in

নামাজ-রোজা যেভাবে দেহঘড়ি (সার্কেডিয়ান রিদম) নিয়ন্ত্রণ করে

Circadian-rhythm-and-namaz-roja

আপনি কি জানেন আপনার দেহের ভেতরেও একটা ঘড়ি আছে যেটা আপনাকে বলে দেয় কখন ঘুমোতে যাবেন, কখন ঘুম থেকে জাগবেন? অন্যান্য নানা কাজের কথাও সময়মাফিক স্মরণ করিয়ে দেয় এই মজার ঘড়িটি। দেহের ভেতরের মজার ঘড়িটির নাম দেহঘড়ি বা সার্কেডিয়ান রিদম। আমরা যেরকম সারাদিনের জন্য নানা রুটিন করি, ক্লাস রুটিন বানাই, তেমনি এই সার্কেডিয়ান রিদমও আপনার সারাদিনের একটা রুটিন বানিয়ে ফেলে। কিন্তু অনেক সময় নানা কারণে সার্কেডিয়ান রিদমের ছন্দপতন ঘটে। নামাজ ও রোজা সার্কেডিয়ান রিদমের ছন্দ ধরে রাখতে সহায়তা করে। কীভাবে করে? সেটা নিয়েই আলোচনা করব এখানে।

সার্কেডিয়ান রিদম আসলে কি?

ধরে নিন, আপনার শরীরের একটা দৈনিক রুটিন আছে। এই দৈনিক রুটিন আপনার শরীর যেভাবে মেনে চলে সেটাই সার্কেডিয়ান রিদম। কখন আপনার ঘুম-ঘুম ভাব লাগাতে হবে, কখন ক্ষুধার্ত বোধ করাতে হবে, কখন এনার্জেটিক অনুভব করবেন – এই সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে সার্কেডিয়ান রিদম। অনেক সময় এমন হয় না যে – আপনি কোনো ঘড়ির সাহায্য ছাড়াই প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে উঠে যাচ্ছেন? জানেন তো পেছনে কে কলকাঠি নেড়েছিল তখন? ঠিক ধরেছেন, ওই সার্কেডিয়ান রিদমই। তবে কখনো কখনো সার্কেডিয়ান রিদম খেই হারিয়ে ফেলে। যখন আপনি অনেক রাত জেগে থাকেন অথবা রাতে না ঘুমিয়ে রাত জেগে জেগে ফোন চালান। এতে আপনার ভেতর ক্লান্তিভাব দেখা যায়, মুডি অনুভব হয়। সার্কেডিয়ান রিদম সম্পর্কে আমার আগের লেখা পড়তে নিচের লিংকটি অনুসরন করুন।

জৈবিক ঘড়ি সার্কেডিয়ান রিদম কী, লাইফস্টাইলে এর প্রভাব

নামাজের সাথে সার্কেডিয়ান রিদমের সম্পর্ক

মহান আল্লাহ মুসলিমদের ওপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ করেছেন। আপনি যদি নামাজের সময়গুলো খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন, প্রতিটা নামাজের সময় দিনের একটি নির্দিষ্ট অংশের সাথে জড়িত, সূর্যের গতিবিধির সাথে নামাজের সময়সীমার নিবিড় সম্পর্ক আছে। আপনি নামাজ আদায় করার দ্বারা আপনার দেহের কাজকর্মগুলোকেও স্বাভাবিক রাত-দিনের প্রাকৃতিক চক্রের সাথে সমন্বয় করছেন। এতে আপনার দেহ বুঝতে পারে কখন জাগতে হবে, কখন কাজকর্ম করার সময়, কখন সারাদিনের ক্লান্তির ধকল পোহানোর পর আরাম করে গভীর ঘুমে ডুব দেওয়ার সময়।

আমাদের দেহটা একটা ঘড়ির মতো। একে একটা রুটিন মেনে চলতে হয় যেন সে ঠিকঠাক কাজ করতে পারে। নামাজ-রোজা অবশ্যই কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই আদায় করতে হবে। কিন্তু এর ফায়দা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও আখিরাতের সাফল্য অর্জনের সাথেই সম্পৃক্ত নয়, বরং এগুলো আমাদের দেহকে সুস্থ রাখতে, সঠিক গতিতে রাখতে সহায়তা করে।

যেমন ধরুন ফজরের নামাজটা। এটা সূর্যোদয়ের ঠিক আগে আদায় করতে হয়। আপনি যখন ফজরের সালাতের জন্য জাগেন, আপনার দেহ সকালের প্রথম সূর্যের মৃদু আভা শরীরে মাখতে পারে। এটা আপনার দেহকে জানান দেয়, ঘুম থেকে ওঠার সময় হয়েছে। এটা আপনার সারাদিনের ঘুমের প্যাটার্নকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, আপনাকে সারাদিন চাঙ্গা ও অ্যালার্ট রাখে।

আবার ঠিক রাতের নামাজ শেষ করে তারাতারি ঘুমানোর জন্য হাদিসে উল্লেখ আছে। রাসুল (সা.) রাতে দেরি করে ঘুমানো অপছন্দ করতেন। তিনি সাহাবাদের এশার নামাজ পরপরই ঘুমিয়ে যাওয়ার জন্য বলতেন। রাসুল (সা.) এশার নামাজ এক-তৃতীয়াংশ রাত পরিমাণ দেরি করে পড়া পছন্দ করতেন, আর এশার আগে ঘুমানো এবং এশার পর না ঘুমিয়ে গল্পগুজব করা অপছন্দ করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৯)

চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায়ও ঠিক একই ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, যখন সূর্যের আলো থাকে না তখন শরীরকে কাজ করতে বাধ্য করা বা জাগিয়ে রাখা শরীরে মেলাটনিন হরমোন তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে। এই মেলাটনিন মানুষের দেহে টিউমারের বৃদ্ধিকে রোধ করে। এছাড়া রাত জাগা মানুষদের ক্যান্সারসহ অসংখ্য রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

কাজেই ফজর থেকে এশার নামাজের এই রুটিন আমাদের দেহঘড়ির ছন্দ ধরে রাখতে নিরবে অসাধারন ভূমিকা রেখে চলেছে।

রোজার সাথে সার্কেডিয়ান রিদমের সম্পর্ক

রামাদান মাসে রোজা রাখা সার্কেডিয়ান রিদমের ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। রামাদানের পবিত্র মাসে আমরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর ভয়ে কোনো খাবার-পানি খাই না। এই উপবাসের সময়টা আপনার শরীরকে প্রাকৃতিক আলো-অন্ধকার চক্রের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে।

আপনার দেহ যে পন্থায় হরমোন ও শক্তি উৎপাদন করে, রোজা রাখার সময় সেটা বদলে যায়। সিস্টেমের এই এ্যাডজাস্টমেন্ট আপনার দেহের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে রিসেট করতে সাহায্য করে, আপনার ঘুমের প্যাটার্নকে উন্নত করে। এ ছাড়া, যখন আপনি ইফতার করেন, তখন সঠিকভাবে ঘুমানোর জন্য ও সারাদিন কর্মক্ষম থাকার মতো সঠিক পুষ্টি তখন দেহ পেয়ে যায়।

সব মিলিয়ে বলতে হয়, নামাজ ও রোজা উভয়ই আমাদের দেহকে সঠিক ট্র্যাকে রাখতে সাহায্য করে। যখন আপনি ফজরে ঘুম থেকে উঠছেন তখন দেহকে জানান দিচ্ছেন যে, এখনই দিন শুরু করার সময়। রোজা রাখার দ্বারা আপনি দিন-রাতের চক্রের সাথে আপনার দেহের স্বাভাবিক ছন্দকে খাপ খাইয়ে নিতে সহায়তা করছেন। এভাবেই সালাত ও রোজা আপনার দেহঘড়ির ছন্দকে ধরে রাখতে সাহায্য করে, দেহে যোগান দেয় পর্যাপ্ত এনার্জির, সঠিকভাবে সাহায্য করে ঘুমোতে। সবসময় মনে রাখা দরকার যে, আমাদের দেহটা একটা ঘড়ির মতো। একে একটা রুটিন মেনে চলতে হয় যেন সে ঠিকঠাক কাজ করতে পারে। নামাজ-রোজা অবশ্যই কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই আদায় করতে হবে। কিন্তু এর ফায়দা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ (যদিও সেটাই ফায়দা হিসেবে যথেষ্ট) ও আখিরাতের সাফল্য অর্জনের সাথেই সম্পৃক্ত নয়, বরং এগুলো আমাদের দেহকে সুস্থ রাখতে, সঠিক গতিতে রাখতে সহায়তা করে।

What do you think?

Written by শাহেদ হাসান

আমি লেখালেখি করতে বরাবরই ভালোবেসেছি। বর্তমানে গ্রন্থ অনুবাদ ও মৌলিক লেখার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন ব্লগেও লেখালেখি করছি। পড়াশোনা করছি রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

বর্ষাকালে ত্বকের সমস্যা

বর্ষাকালে ত্বকের কিছু সাধারন সমস্যা

Fabric-Roll-On-Mosquito-Repellent

ফেব্রিক রোল-অন, শিশুদের নিরাপদ মশা নিরোধক