in

অনলাইন শপিং টিপস এবং কিছু বাস্তবতা

অনলাইন-শপিং-টিপস

অনলাইনে কেনাকাটার কথা শুনলে একদিকে যেমন স্বস্তি বোধ হয়, তেমনি অন্যদিকে আবার থেকে যায় প্রতারণার আশংকা। কেননা, অনেক সময় অনলাইন থেকে কেনাকাটা করতে গিয়ে দেখা যায়, অগ্রিম ডেলিভারি চার্জ নিয়ে পরে ব্লক করে দেয়। একটি পণ্যের বদলে অন্য পণ্য দিয়ে দেয়। আবার ছবির সাথে ডেলিভারি দেওয়া পণ্যের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না, ইত্যাদি। 

এর একটি কারন হলো, আপনার আমার মতো সহজ সরল ক্রেতারা সোশ্যাল মিডিয়ায় এক্টিভ থাকা অবস্থায়, বেশ কিছু জনপ্রিয় জিনিসপত্রের এ্যাড দেখতে পাই। এবং সাথে সাথে তা কেনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠি। এসময় আমরা ভুলে যাই যে, অনলাইনে একই জিনিসের অনেক বিক্রেতা থাকে। একই জিনিস একেক জনের কাছে একেক দামের হয়ে থাকে।

কেউ বেশি দামে ভালো প্রোডাক্ট সেল করে আবার কেউ কম দামে নকল প্রোডাক্ট সেল করে। তাই একটু মাথা খাটিয়ে সঠিক জিনিসটি বাছায় করতে হয় এবং অনলাইনে কেনাকাটার আগে কিছু টেকনিক ফলো করতে হয়। এই সংক্ষিপ্ত লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে, আপনি জানতে পারবেন অনলাইন শপিং করার বিশেষ কিছু টিপস্। 

১/ মনোযোগ দিয়ে পণ্যের বিস্তারিত পড়ুন

অনলাইনে যেকোনো জিনিস কেনার আগে সবার আগে প্রোডাক্ট ডিটেইলস পড়ে নিন। কেননা, ছবি দেখে আপনি যা বুঝতে না পারবেন। প্রোডাক্ট ডিটেইল পড়লে আপনি তার চেয়ে বেশি বুঝতে পারবেন। সেটা হোক কাপড়, কসমেটিক, জুয়েলারি অথবা ইলেক্ট্রিক যেকোনো জিনিস। কেননা, হয়তো ছবিতে দেওয়া থাকতে পারে শাড়ির সাথে ব্লাউজ। কিন্তু প্রোডাক্ট ডিটেইলে লিখা থাকতে পারে শাড়ির সাথে ব্লাউজ দেওয়া যাবে না, আলাদা করে ব্লাউজ বানাতে হবে।

আবার, মোবাইল বা ল্যাপটপ ছবিতে ফ্রেশ দেখা গেলেও প্রোডাক্ট ডিটেইল পড়লে আপনি জানতে পারবেন এর হার্ডওয়ারের কোনো সমস্যা আছে কিনা। এজন্য অনলাইনে অর্ডার কনফার্ম করার আগে প্রোডাক্ট ডিটেইল মনোযোগ দিয়ে পড়া উচিত। 

২/ গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টি জেনে নিন

প্রতিটি জিনিস কতদিন টেকসই হবে নির্ভর করে ব্যবহারকারীর উপর। তবুও প্রস্তুতকারক এবং বিক্রেতা ভালো জানেন যে, প্রোডাক্টি কতদিন ব্যবহার করা যাবে এবং কোনো সমস্যা হবে না। তাই তারা প্রোডাক্ট বিক্রির সময় গ্যারান্টি এবং ওয়ারেন্টী দিয়ে থাকে।

প্রোডাক্টের কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টী। কেননা, জিনিস যেটা মজবুত তার টেকসই ক্ষমতা বা গ্যারান্টি ততই বেশি। তাই ভালো মানের জিনিস বিক্রির সময় বিক্রেতা প্রোডাক্টের কোয়ালিটি অনুযায়ী গ্যারান্টি দিয়ে একটি কার্ড প্রদান করে থাকে। পরবর্তীতে আপনি তাদের কাছে এ গ্যারান্টি কার্ড শো করলে, তারা আপনার সমস্যাটি সমাধান করতে বাধ্য। 

যেমন কাপড়ের রং। কাপড় কেনার আগে এর রঙের গ্যারান্টি জেনে নেওয়া আবশ্যক। কেননা, কাপড় দেখে বুঝা কঠিন যে এর রং কতদিন টেকসই হবে। তবে প্রস্তুতকারক এবং বিক্রেতা উভয়েই জানে এই রং কতদিন থাকবে। তাই আপনার উচিত হবে যেকোনো  প্রোডাক্ট কেনার আগে বিক্রেতার কাছ থেকে এর গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টি মেয়াদ জেনে নেওয়া। এতে করে এই সময়ের মধ্যে আপনার কেনা প্রোডাক্টের সমস্যা হলে বিক্রেতা তা সমাধান করে দেবেন।

ওয়ারেন্টি সম্পর্কে কিছু বাস্তবতা

কিছু অনলাইন শপিং সাইট বা ই-কমার্স ওয়েবসাইটে মনগড়া ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকে যে বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরী। অর্থাৎ ইমপোর্টার বা অথরাইজড ডিলার বা ভেন্ডরের কাছ থেকে কোনরকম ওয়ারেন্টি সুবধিা না থাকলেও সেলারদের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র সেল বাড়ানোর জন্য ওয়ারেন্টির কথা বলা হয়। এরকম ক্ষেত্রে ক্রেতারা যখন পণ্য নিয়ে কোন সমস্যায় পরেন কেবল তখনই বুঝতে পারেন ওয়ারেন্টির সত্যতা।

আবার অনেক সেলার কেবলমাত্র তাদের বিশ্বস্ততা ধরে রাখতে কোনরকম ওয়ারেন্টি ছাড়াও ক্রয় পরবর্তী সেবা প্রদান করে থাকে। কাজেই অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত সাইট খুজে নেয়া অত্যন্ত জরুরী।

৩/ ভালো ব্রান্ডের পণ্য কিনুন

অনলাইন অথবা অফলাইন, যেকোনো কিছু কেনার আগে পণ্যটির ব্রান্ড বিবেচনা করা উচিত। কেননা, নামি দামি ব্রান্ডের প্রোডাক্ট কোয়ালিটি ভালো হয়। তবে অনলাইন শপিং এর ক্ষেত্রে আগে ব্যান্ডটি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে নিবেন। নিয়মিত অনলাইনে কেনাকাটা করতে হলে, লোভনীয় কোনো অফার দেখে নিত্য নতুন সাইটে অর্ডার করা থেকে বিরত থাকা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। বরং আপনি নিয়মিত যে ব্রান্ড বা সাইটগুলো থেকে কেনাকাটা করেন, এর মধ্য থেকে আপনার কাছে সব দিক থেকে যেটির প্রতি আস্থা রাখার মতো মনে হয় সেখানেই অর্ডার করুন।

৪/ একই পণ্যের একাধিক এন্ট্রি বিষয়ে সতর্কতা

অনেক মাল্টিভেন্ডর ই-কমার্স প্লাটফরম আছে যারা একাধিক ভেন্ডরের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে থাকে সেসব সাইটে অনেক সময় দেখা যায় একই পণ্যের একাধিক এন্ট্রি। অর্থাৎ একটা পণ্যের জন্য সেই সাইটে সার্চ দিলে দেখা যায় একই পণ্য বহুবার এন্ট্রি দেয়া এবং ভিন্ন ভিন্ন দাম। এর কারণ ভেন্ডর আলাদা। ক্রেতাদের এক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকে। অনেক ভেন্ডর পণ্য দিতে সক্ষম না অথবা পণ্যে কোন সমস্যা থাকায় কম দাম দিয়ে রাখে যার মাধ্যমে ক্রেতারা হয়রানির শিকার হতে পারেন।

৫/ কাস্টমার রিভিউ দেখুন

অনলাইন শপিংয়ে সবমসময় একটা জিনিস মনে রাখবেন যে, আপনি তাদের একমাত্র কাস্টমার নন। আপনার মত আরোও অনেকেই এখান থেকে কেনাকাটা করেন। এমনকি  আপনি যে জিনিসটি কিনতে চাচ্ছেন এমন অনেক লোক আছে যারা আপনার আগে এখান থেকে একই জিনিসটি কিনেছেন।

তারা পণ্যটি পেয়ে কেমন সন্তুষ্ট হয়েছে এটা আপনার জানা দরকার। এটা কিভাবে বুঝবেন? এক্ষেত্রে একটি উপায় হতে পারে প্রোডাক্টের রেটিং চেক করা। আপনার আগের কাস্টমার পণ্যটি পেয়ে কতটা খুশি তার উপর ভিত্তি করে তিনি রেটিং দিয়ে থাকেন। তাই রিভিউ দেখে পণ্য কিনলে কিছুটা নিশ্চিন্ত হওয়া যায়।

৬/ রিটার্ন পলিসি জেনে নিন

প্রতিটি অনলাইন শপিং এর একটি নিদিষ্ট পলিসি থাকে। কেউ প্রোডাক্ট ডেলিভারির পর আর রিটার্ন নেয় না। কেউ ডেলিভারির পর কাস্টমার পছন্দ না করলে রিটার্ন নিয়ে নেয়। কেউ ডেলিভারি দেওয়ার সময় ডেলিভারিম্যানের সামনে চেক করে নিতে বলে, কারণ ডেলিভারিম্যান চলে আসার পর আর রিটার্ন গ্রহণযোগ্য হয় না। সেক্ষেত্রে ক্রেতাকে পড়তে হয় বিপাকে। তাই এ সমস্যা এড়ানোর জন্য অর্ডার করার আগেই তাদের রিটার্ন পলিসি দেখে নেওয়া উচিত। 

৭/ পণ্য গ্রহণের সময় যাচাইয়ের সুবিধা

পণ্য গ্রহণের সময় পণ্যটি খুলে দেখে নেয়ার সুযোগ সব ই-কমার্স সাইট দেয়না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত পণ্যটি খুলে দেখার কোন সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে ক্রেতাদের হয়রানি হওয়ার সুযোগ থাকে।

বিপরীতে আবার কিছু বাস্তবতাও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ম্যাকবুক ল্যাপটপের স্ক্রিন প্রটেক্টর যদি কাস্টমার চেক করতে গিয়ে ল্যাপটপের স্ক্রিনে এঁটে দেয়, এরপর দেখে সাইজ ঠিক নেই। যদিও সেলারের কাছে যে সাইজটি অর্ডার দেয়া হয়েছে ঠিক সেটিই পাঠিয়েছে। আসলে কাস্টমার জানত না তার লাপটপ স্ক্রিনের সঠিক সাইজ। এরকম ক্ষেত্রে পণ্যটি অন্য কারো কাছে বিক্রি করার মতো আর অবস্থা থাকে না। আবার অনেক ইলেকট্রনিক পণ্যের মোড়ক খোলার পর সেটিরও একই পরিণতি হয়।

কাজেই অনলাইনে শপিং করতে একটু চতুর হওয়ার দরকার আছে বৈকি। পাশাপাশি সেলারদের বাস্তবতাও মাথায় রাখা প্রয়োজন। উপরের বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে অনলাইনে শপিং করলে ঠকার সম্ভাবনা কম থাকবে এবং শপিং হবে আনন্দের।

What do you think?

Written by নুসরাত জাহান

পেশায় একজন নার্স হলেও ইসলামিক বিষয় নিয়ে পড়তে ও লিখতে ভালো লাগে। আমার লেখা থেকে যদি কেউ বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় তবেই আমার প্রশান্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

পকেট খালি

মাস শেষে পকেট খালি হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

ডিপ্রেশন মুক্তির উপায়

ডিপ্রেশন রোগ থেকে মুক্তির সহজ উপায়