in

ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন? এই ভুলগুলো করছেন না তো?

ওজন কমাতে যত ভুল

স্বাস্থ্যকর এবং টেকসই পদ্ধতিতে ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিনের রুটিনে স্বাস্থ্যকর খাবার, ঘুম এবং ডায়েটেরি প্যাটার্ন সহ জীবনধারায় পরিবর্তন, সবকিছুতেই ফোকাস করা জরুরী।

ওজন কমানো এক বিষয় কিন্তু স্বাস্থ্যকর এবং টেকসই পদ্ধতিতে ১ ইঞ্চি কমানোও একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রক্রিয়া। অনেক সময়, দ্রুত ওজন কমানোর উৎসাহে আমরা পাগলাটে ডায়েটের চক্করে পড়ে যাই। চরম পরিমানে ক্যালোরির গ্রহণ কমিয়ে সাপ্লিমেন্ট এবং স্টেরয়েড ব্যবহার করে শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ করে তুলি। এই পদ্ধতিগুলো হয়তো কিছু সময়ের জন্য দ্রুত কয়েক কেজি ওজন কমিয়ে দিতে পারবে কিন্তু সেটা কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

স্বাস্থ্যকর ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ওজন কমানোর জন্য কিছু ইতিবাচক অভ্যাস যেমন জীবনধারা পরিবর্তন করা, খাবারের তালিকায় পরিবর্তন করা এবং ঘুমের ধরণ পরিবর্তন করার গুরুত্ব এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। তবে বিশেষ কিছু বিষয় আছে যেগুলো আপনাকে অবশ্যই এড়িয়ে যেতে হবে। চলুন দেখি সেগুলো কি কি-

১। চর্বিযুক্ত খাবার একেবারে বাদ দিয়ে দেয়া

ওজন কমানোর জন্য একেবারে চর্বিমুক্ত খাবার খাওয়া একটি সর্বজন বিদিত অভিমত তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে ওজন কমানোর বিষয়ে এটিই সবচেয়ে সাধারন ভুলগুলোর একটি। ফ্যাট সহ, কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিনকে ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট এর মধ্যে ধরা হয় যা আমাদের শরীরের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয়। এছাড়াও, ভিটামিন এ, কে, এবং ডি সহ অন্যান্য ভিটামিন এবং খনিজগুলোর একটি অংশ শোষণ করার জন্য আমাদের শরীরে চর্বি প্রয়োজন।

এখন আপনি সহজেই কল্পনা করতে পারবেন যে একটি সম্পূর্ণ চর্বি-মুক্ত ডায়েটের ক্ষেত্রে, আপনি কেবল শক্তিই নয়, প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট থেকেও বঞ্চিত হবেন।  

ওজন কমানোর চক্করে বর্তমানে অনেকেই একান্ত প্রয়োজনীয় খাদ্যটুকুও গ্রহন করে না ফলে চরম অপুষ্টির শিকার হয়। এই অনাহার শুধুমাত্র শারীরিক সুস্থতার জন্যই ক্ষতিকর নয় বরং এটি মানুষের মধ্যে মানসিক উদ্বেগ এবং বিশৃঙ্খল খাদ্যাভ্যাসের কারণ হতে পারে। অনাহারে থাকা ওজন কমানোর জন্য মোটেও সঠিক পদ্ধতি নয় বরং এতে সাময়িকভাবে কিছুটা ওজন কমলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না।

২। গ্লুটেন-মুক্ত ডায়েট

গ্লুটেন-মুক্ত খাদ্য সিলিয়াক (পেটের বিশেষ কিছু সমস্যা) রোগের উপসর্গ উপশম করতে সাহায্য করে যদিও এটি ওজন কমাতে সহায়ক এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। প্রকৃতপক্ষে ডায়েটের বর্তমান ক্রেজকে কাজে লাগিয়ে মার্কেটে গ্লুটেন ফ্রি স্ন্যাকস, কেক এবং চকলেট বারের ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে কিন্তু সেগুলোতে গ্লুটেন না থাকলেও অতিরিক্ত চিনি এবং লবণ দেয়া থাকে। যার কারনে এগুলো শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা তাৎক্ষণিকভাবে বৃদ্ধি করে। এছাড়াও এগুলোতে কৃত্রিম সুইটনার, প্রিজারভেটিভ এবং কৃত্রিম রঙ ব্যবহার করা হয় তাই স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর।

৩। ডায়েটের নামে অতিরক্ত না খেয়ে থাকা

ওজন কমানোর চক্করে বর্তমানে অনেকেই একান্ত প্রয়োজনীয় খাদ্যটুকুও গ্রহন করে না ফলে চরম অপুষ্টির শিকার হয়। এই অনাহার শুধুমাত্র শারীরিক সুস্থতার জন্যই ক্ষতিকর নয় বরং এটি মানুষের মধ্যে মানসিক উদ্বেগ এবং বিশৃঙ্খল খাদ্যাভ্যাসের কারণ হতে পারে। অনাহারে থাকা ওজন কমানোর জন্য মোটেও সঠিক পদ্ধতি নয় বরং এতে সাময়িকভাবে কিছুটা ওজন কমলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। বরং এভাবে দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকার জন্য অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা, খাবার গ্রহনে ভয়ের মত মানসিক সমস্যা হতে পারে। চরম অনাহারও পরিপাকতন্ত্রের কার্যপ্রনালী ধীরগতির করে ফেলতে পারে এতে আপনি শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।

৪। সুষম খাদ্যের অভাব

একটি সুষম খাদ্যে ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট উভয় উপাদানই থাকে যা মানবদেহে সঠিকভাবে বিভাজিত হয়। ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট শরীরের জ্বালানী হিসাবে কাজ করে এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট শরীরের সুস্থ বিকাশের জন্য এবং মনের সামগ্রিক সুস্থতা জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অনেকেই ওজন কমানোর জন্য কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চলে যার কারনে এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট সীমিত আকারে গৃহীত হয় ফলে শরীরে শক্তির তীব্র অভাব, মাথাব্যথা এবং ক্লান্তি সহ আরো অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়। মনে রাখবেন, ওজন কমানোর কোনো শর্টকাট নেই এবং আপনি যদি সারাজীবনের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে চান, তাহলে আপনাকে নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহন করতেই হবে।  

৫। ওজন কামানো নিয়ে অবাস্তব প্রত্যাশা

এক সপ্তাহে ১০ কেজি ওজন কমানোর মতো অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণ করা আপনার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। এটা ঠিক যে একটি চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ওজন কমানোর বিষয়টিকে অনুপ্রাণিত করে তবে এটা খেয়াল রাখতে হবে যে অবাস্তব প্রত্যাশার বোঝা যেন আপনাকে হতাশ করে তুলতে না পারে। তাই আপনার উচিত এমন একটি লক্ষ্য নির্ধারন করা যেটা পূরন করা সহজ হবে এবং দীর্ঘস্থায়ীও হবে। যেমন ২ সপ্তাহে আপনি ১-২ কেজি ওজন কমাবেন এমন একটি টার্গেট সেট করতে পারেন। মনে রাখতে হবে যে, জীবনে কোন কিছুই সহজে বা বিনা শ্রমে পাওয়া যায় না। সাফল্যের কোন শর্টকাট নেই এবং ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। এখানে চ্যালেঞ্জটি হল কোন শর্টকাট এর দিকে না যাওয়া বরং জীবনধারা পরিবর্তন করে, সুষম খাদ্য গ্রহন এবং পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে মোট কথা স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করা।

What do you think?

Written by সানজিদা আলম

একজন ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার। টেকনোলজি, স্বাস্থ্য, প্রোডাক্ট রিভিউ এবং ইনফরমেটিভ কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে। লেখালেখির পাশাপাশি ভালোবাসি পড়তে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Xiaomi-NexTool-Rechargeable-Flashlight

লোডশেডিংয়ে স্বস্তি দিবে এমন ৫টি গ্যাজেট

Green-Coffee-in-Bangladesh

হালের ক্রেজ গ্রীন কফি: কেন খাবেন কিভাবে খাবেন