আজকাল প্রায়ই দেখা যায় বাচ্চার মা বাবা বা অভিভাবকের একটা অভিযোগ যে বাচ্চা কিছু খেতে চায়না। আমাদের আদরের সোনামনি যদি ঠিকঠাক খাবার না খায় তাহলে তো তার শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ও বিকাশ ঠিকঠাক হবে না। বাবা মার জন্য এটা একটি বড় দুঃশ্চিন্তার বিষয়। অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চাকে খাবার খাওয়ানোর জন্য মা বাবা নানান ধরণের কৌশল অবলম্বন করেন। কখনও কখনও মোবাইলে গেম খেলতে দিয়ে, কার্টুন দেখানোর প্রলোভন দেখিয়ে বাচ্চাকে খাবার খাওয়ান মায়েরা। আবার অনেক সময় চিপস বা চকোলেটের লোভ দেখিয়েও খাবার খাওয়াতে হয়। যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
আমিরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস সহ বেশিরভাগ স্বাস্থ্য সংস্থার মতে খাদ্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব সন্তান ও অভিভাবকের মধ্যে ভাগ করে দেয়া উচিৎ। তারমানে, সন্তান কি খাবে, কখন খাবে এবং কোথায় খাবে এই দায়িত্বগুলো অভিভাবকের উপর এবং কতটুকু খাবে এই বিষয়টি সন্তানের উপর থাকা উচিৎ। অভিভাবক হিসাবে সন্তানকে খাওয়ানোর জন্য বিভিন্ন কৌশলের মধ্যে একটি হলো খাবারে নতুনত্ব নিয়ে আনা। সোনামনিরা পছন্দ করবে এবং চেটেপুটে খাবে এমন কিছু মজার মজার খাবারে রেসিপি আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করবোঃ
১) সেসিমি চিকেন
সব সোনামনিরাই চিকেন ফ্রাই পছন্দ করে, তবে একই ধরনের চিকেন ফ্রাই বার বার দিলে শিশুদের অনীহা তৈরি হয়। তাই আপনি প্রতিবার চিকেন ফ্রাই তৈরির সময় আনতে পারেন স্বাদে ভিন্নতা।
উপকরণঃ
- মেরিনেটের জন্যঃ চিকেন পছন্দ মতো সাইজে কেটে নেয়া, আদা, রসুন ও গোলমরিচের গুঁড়ো, স্বাদমতো লবন, লেবুর খোসা কুচি;
- কোটিং এর জন্যঃ ডিম, ময়দা/ কর্ণ ফ্লাওয়ার
- ফ্রাই করার জন্যঃ সয়াবিন তেল
- টস করার জন্যঃ সয়া সস, টমেটো সস, চিলিসস, অয়েস্টার সস, ফিশ সস, হোয়াইট ভিনেগার, সামান্য চিনি, ফ্রাইড সেসিমি, চিলি ফ্লেক্স, রসুন কুচি, লেবুর খোসা কুঁচি।
রন্ধন প্রক্রিয়াঃ
টুকরো করে রাখা চিকেনগুলো ভালোমতো ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে, প্রয়োজনে টিস্যু দিয়ে মুছে নেয়া যায়। ড্রাই মেরিনেটের জন্য চিকেনের সাথে আদা, রসুন, গোলমরিচের গুঁড়ো, স্বাদমতো লবন আর লেবুর খোসাকুচি ভালোভাবে মিশিয়ে ৫/৬ ঘন্টা ঢেকে রাখুন, ফ্রিজ রাখলে ভাজার ১০ মিনিট আগে বের করে নেয়া ভালো।
অনেক সময় দেখা যায় বাচ্চাকে খাবার খাওয়ানোর জন্য মা বাবা নানান ধরণের কৌশল অবলম্বন করেন। কখনও কখনও মোবাইলে গেম খেলতে দিয়ে, কার্টুন দেখানোর প্রলোভন দেখিয়ে বাচ্চাকে খাবার খাওয়ান মায়েরা। আবার অনেক সময় চিপস বা চকোলেটের লোভ দেখিয়েও খাবার খাওয়াতে হয়। যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর।
এবার দুটো ডিমের সাথে সামান্য লবন ও গোলমরিচের গুঁড়ো দিয়ে ভালোমতো ফেটে নিন, আর ময়দার সাথে সামান্য লবন ও গোলমরিচের গুড়া অথবা লাল মরিচের গুঁড়া ভালোমতো মিশিয়ে নিন। এবার চিকেনগুলো ডিমের ডুবিয়ে তারপর ময়দার মিশ্রণে ভালো করে কোড করে একটি পাত্রে ১/২ মিনিটের জন্য রেখে গরম তেলে মাঝারি আঁচে ভেজে নিন।
আপনার সোনামনিকে এই ফ্রাইড চিকেন ফ্রাইড রাইসের সাথে অথবা নাস্তা হিসাবে দিতে পারেন। আরো মজাদার করার জন্য, একটি পাত্রে সামান্য তেল নিয়ে তার মধ্যে সামান্য রসুন কুচি হালকা ভেজে নিন। এবার ২ টেবিল চামচ সয়া সস, টমেটো সস, চিলিসস, ১ চা চামচ অয়েস্টার সস, ১/২ চা চামচ ফিশ সস, ১ চা চামচ চিনি, সাসান্য ভিনেগার, চিলি ফ্লেক্স, লেবুর খোসা কুঁচি দিয়ে ২ মিনিট নেড়ে তারমধ্যে চিকেন দিয়ে টস করে নিন। টস করা চিকেনের উপর ছড়িয়ে দিন ফ্রাইড সেসেমি।
পছন্দমতো ডেকোরেশন করে পরিবেশন করুন মজাদার সেসেমি চিকেন। আপনার সোনামনির প্রথম পছন্দ হবে এই সেসিমি চিকেন।
২) চিকেন ভেজিটেবল স্যুপ
শীতকালে বাজারে পাবেন নানান জাতের সবজি। সোনামনির জন্য ঝটপট বানিয়ে ফেলুন গরম গরম চিকেন ভেজিটেবল স্যুপ।
উপকরণঃ
হাড় ছাড়া চিকেন (ভালো হয় বুকের মাংশ নিলে), কয়েক প্রজাতির সবজি (গাজর, পেপে, ফুলকপি, ব্রকোলি, বরবটি ইত্যাদি), ডিম, কর্নফ্লাওয়ার, গোল মরিচের গুঁড়া, পেঁয়াজ কুঁচি, স্বাদ মতো লবন, সয়া সস, চিলি সস, টমেটো সস।
রন্ধন প্রক্রিয়াঃ
প্রথমে চিকেনের টুকরো ভালো করে ধুয়ে নিন, তারপর একটি পাত্রে বেশি করে পানি দিয়ে চিকেনের টুকরো সেদ্ধ করে নিন। সেদ্ধ করার সময় ওই পানির মধ্যে দিয়ে দিতে পারেন আস্ত গরম মসলা, মৌরি ও ধনিয়া।
চিকেন সেদ্ধ হয়ে এলে পানি থেকে তুলে নিয়ে পানি ছেঁকে নিন। চিকেন গুলো এবার হাত দিয়ে টুকরো টুকনো করে নিন। আরেকটি পাত্রে সামান্য তেল গরম করে পেয়াজ কুচি ভেজে নিয়ে সেখানে আপনার পছন্দের সাইজে কেটে রাখে সবজিগুলো দিয়ে কিছুক্ষণ কসিয়ে নিন, তার সাথে মিশিয়ে নিন স্বাদমতো লবণ, গোলমরিচের গুঁড়ো, সামান্য রসুন বাটা দিয়ে নেড়ে নিন। এবার চিকেন স্টক ঢেলে দিয়ে সবজি সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। সেদ্ধ হয়ে গেলে টুকরো করে রাখা চিকেন ঢেলে দিন। কাঁচা মরিচ টুকরো করে দিয়ে দিন, সামান্য কর্ন ফ্লাওয়ার পানিতে মিশিয়ে আস্তে আস্তে ঢেলে দিন, হালকা হাতে নাড়ুন, একটা ডিম ফেটে নিয়ে আস্তে আস্তে ঢেলে দিন। কিছুক্ষণ নেড়ে সস মিশিয়ে নামিয়ে নিন।
পরিবেশনের জন্য তৈরি হয়ে গেলো মজাদার চিকেন ভেজিটেবল স্যুপ।
৩) মিল্ক পুডিং
বাচ্চাদের জন্য দুধের মতো আদর্শ খাবার আর দ্বিতীয়টি নেই, তবে অনেক বাচ্চাই দুধ সরাসরি পানে অনীহা প্রকাশ করে, তাই দুধের তৈরী বিভিন্ন ডেজার্ট হতে পারে অভূতপূর্ব সমাধান। এরকমই একটি সহজ রেসিপি হলো “মিল্ক পুডিং”।
উপকরণঃ
হাফ লিটার তরল দুধ, ২ কাপ চিনি, ২ চামচ আগার আগার পাউডার, সামান্য ফুড কালার, ভ্যানিলা এসেন্স আর ড্রাই ফ্রুটস/ বাদাম/ কিসমিস।
রন্ধন প্রক্রিয়াঃ
একটি পাত্রে প্রথমে দুধ, চিনি, আগার আগার পাউডার, ভ্যানিলা এসেন্স, ফুড কালার ভালো করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ বানিয়ে নিন। এরপর মিশ্রণটিকে হালকা মাঝারি তাপে চুলায় জ্বাল দিতে থাকুন এবং চামচ দিয়ে ক্রমাগত নাড়তে থাকুন, যারে মিশ্রণটি পোড়া লেগে না যায়। ৮/১০ মিনিট পর মিশ্রণ ঘন হয়ে গেলে একটি প্লেট/ চৌকো ট্রেতে ঢেলে দিয়ে তার উপর ড্রাই ফ্রুটস / বাদাম অথবা কিসমিস ছড়িয়ে দিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। মিশ্রণ ঠান্ডা হয়ে গেলে তা ৩/৪ ঘন্টার জন্য ফ্রিজে তুলে রাখুন। ৩/৪ ঘন্টা পর ফ্রিজ থেকে নামিয়ে ছুড়ি দিয়ে বরফি আকারে কেটে পরিবেশন করুন। তবে যাই তৈরী করুন না কেনো, সব সময় খেয়াল রাখবেন পরিবেশন যেনো পরিচ্ছন্ন ও আকর্ষণীয় হয়, তাহলে বাচ্চাদের খাবারের প্রতি আগ্রহ আরো অনেক গুণে বেড়ে যাবে।
GIPHY App Key not set. Please check settings