in

ডাবল ক্লিনজিং কী, এর উপকারিতা এবং পদ্ধতি

ডাবল-ক্লিনজিং-কী

নাফিসা বর্তমানে ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছে। ক্লাসের জন্য তাকে প্রতিদিনই বাড়ির বাইরে যেতে হয়। ইদানীং নাফিসা খেয়াল করছে, ফেইসওয়াশ, টোনার, ময়েশ্চারাইজার, সিরাম – এগুলো সবকিছু ব্যবহার করা সত্ত্বেও তার অ্যাকনি, হোয়াইটহেডস ও ব্ল্যাকহেডস কোনোভাবেই কমছেনা, বরং দিন দিন আরো বাড়ছে। শুধু নাফিসাই নয়, আরো অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে তারা বিভিন্ন রকম স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করছেন ঠিকই, কিন্তু তাদের ত্বকের সবস্যাগুলো কমছেনা। ডাবল ক্লিনজিং না করার কারণে এমন হয়!

ডাবল ক্লিনজিং আমাদের স্কিন কেয়ার রুটিনের এমন একটি স্টেপ, যেটি ফলো না করলে হেলদি ও গ্লোয়িং স্কিন পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আজকের লেখায় আপনাদের জানাবো ডাবল ক্লিনজিং কী এবং এর উপকারিতা বা কেন এটি এত গুরুত্বপূর্ণ সে সম্পর্কে বিস্তারিত।

ডাবল ক্লিনজিং কী?

ডাবল ক্লিনজিং হলো এমন একটি স্কিন কেয়ার মেথড যেটির মাধ্যমে আমাদের স্কিনের ন্যাচারাল ময়েশ্চার ব্যারিয়ারে কোনরকম ড্যামেজ না করে স্কিনে জমে থাকা অয়েল, মেকআপ ও  ধুলো-বালি রিমুভ করা সম্ভব হয়। ডাবল ক্লিনজিংয়ের উৎপত্তি কোরিয়াতে হলেও বর্তমানে এটি পুরো বিশ্বে দারুণ জনপ্রিয়।

অনেকেই মনে করেন, ডাবল ক্লিনজিং করলে বুঝি স্কিন ড্রাই হয়, যা একটি ভুল ধারণা। কেননা ডাবল ক্লিনজিং আমাদের স্কিন থেকে শুধুমাত্র মেকআপ বা ধুলোবালিই রিমুভ করে না, বরং সেই সাথে এটি আমাদের স্কিন নারিশড রাখতেও সাহায্য করে।

সাধারণ ক্লিনজিংয়ের সাথে ডাবল ক্লিনজিংয়ের মূল পার্থক্য হলো এখানে ফেইস ক্লিন করতে শুধুমাত্র একটি ফেইসওয়াশ ব্যবহার হয়না, বরং দু’টো আলাদা ফর্মুলেশনের ক্লিনজিং প্রোডাক্ট পরপর অ্যাপ্লাই করা হয়, যেগুলোর মধ্যে একটি অয়েল বেইজড ও অন্যটি ওয়াটার বেইজড। মুলত দু’ধরণের প্রোডাক্ট দিয়ে দু’বার ফেইস ক্লিন করা হয় বলেই এই মেথডটি ডাবল ক্লিনজিং নামে পরিচিত।

ডাবল ক্লিনজিংয়ের উপকারিতাগুলো কি কি?

ডাবল ক্লিনজিং কি তা তো জেনে নিলেন। চলুন এবার জেনে নেয়া যাক ডাবল ক্লিনজিংয়ের উপকারিতাগুলো সম্পর্কে –

১। মেকআপ পুরোপুরি রিমুভ করা

প্রতিদিন বাইরে গেলে মেকআপ তো করতেই হয়। শুধুমাত্র ফেইসওয়াশ ব্যবহার করলে কিন্তু এই মেকআপ ফেইস থেকে কখনোই পুরোপুরিভাবে রিমুভ হয় না। বিশেষ করে আপনারা যদি ওয়াটারপ্রুফ ফাউন্ডেশন, কনসিলার, আইলাইনার বা মাশকারা ইউজ করেন, তাহলে কেবলমাত্র ফেসওয়াশ মোটেও যথেষ্ট নয়। যদি আপনারা ডাবল ক্লিনজিং করেন, তাহলে হালকা বা ভারী যেমন মেকআপই করুন না কেন, তা খুব সহজেই পুরোপুরি রিমুভ হয়ে যাবে।

২। স্কিনের অতিরিক্ত সেবাম প্রোডাকশন ব্যালেন্স করা

যদি আমাদের স্কিনে অতিরিক্ত সেবাম বা অয়েল প্রোডাকশন হয়, তাহলে ধুলোবালি বা মেকআপ খুব দ্রুত আমাদের স্কিনে জমা হয় এবং ফেইসের পোর বা লোমকূপগুলোকে বন্ধ করে দেয়, যা থেকে পরবর্তীতে অ্যাকনি বা ব্রেকআউট হতে পারে। শুধুমাত্র অ্যাকনিই বা বলছি কেন, লোমকূপ বন্ধ হয়ে গেলে ফেইসে ক্লোজড কমেডোমস অর্থাৎ ব্ল্যাকহেডস বা হোয়াইটহেডসের সমস্যাও বেড়ে যায়।

যদি আপনারা প্রতিদিন ডাবল ক্লিনজিং করেন, তাহলে স্কিনের সেবাম লেভেল ব্যালেন্সড থাকবে। এতে করে স্কিনে অতিরিক্ত অয়েল প্রডিউস হবে না এবং একইসাথে অ্যাকনি, ব্ল্যাকহেডস বা হোয়াইটহেডসের সমস্যা থেকেও চিরতরে মুক্তি পাবেন।

৩। স্কিনের ব্রাইটনেস বাড়ানো

কিভাবে স্কিনের ব্রাইটনেস বাড়ানো যায় এ নিয়ে সবাই প্রশ্ন করেন৷ তাদের জন্য বলছি, যদি নিয়মিত ডাবল ক্লিনজিং করেন, তাহলে আপনাদের স্কিন টেক্সচার আরো সুন্দর হবে এবং স্কিনে ভিজিবল গ্লো ও ব্রাইটনেসও নজরে আসবে।

৪। স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ভালোভাবে অ্যাবজর্ব হতে সাহায্য করে

ডাবল ক্লিনজিং করা হলে আমাদের স্কিন একদম ভেতর থেকে পরিষ্কার হয়ে যায়। এর ফলে যখন আমরা বিভিন্ন স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টস যেমন, ময়েশ্চারাইজার, সিরাম বা সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করি, তখন সেগুলো স্কিনে পুরোপুরি অ্যাবজর্ব হয়ে যায় এবং বিভিন্ন স্কিন কনসার্ন দূর করতে সাহায্য করে। তাই যদি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করে সেগুলোর সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে চান, তাহলে অবশ্যই নিয়মিত ডাবল ক্লিনজিং করুন।

৫। স্কিন নারিশড রাখা

অনেকেই মনে করেন, ডাবল ক্লিনজিং করলে বুঝি স্কিন ড্রাই হয়, যা একটি ভুল ধারণা। কেননা ডাবল ক্লিনজিং আমাদের স্কিন থেকে শুধুমাত্র মেকআপ বা ধুলোবালিই রিমুভ করে না, বরং সেই সাথে এটি আমাদের স্কিন নারিশড রাখতেও সাহায্য করে।

ডাবল ক্লিনজিং কিভাবে করবেন?

ডাবল ক্লিনজিং করতে একদমই বেশি সময় লাগে না। বরং মাত্র কয়েক মিনিটেই আপনারা এটি করতে পারেন। তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে আসা যাক ডাবল ক্লিনজিং করার উপায় সম্পর্কে।

১। শুরুতেই আপনার পছন্দের অয়েল বেইজড মাইসেলার ওয়াটার, ক্লিনজিং অয়েল অথবা ক্লিনজিং বাম নিয়ে নিন। এক্ষেত্রে যদি মাইসেলার ওয়াটার হয়, তাহলে কটনপ্যাড এবং অন্যথায় হাতের আঙ্গুল ব্যবহার করুন।

২। এবার কটনপ্যাড বা আঙ্গুলের সাহায্যে পুরো ফেইস সার্কুলার মোশনে এক থেকে দুই মিনিট ম্যাসাজ করুন। এতে করে আপনার ফেইসে থাকা সানস্ক্রিন বা মেকআপ পুরোপুরি মেল্ট হয়ে যাবে।

৩। পানি দিয়ে ফেইস ভালোভাবে ধুয়ে নিন।

৪। তারপর নিজের পছন্দের ফেইসওয়াশের সাহায্যে পুরো ফেইস আবার ক্লিন করে নিন।

৫। সবশেষে টোনার, ময়েশ্চারাইজার ও সিরাম অ্যাপ্লাই করুন।

এটুকুই ছিলো আজকের আলোচনা। আশা করি প্রতিদিন বাইরে থেকে ফেরার পর ডাবল ক্লিনজিং করতে আপনাদের আর ভুল হবে না। এমন আরো হেল্পফুল আর্টিকেল পড়তে চাইলে আমাদের সাথেই থাকুন।

What do you think?

Written by সুমাইয়া রহমান দোলা

লেখালেখি শুরু করেছিলাম শখের বশেই৷ এখন এটি আমার নেশা, আবার পেশা ও বটে। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি এখন ভালো লেখক হয়ে ওঠার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Circadian rhythm

জৈবিক ঘড়ি সার্কেডিয়ান রিদম কী, লাইফস্টাইলে এর প্রভাব

বর্ষাকালে ত্বকের সমস্যা

বর্ষাকালে ত্বকের কিছু সাধারন সমস্যা