in

ডিপ্রেশন রোগের চিকিৎসা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ

ডিপ্রেশনঃ ২য় পর্ব

ডিপ্রেশন-রোগের-চিকিৎসা

পৃথিবীজুড়ে এখন ডিপ্রেশন, হতাশা বা বিষন্নতা রোগীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। এই রোগের ঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে ফল মারাত্বক হতে পারে। কেননা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজেই নিজের ক্ষতি করে ফেলতে পারে এমনকি আত্মহত্যার মত ভয়াবহ ক্ষতিও হতে পারে। তাই এই রোগ নির্ণয়ের সাথে সাথেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা জরুরী। ডিপ্রেশন নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনার ১ম পর্বে আমরা এই ভয়াল রোগ নির্ণয়ের উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম। আজকে ২য় পর্বে আমরা এর চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করবো।

১। অভিজ্ঞ মানসিক রোগের ডাক্তারের স্মরনাপন্ন হওয়া

বিভিন্ন ধরণের থেরাপিস্ট রয়েছে, যাদের প্রত্যেকে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ এবং ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে চিকিৎসা প্রদান করে। এর মধ্যে রয়েছে কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এবং সাইকিয়াট্রিস্ট। এদের মধ্যে যে কাউকে বা প্রয়োজনে একাধিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহন করা যেতে পারে।

কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

কাউন্সেলিং সাইকোলজি হলো থেরাপির একটি ক্ষেত্র যা আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবনের কঠিন সময় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার উপর ফোকাস করে। এই ধরনের থেরাপি স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এটি একটি নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করে।

লাইসেন্সপ্রাপ্ত পেশাদার কাউন্সেলর

সাধারনত অভিজ্ঞ পেশাদার মনোবিজ্ঞানীদের চেয়ে এই ধরনের মানসিক সমস্যার সমাধান প্রদানকারীরা লাইসেন্সপ্রাপ্ত পেশাদার কাউন্সেলর বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত সমাজকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করা কিছুটা সহজ। তাদের ব্যস্ততা তুলনামূলক অভিজ্ঞ পেশাদার মনোবিজ্ঞানীদের তুলনায় কম থাকায় সহজেই তাদের কাছে সেবা নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ

তারা চিকিৎসা প্রদানের জন্য সাইকোথেরাপি এবং স্কেল বা টেস্ট করতে পারে। তারা প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি ঐষধও লিখে দিয়ে থাকেন। তাই সমস্যা গুরুতর মনে হলে একজন অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

ডিপ্রেশন অসুখটিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা না করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। মনে রাখবেন রোগ শরীরে হোক বা মনে, চিকিৎসা নেয়া সব ক্ষেত্রেই জরুরী। আর চিকিৎসকের পরামর্শ মত চললে ডিপ্রেশনের হাত থেকেও মুক্তি মেলে। সর্বোপরি ধৈর্য ধারন করা জরুরী।

২। চিকিৎসক নির্বাচনে অন্যের সাহায্য নেয়া

একা একা বা গোপনে কোন সিন্ধান্ত নেয়ার চেয়ে, একজন কাউন্সিলর বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ খুঁজে পেতে আত্মীয়, বন্ধু বা পরিচিত জন বা বিশ্বস্ত যে কারো সাহায্য নেয়া উচিত। আমাদের সমাজে এখনো মানসিক সমস্যার জন্য চিকিৎসকের কাছে যাওয়া অনেকেই ভালো চোখে দেখেন না। যার কারনে একজন অভিজ্ঞ থেরাপিস্ট বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে। কিন্তু মনে রাখবেন আপনার শরীরে যেমন যে কোন সময় যে কোন অসুখ বাসা বাধতে পারে ঠিক সেরকমই মনেও যে কোন সময় যে কোন রোগ বাসা বাধতে পারে। তাই আপনার পরিচিতদের সাথে আলোচনা করে একজন অভিজ্ঞ থেরাপিস্ট বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ খুঁজে বের করা দোষের কিছু না।

৩। থেরাপিস্ট লাইসেন্সপ্রাপ্ত কিনা জেনে নেয়া উচিত

শরীরের রোগ দূর করার জন্য যেমন আমরা একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাই ঠিক তেমনি মনের রোগ দূর করার জন্যেও আমাদের এমন কারো কাছে যাওয়া জরুরী। তাই আপনি যে থেরাপিস্টের কাছে যাচ্ছেন তিনি লাইসেন্সপ্রাপ্ত কিনা জেনে নিন। কারণ বর্তমানে এমন অনেক ভুয়া থেরাপিস্ট রয়েছে যারা ভুলভাল থেরাপি দিয়ে রোগীর কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আর আপনি যদি একবার এমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে যান তাহলে রোগ নির্মুলের পরিবর্তে তা আরো মারাত্বক ক্ষতির কারন হতে পারে।

৪। ঔষধ সেবনের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া জরুরী

প্রয়োজনের ভিত্তিতে চিকিৎসক অ্যান্টিডিপ্রেসন ঔষধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টগুলো মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার সিস্টেমকে প্রভাবিত করে যাতে মস্তিষ্ক নিউরোট্রান্সমিটার তৈরি এবং ব্যবহার করে সেগুলোর সমস্যার মোকাবিলা করার চেষ্টা করে। তবে অনেক ক্ষেত্রে এই ধরনের অ্যান্টিডিপ্রেসন ঔষধের নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তাই এই ধরনের ঔষধ সেবনের আগে এগুলো সম্পর্কে আপনার মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে খোলামেলা পরামর্শ করে নেয়া জরুরী। আবার এসব ঔষধ সেবনের পরপর আপনার মুডে কোন অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা গেলে অবশ্যই সাথে সাথে চিকিৎসকে অবিহিত করা উচিত।

৫। পরিবর্তনগুলো লিখে রাখা

কাউন্সিলিং বা থেরাপি শুরু করার পর থেকে মানসিক অবস্থার কোন পরিবর্তন বুঝতে পারলে তা একটা খাতায় লিখে রাখা উচিত। মুডের পরিবর্তন হলে সেটা ভালো বা খারাপ যেমনই হোক না কেন তা লেখা থাকলে পরবর্তী ডাক্তার বা কাউন্সেলয় ভিজিটের সময় পরামর্শ করতে সুবিধা হবে। প্রয়োজনে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাহায্য নেয়া যায়। পরবর্তি সেশনে কাউন্সিলর বা থেরাপিস্টকে আপনার পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে অবিহিত করুন। এমন কি অ্যান্টিডিপ্রেসনের কোন ড্রাগ নেওয়ার পর আপনি কি অনুভব করছেন সেটাও চিকিৎসককে জানান। এতে তার পরবর্তী চিকিৎসা সেবা প্রদানে সুবিধা হবে।

ডিপ্রেশনের মত ভয়াল ব্যাধি থেকে নিজেকে বাঁচাতে কীভাবে চিকিৎসা সেবা নিবেন তা নিয়ে আজকের পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আশাকরি এই অসুখটিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা না করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। মনে রাখবেন রোগ শরীরে হোক বা মনে, চিকিৎসা নেয়া সব ক্ষেত্রেই জরুরী। আর চিকিৎসকের পরামর্শ মত চললে ডিপ্রেশনের হাত থেকেও মুক্তি মেলে। সর্বোপরি ধৈর্য ধারন করা জরুরী। কারণ কাউন্সিলিং বা থেরাপি যায় হোক না কেন কাজ করতে কিছুটা সময় নেয়। তাই ডিপ্রেশন থেকে বাঁচতে হলে ধৈর্য ধারন করতেই হবে।

What do you think?

Written by সানজিদা আলম

একজন ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার। টেকনোলজি, স্বাস্থ্য, প্রোডাক্ট রিভিউ এবং ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। লেখালেখির পাশাপাশি ভালোবাসি পড়তে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

গ্রিনজুসের উপকারীতা

গ্রিন জুসের উপকারীতা এবং কিছু সতর্কতা

ভ্রমণ গ্যাজেট

ভ্রমণে সহায়ক অত্যাবশ্যকীয় ৫টি গ্যাজেট