ওজন কমানো থেকে শুরু করে পরিপাকতন্ত্রের উন্নতি পর্যন্ত গ্রিন জুসের উপকারীতা বিবেচনা করে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে এই গ্রিন জুস বা সবুজ জুস ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পরিপূর্ন প্রাকৃতিক হওয়ার কারনে স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরা অনেকেই এই গ্রিন জুসের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। গ্রিন জুস মূলত সবুজ শাকসবজি যেমন শশা, পালং শাক দিয়ে তৈরি করা হয়, যদিও এটিকে মিষ্টি করতে এবং অতিরিক্ত পুষ্টি যোগাতে অল্প পরিমাণে ফল যেমন আপেল, খেজুর বা বেরি জাতীয় ফল যোগ করা যেতে পারে। গ্রিন জুসের ধারনাটি সাম্প্রতিক হওয়ার কারনে অনেকেই আমাদের কাছে জানতে চান যে তারা গ্রিন জুস কেন পান করবেন? তাই আজকে আমরা এই জাদুকরি পানীয়টি পানের উপকারিতা ও সম্ভাব্য কিছু ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন তাহলে শুরু করি।
গ্রিন জুস পানের ৬টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
১। পুষ্টিতে ভরপুর
গ্রিন জুস পুষ্টিতে ভরপুর একটি পানীয়। তবে এর থেকে প্রচুর পুষ্টি পাওয়া যাবে এই ভেবে আপনি কিন্তু আপনার খাদ্য তালিকা থেকে অন্যান্য সবজি বাদ দিতে যাবেন না। আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাতে যা সবজি ও ফল খান তার সবই খাবেন সাথে বাড়তি পুষ্টি পাওয়ার জন্য পান করতে পারেন গ্রিন জুস। কারণ সবুজ শাকসবজি ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
২। হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে
গ্রিন জুস আপনাকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। আমরা জানি যে সুস্থ থাকার জন্য আমাদের দৈনিক একটি নির্দিষ্ট পরিমান পানি পানের প্রয়োজন পড়ে। শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখতে তাই গ্রিন জুস পান করতে পারেন। এটি একদিকে আপনাকে পুষ্টি যোগাবে এবং অন্য দিকে পানির চাহিদাও পূরন করবে। বিশেষ করে শসার মত পানি সমৃদ্ধ সবজির জুস বেশি উপকারী।
৩। ওজন কমাতে সাহায্য করে
গ্রিন জুস নিয়মিত পান করলে সাময়িক ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। একটি সমীক্ষা অনুসারে, যারা গ্রিন জুস পান করেন তাদের গড়ে ৩.৩ পাউন্ড কমতে পারে, যার প্রভাব ২ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। গবেষণায় বলা হয়েছে যে কাঁচা সবজি ও ফলের জুস অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে এবং ওজন হ্রাস করতে পারে, যদিও ওজন হ্রাসের উপর গ্রিন জুসের প্রভাব আরও ভালভাবে বোঝার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন। এ সংক্রান্ত আমার আলাদা একটি লেখা আছে যা নিচের লিংক থেকে পড়তে পারবেন।
৪। হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে
গ্রিন জুস পুষ্টি সমৃদ্ধ যা অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে। এটি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাগুলোকে প্রতিরোধ করতে পারে। সবুজ জুস সাধারনত বিভিন্ন প্রকার সবজিকে সরাসরি ব্লেন্ড করে তৈরি করা হয় যার কারনে এতে সবজির পুষ্টিগুন প্রায় অক্ষুন্ন থাকে। আর এই কারনেই এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ভূমিকা রাখতে পারে।

৫। প্রদাহ কমায়
যেহেতু সবুজ শাক সবজি থেকে গ্রিন জুস তৈরি করা হয়, তাই এটি প্রদাহ এবং প্রদাহ সংক্রান্ত রোগ যেমন হৃদরোগ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৬। হজম করা সহজ
গ্রিন জুস হজম করা সহজ এবং তাই যাদের সম্প্রতি পাকস্থলি এবং অন্ত্রের অস্ত্রোপচার হয়েছে তাদের জন্য এটি উপকারী। এটি খুব সহজে হজম হয়ে যায় তাই অস্ত্রোপচারের পর শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে কাজ করে।
গ্রিন জুস পানের ফলে কী ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে
প্রতিটা জিনিসের ইতিবাচক দিকের পাশাপাশি নেতিবাচক দিকও থাকে। ঠিক তেমনি গ্রিন জুসের যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে তেমন কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকিও রয়েছে। চলুন দেখি সেগুলো কী কীঃ
১। ফাইবারের পরিমান কম থাকে
জুস বানানোর ফলে ফল এবং শাকসবজিতে থাকা ফাইবার অনেকাংশে কমে যায়। ফাইবার আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি হজমে সাহায্য করে, রক্তে শর্করা বৃদ্ধি করে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন করে এবং রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়।
যেহেতু গ্রিন জুসে ফাইবার তুলনামূলকভাবে কম, তাই আপনার সবজি খাওয়ার বিকল্প হিসেবে এটি ব্যবহার করা উচিত হবে না। এর পরিবর্তে, প্রচুর ফল এবং শাকসবজি খান এবং একটি সুষম খাদ্য তালিকা মেনে চলা বেশী উপকারী হবে।
২। ব্লাড সুগার বাড়াতে পারে
গ্রিন জুস রক্তে শর্করা বৃদ্ধি করতে পারে, প্রধানত ফলের শর্করা এবং গ্রিন জুসে ফাইবার এবং প্রোটিনের অভাবের কারণে এটা হতে পারে। তবে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার তীব্র চাহিদা এড়াতে আপনি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্সের সাথে গ্রিন জুস পান করতে পারেন। এতে আপনি একই সাথে ফাইবার এবং প্রোটিন পাবেন যা আপনার জন্য একটি সেরা মিল প্ল্যান হতে পারে।
আপনি জুস তৈরিতে কোন কোন সবজি ও ফল ব্যবহার করবেন তা আগেই ঠিক করে রাখুন। আপনি যদি দোকান থেকে গ্রিন জুস কেনার সিদ্ধান্ত নেন, তবে মনে রাখবেন যে এর মধ্যে অনেকগুলোতে অতিরিক্ত শর্করা থাকে এবং যেগুলি কেবল ফল এবং সবজি থেকে তৈরি হয় না। তাই সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
৩। আপনার কিডনির ক্ষতি করতে পারে
সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট থাকে, যা একটি অ্যান্টিনিউট্রিয়েন্ট হিসেবে পরিচিত। অক্সালেট খাবারের খনিজ পদার্থের সাথে যুক্ত হয় এবং অন্ত্রকে তাদের শোষণ করতে বাধা দেয়, যা কিডনির ক্ষতির কারণ হতে পারে।
গ্রিন জুসের স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং কিছু ঝুঁকির বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম। এমন না যে এই জুস খেলে আপনার সব শারীরিক সমস্যা দূর হয়ে যাবে অথবা এই জুস আপনাকে মারাত্বক অসুস্থ করে ফেলবে। এর ভালো ও মন্দ উভয় দিকই রয়েছে। তবে গ্রিন জুসে কি কি উপাদান ব্যবহার করছেন সেটির উপরও এর ভালো মন্দের প্রভাব নির্ভর করবে। তাই বলা যায় গ্রিন জুসের উপাদান এবং এর পরিমিত আহারের বিষয়ে সচেতন হলে এই জুসের পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারীতা পাওয়া সম্ভব।
GIPHY App Key not set. Please check settings