আপনি কি অনেক রাত জেগে কাজ করেন? কখনও কখনও কি ভোর পর্যন্ত আপনি কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন? তাহলে কফি নিশ্চয় আপনার কাছে অনেকটা ত্রান কর্তার মত, তাই না? ক্রিম কফি, মিল্ক কফি, অথবা ব্ল্যাক কফি, যেভাবেই পান করুন না কেন, মুডকে রিফ্রেশ এবং শরীর ও মনে তাজা ফিল এনে দেয়ার ব্যাপারে এই পানীয়টির জুরি মেলা ভার। আর এই কারনে আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা এক কাপ উষ্ণ কফি ছাড়া দিন শুরু করার কথাটা ভাবতেও পারেন না। কিন্তু আপনি জানেন কি মুড রিফ্রেশ করা এবং শরীর ও মনকে তাজা করা ছাড়াও এই পানীয়টি আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে? অবাক হচ্ছেন, তাই না? আপনি যদি কোন প্রকার মিষ্টি ছাড়া কফি পান করেন তাহলে এর প্রভাব দ্বিগুণ হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, ব্ল্যাক কফি থেকে ক্যাফেইনের চেয়ে অনেক বেশি প্রশান্তিদায়ক স্বাদ পাওয়া যায়। হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ কর্তৃক পরিচালিত একটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে, প্রতিদিন চার কাপ ব্ল্যাক কফি পান করলে ৪% পর্যন্ত বডি ফ্যাট কমতে পারে। চলুন তাহলে দেখি ওজন কমাতে ব্ল্যাক কফি ঠিক কীভাবে সাহায্য করতে পারে।
১। ব্ল্যাক কফিতে ক্যালোরি
ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (United States Department of Agriculture -USDA) অনুসারে মাটিতে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত কফি বীজ থেকে তৈরি এক কাপ রেগুলার ব্ল্যাক কফিতে মাত্র ২ ক্যালোরি থাকে। অপর দিকে একটি চমৎকার ঘন ব্ল্যাক এসপ্রেসোতে থাকে মাত্র ১ ক্যালোরি। আর আপনি যদি ডিক্যাফিনেটেড বীন থেকে তৈরি কফি পাউডার দিয়ে কফি তৈরি করেন তাহলে ক্যালোরির মাত্রা কমে শূন্য হয়ে যাবে।
২। ব্ল্যাক কফি ওজন কমাতে সাহায্য করে
ব্ল্যাক কফিতে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড নামে একটি পদার্থও রয়েছে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। কালো কফিতে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিডের উপস্থিতি পাওয়া যায় যা রাতের খাবার বা রাতের খাবারের পরে শরীরে গ্লুকোজ তৈরি করতে বিলম্ব করে। এছাড়াও, নতুন ফ্যাট কোষের গঠন হ্রাস পায়, ফলে শরীরে কম ক্যালোরি শোষিত হয়। ফোর্টিস হাসপাতালের ডাঃ সিমরান সাইনির মতে, “কফিতে থাকা ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখে।”
৩। ব্ল্যাক কফি হঠাৎ পাওয়া ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে
কফির একটি উপাদান ক্যাফেইন আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব ফেলে বলে জানা যায়। ক্যাফেইন একটি প্রাকৃতিক উদ্দীপক যা আমাদের মস্তিষ্ক এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় এবং মনোযোগী হতে সাহায্য করে। এটি আমাদের এনার্জি লেভেল উন্নতিতেও সহায়তা করে।
৫। চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে
গ্রিন কফি বিন আমাদের শরীরের চর্বি বার্ন করার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি শরীরকে আরও ফ্যাট-বার্নিং এনজাইম নিঃসরণ করতে দেয়। এটি লিভারের জন্য প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবেও কাজ করে। এটি লিভারকে পরিষ্কার করে এবং খারাপ কোলেস্টেরল এবং অতিরিক্ত লিপিড দূর করে, আমাদের মেটাবলিজম ক্ষমতাকে আরো অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
৫। শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করতে সাহায্য করে
ব্ল্যাক কফিকে প্রাকৃতিক নিরাময়কারীও বলা হয়। পানির অতিরিক্ত ওজনের কারণে অনেকেই ভারী বোধ করেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্ল্যাক কফি শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি দূর করতে সাহায্য করে। এই পানীয়টি কোন বিপজ্জনক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না করেই ওজন কমাতে সাহায্য করে। এই ওজন হ্রাস যদিও অস্থায়ী হতে পারে তবে তাৎক্ষনিক ভালো ফল লাভ করা যায়।
ওজন হ্রাস করা ছাড়াও ব্ল্যাক কফির আরো অনেক আশ্চর্যরকম উপকারীতা রয়েছে। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা গেছে যে, যারা নিয়মিত ব্ল্যাক কফি পান করেন তাদের স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, মলদ্বারের ক্যান্সার এবং লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটায় কমে যায়। এছাড়াও এটি শরীরে টিউমারের কোষ বৃদ্ধিতে বাঁধা প্রদান করে এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
পরিশেষে, ব্ল্যাক কফি যে সত্যিই আপনার ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করতে পারে তা জানা হল। আর কীভাবে করে সেটাও জানা হল। তাই আজ থেকেই আপনার ডায়েটে ব্ল্যাক যুক্ত করুন। তবে মাথায় রাখতে হবে যে একদম সকালে ঘুম থেকেই উঠেই খালি পেটে কফি পান করা ঠিক না। এছাড়াও যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তাদের এই পানীয় পান না করায় ভালো। তাহলে এই পানীয় পান করবেন কখন? সবচেয়ে ভালো সময় হল সন্ধ্যা বেলা। তবে আপনার ডায়েটে নতুন কিছু যোগ করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে অবশ্যই পরামর্শ করে নিন।
GIPHY App Key not set. Please check settings