মানবজাতির সাফল্যের রহস্য কি? সর্বশক্তিমান আল্লাহ পবিত্র কোরআন শরীফে বলেন-
قَدۡ اَفۡلَحَ مَنۡ تَزَکّٰی
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই সে সফলকাম হয় যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে।” (সূরা আল-আলা, ছ.৮৭: আয়াত ১৫)
স্বাভাবিকভাবেই এই কাজটি করার চেয়ে বলা অনেক সহজ। অনৈতিকতায় জর্জরিত পৃথিবীতে, একজনের আত্মাকে শুদ্ধ করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হতে পারে। আমরা হয়তো ভেবে নেই যে আমাদের আত্মা চিরকালের জন্য আমাদের অপবিত্রতার বিষ দ্বারা দূষিত হয়ে গেছে, আমাদের পাপের পরিমান এতটাই বেশী যে পবিত্রতার পথটি এখন অস্পষ্ট। আমাদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে ইসলামের আলোকে ১০টি উপায় নিয়ে আলোচনা করবো।
১। আল্লাহর পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে জানুন
আপনার আত্মা ততক্ষন পর্যন্ত শুদ্ধ হবে না যতক্ষন না আপনি খারাপ কাজ ছেড়ে ভালো কাজে মনোনিবেশ করবেন। তাই আল্লাহর পছন্দ ও অপছন্দের কাজগুলো সম্পর্কে জ্ঞান রাখা জরুরী। পবিত্র কোরআনে কোন কাজগুলো করা যাবে এবং কোনগুলো বর্জন করতে হবে সে সম্পর্কে বলা হয়েছে। তাই কোরআন শরীফ পড়ার মাধ্যমে এই কাজগুলোর বিষয়ে জেনে নিতে হবে।
২। মন থেকে সমস্ত অপবিত্র চিন্তা দূর করুন
আত্মাকে শুদ্ধ করার জন্য প্রথমেই মন থেকে সমস্ত অপবিত্র এবং খারাপ চিন্তা দূর করে ফেলুন। অনেক সময় মুখে না বললেও আমাদের মনে অনেক ধরনের পাপ চিন্তা চলে আসে। যেমন অন্যের প্রতি ঈর্ষা, অনৈতিক কাজের কল্পনা ইত্যাদি। নিজের আত্মাকে শুদ্ধ করার জন্য প্রথমেই মনকে এইসব খারাপ চিন্তা থেকে মুক্ত করতে হবে। এর জন্য অবসর সময়ে যিকির করুন অথবা বিভিন্ন ধর্মীয় বই পড়তে পারেন।
৩। ভালো কাজ করার অভ্যাস তৈরি করুন
ভালো কাজ করার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। একইভাবে খারাপ কাজ বর্জনের বিষয়েও দৃঢ় হতে হবে। ভালো কাজ করাকে অভ্যাসে পরিনত করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন ধরুন, আপনি অতি অল্পতেই খুব রেগে যান। আপনাকে এটা বুঝতে হবে যে খুব অল্পতে রেগে যাওয়া খারাপ কাজ যা আপনার আত্মার উন্নতিতে বাঁধা দিবে। তাই আপনাকে এটা বর্জন করতে হবে। আপনাকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে যে, কোনভাবেই অপ্রয়োজনে বা অল্প কারনে রেগে যাওয়া যাবে না।
৪। ধারাবাহিকতা
মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন:
وَاعۡبُدۡ رَبَّکَ حَتّٰی یَاۡتِیَکَ الۡیَقِیۡنُ
অর্থাৎ, “আর তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর।” আল-হিজর- (১৫:৯৯)।
অনেকেই হয়ত মনে করতে পারে যে সে অনেক ইবাদত করেছে এবং তার আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা হয়ে গেছে তাই তার আর ইবাদত করার প্রয়োজন নেই। এমন দাবী যারা করে তারা মূলত ভুলের রাজ্যে বসবাস করছেন। আপনি জীবিত থাকা পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদত করে যেতে হবে। বিশেষ করে ফরজ ইবাদত অর্থাৎ নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাত প্রদানে গাফলতি কোন ভাবেই করা যাবে না।
ভালো কাজ করাকে অভ্যাসে পরিনত করার চেষ্টা করতে হবে। যেমন ধরুন, আপনি অতি অল্পতেই খুব রেগে যান। আপনাকে এটা বুঝতে হবে যে খুব অল্পতে রেগে যাওয়া খারাপ কাজ যা আপনার আত্মার উন্নতিতে বাঁধা দিবে।
৫। ধার্মিক সঙ্গী নির্বাচন করুন
মানুষের জীবনে একজন ভালো সঙ্গীর গুরত্ব অপরিসীম। একজন ধার্মিক বন্ধু বা সঙ্গী আপনাকে ধর্মীয় শিক্ষা দিবে। ভালো কাজে উৎসাহ দিবে এবং খারাপ কাজে নিরুৎসাহিত করবে। আপনাকে ঈমানের পথে অবিচল থাকতে সাহায্য করবে। তাই নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ রাখতে ধার্মিক সঙ্গী বেছে নিন।
৬। নিজেকে দায়বদ্ধ রাখুন
আপনার নিজের কৃতকর্মের জন্য দায়বদ্ধ থাকুন। কারণ আপনার প্রতিটা ভালো কাজ এবং প্রতিটা মন্দ কাজের হিসাব রাখা হচ্ছে। এবং শেষ বিচারের দিন আপনার সকল কৃতকর্মের ফল প্রদান করা হবে।
৭। কোরআনের নির্দেশনা অনুসারে ভালো কাজ করুন
কোরআনে রয়েছে পূর্ন জীবন নির্দেশনা। কোরআনে পরিস্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে ভালো কাজ ও খারাপ কাজ সম্পর্কে। যেমন নামাজ পড়া ও রোজা রাখার পুরস্কার সম্পর্কে বলা হয়েছে। আবার মিথ্যা, অসততার কুফল ও শাস্তি সম্পর্কেও বলা হয়েছে। তাই কোরআনের নির্দেশনা মেনেই আপনার সব ভালো কাজগুলো করুন।
৮। নিজের ভুল স্বীকার করার মানসিকতা
মানুষ মাত্রই ভুল করে। আপনি হয়ত চেষ্টা করেন ইসলামের আলোকে ন্যায় ও সৎ জীবনযাপন করার। কিন্তু তার মানে এই না যে আপনার দ্বারা কখনো কোন ভুল কাজ সম্পাদিত হয়নি বা হবে না। যদি কখনও কোন ভুল কাজ আপনার দ্বারা সংঘঠিত হয়ে যায় তাহলে সেটা স্বীকার করার ও সংশোধন করার মানসিকতা থাকতে হবে।
৯। অন্যের পরামর্শ ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে গ্রহন করুন
আপনার করা কোন ভুলের জন্য যদি কেউ পরামর্শ দেয় তাহলে তা ধৈর্য সহকারে শুনতে হবে এবং সম্ভব হলে তা গ্রহন করতে হবে। অনেকেই আছে যারা মনে করেন যে তিনি সব কিছুই ভালো বুঝেন যদিও তারা নিজেদের ত্রুটি ঠিক করতে অক্ষম। এই ধরনের লোকেরা স্বাভাবিকভাবেই অন্যের দিক নির্দেশনা বা পরামর্শ মানতে নারাজ। কোন মানুষই ভুল-ত্রুটির ঊর্ধে নয়। তাই আপনি যদি নিজেকে শুদ্ধ মানুষে পরিনত করতে চান তবে অবশ্যই অন্যের পরামর্শ ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে গ্রহন করতে শিখুন।
১০। কখনো আশাহত হওয়া চলবে না
জীবনে চলার পথে সব কিছু আপনার চাওয়ার মত করে নাও হতে পারে। দুঃখ, দুর্দশা, হতাশা আসতেই পারে। এর মানে এই নয় আপনি হাল ছেড়ে দিবেন। কখনো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। অন্যদের সম্পর্কে সন্দেহ করা যেমন অনৈতিক, নিজের সম্পর্কে সন্দেহ করাও অনৈতিক; বরং এটা একটা পাপ। সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর ভরসা রেখে আপনাকে বুঝতে হবে এবং ভাবতে হবে।
একজন মুমিন মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত সর্বদা আত্মউন্নয়নের জন্য চেষ্টা করা। আশাকরি উপরে আলোচিত আত্মাকে শুদ্ধ করার উপায় অনুস্মরণ করে আমরা আমাদের চলার পথের ভুল ত্রুটিগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করবো।
GIPHY App Key not set. Please check settings