in

দুপুরে ঘুম ঘুম ভাব, এনার্জি ফিরে পাওয়ার উপায় কি?

Sleeping at noon, way to regain energy

দুপুরের সময়টা আমাদের খুব ক্লান্ত ক্লান্ত লাগে। চোখ খুলে রাখতে কষ্ট হয়, মাথা ঝিমঝিম করে। এই লক্ষণগুলো আমাদের অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। এটা বেশ স্বাভাবিক। সারাটা সকাল কাজ করার পর দুপুরে খেলেই এনার্জি কমে যায় দেহের। ইংরেজিতে এই অবস্থাটির নাম দেওয়া হয়েছে The Midday Slump। আমরা যেটিকে ভাত-ঘুম বলে মনে করি।

ঘুম বিশেষজ্ঞ অ্যানথনি রেফি বলেন, “আমাদের দেহে প্রাকৃতিক সার্কেডিয়ান রিদম আছে। এটি আমাদের দেহের ভেতরে থাকা একটি জৈবিক ঘড়ি যা দেহের বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। দিনের বেলা ব্রেইনে সিগন্যাল পাঠিয়ে বলে দেহকে জাগ্রত, সতর্ক থাকতে হবে। দুপুরে খাওয়ার সময় এসব সিগন্যালের শক্তি কিছুটা কমে যায়, ফলে আমাদের ঘুম ঘুম লাগে।”

দুপুরে খাওয়ার পর ঘুম ঘুম লাগার কারন

স্লিপ ফাউন্ডেশনের মতে, দুপুরে খাওয়ার পর এনার্জি কমে যাওয়া স্বাভাবিক একটি বিষয়। এটি দেহের স্বাভাবিক সার্কেডিয়ান রিদমের অংশ। একদিকে সার্কেডিয়ান রিদম, অপরদিকে ভারী খাবার – দুটো মিলে দেহকে ক্লান্ত করে তোলে। ইসলামের সুন্নাহ হচ্ছে, এই এনার্জি কমে যাওয়ার সময়টাকে কাজে লাগিয়ে কাইলুলা করে নেওয়া বা হালকা ঘুমিয়ে নেওয়া। এতে দেহ আবার কাজ করার শক্তি-সামর্থ্য খুঁজে পায়।

কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন আমাদের এনার্জি কমে যায়? এর সাথে সম্পর্ক আছে ঘুম-ঋণের। আমরা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই ঘুম-ঋণ বাড়তে থাকে। ঘুম-ঋণ হলো, জেগে থাকার কারণে ঘুমের চাহিদা দেহে সৃষ্টি হওয়া। ঘুমানোর দ্বারাই এই ঋণ শোধ করা যায়। আমরা যতক্ষণ না ঘুমিয়ে থাকব, ঘুম-ঋণ ততই বাড়তে থাকব। দুপুর হতে হতে বেশ অনেকটা সময় ঘুম ছাড়া কাটানো হয়ে যায়।

আপনি যত বেশি ঘুম-বঞ্চিত থাকবেন, দুপুরে আপনার ক্লান্তিটাও তত বেশি হবে। কিন্তু সমস্যা হল, দুপুরের এই ক্লান্তিটা আমাদের মোটিভেশন যেমন কমিয়ে দেয়, তেমনি কমায় প্রোডাক্টিভিটি।

কিভাবে ফিরে পাবেন এনার্জি?

যেহেতু আমাদের দেহের জৈবিক প্রক্রিয়াই সার্কেডিয়ান রিদমের সিস্টেমটাকে সেট করে দিয়েছে, তাই একে সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করা সম্ভব নয়। কিন্তু এর প্রভাব কমানোর জন্য এবং ক্লান্তি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কিছু টিপস মেনে চলা যেতে পারে।

১. দুপুরের পর ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন

এনার্জি কমে গেলে আমরা অনেকেই কফির দিকে হাত বাড়াই। এই কৌশল শুরুতে কাজে লাগলেও যেকোনো মাদকের মতো একই পরিমাণ কফিতে আর কাজ হয় না। তখন একই ইফেক্ট পেতে আরো বেশি কফি খাওয়া লাগবে। আর বেশি কফি খেলে রাতে আমাদের ঘুমের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে। তাই কফি খেতে হলে সকালের মধ্যেই খেয়ে ফেলুন। দুপুরের পর ক্যাফেইন যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।

২. রোদে যান

বিকেলের ক্লান্তি দূরের একটি বড় অ্যান্টিডোট হল প্রাকৃতিক সূর্যালোক। সূর্যালোকে থাকলে আপনার দেহে ঘুমের হরমোন মেলাটোনিন কম উৎপাদন হবে। রোদে যাওয়ার সুযোগ নেই? তাহলে ঘরেই উজ্জ্বল বাল্ব জ্বালিয়ে রাখুন, অন্ধকার এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে দুপুরের খাবারের পর।

৩. হাঁটতে যান

বাইরে হাঁটতে যান। এতে একদিকে আপনার যেমন এক্সারসাইজ হয়ে যাবে – যা আপনার দেহ ও মনকে চাঙ্গা করবে, অপরদিকে আপনি পাবেন ফ্রেশ বাতাস আর প্রাকৃতিক আলো।

৪. পরিমিত ঘুমান

রাতে ঘুম ভালো হলে দুপুরে ক্লান্তির সম্ভাবনা কমে যায়। প্রত্যেকের একই পরিমাণ ঘুম প্রয়োজন হয় না, ব্যক্তিভেদে এর তারতম্য ঘটে। বয়সের সাথেও আসে পরিবর্তন। তবে চেষ্টা করবেন রাতে সাত ঘন্টা ঘুমানোর। এতে সারাদিন এনার্জি পাবেন ইনশাআল্লাহ।

৫. বেশী পানি খান

এমনকি মৃদু ডিহাইড্রেশনও দেহে ক্লান্তি সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতাকে কমিয়ে দিতে পারে। কিন্তু অনেকেই পরিমিত পরিমাণ পানি পান করে না। ফলে তাদের ক্লান্ত লাগে। তাই যদি আপনার ঘুম ঘুম লাগে, কফির দিকে হাত না বাড়িয়ে বাড়ান পানির গ্লাসের দিকে।

৬. স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খান

ক্লান্ত লাগলে কিটক্যাট বা অন্য কোনো চিনিতে ভরপুর চকলেটের দিকে হাত বাড়ানোর ইচ্ছা জাগতে পারে। কারণ আপনি জানেন চকলেট খেলেই দ্রুত এনার্জি ফিরে পাওয়া যায়। কিন্তু এই এনার্জি একটু পরেই ধুপ করে কমে যায়। এরপর শুরুতে যে ক্লান্তি লাগছিল তার চেয়েও বেশি ক্লান্তি লাগতে শুরু করে। তাই চকলেটের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খান। ফলমূল খান, কাঁচা সবজি খান। এ ছাড়া বাদাম, চিয়া সিড, দুধ ইত্যাদি প্রোটিনজাতীয় খাবার খেতে পারেন। এ ছাড়া পিনাট বাটার, ফলমূল, গাজর, সিদ্ধ ডিম, আপেল, দই ইত্যাদি খেতে পারেন।

৭. কুরআন তিলাওয়াত শুনুন

কুরআন তিলাওয়াত মানুষের মননে অত্যন্ত শক্তিশালী প্রভাব ফেলে। এটি আপনার মুডকে যেমন বদলে দিতে পারে, তেমনি আপনাকে করতে পারে চাঙ্গা। তাই মনোযোগ দিন আসমানি কিতাবের তিলাওয়াতে।

৮. ছোট্ট ঘুম দিন

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৫-২০ মিনিটের ঘুম আপনার এনার্জি ও মনোযোগ দুটোই ফিরিয়ে আনতে পারে। কিন্তু আপনি এক ঘন্টার বেশি ঘুমোলে আরো ক্লান্ত, বিষণ্ণ লাগতে পারে। রাতে ঘুম আসতেও সমস্যা হবে। তাই ঘুমানোর আগে ২০ মিনিটের অ্যালার্ম দিয়ে দিন, যেন বেশি ঘুমানো না হয়ে যায়।

৯. ডিভাইস বন্ধ রাখুন

ফোন বা ট্যাব রাতের বেলা ব্যবহার করলে এনার্জি তো কমেই, দিনের বেলা ব্যবহার করলেও কমে। রাতে ঘুমানোর অন্তত এক ঘন্টা আগে সব ডিভাইস বন্ধ করে দিন। এ ছাড়া ফোনের “ডু নট ডিসটার্ব” মোডটাও ব্যবহার করতে পারেন দিনের বিভিন্ন সময়ে, যেন আপনার মানসিক শক্তি অটুট থাকে।

What do you think?

Written by শাহেদ হাসান

আমি লেখালেখি করতে বরাবরই ভালোবেসেছি। বর্তমানে গ্রন্থ অনুবাদ ও মৌলিক লেখার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন ব্লগেও লেখালেখি করছি। পড়াশোনা করছি রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

5 foods for mental stress

মানসিক অবসাদ দূর করতে ডায়েটে ৫টি বিশেষ খাবার

Baseus Orange Dot Wireless Presenter Red Laser

প্রেজেন্টেশনের টেনশন কমাবে বাসাস ওয়্যারলেস প্রেজেন্টার