in

LoveLove

সংসার জীবন সুখময় করতে সবর কতটা জরুরি

সবর ধৈর্য

আল্লাহ তায়ালা আমাদের জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। পরিণত বয়সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আমরা যে হালাল জীবন শুরু করি, সেটিই সংসার জীবন। সংসারে যখন দুজন বিপরীতমুখী মানুষ মেশে তখন তাদের মধ্যে মতের অমিল দেখা দিতেই পারে।

সেই অবস্থায় কি ঝগড়া বিবাদ করে সংসারের সুখ বিনষ্ট করা উচিত নাকি সবর এর মাধ্যমে এই সুখ ধরে রাখা উচিত, পারস্পরিক বোঝাপড়া সেরে নেয়া উচিত?

প্রশ্ন আসতে পারে, সবর কী? এটি ধৈর্যের আরবি প্রতিরূপ। এটি একটি অন্যতম সদগুণও বটে। মানুষ ক্রোধান্বিত হয়ে অনেক সময় সবরের কথা ভুলে যায় আর ফলস্বরূপ সমাজে অশান্তির সৃষ্টি হয়। আল্লাহ তায়ালা কুরআন এর নব্বই টি স্থানে সবর নিয়ে আলোচনা করেছেন। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সবচেয়ে মধুময় প্রেমময় সম্পর্ক। সেখানে সবরের গুরুত্ব অপরিসীম। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মতে, “সবরকে আমরা আমাদের জীবন-জীবিকার সর্বোত্তম মাধ্যম হিসেবে পেয়েছি” (বুখারি)

অনেকসময় সংসারে অভাব-অনটন দেখা দেয়। আর আজকাল চাকরির বাজারের যে দূর্বিষহ অবস্থা তাতে অনেক পরিবারই কর্মহীন হয়ে পড়ছে। উঁচু বাজারদরের সাথে তাল মিলিয়ে টাকা রোজগার করা হয়ে পড়ছে কঠিন থেকে কঠিনতর। 

অনেক স্ত্রী আছেন যারা এই সময়টা স্বামী বা পরিবারের পাশে মানসিক সাহচর্য দিয়ে না থেকে নিজেদের চাহিদা কেন পূরণ হচ্ছেনা এই নিয়ে আফসোস করতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। আবার অনেক স্বামীও আছেন যারা পারিপার্শ্বিক অবস্থার জন্য এতটাই উগ্র মনোভাব ধারণ করেন যে পরিবারের সাথে রুঢ় আচরণ করে বসেন। 

এতে সংসার জীবন অশান্তিময় হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় এসব সমস্যার সমাধান হলো সবর। আপনি স্বামী হন বা স্ত্রী, আপনাকে সবর ধারণ করতে হবে। ব্যবহার আচার ভালো রাখতে হবে, অকারণে রেগে যাওয়া যাবেনা বরং কোনো সমস্যা হলে তা সমাধান কীভাবে করা যায় তা দুজন মিলে আলোচনা করে ঠিক করে নেবেন।

অনেক পরিবারে স্ত্রীর এবং মা কিংবা বোনের সম্পর্ক তিক্ত হতে দেখা যায়। এগুলো মূলত সবরের অভাবে হয়ে থাকে। দু-পক্ষেরই উচিত সামান্য মানিয়ে নিয়ে একে অপরের সুযোগ সুবিধা দেখা। পরিবার সবর প্র‍্যাকটিসের সবচেয়ে বড় স্থান। আপনি চেষ্টা করলে অবশ্যই সফল হবেন।

মানুষ ক্রোধান্বিত হয়ে অনেক সময় সবরের কথা ভুলে যায় আর ফলস্বরূপ সমাজে অশান্তির সৃষ্টি হয়। আল্লাহ তায়ালা কুরআন এর নব্বই টি স্থানে সবর নিয়ে আলোচনা করেছেন। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সবচেয়ে মধুময় প্রেমময় সম্পর্ক। সেখানে সবরের গুরুত্ব অপরিসীম। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মতে, “সবরকে আমরা আমাদের জীবন-জীবিকার সর্বোত্তম মাধ্যম হিসেবে পেয়েছি” (বুখারি)

রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা ধৈর্যের চেয়ে উৎকৃষ্ট এবং ব্যাপকতর দান কাউকে দেননি।” (আবু দাউদ)।

জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতি আসতে পারে যাতে মানুষ হতাশ হয়ে পড়ে। হতে পারে তা প্রিয়জনের অসুস্থতা, আর্থিক অনটন, কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যর্থ হওয়া। আপনি যেহেতু সংসার জীবনে প্রবেশ করেছেন, তাই এই বিষয়গুলো আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে এখন আপনি একা নন। 

যার জীবনেই বিপদ আসবে তার ভাগীদার আপনি। বিপদের ভয়ে সবর হারিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করবেননা। বরং সম্মিলিত ভাবে মুশকিল আসানের জন্য আল্লাহ পাকের কাছে রহমত চান। এতে সংসারজীবন সুখের হবে।

সংসার জীবনে সমস্যা হওয়ার আরও একটি কারণ হলো পরকীয়া। দেখা যায়, পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাবে বা দুজনের কারো চারিত্রিক সমস্যার জন্য এই সমস্যাটি প্রকট হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে ধৈর্য হারালে চলবেনা। আপনার সন্তান বা পরিবারের অন্য সদস্যরা হয়তো এই জটিল সমীকরণের মাঝে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। তাদের মানসিক দিক আপনাকেই খেয়াল রাখতে হবে। সবরের মাধ্যমে নিজেকে শান্ত রেখে পরিস্থিতি আয়ত্ত্ব করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন, সফলতা নির্ভর করে আপনার চিন্তাধারা কতটা মজবুত এবং পবিত্র তার উপর। 

আল্লাহ তাআলা বলেন-

 ادْعُ إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ

 بِالْمُهْتَدِي

“আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সঙ্গে বিতর্ক করুন উত্তম পন্থায়। নিশ্চয়ই আপনার পালনকর্তাই ওই ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞান রাখেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।” (সুরা নাহল, আয়াত-১২৫) 

সোশাল মিডিয়ার যুগে অনেক সময় দেখা যায় যে কারো সম্পর্কে এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে যার কোনো ভিত্তি নেই। সেটি যদি কাছের মানুষ হয় তবে পরিস্থিতি যেন আরও কঠিন হয়ে পড়ে। 

এসময় আপনাকে অবশ্যই সবরের শরণাপন্ন হতে হবে। না যাচাই করে তাকে দোষারোপ করলে সংসারে যে তিক্ততা আসবে পরে সে কোনোভাবে নির্দোষ প্রমাণিত হলে কখনও তা পুরোপুরি ঠিক হবেনা। 

কিছু বিষয় সবসময় লক্ষ রাখবেন। যেমন – আপনার সঙ্গীর পছন্দ অপছন্দ। তার হয়তো আপনার কোনো স্বভাব অপছন্দ। হতে পারে সেই স্বভাবটি আপনার ক্ষতি করছে বলেই সে উদ্বিগ্ন। তখন কিছুতেই ধৈর্য হারাবেন না। প্রথমে নিজে উপলব্ধি করুন যে বিষয়টি সঠিক কীনা। সে অকারণে অস্থিরতা প্রকাশ করছে নাকি বিষয়টি আসলেই সত্যতা ধারণ করে। 

যদি অকারণে হয় তাহলে তাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন। কোনোভাবেই উত্তেজিত হয়ে পড়বেননা। এতে সে মনকষ্ট পেতে পারে। আর যদি সত্যিই আপনার ভুল থেকে থাকে তাহলে নিজেকে সংশোধনের চেষ্টা করবেন। তাকে উপহার দেয়ার সময়েও পোশাকের ক্ষেত্রে পছন্দের রঙ, তার প্রিয় আনুষঙ্গিক বস্তুগুলো জেনে রাখবেন। 

জোর করে কখনো বাজে অভ্যাস বা অন্য কোনো বিষয় পরিবর্তন ঘটেনা। অতিরিক্ত জোরাজুরি সংসারে অশান্তি ডেকে আনে। সময় নিন, সবরের সাথে তাকে বোঝান।

ঘুরতে নিয়ে যান, বিশেষ দিনে উপহার দিন। একজন মানুষকে এত সহজে বোঝা যায় না। প্রচুর ধৈর্য ও চেষ্টা প্রয়োজন হয়। সবর থাকলে সংসার জীবন আপনাকে সেটাই দেবে যা প্রত্যেক নরনারী আশা করে। 

জীবনে ঝড়ঝাপটা আসবেই। আল্লাহ তায়ালার দেয়া বিধান ও রাসুলুল্লাহ সাঃ এর দেখানো পথে চললে ইনশাআল্লাহ আপনারা সবর ধারণ করে সংসার জীবন সুখের করে তুলতে পারবেন। সবর এই জীবন গঠনে অত্যন্ত জরুরি। সবর ধারণ করে যদি পারস্পরিক সংঘর্ষ এড়িয়ে বিষয়টিকে আলোচনায় নিয়ে আসতে পারেন আপনাদের জন্য ই উত্তম। আসসালামু আলাইকুম। 

What do you think?

Written by নুসরাত জাহান

পেশায় একজন নার্স হলেও ইসলামিক বিষয় নিয়ে পড়তে ও লিখতে ভালো লাগে। আমার লেখা থেকে যদি কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় তবেই আমার প্রশান্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

রিচার্জেবল ফ্যানের সুবিধা

রিচার্জেবল ফ্যান ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা

Best iPhone Charger BD

আইফোনের সেরা ৫ চার্জার