স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বর্তমানে নারীপুরুষ সকলের মধ্যেই অনেক বেড়েছে। সেই সাথে ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য খাদ্যা তালিকাতে সংযোজন ও বিয়োজনও হয়েছে অনেক কিছু। এই সংযোজনের তালিকায় যুক্ত হওয়া নতুন নাম হল গ্রীন কফি। হ্যা, হালের ক্রেজ হল এই গ্রীন কফি। সময় যত পার হচ্ছে, গ্রীন কফির জনপ্রিয়তা ততই বেড়ে চলেছে। আপনিও যদি ওজন কমানোর যুদ্ধের সৈনিক হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয় ইতোমধ্যে গ্রীন কফি সম্পর্কে শুনেছেন। তবে যেহেতু এটা তুলনামূলক একটি নতুন পন্য তাই অনেকেই এটি গ্রহন করবেন কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় ভোগেন। আপনার সব দ্বিধা দূর করার জন্য আজকে আমরা গ্রীন কফি কি, কেন খাবেন, কিভাবে খাবেন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন তাহলে শুরু করি।
গ্রীন কফি কি?
গ্রীন কফি সাধারন কফি গাছ থেকে সংগ্রহ করা দানা তবে এগুলো কাঁচা দানা, এদের ভাজা হয় না। উৎস একই হলেও সাধারন রোস্টেড কফির চেয়ে গ্রীন কফির স্বাদ অনেকটায় আলাদা। এমনকি এই দুইটির রাসায়নিক প্রোফাইলও অনেক অলাদা। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড রয়েছে। এই ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড মূলত শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ইফেক্ট এর যৌগ যা অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করতে পারে।
রোস্ট করা কফিতেও অল্প পরিমাণে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড থাকে, তবে এর বেশিরভাগই রোস্টিং প্রক্রিয়ার সময় নষ্ট হয়ে যায়। যে কারনে বিশেষজ্ঞরা বলেন যে রোস্টেড কফি খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। বিভিন্ন রকমের গবেষণা থেকে জানা গেছে যে গ্রীন কফি সঠিক নিয়মে এবং একটি নির্ধারিত সময় ধরে খেলে ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
কেন খাবেন গ্রীন কফি?
আমরা আগেই বলেছি যে, গবেষকদের মতে গ্রীন কফি সঠিক নিয়মে এবং একটি নির্ধারিত সময় ধরে খেলে ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়াও এর আরো কিছু স্বাস্থ্য উপকারীতা আছে। চলুন দেখি সেগুলো কি কি-
১। মেটাবলিক সিনড্রোম
মেটাবলিক সিনড্রোম হল উচ্চ রক্তচাপ, পেটের চারপাশে চর্বি জমা, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং রক্তে উচ্চ মাত্রার শর্করা সহ সবকটি স্বাস্থ্য সমস্যার একটি সম্মিলিত অবস্থা। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় যে, গ্রীন কফির নির্যাস এই মেটাবলিক সিনড্রোমের চিকিৎসায় বেশ কার্যকর।
২। রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে
আমরা জানি যে গ্রীন কফিতে প্রচুর পরিমাণে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড রয়েছে। এই অ্যাসিড উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ও নিয়ন্ত্রনে রাখতে সাহায্য করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে তাই হার্ট ভালোভাবে কাজ করতে পারে এবং হার্টের নানাবিধ সমস্যাকে দূরে সরিয়ে রাখে।
৩। ওজন কমায়
ওজন কমানোর বিষয়টির জন্যেই মূলত গ্রীন কফি সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয়তা পেয়েছে আর তবে এটি বিতর্কিতও। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ইঘো ওনাকপোয়া বলেন যে ওজন কমানোর জন্য গ্রিন কফির নির্যাস নিয়ে অনেক গবেষণা অমীমাংসিত বা স্বল্প সময়ের এবং নমুনার আকার ছোট হওয়ার জন্য খুব বেশী নির্ভরযোগ্য নয়। এর কারনে তারা ওজন কমানোর বিষয়গুলো আসলেই সঠিক কিনা তা যাচায় করার কথা বলেছেন।
তবে ভিন্ন গবেষনায় দেখা যায় যে, গ্রীন কফির ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ফ্যাটকে ভেঙে মেটাবলিজম রেট বাড়িয়ে দেয়। এতে ফ্যাট অনেকটায় কমে যায়। এর সাথে কিছুটা ব্যায়াম এবং খাবার নিয়ন্ত্রন করলে ওজন কমানো সম্ভব।
৪। কর্মক্ষমতা বাড়ায়
গ্রীন কফিতে ক্যাফেইন থাকে যেটা অবসাদ কমাতে সাহায্য করে। এর ফলে মানুষের কর্মক্ষমতা অনেকটায় বেড়ে যায়। অবসাদ না থাকার জন্য মন থাকে ফুরফুরে ও সতেজ। এছাড়াও গ্রীন কফি ক্ষুধা কমিয়ে দেয় এতে সময়ও বাঁচে আর কাজের গতিও বাড়ে।
কীভাবে খাবেন গ্রিন কফি
গ্রীন কফির অনেক স্বাস্থ্য উপকারীতা সম্পর্কে জানলাম। এখন বিষয় হচ্ছে একে খাবেন কিভাবে? কারণ একে সঠিন নিয়মে না খেলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাজারে কফির দানা এবং ডাস্ট দুটোই পাওয়া যায়। ৩০০ গ্রাম পরিমান পানিতে আনুমানিক ২০ গ্রাম গ্রীন কফির দানা রাতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন সকালে এই পানিকে আগে ছেঁকে নিন এর পর প্রায় ১০ মিনিট ধরে পানিটি ফুটিয়ে নিন। এই ফোটানো পানির সাথে মধু মিশিয়ে পান করুন। এর সাথে দারুচিনি গুঁড়াও মিশাতে পারেন। ভালো হবে যদি সকালে ঘুম থেকে উঠে হাটা বা ব্যায়াম করার পর কফি খান। কফি খাওয়ার ১৫-২০ মিনিট পর সকালের নাস্তা খেতে পারেন। পরিশেষে, গ্রীন কফির বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারীতা থাকার পাশাপাশি পার্শপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। তাই একে নিয়মিত গ্রহনের পূর্বে এর ডোজ সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা থাকা জরুরী। খুব ভালো হয় যদি আপনি আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে এর ডোজ নির্ধারন করে নেন। এতে আপনার শারীরিক কোন সমস্যার প্রেক্ষিতে কফি নিরাপদ হবে কিনা সেটাও জানতে পারবেন। সর্বোপরি নিরাপদ খাবার খান, সুস্থ থাকুন।
GIPHY App Key not set. Please check settings