in

গ্রাফিক্স কার্ডের খুঁটিনাটি

কেনার আগে জানা দরকার

Graphics-Card-need-to-know-before-buy-in-BD

যারা এডিটিং বা গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করেন, তারা গ্রাফিক্স কার্ডের গুরুত্ব বুঝেন। আবার যারা কম্পিউটারে নিয়মিত গেমিং নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তারাও এ ব্যাপারে জানেন। কিন্তু এমন অনেকেই আছেন যারা কম্পিউটারে গেমিং শুরু করেছেন কিংবা গ্রাফিক্স বা এ্যনিমেশন ডিজাইন নিয়ে নতুন কাজ করছেন তারা অনেকেই গ্রাফিক্স কার্ড সম্পর্কে জানেন না। আবার এমনও হয় বাজারে অনেক অনেক গ্রাফিক্স কার্ড, কোনটি কিনবেন তা ঠিক বুঝতে পারেন না। তাদের জন্য আজকের এই লেখা।

সচরাচর গ্রাফিক্স কার্ড কেনার সময় আমরা অন্য কারো কাছে পরামর্শ চেয়ে থাকি। কেউ একজন তার কম্পিউটারে যে গ্রাফিক্স কার্ডটি ব্যবহার করছেন বা সে যেটি পছন্দ করেছেন সেই মডেলটির নাম বলে থাকেন। এরকম পরামর্শ পেয়ে গ্রাফিক্স কার্ড কিনে ফেলাটা ঠিক নয়। কারণ আমাদের দেশে অনেকেই কম্পিউটার অ্যাসেম্বল করেন। মানে কম্পিউটারের বিভিন্ন পার্টস বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হয়ে থাকে। সব ব্র্যান্ডের পার্টস মিলিয়ে তারা কম্পিউটার বিল্ড করে থাকেন। এক্ষেত্রে একটি বড় বিবেচ্য বিষয় হলো, প্রতিটি পার্টসের সমন্বয় কি আপনাকে বেস্ট আউটপুট দিতে পারছে কি-না। তাই একটি নির্দিষ্ট মডেলকে আদর্শ না ধরে নিম্নোক্ত কটি বিষয়ে মনোযোগ দিন—

আপনার বাজেট ঠিক কত?

গ্রাফিক্স কার্ডের দাম কম নয়—অন্তত এটুকু তো সবারই জানা। কিন্তু দাম ‘বেশি’ এই শব্দে নিজেকে আটকে রাখার মানে নেই। আপনাকে গ্রাফিক্স কার্ড কেনার জন্য একটি বাজেট নির্ধারণ করতে হবে। এই বাজেট নির্ধারণের কাজটি করার জন্য আপনাকে অনলাইনে কিছুটা সময় দিতে হবে। এই কাজটি বেশ সহজ। সচরাচর বাজেট নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে আপনাকে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে হয়।

  • প্রথম ধরনের বিবেচনা : আপনি ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক্সের কাজ করবেন
  • দ্বিতীয় বিবেচনা : আপনি গেমিং করবেন
  • তৃতীয় বিবেচনা : আপনি গেমিং ও গ্রাফিক্সের কাজ দুটোই করবেন

এই তিন ধরনের বিবেচনার জন্য তিন ধরনের বাজেট রেঞ্জ হয়ে থাকে। ভিডিও এডিটিং এর জন্য অপটিমাইজ করা গ্রাফিক্স কার্ড গেমিং এর জন্য অতটা ভালো নাও হতে পারে। সেজন্য ইংরেজি রিভিউ দেখে নিতে পারেন। আপনার কম্পিউটারের হার্ডওয়ারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে এমন একটি জিপিউ এর গ্রাফিক্স কার্ড এর দাম আপনি সহজেই আন্দাজ করে নিতে পারবেন বা কম্পিউটারের দোকানের কাউকে জিজ্ঞেস করে নিবেন। তবে হ্যা, তাদের কাছে কেনার সময় এই ধারণা নিতে যাবেন না। শুধু জেনে নিন কেমন গ্রাফিক্স কার্ড ভালো হবে।

জিপিইউ কোনটি দরকার বুঝে নিন

গ্রাফিক্স কার্ড কেনার সময় মডেল নাম্বার, সিরিয়াল নাম্বার এসবের থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বেশি জিপিইউ। কিন্তু কেমন জিপিইউ আপনার প্রয়োজন তা বুঝবেন কিভাবে? সেটাও তো জানা চাই। আপনার হাতের কাছেই সমাধান আছে। আপনি যদি গ্রাফিক ডিজাইনার, ভিডিও এডিটর হয়ে থাকেন তাহলে আপনি যে সফটওয়ার ব্যবহার করবেন সে সফটওয়ার কোন জিপিইউ-তে কাজ করবে দেখে নিন। ব্যাস। এবার আপনি বাজেট নির্ধারণের একটি সুযোগ পেলেন। আবার গেমিং এর ক্ষেত্রে হিসেব আলাদা কারণ—হতে পারে আপনি সাইবারপাংক টু থাউজ্যান্ড সেভেন্টি সেভেন (Cyberpunk 2077) খেলবেন। এই গেমটির জন্য কেমন জিপিইউ জরুরি? সেটা দেখে নিন। নির্বাচন সহজ না হয়ে যাবে কোথায়?

অনলাইনে সময় দিন

একটি নির্দিষ্ট ঘরানার গ্রাফিক্স কার্ডের যন্ত্রণা থেকে বের হতে হলে আপনাকে অনলাইনে সময় ব্যয় করতে হবে। হ্যা, কম্পিউটার হার্ডওয়ারের নামকরণগুলো বেখাপ্পা এবং রসকষহীন। সেকথা আমরাও বুঝি। তবে এই যন্ত্রণা খুব সহজেই দূর করা যায় তিনটি ধাপে—

প্রথম ধাপ : অনলাইনে গ্রাফিক্স কার্ড তৈরি করে এমন সুপরিচিত কয়েকটি ব্র্যান্ডের নাম জেনে নিন

দ্বিতীয় ধাপ : ওই ব্র্যান্ডগুলোর যে মডেলগুলো দেশে আছে সেগুলোর লিস্ট করে নিন

তৃতীয় ধাপ :  মডেলগুলো বাংলাদেশে কোথায় পাওয়া যায় এবং দাম কত তাও দেখে নিন

এই তিনটি ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পর আপনি বিস্তারিতভাবে এদের রিভিউ দেখুন। বাংলায় না পেলেও ইউটিউবে অনেক রিভিউ পাবেন। বেশ ভালোভাবে রিভিউওগুলো দেখুন। এক বা দুদিন একটু সময় দিলেই আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়ে যাবে। তবে এখনও কিছু বিষয় আছে।

জিডিডিআর র‍্যাম দেখে নিন

অনেকেই গ্রাফিক্স কার্ডের মডেল নিয়ে এত মাথা ঘামান যে জিপিইউ এর বিষয়টি দেখলেও জিডিডিআর র‍্যাম (GDDR RAM) নিয়ে অত মাথা ঘামান না। আপনার গ্রাফিক্স কার্ড কতটুকু মেমরি নিয়ে কাজ করতে পারবে তা কিন্তু জেনে নেওয়া জরুরি। আপনার গ্রাফিক্স কার্ডে যত বেশি র‍্যাম থাকবে, আপনার কম্পিউটার তত দ্রুত ডাটা প্রসেস করতে পারবে। ফলে অনেক ভারি ভিডিও বা গ্রাফিক চালানোর সময়েও আপনার ঝামেলা হবে না। আগে ডিডিআর-থ্রি (DDR3) র‍্যাম  হলেই অনেকে খুশি হতেন। কিন্তু প্রযুক্তি অনেকদূর এগিয়েছে এবং গ্রাফিক ডাটার প্রসেসিং ও আরও কঠিন হচ্ছে। আজকাল জিডিডিআর সিক্স এক্স (GDDR6X) সর্বাধুনিক বলে বিবেচিত। আপনার গ্রাফিকের চাপ কমাতে তাই এই বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়া চলবে না।

রেফারেন্স নাকি নন-রেফারেন্স গ্রাফিক্স কার্ড

গ্রাফিক্স কার্ড সম্পর্কে অনেকেরই কম ধারণা থাকায় ‘রেফারেন্স’ ও ‘নন-রেফারেন্স’ কুলারের কথা তুললেই বলেন- একটা হলেই হয়, দিয়ে দেন। কিন্তু এটাও অনেক বড় ভুল। আপাতত এই বিষয়টি একটু বুঝিয়ে নেই।  এএমডি (AMD) বা এনভিডিআ (Nvidia) -এর মতো কোম্পানি গ্রাফিক্স কার্ড তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে। আবার তারা অন্য অনেক কোম্পানির জন্যও গ্রাফিক্স কার্ড তৈরি করেন যাতে তারা তাদের কম্পিউটার পণ্যে সেসব ব্যবহার করতে হবে। যেমনটা সনি স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে করে থাকে। তাদের ক্যামেরা শাওমি, রিয়েলমি, গুগলের ফোনে ব্যবহার করা হয়। যেসব কার্ড সরাসরি বাজারে বিক্রি করা হয় সেগুলোই ‘রেফারেন্স’ কার্ড। এখন তো আর নন-রেফারেন্স কার্ডের কথা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই তাইনা? তাই গ্রাফিক্স কার্ড কেনার আগে বক্সের কিউআর কোড এসব খুঁটিনাটি বিষয় অনলাইন থেকে ক্রসচেক করে নিবেন।

কিন্তু এই দুটি বিষয় জানা কেন জরুরি? সেকথাই জানাচ্ছি। নন-রেফারেন্স গ্রাফিক্স কার্ডে সচরাচর দুটো কুলার ফ্যান থাকে। আর কম্পিউটারে গ্রাফিক্স কার্ড কাজ করার সময় গরম বাতাস তো বের হবেই। দুটি কুলার ফ্যান তা হয়তো সামলাতে পারেনা। ফলে তা কম্পিউটার কেসে ছড়িয়ে পড়ে। তারমানে নন-রেফারেন্স গ্রাফিক্স কার্ড কম্পিউটারে বাড়তি চাপ দিয়ে থাকে। তবে এ ধরনের কার্ডের একটি সুবিধা হলো শব্দ কম হয় এবং বেশি কার্যকর। রেফারেন্স কার্ড এ অপটিমাইজেশন ভালো না থাকায় অনেকে কিনতে চায় না। নন-রেফারেন্স কার্ড যদি কেনা হয়, তখন আপনার সিপিইউ কত তাপমাত্রায় পৌছায় তা দেখে নিন। তারপর হিসেব মেলান।

দেখলেন! গ্রাফিক্স কার্ড কেনার বিষয়টি এত জটিল কিছু না। প্রযুক্তির কাজ সহজ করা। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে। আপনি নিয়ন্ত্রণ আনলে সহজেই আপনার ওয়ার্কস্টেশন ভালো করে নিতে পারবেন। আপনার কাছেই সব, দিশেহারা হওয়ার কোনো অবকাশ নেই।

What do you think?

Written by আমিরুল আবেদিন আকাশ

পেশাগত জীবনে আমি একজন সাংবাদিক। শিক্ষাজীবন এখনও শেষ করিনি। এরইমধ্যে একটি পত্রিকায় চাকরি এবং বই অনুবাদ করছি। ইংরেজি কন্টেন্ট লেখার অভিজ্ঞতা থাকায় বাংলায় তথ্যবহুল লেখা প্রচার-প্রসারের আগ্রহ থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Green juice for weight loss

ওজন কমাতে সবুজ জুস

ছোটদের সুস্বাদু রেসিপি

ছোটদের সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর নাশতার রেসিপি