in

৫টি খাবার যা প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রন করবে পিসিওএস এর উপসর্গ

পিসিওএস (PCOS) ডায়েট

PCOS Natural Treatment

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা সংক্ষেপে পিসিওএস (PCOS) মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হরমোনজনিত সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি। এটি শরীরে এন্ড্রোজেনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে, যা একটি পুরুষ যৌন হরমোন। এই হরমোনটি মহিলাদের ডিম্বাশয়ে ছোট সিস্টের গঠন সহ একজন মহিলার প্রজনন স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। এছাড়াও আরও বেশ কিছু সমস্যা তৈরি করে। WHO এর তথ্য অনুসারে, প্রজননে সক্ষম এমন আনুমানিক ৮-১৩% মহিলারা এই সমস্যায় আক্রান্ত এবং এদের মধ্যে ৭০% পর্যন্ত মহিলারা আগে থেকে তাদের এই সমস্যার কথা জানতে পারেন না। যদিও PCOS-এর কোনো স্থায়ী নিরাময় নেই, তবে এটি আপনার খাদ্য এবং জীবনযাত্রায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনার মাধ্যমে এই সমস্যাটি অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। এই বিষয়টি মাথায় রেখে, আসুন কিছু খুবই সাধারন খাবার নিয়ে আলোচনা করি যা প্রাকৃতিকভাবে PCOS উপসর্গগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে। তবে প্রথমে এর লক্ষণগুলো জেনে নেওয়া যাকঃ  

পিসিওএস রোগের লক্ষণ

১। PCOS এর অন্যতম প্রধান লক্ষন হল অনিয়মিত পিরিওড। এ রোগের কারনে জরায়ুতে সিস্ট তৈরি হয় যার কারনে স্বাভাবিক নিয়ম মেনে পিরিওড হয় না।

২। এই শারীরিক সমস্যায় মহিলাদের শরীরে পুরুষ হরমোনের পরিমান বেড়ে যায় যার ফলে শরীরে লোমের আধিক্য দেখা যায়। এমনকি মুখ, পেট এবং পিঠেও লোম গজাতে পারে।  

৩। হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারনে মানুসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটে। মুড সুয়িং, অবসাদ, বিষন্নতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি নিজের উপর আত্মবিশ্বাসও কমে যেতে পারে।

৪। পুরুষ হরমোন বেড়ে যাওয়ার কারনে শরীরের বিভিন্ন অংশ বিশেষ করে মুখের ত্বক তৈলাক্ত হয়ে পড়ে। তাই ত্বকে ব্রণের পরিমানও বেড়ে যায়।

৫। ওজন বৃদ্ধি বা স্থুলতা PCOS এর আরো একটি গুরুত্বপূর্ন লক্ষন। বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে দেখা যায় যে, এই সমস্যায় আক্রান্ত বেশীরভাগ মহিলারই প্রয়োজনের তুলনায় ওজন বেশী থাকে।

৬। এই শারীরিক সমস্যার কারনে ডিম্বানুর নিঃস্বরণ অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ফলে গর্ভধারনে সমস্যা হয়।

৭। আপনার যদি অতিরিক্ত চুল পড়তে থাকে অথবা গলার পেছনে, উরুসন্ধির রঙ স্বাভাবিকের চেয়ে কালো হয়ে যায়, তবে আপনার উচিত চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়া। কারণ PCOS এর কারনেও এই সমস্যাগুলো হয়ে থাকে।

৫টি সাধারন খাবার যা প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রন করবে আপনার PCOS এর উপসর্গগুলোকেঃ

১। দারুচিনি

পিসিওএস এর উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে দারুচিনি একটি চমৎকার মশলা। এতে সিনামালডিহাইড নামক একটি রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, যা মহিলাদের মধ্যে প্রজেস্টেরন বাড়াতে এবং টেস্টোস্টেরন হ্রাস করতে সাহায্য করে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (এনআইএইচ) এর তথ্যমতে ডায়েটে নিয়মিত দারুচিনি অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা ইনসুলিন প্রতিরোধ এবং মাসিক চক্রের উন্নতিতে সহায়তা করে। আপনি দারুচিনি দিয়ে চা অথবা বিভিন্ন তরকারিতে দারুচিনি ব্যবহার করতে পারেন।

২। হলুদ

হলুদ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দূর করার পাশাপাশী পিসিওএস এর বিভিন্ন উপসর্গ উপসম করার কাজও করে। হলুদে কারকিউমিন নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ইনসুলিন প্রতিরোধ এবং রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুসারে, হলুদ পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণে এবং সামগ্রিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। যদিও আমরা বাঙ্গালীরা অনেক তরকারীতেই হলুদ ব্যবহার করি তার পরেও আপনি চাইলে চা, দুধ ইত্যাদির সাথেও হলুদ খেতে পারেন।

৩। তুলসী

তুলসী আমাদের দেশের বহুল পরিচিত একটি উদ্ভিদ। দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই এর দেখা মেলে। এটি অ্যান্টি-অ্যান্ড্রোজেনিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, যা মহিলাদের মধ্যে পুরুষ যৌন হরমোন টেস্টোস্টেরন কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং অতিরিক্ত চুল বৃদ্ধি এবং ব্রণের মতো লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। অ্যাডাপটোজেন হিসাবে, এটি কর্টিসলের মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে, যার ফলে ইনসুলিনের মাত্রা বজায় থাকে। স্বাভাবিকভাবে PCOS এর উপসর্গগুলোকে হ্রাস করতে চা, সালাদ বা অন্য কোন রান্নায় তুলসি ব্যবহার করতে পারেন।  

৪। অশ্বগন্ধা

অশ্বগন্ধা আমাদের দেশে বহু শতাব্দী ধরে ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে এখন জানা যাচ্ছে যে, এটি PCOS-সম্পর্কিত লক্ষণগুলোকে নিয়ন্ত্রন করতেও সহায়তা করতে পারে। একটি অ্যাডাপটোজেন হওয়ার কারণে, এটি কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যার ফলে স্ট্রেস-সম্পর্কিত ওজন বৃদ্ধি হ্রাস পায়। উপরন্তু, এটি মেজাজের পরিবর্তন, উদ্বেগ, ক্লান্তি এবং বিষণ্নতার মতো উপসর্গগুলো উপশম করতে সাহায্য করতে পারে।

৫। মেথি

যদিও আমরা সাধারণত মেথি কে হজমে সহায়ক হিসেবে দেখে থাকি তবে, এটি PCOS এর উপসর্গ নিয়ন্ত্রনের জন্যও বেশ উপকারী। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে মেথির বীজ খাওয়া ইনসুলিনের মাত্রা এবং গ্লুকোজ ইনটলারেন্স স্থিতিশীল করতে সাহায্য করতে পারে। এমনকি এটি টেস্টোস্টেরনের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করতে পারে। এর উপকারিতা পেতে, কিছু মেথি বীজ রাতে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন, পরের দিন সকালে সেগুলো সিদ্ধ করুন, ছেঁকে নিন এবং রস পান করুন।

প্রাকৃতিকভাবে PCOS উপসর্গগুলোকে নিয়ন্ত্রন করতে আপনার খাদ্যের মধ্যে এই অতি পরিচিত ভেষজ উপাদান এবং মশলাগুলো অন্তর্ভুক্ত করুন। তবে আপনি যেহেতু ইতোমধ্যে কিছু শারীরিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তাই আপনার ডায়েটে কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করার আগে আপনার ডাক্তার বা পুষ্টিবিদদের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

What do you think?

Written by সানজিদা আলম

একজন ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার। টেকনোলজি, স্বাস্থ্য, প্রোডাক্ট রিভিউ এবং ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। লেখালেখির পাশাপাশি ভালোবাসি পড়তে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Amazfit Band 7 Review

অ্যামেজফিট ব্যান্ড ৭ রিভিউ

বাজেট পিসি

২০ হাজার টাকায় বাজেট পিসি বিল্ড