গরমে যখন আমরা হাঁসফাঁস করি ফ্যানের বাতাস কিছুটা আরাম এনে দেয়। কিন্তু এখানেই সব শেষ নয়, সাথে আছে লোড শেডিং এর যন্ত্রণা। এই যন্ত্রণা থেকে বাঁচাতে বাজারে আছে নানা ধরনের রিচার্জেবল ফ্যান। লোড শেডিং-এ গরমের কষ্ট অনেকটা কমিয়ে আনতে পারার কারনেই এই ফ্যানের বাজার এত জনপ্রিয়তা। তবে নতুন কোন ডিভাইস যখন বাজারে আসে তখন তার জনপ্রিয়তার পেছনে একাধিক কারণ থাকে। তবে সব জিনিসেরই ইতিবাচক দিকের পাশাপাশী কিছু নেতিবাচক দিকও থাকে। ঠিক তেমনই রিচার্জেবল ফ্যানেরও কিছু ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক রয়েছে। তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো রিচার্জেবল ফ্যান ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো নিয়ে।
রিচার্জেবল ফ্যানের সুবিধা
রিচার্জেবল ফ্যানের জনপ্রিয়তার পেছনে একক কোন কারণ নেই। মূলত এটা এখন এমন একটা প্যাকেজ হয়ে দাড়িয়েছে যেটায় নানাবিধ সুবিধা একত্রে পাওয়া যায়। চলুন দেখি সেগুলো কী কীঃ
১। এই ফ্যানগুলো তার সমস্ত যন্ত্রপাতি দিয়ে পরিপূর্নভাবে সজ্জিতই থাকে। একে চালানোর জন্য আপনার কোন প্রকার সেটিংস এর প্রয়োজন পড়ে না। শুধুমাত্র প্লাগ-ইন করলেই চলতে শুরু করবে।
২। এই ডিভাইসগুলো ব্যাটারির মাধ্যমে চলে। এগুলোকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে ইলেক্ট্রিসিটি না থাকলেও চলতে পারে। পাওয়ার কাট হওয়ার সাথে সাথেই এর ব্যাটারি একটিভ হয় এবং ডিভাইসটি চলতে শুরু করে।
৩। বর্তমানে রিচার্জেবল ফ্যানের অনেক আপডেট ভার্শন বাজারে পাওয়া যায় যেগুলোতে থাকে চোখ ধাঁধানো সব ফাংশন। বেশীরভাগ ফ্যানের সাথেই উজ্জ্বল এলইডি লাইট থাকে যেটা বিদ্যুৎ না থাকলে অনেক বেশী কাজে লাগে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডানে বামে ঘোরার সুবিধা থাকে ফলে বাতাস অনেকদুর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে।
আবার ব্র্যান্ডের স্মার্ট ফ্যান গুলো অসংখ্য আধুনিক ফিচারে সজ্জিত। যেমন এমাজন স্পিকার ও গুগল স্পিকার সাপোর্ট, একাধিক স্পিড লেভেল ইত্যাদি। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই সবকিছুই আপনি আপনার স্মার্টফোনের মাধ্যমেই কনট্রোল করতে পারবেন।
৪। রিচার্জেবল ফ্যান বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে। যেমন একেবারে ছোট আকারের ফ্যান যেগুলো হাতে বা ব্যাগের ভেতর বহন করা যায়। আবার কিছু নেক ফ্যান আছে যেগুলো গলায় ঝুলিয়ে রাখা যায়। এই ফ্যান রান্না ঘরের কাজ করার সময় খুব কাজে দেয়। এছাড়াও সবচেয়ে জনপ্রিয় টেবিল ফ্যান বা ডেস্ক ফ্যান রয়েছে যেগুলো সহজেই এক ঘর থেকে আরেক ঘরে আনা নেয়া যায় ইত্যাদি। এই ফ্যানগুলো নানাবিধ আকৃতির হওয়ার কারনে নিজের প্রয়োজন অনুসারে পছন্দমত কেনা ও ব্যবহার করা যায়।
রিচার্জেবল ফ্যানের অসুবিধা
পৃথিবীতে মনুষ্য সৃষ্ট যে কোন জিনিসেই ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতে পারে। রিচার্জেবল ফ্যানও এর ব্যাতিক্রম নয়। তবে ইলেক্ট্রনিক্স জিনিসের ক্ষেত্রে, যার ত্রুটি কম তার বাজারে গ্রহনযোগ্যতা বেশী। এই ফ্যানগুলোরও খুব বেশী একটা যান্ত্রিক সমস্যার কথা শোনা যায় না। তবে আগেই বলেছি, প্রতিটা জিনিসেরই কিছু ইতিবাচক ও কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে। চলুন দেখি রিচার্জেবল ফ্যান ব্যবহারের কি ধরনের অসুবিধা থাকতে পারে।
১। রিচার্জেবল ফ্যানের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এটি ব্যাটারিতে চলে। তাই একে নিয়মিত চার্জ করা প্রয়োজন। অন্যথায় ইলেক্ট্রিসিটি না থাকলে এই ফ্যানটি আর চলতে পারবে না। আবার অনেক ফ্যানের ব্যাটারি দীর্ঘসময় সাপোর্ট দিতে পারে না। ফলে দীর্ঘসময় ইলেক্ট্রিসিটি না থাকলে ফ্যানটি নির্দিষ্ট সময় পর বন্ধ হয়ে যায়।
২। আবার যেহেতু ডিভাইসটি ব্যাটারিতে চলে তাই ব্যাটারি যদি ভালো কোয়ালিটির না হয় বা ত্রুটিপূর্ন হয় তাহলে পুরো ডিভাইসটিই ত্রুটিপূর্ন হয়ে যায়। এটি টেকসইও হয় না। দেখা যায় কেনার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে।
৩। রিচার্জেবল ফ্যানের আকৃতি যেমনই হোক না কেন, এটি বড় পরিসরে বাতাস প্রবাহিত করতে ব্যর্থ। আপনার ঘর যদি বড় হয় তাহলে এটি পুরো ঘর ঠান্ডা করতে পারবে না। নির্দিষ্ট একটি অংশে কেবল বাতাস প্রবাহিত করতে পারবে। তাই একটি ফ্যান একাধিক মানুষের জন্য ব্যবহারের উপযোগী নয়।
৪। রিচার্জেবল ফ্যানে যান্ত্রিক কোন সমস্যা হলে সেটি সারিয়ে তোলা কঠিন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা সম্ভব হয় না। তাই কোন কারনে আপনি যদি কোন ত্রুটিযুক্ত ডিভাইস কিনে ফেলেন বা খারাপ কোয়ালিটির ডিভাইস কিনে ফেলেন তবে সেটি নষ্ট হলে সারানোর আর কোন পথ থাকে না।
রিচার্জেবল ফ্যান ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা যায় থাকুক না কেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যে হারে লোড শেডিং হচ্ছে তাতে নিঃসন্দেহে এই ফ্যান খুবই কার্যকর ডিভাইস। নিয়মিত চার্জ দেয়ার ঝামেলা থাকলেও এর বহন করার সুবিধা এবং সহজে ব্যবহারের জন্য এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর ভালো ব্র্যান্ডের ডিভাইস কিনলে সেটা চলেও দীর্ঘদিন। তাই আপনি যদি এখনো রিচার্জেবল ফ্যান না কিনে থাকেন তাহলে এটি এখুনি কেনার আদর্শ সময়।
রিচার্জেবল ফ্যানঃ ১ম পর্ব – রিচার্জেবল ফ্যানঃ কেনার আগে জানা দরকার
রিচার্জেবল ফ্যানঃ ৩য় পর্ব – রিচার্জেবল ফ্যানের ধরন এবং ব্যবহার
GIPHY App Key not set. Please check settings