সবসময় চুল ভালো রাখা বা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখা সহজ কোন কাজ নয়। তবে চুলের যত্নের কিছু অনন্য উপায় রয়েছে যেগুলো এই কঠিন কাজটিকেও সহজ করে তুলবে।
আমাদের দেশের বাতাসে যে পরিমান ধুলা উড়ে তাতে চুলকে ভালো রাখার জন্য বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। আপনার চুলের গঠন কোকড়ানোই হোক বা স্ট্রেইটই হোক, সেটা বড় বিষয় নয়, সব ধরনের চুলের জন্যই বিশেষ কিছু যত্নের প্রয়োজন হয়। প্রাচীনকাল থেকেই মা-নানীরা চুলের যত্নে তেলের ব্যবহারকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে। অপর দিকে বর্তমানে হেয়ার এক্সপার্টরা নানারকম ট্রিটমেন্টের কথা বলেন যেমন হেয়ার স্পা, মরোক্কান তেল ইত্যাদি। তবে যে যাই বলুক, চুলের যত্নের প্রথম ধাপ হল আপনার সঠিক ডায়েট আর ডায়েটের দুটি গুরুত্বপূর্ন জিনিস হল আয়রন ও প্রোটিন। চুলের কোষগুলো শরীরের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল কোষ কিন্তু আপনি যদি অপুষ্টিতে ভোগেন তবে এই কোষগুলোই সবার আগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কম পক্ষে ১২ মিলিগ্রাম আয়রন রাখুন সেই সাথে পর্যাপ্ত প্রোটিনও গ্রহন করুন।
চুল ভালো রাখার উপায়
১। গড়ে প্রতিদিনে ১০০ থেকে ১৫০ চুল পড়া স্বাভাবিক। তাই আপনার ঘরের মেঝেতে কিছু চুল গড়াগড়ি করতে দেখলে আতংকিত হয়ে পড়বেন না।
২। ভেজা চুলের গোড়া নরম থাকে এবং হালকা টান লাগলে উঠে আসতে পারে তাই ভেজা চুল খুব আলতোভাবে যত্ন সহকারে আঁচড়ান। অপেক্ষাকৃত মোটা বা চওড়া দাঁতযুক্ত চিরুনি দিয়ে ধীরে ও খুব হালকাভাবে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত আঁচড়ান।
চুল আঁচড়ানোর সময় সতর্ক থাকুন। শ্যাম্পু করার পর চওড়া দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন।
৩। চুলের আগা বাদামি ও রুক্ষ হয়ে যেতে পারে আবার অনেক সময় ভালোভাবে যত্ন না নিলে আগা ফেটে যেতে পারে। এতে চুলের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। এই আগা ফাটা রোধে চুল নিয়মিত ট্রিম করা উচিত। প্রতি ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পর পর ১/৪ ইঞ্চি চুল কেটে ফেলা উচিত। এতে চুলের আগা ফাটা রোধ হবে এবং স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
৪। প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। তবে যখনই শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন তার পরে কিছু কন্ডিশনারও ব্যবহার করুন। শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার একই ব্র্যান্ডের ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
৫। শ্যাম্পুর পরে নিয়মিত কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুল মজবুত হয় এবং চকচকেও হয়। কন্ডিশনার ব্যবহারের পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
৬। আমরা যখন কোন প্যাকেটজাত খাবার কিনি তখন প্যাকেটের পেছনে এতে থাকা উপকরনের নামগুলো পড়ি কিন্তু শ্যাম্পু কেনার সময় এই গুরুত্বপূর্ন বিষয়টি প্রায়ই এড়িয়ে যায়। কিন্তু শ্যাম্পুতে সালফেট থাকে যেটা ঘন সাদা ফেনা তৈরি করে এবং আমাদের মাথার ত্বক থেকে ধুলা ময়লা পরিস্কার করতে কাজ করে। তবে অনেক গবেষকগণ বলেন যে, এই রাসায়নিকটি চুলের প্রয়োজনীয় তেল ধুয়ে দেয়। এই কারনে শ্যাম্পু মিশ্রিত পানি চোখে লাগলে চোখ জ্বলে। তাই যদি কোন শ্যাম্পু ব্যবহারে আপনার মাথার ত্বকে জ্বলুনি বা অন্য সমস্যা হয় তবে সালফেট-ফ্রি শ্যাম্পু কিনুন।
৭। আপনার চুল যদি শুষ্ক হয় তবে চুলে রঙ না করায় ভালো। তবে আপনি যদি রোদে চুলে হালকা বাদামি আভা দেখতে চান তবে লেবু অথবা মধু ব্যবহার করতে পারেন। পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে বাইরে যাওয়ার সময় স্প্রে করতে পারেন। অথবা চুল ধোয়ার সময় পানিতে মধু মিশিয়ে নিতে পারেন।
এই টিপসগুলো ছাড়াও আরো একটি ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে যা আপনার চুলকে ভালো রাখবে দীর্ঘসময়। চলুন দেখি সেটা কি-
ডীপ কন্ডিশনিং
প্রতিবার শ্যাম্পু ব্যবহারের পর অবশ্যই ডীপ কন্ডিশনিং করুন। কারণ চুলকে সারাবছর স্বাস্থ্যকর, শাইনি ও ঝলমলে রাখতে ডীপ কন্ডিশনিং খুবই জরুরী। তাই প্রতিবার শ্যাম্পু করার পর চুল থেকে পানি নিংড়ে নিয়ে তোয়ালে নিয়ে অতিরিক্ত পানি মুছে নিন। তারপর পর্যাপ্ত পরিমানে কন্ডিশনার নিয়ে চুলের গোড়ায় ভালোভাবে লাগাতে হবে। এরপর একটি মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে খুব সাবধানে আঁচড়িয়ে প্রতিটা চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত কন্ডিশনার মাখিয়ে নিতে হবে। এভাবে কমপক্ষে ১০ মিনিট রেখে খুব ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে চুল খুবই মসৃণ ও সিল্কি হবে।
আশাকরি চুল ভালো রাখার উপায়গুলো নিয়ে লেখাটি আপনাদের কাজে আসবে। এখন শীত বা গ্রীষ্ম নয়, চুল সারাবছরই থাকবে ঝলমলে ও শাইনি। তবে চুল খুবই স্পর্শকাতর, সামান্য অবহেলাতে দারুন ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই চুলের জন্য কোন প্রসাধনী পন্য কেনার আগে ভাল ভাবে দেখে কিনতে হবে যেন সেগুলোতে কোন ক্ষতিকারক উপকরণ না থাকে। সেই সাথে এক্সপ্যায়ার ডেট দেখে কিনতেও ভুলবেন না।
GIPHY App Key not set. Please check settings