in

খিটখিটে মেজাজ দূর করতে করণীয়

ইসলাম কি বলে

খিটখিটে মেজাজ

যারা অল্পতে রেগে যায় তাদেরকে খিটখিটে মেজাজী বলে। খিটখিটে মেজাজী মানুষজন কে মহান আল্লাহতায়ালা পছন্দ করেন না। এছাড়া এ মেজাজের মানুষজনকে তাদের আত্নীয়স্বজন বন্ধুবান্ধব কেউ দেখতে পারে না। কারণ তারা কথায় কথায় রেগে যায়। এ মেজাজের মানুষজনের জন্য ঘরে ও বাইরে ঝগড়া ও কলহ সৃষ্টি হয় এবং নানা সমস্যার উদ্বেগ ঘটে।

খিটখিটে মেজাজ নানা কারণে হতে পারে। মানুষ যখন নিজের ইচ্ছামত ও প্রত্যাশিত কোন কিছু পায় না তখন সে খিটখিটে মেজাজের অধিকারী হয়ে যায়। এছাড়া  শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার কারণেও মানুষের মেজাজ খারাপ থাকে। কেউ যখন শারীরিক ভাবে অসুস্থ থাকে নানা ধরণের রোগে আক্রন্ত থাকে, দুশ্চিন্তায় থাকে তখন সে অন্য জনের উপর রাগ দেখায়।

ইসলামে এ খিটখিটে মেজাজ নিয়ে মহান আল্লাহতায়ালা অনেক কথা বলেছেন। মহান আল্লাহতায়ালা রাগ পছন্দ করেন না। কারণ এ রাগের কারণে অনেক সময় আত্মীয়র সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটে, মারামারি ঘটে যায়। তাই আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কে সবসময় রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে বলেছেন। রাগ নিয়ে কুরআন মাজীদে বলা আছে “যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪)

‘নিশ্চয়ই রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। আর শয়তান আগুনের তৈরি। নিশ্চয়ই পানির দ্বারা আগুন নির্বাপিত হয়। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন রাগান্বিত হয় সে যেন অজু করে।’

অতএব, রাগী ব্যক্তির উপর মহান আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট তা এ দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ তায়ালা বলেন রাগ আসলে তা নিয়ন্ত্রণ করে ঐ মানুষকে মাফ করে দেওয়া। নিম্নে রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায় গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল:

১. অজু করা

আমরা জানি রাগ শয়তানের থেকে আসে। তাই এ শয়তানকে দূর করতে উওমরূপে অজু করতে হবে।এ নিয়ে হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। আর শয়তান আগুনের তৈরি। নিশ্চয়ই পানির দ্বারা আগুন নির্বাপিত হয়। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন রাগান্বিত হয় সে যেন অজু করে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৮৬)

২. দোয়া পড়া

আমরা জানি, মুমিন ব্যক্তি সবসময় সব বিপদে মহান রবের কাছে সাহায্য চান। তাই রাগ আসলে সে যেন মহান রবের কাছে আশ্রয় প্রাথর্না করে।

৩. নিজের অবস্তান পরিবর্তন করা

রাগ আসলে ঐ মানুষের সে যে অবস্থানে আছে তা পরিবর্তন করতে হবে যদি সে দাড়ানো থাকে তাহলে সে যেন বসে যায় এবং বসা থাকলে সে যেন শুয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কারো রাগ হয় তখন সে যদি দাঁড়ানো থাকে, তবে যেন বসে পড়ে। যদি তাতে রাগ চলে যায় ভালো। আর যদি না যায়, তবে শুয়ে পড়বে।’ (আবু দাউদ: ৪৭৮৪)

৪. চুপ থাকা

কোন মানুষের উপর রাগ আসলে ঐ মানুষের সাথে তর্ক না করে চুপ করে থাকা উচিত। এবং মনে মনে আসতাগফিরুল্লাহ পাঠ করা উচিত। কারণ চুপ না থেকে যদি আরও তর্ক করা হয় তখন বিষয়টা অনেক বাড়াবাড়ি হয়ে যায় এবং চারপাশের মানুষের সাথে মনোমালিন্য তৈরী হয়। তাই আমাদের উচিত কারও সাথে ঝগড়া হলে রাগ না করে চুপ থাকা। এতে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

৫. মনকে সবসময় নরম রাখা

রাগ দমনের জন্য মুমিন ব্যক্তির মন কে সবসময় শান্ত ও কোমল রাখতে হবে। কোন কিছুতে উওেজিত হওয়া যাবে না। সবসময় আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে তা মনে রাখতে হবে এবং নিজের মনকে দয়ালু করতে হবে এবং এ মনোভাব থাকতে হবে কেউ অপরাধ করলে তাকে মাফ করার।

৬. নিজের ক্ষতির কথা

রেগে গেলে একজন মানুষ সবসময় নিজের ক্ষতি করে ফেলে। সে নিজেও জানে না এ কারণে সে যে একজন ব্যর্থ মানুষে পরিণত হয়। সমাজের সবার কাছে সে ছোট হয়। সমাজে কেউ তাকে গুরুত্ব দেয় না। সবাই তাকে অবহেলা করে। কেউ তার মতামতকে প্রাধ্যন্য দেয় না। যার কারণে সে নিজের ক্ষতির পাশাপাশি অন্যেরও ক্ষতি করে এটা মাথায় রেখে রাগ কমাতে হবে।

এছাড়া রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সে ব্যক্তি শক্তিশালী নয়, যে ব্যক্তি কুস্তি লড়ে অন্যকে ধরাশায়ী করে, বরং প্রকৃতপক্ষে সে ব্যক্তিই শক্তিশালী, যে রাগের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারে।’ (বুখারি: ৬৮০৯) অতএব রাগ আসলে তা দমন করা উচিত কারও সাথে কথা-কাটাকাটি না করে। রাগ নিয়ন্ত্রণ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে।

যে ব্যক্তি রাগ নিয়ন্ত্রণ করে, সে আধ্যাত্মিকভাবে এবং জাগতিকভাবেও পুরস্কৃত হয়। নবীজি (স.) বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছুতে নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৯)। যাদের রাগ কম মহান আল্লাহতায়ালা তাদের পছন্দ করে। তাই মহান আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টির জন্য, তাঁর প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য আমাদের রাগ কমানো দরকার। যারা রাগ আসলে আল্লাহর কথা স্মরণ করে রাগ কমায় কিয়ামতের মাঠে আল্লাহ পুরস্কার হিসেবে তাদের জান্নাত দান করবেন।

এছাড়া ইসলামে একটি দোয়া রয়েছে তা সবসময় পাঠ করতে হবে। রাসূলের জীবনের কাহিনীর মাধ্যমে দোয়াটির কথা বলা হলো। একদা দুই ব্যক্তি রাসুল (স.)-এর কাছে বসে পরস্পর গালাগাল করছিলেন। তাদের একজনের চোখ লাল হয়ে উঠল ও গলার শিরা ফুলে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আমি একটি বাক্য জানি, যদি সে তা পড়ে তাহলে তার এ অবস্থা কেটে যাবে। সে বাক্যটি হলো- أعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْم ‘আউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাঝিম।’ অর্থ: ‘আমি আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই’। (মুসলিম: ৬৮১২)

অতএব আমাদের উচিত ইসলামের নিয়মকানুন অনুসরণ করে নিজের রাগ কমানো এবং অন্যদের সাথে সুন্দর আচরণ করা।

What do you think?

Written by নুসরাত জাহান

পেশায় একজন নার্স। স্বাস্থ্য বিষয়ে লেখালেখি করতে ভালোবাসি। পাশাপাশি ইসলামিক বিষয় ও প্রযুক্তি নিয়ে পড়তে ও লিখতে ভালো লাগে। আমার লেখা থেকে কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হলে তবেই লেখার স্বার্থকতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Types of rechargeable fan in BD

রিচার্জেবল ফ্যানের ধরন এবং ব্যবহার

ইফতারের পানীয়

ইফতারে কোন পানীয়গুলো স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী?