in

LoveLove

মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার বলতে আসলে কি বোঝায়?

Date Expired Food!

আপনি কি খাবারের মেয়াদ উত্তীর্ণ (ডেট এক্সপায়ার) হয়ে গেলে সেটা ফেলে দেন? দুধের মেয়াদ উত্তীর্ণ বা এক্সপায়ার ডেট পার হয়ে গেলে ভাবেন দুধটা আর খাওয়ার যোগ্য নয়? কিংবা চিপস একটু নরম হয়ে গেলে ভাবেন এটা তো নষ্ট হয়ে গেছে!

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে খাবার নষ্ট হয়। আর এই তালিকার শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে আমরা বাংলাদেশিরাও কি খুব পিছিয়ে আছি? একজন বাংলাদেশি প্রতি বছর গড়ে ৬৫ কেজি খাবার নষ্ট করে। পুরো হিসাব করলে, প্রতি বছর বাংলাদেশ নষ্ট করে ১ কোটি ৬ লাখ টন খাবার। অথচ উন্নত বিশ্বের দেশ নিউজিল্যান্ডে নষ্ট হয় ৬১ কেজি, নেদারল্যাণ্ডে ৫০ কেজি, বেলজিয়ামে ৫০ কেজি এবং অস্ট্রিয়ায় ৩৯ কেজি।

এই বিশাল পরিমাণ খাবারের বিশাল একটা অংশ নষ্ট হয় বাসাবাড়িতেই। মোট নষ্ট খাবারের ৩৭ শতাংশ নষ্ট হয় বাসায়। আবার এসব খাবারের প্রায় ২০ শতাংশ ক্রেতারা ফেলে দেন কেবল তারা পণ্যের গায়ের ম্যানুফ্যাকচারিং ডেট বা লেবেল ঠিকমতো পড়তে পারেন না বলে।

অথচ অধিকাংশ খাদ্যপণ্য মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও খাওয়া নিরাপদ। তাহলে আমাদের খাদ্যপণ্যের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ দেখে যদি বোঝা না যায় যে খাবারটা নষ্ট হয়ে গেছে, তাহলে এটা দেওয়ার কারণ কি?

বিংশ শতাব্দীর আগে খাদ্য উৎপাদন এবং খাদ্য খাওয়ার মাঝের প্রক্রিয়াটা ছিল খুব সিম্পল। বর্তমানের মতো এত জটিল ছিল না। অধিকাংশ মানুষ নিজেরাই খাদ্য উৎপাদন করত, নিজেদের উৎপাদিত খাবার খেত। বেশীরভাগ মানুষই জানত, কীভাবে দেখে, শুঁকে, স্পর্শ করে খাবারের ফ্রেশনেস বোঝা যায়। কিন্তু যখন থেকে সুপারমার্কেটে প্রক্রিয়াজাত খাবার বিক্রি শুরু হল, তখন থেকে খাদ্যপণ্যের ফ্রেশনেস বোঝাও কঠিন হয়ে গেল।

কোনো খাবার খাওয়ার উপযুক্ত আছে কী না এটা বোঝার জন্য আপনার চোখ, নাক আর জিহবাই হতে পারে ভালো মাধ্যম। এগুলো দিয়েই সিদ্ধান্ত নেবেন, খাবারগুলো কি পেটে চালান দেবেন, না ডাস্টবিনে।

যুক্তরাষ্ট্রে মুদি দোকানিরা প্যাকেজিং কোড দেখে বুঝে নিত খাবারগুলো কতদিন ধরে শেলফে ছিল। ১৯৭০ সালে ক্রেতারা দাবি করে, তাদেরকেও এই তথ্য জানানো হোক। ফলে অনেক সুপারমার্কেট একটা নতুন সিস্টেম গ্রহণ করে যার নাম দেওয়া হয় ওপেন ডেটিং। এই সিস্টেম আজও চালু আছে। এখানে খাদ্য প্রস্তুতকারী বা বিক্রেতারা পণ্যের গায়ে একটি লেবেল লাগিয়ে দেয় যেখানে বিভিন্ন তারিখ দেওয়া থাকে যা দেখে বোঝা যায় প্রোডাক্টটা কতদিন সর্বোচ্চ ভালো থাকবে।

তবে এই ভালো থাকার দিনক্ষণ কোনো বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করা হয় না। কোন তারিখ দেওয়া হবে তারও নেই কোনো প্রচলিত পদ্ধতি। তাই অধিকাংশ খাদ্য প্রস্তুতকারক এবং বিক্রেতারা এক্সপায়ার ডেইট বেশ কমিয়ে লেখে, যেন কাস্টোমাররা খাবারটা আগেভাগে খেয়ে নেয়, যেন ফ্রেশ আর সুস্বাদু অবস্থায় খেতে পায় এবং আবার খাবারটা কিনতে আসে।

এর মানে হল, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও কোনো খাবার খেলে তেমন কোনো সমস্যা নেই। সব খাবারের ক্ষেত্রে হয়ত বিষয়টি প্রযোজ্য না। পুরোনো বিস্কুট, পাস্তা এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশী দেরি করে খেলে খেতে একটু ভিন্নরকম লাগতে পারে, কিন্তু তাইবলে সেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ এমনটা নাও হতে পারে। যদি না সেগুলো ফুলে ওঠে বা দাগ দাগ দেখা দেয়। আবার যেকোন খাবার নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় না রাখা হলে এক্সপায়ার ডেটের আগেই সেটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

ফ্রিজে কম তাপমাত্রায় খাবার রাখলে ফুড পয়জনিংয়ের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াগুলো সক্রিয় হতে পারে না। ফলে ফ্রিজে সঠিক প্রক্রিয়ায় খাবার রেখে দিলেও সেটা অনেকদিন পরেও খাওয়া সম্ভব। ফ্রিজে প্রায় পাঁচ সপ্তাহ ধরে ডিম ভালো থাকে, আর নষ্ট হয়ে গেলে গন্ধ শুঁকলেই বুঝতে পারবেন। এ ছাড়া খাবার নষ্ট হলে বাজে দুর্গন্ধ, শুকিয়ে যাওয়া কিংবা ছত্রাকের আক্রমণ দেখেও বোঝা যায়। অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।

USDA এর পরামর্শ হচ্ছে, গোশত কেনার পর সেদিনই রান্না করে খেয়ে নেওয়া আর না খেলে সেদিনই ফ্রিজে স্টোর করে রাখা।

এক্সপায়ার ডেটের পর রেডি-টু-ইট সালাদ, গোশত, অপাস্তুরিত পনির ইত্যাদির ভেতর প্যাথোজেনিক ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর সম্ভাবনা থাকে, যেগুলো শুধু খেয়ে বা গন্ধ শুঁকে বোঝা সম্ভব না। ইনফ্যান্ট ফরমুলাতে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ দেওয়া থাকে নিরাপত্তার খাতিরে। কিছু কিছু লেবেল কাজ করলেও অধিকাংশ লেবেলই কোনো কাজ করে না।

২০১৯ সালে ১০০০ জন আমেরিকানের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, তাদের ৭০ শতাংশই ডেট লেবেল দেখে বোঝার চেষ্টা করে কোনো খাবার খাওয়া যাবে কী না। আর তাদের ৬০ শতাংশই বলে, তারা ডেট এক্সপায়ার হয়ে গেলে সেই খাবার ফেলে দেয়। রেস্টুরেন্ট ও মুদি দোকানেও একই কাজ করা হয়।

এই অপচয় থেকে বাঁচার জন্য বিশেষজ্ঞরা কিছু আইন প্রণয়নের কথা বলেছেন যেন ডেট লেবেলে দুই ধরণের কথা যুক্ত করা হয়ঃ

  • খাবার জন্য সর্বোত্তম সময়। এটা দেখে ক্রেতা বুঝবেন খাবার কতদিন ফ্রেশ থাকবে
  • ব্যবহারের শেষ তারিখ। এটা নিরাপত্তার জন্য। অর্থাৎ এই দিনের পর খাবার খাওয়া আর ঠিক হবে না।

এই সমাধানটাকে পারফেক্ট বলা যায় না। কিন্তু কিছু গবেষক মনে করেন, জাতীয় পর্যায়ে এই মানদণ্ড নির্ধারণ করা হলে প্রতি বছর ৩৯৮,০০০ টন খাবার নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। এ ছাড়া মুদি দোকানিরা পণ্যের গা থেকে লেবেল মুছে দিতে পারেন, যুক্তরাজ্যের কিছু সুপারমার্কেট চেইনে এই কাজ করা হয়েছে। যেন ক্রেতারা তাদের নিজেদের বুঝ অনুযায়ীই পণ্য কেনেন। 

এ ছাড়া আরো অনেক গবেষক কিছু নীতি-নির্ধারণ করতে বলেছেন যেন মুদি দোকান ও রেস্টুরেন্টে অবিক্রিত খাবার দান করে দেওয়ার জন্য ইন্সেন্টিভ দেওয়া হয়। বর্তমানে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে বিভ্রান্তির কারণে আমেরিকার ২০-টি রাজ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরের খাবার দান না করে ফেলে দেওয়া হয়। তবে খাদ্য অপচয় কমানোর সর্বোত্তম পন্থা হল আপনি যা কিনবেন সেটা খেয়ে ফেলবেন। পারলে দানও করে দেবেন। আর মনে রাখবেন, কোনো খাবার খাওয়ার উপযুক্ত আছে কী না এটা বোঝার জন্য আপনার চোখ, নাক আর জিহবাই হতে পারে ভালো মাধ্যম। এগুলো দিয়েই সিদ্ধান্ত নেবেন, খাবারগুলো কি পেটে চালান দেবেন, না ডাস্টবিনে।

What do you think?

Written by শাহেদ হাসান

আমি লেখালেখি করতে বরাবরই ভালোবেসেছি। বর্তমানে গ্রন্থ অনুবাদ ও মৌলিক লেখার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন ব্লগেও লেখালেখি করছি। পড়াশোনা করছি রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

drinking-raisin-water-to-remove-acne

ব্রণ দূর করতে কিসমিস ভেজানো পানি

চুলের আগা ফাটা

চুলের আগা ফাটা দূর করার খুব সহজ উপায়গুলো জানুন