in

বর্ষাকালে ত্বকের কিছু সাধারন সমস্যা

বর্ষাকালে ত্বকের সমস্যা

শ্রাবণের রিমঝিম বৃষ্টি নাকি তরুন-তরুনীদের মনে ভালোবাসা জাগিয়ে দেয়! হতে পারে সত্যি, তবে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ভালোবাসার সাথে কিছু অস্বস্তিকর সমস্যাও ডেকে আনে। এই যেমন ধরুন নানাবিধ ত্বকের ও চুলের সমস্যা। গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমে হঠাৎ আসা এক পশলা বৃষ্টি আপনার শরীর ও মনকে ফুরফুরে করে দিতে পারে কিন্তু সময়ের সাথে সাথে টানা বৃষ্টিপাত ত্বকের জন্য খুব যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে এবং এটি অনেকগুলো ত্বকের সংক্রমণ এবং কিছু ক্ষেত্রে এমনকি রোগের কারণও হতে পারে।

বৃষ্টির ঋতুতে মানুষের ত্বকের সমস্যা হওয়াটা আসলে খুবই সাধারণ ব্যাপার, তাই কিছু স্কিনকেয়ার কৌশল এবং টিপস সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরী যেগুলো আপনাকে দীর্ঘমেয়াদে সাহায্য করতে পারে। বর্ষাকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে জানার আগে, এর কারণগুলি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন:

১। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা

বর্ষাকালে নানারকম রোগবালাইয়ের প্রকোপ বাড়ে, তাই এই সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরী। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মধ্যে রয়েছে প্রতিদিন গোসল করা, বাইরে থেকে ফিরে পা ভালোভাবে পরিস্কার করা, কাপড় ভালোভাবে শুকানো ইত্যাদি।

২। অস্বাস্থ্যকর পোশাক

দিনের একটা বড় সময় যদি আপনাকে মোজা ও জুতা পড়ে থাকতে হয় তবে তাড়াতাড়ি আপনার মোজার দিকে নজর দিন। কারণ এটি যদি সিনথেটিক কাপড়ের হয় তাহলে সেখানে বাতাস চলাচল বাধাগ্রস্থ হবে ফলে ঘাম আটকে থেকে দূর্গন্ধ সহ নানারকম সমস্যা হতে পারে।

৩। স্বাস্থ্য সমস্যা

আপনার যদি আগে থেকেই কোন শারীরিক সমস্যা থেকে থাকে তাহলে বর্ষার স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া আপনার জন্য আরো বেশী কষ্টদায়ক হয়ে উঠতে পারে। আপনার যদি আগে থেকেই ডায়াবেটিস, এলার্জি, স্থুলতা ইত্যাদি সমস্যা থাকে তাহলে এমিনিতেই আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম থাকবে। তাই এই ঋতুতে আপনার নানাবিধ সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশী থাকবে।

বর্ষায় ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমন বৃদ্ধি পায়। ফলে ত্বকে চুলকানি, খোসপাঁচড়া, ফুসকুড়ি ইত্যাদির পরিমান বেড়ে যায়। এই সময় পোশাক ও অন্যান্য জিনিস ব্যবহারে সতর্ক হওয়া জরুরী।

এখন চলুন বর্ষাকালে হওয়া কিছু সাধারন ত্বকের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

১। একজিমা

একজিমা খুব সাধারন একটি ত্বকের সমস্যা। এতে ত্বকে লালভাব হয় এবং আক্রান্ত এলাকা চুলকায়। এছাড়া ত্বকের প্রদাহও দেখা দিতে পারে। আক্রান্ত স্থানে সাধারণত কিছু ফোসকা তৈরি হয় এবং ত্বক ফাটা ও রুক্ষও হয়ে যেতে পারে। আপনি যদি একজিমায় ভুগে থাকেন, তাহলে আপনি বিশেষ করে বর্ষাকালে অস্বস্তি অনুভব করবেন কারণ আপনার চারপাশ আর্দ্র থাকতে পারে যা সংবেদনশীল ত্বকের জন্য ভালো নয়। এই কারনেই মূলত বর্ষায় একজিমার সমস্যা বেড়ে যায়।

২। স্ক্যাবিস

স্ক্যাবিস হল ত্বকের আরো একটি সমস্যা যা মাইট নামক এক ধরনের পরজীবীর মাধ্যমে হয়ে থাকে। এর আক্রমনে ত্বকে লাল ভাব ও ফুসকুড়ি হতে পারে। এই সংক্রামকে আক্রান্ত হলে রাতে সাধারনত চুলনাকির সমস্যা অনেক বেড়ে যায়। বর্ষাকালে তাপমাত্রার উঠানামা, এবং বাতাসে উচ্চ মাত্রায় থাকা আদ্রতা পরজীবী এই মাইটগুলোর প্রজনননের জন্য আদর্শ ক্ষেত্র তৈরি করে। তাই সময় মত চিকিৎসা না করালে সমস্যা অনেক গুরুতর হতে পারে।

৩। ফাঙ্গাল ইনফেকশন

যে কোন ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন মারাত্বক সক্রামক হতে পারে যেমন ধরুন দাদ। এগুলো সাধারনত উরু, বগল ইত্যাদি এলাকায় হতে পারে। এগুলোতে মারাত্বক চুলকানি সহ জ্বলুনিও হতে পারে। বার বার চুলকানোর কারনে নখের মাধ্যমে জীবাণু ছড়িয়ে পরে ফলে শরীরের এক যায়গা থেকে অন্য যায়গা এমনকি এক জনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এছাড়াও স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া থাকায় শরীরের ভাঁজে ও হাত পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকেও ফাঙ্গাল  ইনফেকশন হয়। আবার পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে অ্যাথলেট ফুট নামে রোগ হয়।  

৪। অতিরিক্ত চুল পড়া

বর্ষায় হিউমিডিটি বেড়ে যাওয়ার শরীরে ঘামের পরিমানও বেড়ে যায়। ফলে নানারকম ক্ষতিকর ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বেড়ে যায়। এই ধরনের জীবাণু চুলেরও মারাত্বক ক্ষতি করে। এতে ফুল ঝরে পড়ার পরিমান ভয়ানক বেড়ে যেতে পারে। সাথে চুলের গোড়ায় প্রদাহ হতে পারে এবং মুখে ব্রণের পরিমানও বেড়ে যেতে পারে।

পরামর্শ

১। কোন ভাবেই ভেজা ও স্যাঁতস্যাঁতে পোশাক পড়া যাবে না। সাথে সুতি পোশাক পড়া উচিত, সিনথেটিক পোশাক এই সময় ঘামের পরিমান আরো বেশী বাড়িয়ে দিতে পারে।

২। বাইরে বৃষ্টি যতই পড়ুক, গোসল কোন ভাবেই বন্ধ করা চলবে না। বরঞ্চ পারলে দিনে দুইবার করে গোসল করতে পারেন। তাহলে আপনি আরো বেশী সতেজ আর পরিচ্ছন্ন থাকবে। কারণ এতে আপনার শরীর থেকে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের পরিমান কমে যাবে। আর আপনিও নানারকম সংক্রামক ব্যাধির হাত থেকে নিস্তার পাবেন।

৩। অন্যের সাথে পোশাক ভাগাভাগি করা থেকে বিরত থাকুন। এটা কেবল যে বর্ষাকালে করবেন তা কিন্তু নয়, কোন সময়ই এক জনের পোশাক অন্যজনের পরা উচিত নয়।

৪। প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করুন। এতে ত্বক শুষ্ক হওয়া থেকে বাঁচবে।

৫। অতিরিক্ত ঘাম হওয়া থেকে বাঁচতে টাইট, আঁটসাঁট পোশাক ও জুতা পড়া থেকে বিরত থাকুন।

পরিশেষে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন, ত্বকের যত্ন নিন। নিয়মিত সুষম খাবার খান আর সেই সাথে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করুন। মনে রাখবেন আপনার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রোগ বালাইয়ের সম্ভাবনাকে অনেকটায় কমিয়ে দিতে পারবে।

What do you think?

Written by সানজিদা আলম

একজন ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার। টেকনোলজি, স্বাস্থ্য, প্রোডাক্ট রিভিউ এবং ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। লেখালেখির পাশাপাশি ভালোবাসি পড়তে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

ডাবল-ক্লিনজিং-কী

ডাবল ক্লিনজিং কী, এর উপকারিতা এবং পদ্ধতি

Circadian-rhythm-and-namaz-roja

নামাজ-রোজা যেভাবে দেহঘড়ি (সার্কেডিয়ান রিদম) নিয়ন্ত্রণ করে