in

কষ্ট ও দুশ্চিন্তা কমানোর উপায়

ইসলাম কি বলে

Muslims Can Never be Depressed

গরিব ব্যক্তি ধনী হতে চায়। ধনী ব্যক্তি সবসময় উদ্বিগ্ন থাকে যে সে কিভাবে তার সম্পদকে ধরে রাখবে। অবিবাহিতরা বিয়ে করতে চায়, যারা বিবাহিত তারা সন্তানাদি পেতে চায়। যার সন্তান নেই সে সব সময় সন্তান পাওয়ার জন্য দুআ ও নানা তদবির করে। যার সন্তান আছে তার ভাবনাচিন্তা ঘুরে কিভাবে সন্তানকে জীবনে সফল করা যায় তাকে ঘিরে। এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রচেষ্টা চালাতে থাকে।

মানব অস্তিত্বের এটাই বাস্তবতা। হতাশ হবেন না। চিন্তিত হবেন না। আপনিই বিজয়ী হবেন।

আমরা সবাই জীবনে সমস্যার সম্মুখীন হই। মুসলিম হিসেবে আমাদের জানা থাকা উচিত এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা পরীক্ষা। বরং মুসলিমরা এটাতেই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। বিপদকে এড়ানোর কোন উপায় নেই।

وَ لَقَدۡ فَتَنَّا الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ فَلَیَعۡلَمَنَّ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ صَدَقُوۡا وَ لَیَعۡلَمَنَّ الۡکٰذِبِیۡنَ ﴿۳﴾

তাদের পূর্বে যারা ছিল আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম; অতঃপর আল্লাহ অবশ্য অবশ্যই জেনে নেবেন কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যেবাদী। [সুরা আনকাবুতঃ ৩]

وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ ؕ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿۱۵۵﴾ۙ

আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। [সুরা বাকারাঃ ১৫৫]

এমনকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামও কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন। যেমন, যখন তার পুত্র ইবরাহিম মারা গেলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম দুঃখবোধ করলেন। তার আবেগকে কান্না ও বেদনার মাধ্যমে প্রকাশ করলেন। এরপর তিনি আরো কাঁদলেন এবং বললেন, “চোখগুলো অশ্রুপাত করছে, হৃদয় ভারাক্রান্ত। কিন্তু আমরা এমন কিছু বলব না যা আমাদের রবকে অসন্তুষ্ট করে। হে ইবরাহিম, নিশ্চয়ই তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকগ্রস্ত।”

বিপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে পাঠানো নিয়ামত। মুসলিম হিসেবে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহ আমাদের পরিত্যাগ করেননি। বরং, তিনি চান আমরা তার আরো নৈকট্য অর্জন করি। মানুষকে তার ইমানের স্তর অনুযায়ী পরীক্ষা ও বিপদ-আপদে ফেলা হবে। যদি কারো ইমান শক্তিশালী হয় তাহলে তার জন্য পরীক্ষাও কঠিন হবে। আর তার ইমান দুর্বল হলে তার ইমানের অনুপাতে তাকে পরীক্ষায় ফেলা হবে। এটাই এই জীবনের গল্প। আল্লাহ আমাদের কাছে কখনই ওয়াদা করেননি যে এই জীবনটা আমাদের জন্য জান্নাত হবে। তিনি কখনই ওয়াদা করেননি যে, আমরা জীবনটাকে সর্বোচ্চ উপভোগ করতে পারব।

আল্লাহ সুরা মুলকে বলেন,

الَّذِیۡ خَلَقَ الۡمَوۡتَ وَ الۡحَیٰوۃَ لِیَبۡلُوَکُمۡ اَیُّکُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا ؕ وَ هُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡغَفُوۡرُ ۙ﴿۲﴾

যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল। [সুরা মুলকঃ ২]

আল্লাহ বলছেন, এই জীবনটা এক পরীক্ষাক্ষেত্র। পরীক্ষাময় জীবন এটি। তিনি ওয়াদা করেছেন, তিনি বিন্দুমাত্র অবিচারও বান্দার প্রতি করবেন না। কুরআনে এসেছে,

لَقَدۡ خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ فِیۡ کَبَدٍ ؕ﴿۴﴾

নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কষ্ট- ক্লেশের মধ্যে। [সুরা বালাদঃ ৪]

নিশ্চয়ই মানুষকে সর্বদা দুঃখ-কষ্টের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। সে সর্বদাই কিছুর জন্য উদ্বিগ্ন থাকে। কখনই নিজের প্রাপ্তির ওপর সন্তুষ্ট হয় না। কোনো মানুষই দুশ্চিন্তা ও উদ্বিগ্নভাব থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারে না। আমরা যা-ই অর্জন করি না কেন, কখনই আমরা তাতে সন্তুষ্ট হতে পারব না, বরং আমরা আরো বেশী চাইব। এরপর সে প্রচেষ্টার পেছনে সবটুকু সময় ব্যয় করব।

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, যেহেতু কষ্ট ও উদ্বিগ্নতা জীবনের অংশ, তাহলে জীবনে কষ্ট ও উদ্বিগ্নতা কমানোর জন্য কি করা যেতে পারে? কীভাবে আমরা জীবনের এই বিষয়গুলো নিয়ে কম ভাবতে পারি, যেন এসবের ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের পেয়ে না বসে? ইবনুল কাইয়িম রাহ. বলেছেন,

আল্লাহ যখনই কুরআনে হতাশা বা উদ্বিগ্নতার কথা বলেছেন, তিনি সেখানে হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার কথাও বলেছেন। অথবা তিনি আমাদের সুসংবাদ দিয়ে বলেছেন যে, তিনি আমাদের এসব থেকে মুক্তি দেবেন।

আশা ছাড়বেন না, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবেন না। আপনিই বিজয়ী হবেন। আল্লাহ সুরা ইউনুসে বলেন,

اَلَاۤ اِنَّ اَوۡلِیَآءَ اللّٰهِ لَا خَوۡفٌ عَلَیۡهِمۡ وَ لَا هُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ ﴿ۚۖ۶۲﴾

মনে রেখ, আল্লাহর বন্ধুদের না কোন আশংকা আছে, আর না তারা বিষণ্ন হবে। [সুরা ইউনুসঃ ৬২]

সুতরাং, আল্লাহ সুসংবাদ দিচ্ছেন যে এমন সময় আসবে যখন সব উদ্বিগ্নতা কেটে যাবে। আমরা এমন এক জায়গায় যাব যেখানে কখনই হতাশা বা দুশ্চিন্তায় ভুগতে হবে না, কষ্ট পেতে হবে না। আর সেটা হচ্ছে জান্নাত।

এসব লোকেরা জান্নাতের টিকেট পেয়ে সবার আগে বলবে, আলহামদুলিল্লাহ হিল্লাজি আজহাবা আন্নাল-হাসান। এর অর্থ হচ্ছে, উদ্বিগ্নতা ও দুশ্চিন্তা মানবজাতির জীবনের অংশ যতক্ষণ না সে রবের দেখা পাচ্ছে এবং জান্নাতে প্রবেশ করছে। যত তাড়াতাড়ি আমরা বুঝতে পারব যে আমরা কখনই দুঃখ-কষ্টকে জীবন থেকে পুরোপুরি মুছে ফেলতে পারব না সেটা আমাদের জন্য ততই ভাল। এটা মানবপ্রকৃতির অংশ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামও উদ্বিগ্নতায় ভুগেছেন। কিন্তু লক্ষ্য হচ্ছে উদ্বিগ্নতা যথাসম্ভব কমানো। বুঝতে হবে যে, স্বস্তি একসময় অবশ্যই আসবে, সব উদ্বিগ্নতার পর। যত উদ্বিগ্নতা আর হতাশা সবই কেবল এই জীবনে। এই সবকিছুই দূর হয়ে যাবে যখন আমরা জান্নাতে প্রবেশ করব। তাই জান্নাতকে দারুসসালাম বলা হয় – শান্তির আবাস। নেই কোন ক্ষতিকর বিষয়, উদ্বেগ বা দুঃখ।

What do you think?

Written by শাহেদ হাসান

আমি লেখালেখি করতে বরাবরই ভালোবেসেছি। বর্তমানে গ্রন্থ অনুবাদ ও মৌলিক লেখার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন ব্লগেও লেখালেখি করছি। পড়াশোনা করছি রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

5 online shopping tips

অনলাইন শপিংয়ের জন্য পাঁচটি টিপস

skin care myths and facts

ত্বকের যত্নের কিছু ভুল ধারণা সম্পর্কে জানুন