in

চুলের আগা ফাটা দূর করার খুব সহজ উপায়গুলো জানুন

চুলের আগা ফাটা

আপনি যদি চুলের আগা ফাটা সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে চান, তাহলে এই লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অবশ্যই পড়ুন।

ঘন ও সুন্দর চুলের আকাঙ্ক্ষা প্রতিটি মেয়েরই থাকে। তবে অনেক সময় কিছু সমস্যার কারণে চুল আগের চাইতে রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ হয়ে যায়, যার ফলে চুলের আসল সৌন্দর্যই হারিয়ে যেতে থাকে।

চুলের প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে আগা ফেটে যাওয়া অন্যতম। আজ আপনাদের জানাবো চুলের আগা ফেটে যাওয়ার কারণ এবং কিভাবে এ সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত।

কেন চুলের আগা ফেটে যায়?

লেখার শুরুতেই আগা ফেটে যাওয়া বলতে চুলের ঠিক কোন অবস্থাকে বোঝানো হয় তা বলছি। অনেক সময় আমরা লক্ষ্য করি, আমাদের চুল নিচের দিক থেকে এত রুক্ষ ও লালচে বর্ণের হয়ে গেছে যে মনে হচ্ছে চুল তো নয়, যেন একটি ঝাড়ু! মূলত যখন চুলের আগা ফেটে যেতে শুরু করে, তখনই চুলে এই পরিবর্তনটি আসে।

যেসব কারণ চুলের আগা ফেটে যাওয়ার জন্য দায়ী সেগুলো হলো-

  • প্রতিদিন অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে চুল ধোয়া হলে চুলের ন্যাচারাল ময়েশ্চার ধীরে ধীরে কমে যেতে শুরু করে এবং এর ফলস্বরূপ চুলের আগা ফেটে যেতে থাকে। 
  • অনেকেরই তোয়ালে বা গামছা দিয়ে চুল ঝেড়ে শুকানোর অভ্যাস থাকে। তারা মনে করেন, “হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করার চাইতে এভাবে চুল শুকালে চুলের ক্ষতি হবেনা”। আপনারা হয়তো জেনে অবাক হবেন চুলের আগা ফাটার পেছনে এই অভ্যাসটি প্রধানভাবে দায়ী।
  • চুল আঁচড়ানোর সময় ধীরে ধীরে জট ছাড়িয়ে না আঁচড়ে যদি দ্রুত আঁচড়ান, সেক্ষেত্রেও চুলের আগা ফেটে যায়। বিশেষ করে যারা চুলের নিচের দিকের জট ছাড়াতে তাড়াহুড়ো করেন, তাদের চুলের আগা বেশি ফাটে। 
  • যারা নিয়মিত চুলে বিভিন্ন হেয়ার স্টাইলিং টুলস, যেমন: ব্লো ড্রায়ার, হেয়ার স্ট্রেইটনার অথবা হেয়ার কার্লার ব্যবহার করেন, তখন ওই টুলসের হিটের কারণেও চুলের ন্যাচারাল ময়েশ্চার কমে যায় এবং আগা ফাটার সমস্যা দেখা দেয়।
  • একটু আলাদাভাবে চুল সাজিয়ে তুলতে অনেকেই নিম্নমানের হেয়ার কালার বা অন্যান্য প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে দেখা যায়, এগুলোতে থাকা কেমিক্যালের কারণে চুল প্রচন্ড রুক্ষ হয়ে যায় এবং সেই সাথে চুলের আগাও ফেটে যায়।

কিভাবে চুলের আগা ফাটা সমস্যার সমাধান করবেন?

চুলের আগা ফেটে গেলে চুল নিচের দিক থেকে পাতলা ও রুক্ষ হয়ে যেতে থাকে বলে চুল যেমন ছেড়ে রাখা যায় না, তেমনিভাবে নিজের মনমতো হেয়ার স্টাইলও করা যায়না। তাই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সঠিকভাবে চুলের যত্ন নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলুন আর দেরি না করে জেনে আসা যাক কিভাবে চুলের আগা ফাটা সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে সে সম্পর্কে।

  • প্রতি দুই মাসে একবার করে চুলের আগার অংশ ট্রিম করে ফেলুন। এতে পরবর্তীতে আগা ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা যেমন কম থাকবে, সেই সাথে দ্রুত চুল লম্বাও হবে।
  • আগা ফাটা রোধ করতে চুলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগানোর বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার চুলে তেল ব্যবহার করুন। নারকেল তেলের সাথে ক্যাস্টর অয়েল, আমন্ড অয়েল ও অলিভ অয়েল পরিমাণমতো মিশিয়ে ১-২ ঘন্টা চুলে রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন৷ তবে এই তেলগুলো কখনোই গরম করা যাবেনা, কারণ তাতে এগুলোর কার্যকারিতা অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়।
  • চুলে ন্যাচারাল ময়েশ্চার ফিরিয়ে এনে আগা ফাটা রোধ করতে হেয়ার মাস্ক খুব ভালো কাজ করে। রিজনেবল প্রাইসের মধ্যে Garnier ব্র‍্যান্ডের Ultimate  Blends Almond Crush Yogurt Mask এবং Pantene ব্র‍্যান্ডের Repair & Protect Hair Mask For Damaged Hair -এ দু’টোর মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন। এ দু’টো হেয়ার মাস্কই যাদের চুলে আগা ফাটা ও রুক্ষতা রয়েছে তাদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। তাই এগুলো ব্যবহার করলে আপনারা চুল হবে সিল্কি, শাইনি ও হেলদি।

এগুলোর পাশাপাশি আপনারা চাইলে কলা, ডিম, মধু ও টক দইয়ের সাহায্যে বাড়িতে প্রোটিন হেয়ার মাস্ক তৈরি করে তা চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এই ন্যাচারাল হেয়ার মাস্কও চুলের আগা ফাটা সারাতে বেশ ভালো কাজ করে।

  • অবশ্যই ভালো মানের শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। শ্যাম্পুর ক্ষেত্রে ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট রয়েছে এমন শ্যাম্পু বেছে নেওয়ার চেষ্টা করুন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি প্যারাবেন ও সালফেট ফ্রি শ্যাম্পু বেছে নিতে পারেন৷ সেই সাথে পরামর্শ থাকবে, প্রতিবার চুল শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এতে করে চুলের রুক্ষ ভাব অনেকটুকু কমানো সম্ভব হবে, যা আগা ফাটা রোধ করবে। ও হ্যাঁ, চুল ধোয়ার জন্য ভুলেও খুব গরম পানি ব্যবহার করবেন না। বরং ঠান্ডা পানি বা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন।
  • কখনোই ভেজা অবস্থায় চুল আঁচড়াতে যাবেন না। বরং চুল শুকানোর জন্য অপেক্ষা করুন এবং তারপর ধীরে ধীরে আঁচড়ান।
  • চুলের জট ছাড়াতে মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন। কারণ এ ধরনের চিরুনি ব্যবহার করলে তুলনামূলকভাবে কম সময়ে চুলের জট ছাড়ানো সম্ভব হয় এবং সেই সাথে চুলের ক্ষতিও হয় না।
  • যখন আপনারা চুলে হেয়ার ড্রায়ার, স্ট্রেইটনার অথবা অন্যান্য হেয়ার স্টাইলিং টুলস ব্যবহার করবেন, তার আগে অবশ্যই একটি ভালো মানের হিট প্রটেক্টর স্প্রে ব্যবহার করুন। এতে করে চুলে স্টাইলও করতে পারবেন, আবার আগা ফাটার সমস্যার সম্মুখীনও হতে হবে না। কম বাজেটের মধ্যে খুবই ভালো কাজ করে এমন একটি হিট প্রটেক্টর স্প্রে হলো SCHWARZKOPF ব্র‍্যান্ডের Pro Styling Heat Protection Spray, তাই চাইলে এটি বেছে নিতে পারেন।
  • চুলের আগা ফাটার সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে আর্গন অয়েলের মতো কার্যকরী প্রোডাক্ট খুব কম আছে। এটি আপনারা শ্যাম্পু করার পর চুল ভেজা থাকা অবস্থায় সিরামের মতো পুরো চুলে ম্যাসাজ করতে পারেন। আবার সেই সাথে কোনো হেয়ার স্টাইলিং টুল ব্যবহারের আগেও পুরো চুলে হালকাভাবে আর্গন অয়েল ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে করে চুল সবসময় ময়েশ্চারাইজড ও সফট থাকবে এবং সেইসাথে দেখতে পাবেন খুব দ্রুত চুলের আগা ফাটাও কমে যাবে।

এটুকুই ছিলো আজকের আলোচনা। আশা করি এই পরামর্শগুলো অনুসরণ করে চুলের যত্ন নিলে খুব দ্রুতই আপনারা আগা ফাটার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারবেন।

What do you think?

Written by সুমাইয়া রহমান দোলা

লেখালেখি শুরু করেছিলাম শখের বশেই৷ এখন এটি আমার নেশা, আবার পেশা ও বটে। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি এখন ভালো লেখক হয়ে ওঠার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

One Comment

Date Expired Food!

মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার বলতে আসলে কি বোঝায়?

Retinol

রেটিনলের উপকারিতা ও সঠিকভাবে ব্যবহারের নিয়ম