্যপূর্ন রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এটি ইনসুলিন ও কর্টিসেলের মত হরমোনের ভারসাম্য নষ্টের অন্যতম কারণ। যা পরবর্তীতে ডায়াবেটিস, PCOS, এনজাইটির মত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

৪। আপনার শরীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায় না

কখনও কি এমন হয়েছে যে আপনি টানা ৩/৪ ঘন্টা ঘুমানোর পরেও ক্লান্ত বোধ করেছেন? এমন হতেই পারে যদি আপনি দেরিতে ঘুমাতে যান। দেরি করে ঘুমানো আপনার শরীরের স্বাভাবিক ছন্দে ব্যাঘাত ঘটায় যা আপনার ঘুমের মানকে কমিয়ে দেয়। আপনি গভীর ঘুমের জন্য পর্যাপ্ত সময় পান না ফলে আপনার প্রয়োজনীয় বিশ্রামের গুনমান পান না।

৫। ব্লাড প্রেসার বাড়তে শুরু করে

ঘুম সংক্রান্ত একাধিক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, প্রতিদিন দেরি করে ঘুমানোর কারনে আপনার শরীর ও ব্রেইনের উপর মারাত্বক চাপ পড়ে। ফলে শরীরে রক্ত চাপ বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও নিয়মিত দেরিতে ঘুমালে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়, কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে সেই সাথে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার পাশাপাশি আরো শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

৬। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়

পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিস্ক প্রয়োজনীয় বিশ্রামের সুযোগ পায় না। আর তাই স্বাভাবিকভাবেই মস্তিস্কের বিশেষ বিশেষ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সমস্যা গুরুতর হলে হলে আক্রান্ত অংশের কর্মক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে। আর এর ফলে অনেকেরই যে কোন বিষয়ে চটজলদি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। 

৭। ওজন বৃদ্ধি পায়

আপনি কি জানেন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে আপনার ওজন আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যেতে পারে? দিনের পর দিন অপর্যাপ্ত ঘুমের কারনে আমাদের হজমশক্তি দূর্বল হয়ে পড়ে ফলে, খাবার ঠিকমত হজম হতে পারে না। এর ফলে এসিডিটি ও গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়, সেই সাথে বৃদ্ধি পায় আমাদের ওজনও। আর ওজন বাড়লে সাথে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে সময় লাগে না।

এছাড়াও দেরিতে ঘুমানোর কারনে মনোযোগ হ্রাস পায় ফলে ছোট খাট আঘাত লাগার প্রবনতা বেড়ে যায়। পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই উর্বরতা কমে যায় তাই সন্তান জন্ম দিতে সমস্যা হয়। তাই শরীরকে তার নিজের ছন্দে চলতে দেয়ার জন্য রাত ১১টার পর আর জেগে থাকা ঠিক নয়। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস করলে দ্রুত ঘুম আসে এবং ঘুম গভীর হয়। তাই আর নয় রাত জাগা, ১১টা বাজলেই ঘুমিয়ে পড়ুন আর নানারকম রোগবালাই থেকে নিরাপদ থাকুন।    

What do you think?

Written by সানজিদা আলম

একজন ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার। টেকনোলজি, স্বাস্থ্য, প্রোডাক্ট রিভিউ এবং ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। লেখালেখির পাশাপাশি ভালোবাসি পড়তে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Food for healthy kidney

কিডনি ভালো রাখবে যে ৭টি খাবার

diet tips for hair care in winter

শীতকালে চুল ভালো রাখতে ৪টি ডায়েট টিপস