in

মানসিক স্বাস্থ্যে টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাব

Mental health and testosterone hormone

মুহাম্মাদ, এক ৩৫ বছর বয়সী মধ্যবয়স্ক লোক। ঢাকায় দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করে আসছেন তিনি। তিনি অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন এবং ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তনের সমস্যায় ভুগছেন। তিনি ডাক্তার এবং মানসিক স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের কাছে গিয়েছিলেন কিন্তু এরপরও কোনো উপকার পাননি তিনি। কিন্তু তিনি জানতেন না যে, তার মানসিক সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে এক অপ্রত্যাশিত জায়গায়: তার নিজের দেহের হরমোনে। তার দেহে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক কম, যা তার ভেতর ডিপ্রেশন ও অ্যাংজাইটির জন্ম দিচ্ছে।

লো টেস্টোস্টেরন একটি শারীরিক অবস্থা যেটায় আজ আক্রান্ত অসংখ্য পুরুষ। এই গুরত্বপূর্ণ পুরুষ হরমোনের দেহে ঘাটতি বা ভারসাম্যহীনতার কারণে নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে সবার কাছে উপসর্গগুলো এক রকমভাবে দেখা দিবে না। টেস্টোস্টেরন লেভেল লো হলে নানা মানসিক ও শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এর কারণে ডিপ্রেশন ও অ্যাংজাইটি অনুভূত হয়। লো টেস্টোস্টেরন হরমোন নিয়ে আমার আগের লেখাটি পড়তে নিচের লিংকটি ভিজিট করুন।

টেস্টোস্টেরন ঘাটতির লক্ষণ ও চিকিৎসা

অনেক পুরুষ ভাবে লো টেস্টোস্টেরন কেবল তাদের যৌন জীবনেই প্রভাব ফেলে। তাদের যৌনকামনা ও বাসনা কমিয়ে দেয়, ইরেকশন হতে সমস্যা হয়। কিন্তু অনেকেই জানে না যে লো টেস্টোস্টেরনের কারণে মানসিক অবস্থারও পরিবর্তন হয়। পুরুষদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের টেস্টোস্টেরন লেভেল এমনিতেই কমতে থাকে। তবে কারো কারো খুব দ্রুত কমে যায়। এতে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয় যেমন ওজন বৃদ্ধি, বিছানায় সমস্যা এবং মানসিক অবস্থার ভারসাম্যহীনতা।

অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, টেস্টোস্টেরন নিউরোএক্টিভ স্টেরয়েড হওয়ার কারণে এটি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে, যার কারণে মুড ঘন ঘন পরিবর্তন হয়। লো টেস্টোস্টেরন লেভেলের সাথে ডিপ্রেশনসহ এরকম নানা অবস্থার সম্পর্ক আছে। কিছু কিছু গবেষণায় এমনকি দেখা গেছে যে যেসব পুরুষরা ডিপ্রেশনে ভোগে তাদের দেহে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম।

টেস্টোস্টেরন কি?

টেস্টোস্টেরন কীভাবে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে ভূমিকা রাখে তা নিয়ে বিস্তারিত জানার পূর্বে জানা প্রয়োজন টেস্টোস্টেরন জিনিসটা আসলে কি? টেস্টোস্টেরন একটি যৌন হরমোন। ডাকপিয়ন যেরকম চিঠি বহন করে, তেমনি আমাদের দেহের রসায়ন পরিবহন করে হরমোন। তারা দেহের এক অঙ্গ থেকে আরেক অঙ্গে, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ভ্রমণ করে। পুরুষের গঠন ও পুরুষালি বৈশিষ্ট্য প্রকাশে এর ভূমিকা অপরিহার্য।

টেস্টোস্টেরন তৈরির প্রক্রিয়া মস্তিষ্কে শুরু হয়, যেখানে এটি পিটুইটারি গ্রন্থিতে সংকেত পাঠায়। এই ছোট্ট গ্রন্থিটি টেস্টোস্টেরন সঠিক পরিমাণে তৈরি করতে অণ্ডকোষে (পুরুষ প্রজনন অঙ্গ) সংকেত পাঠায়।

লো টেস্টোস্টেরনের মানসিক লক্ষণ

অনেক সময় লো টেস্টোস্টেরন এবং ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলো মিলে যায়। যেমনঃ

  • খিটমিটে মেজাজ ও মুড সুইং।
  • যৌনকামনা কমে যাওয়া।
  • ক্লান্তি ও উদ্দীপনা না থাকা।
  • সামাজিক কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকা।
  • উদ্বিগ্ন বোধ হওয়া। মনোযোগ দরকার এমন কাজা করতে না পারা।
  • ঠিকমতো ঘুম না হওয়া, সবসময় ঘুমের প্রয়োজন বোধ করা।

আসলে কি ঘটছে দেহে?

গবেষকরা এখনও গবেষণা করে বের করার চেষ্টা করছেন যে টেস্টোস্টেরন আমাদের মানসিক অবস্থার ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলে। তবে দুটোর মধ্যেকার সম্পর্ক দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে লো টেস্টোস্টেরন মানসিক অবস্থা, চাপ এবং এমনকি ডিপ্রেশনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ একটি গবেষণার কথা বলা যায়। এই গবেষণায় অংশ নেয় নেদারল্যান্ডের ৬০০ জন ব্যক্তি। দেখা যায়, যাদের লো টেস্টোস্টেরন ছিল তাদের মধ্যে ডিপ্রেশনের মাত্রাও বেশী ছিল।

লো টেস্টোস্টেরনের বিভিন্ন লক্ষণ যেমন ক্লান্তি, অনাকর্ষণীয় বোধ হওয়া – ইত্যাদি মানসিকভাবে বেশ পীড়া দিতে পারে। এই মানসিক চাপের কারণে ব্যক্তির মধ্যে এক ধরণের নেতিবাচক চক্র দেখা দিতে পারে। যেমন, যার এনার্জি কম, সে এক্সারসাইজ করে না, ফলে তার ওজন বাড়ে, তার মন খারাপ লাগে এবং এক পর্যায়ে সে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়।

টেস্টোস্টেরন ঘাটতির কারণে যে মুড সুইং হয় সেটা কীভাবে ঠিক করবেন?

যেসব পুরুষরা লো টেস্টোস্টেরনে ভুগছেন এবং ফলশ্রুতিতে মুড সুইং, মানসিক চাপ ইত্যাদিকে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের জন্য আশা রয়েছে। বিভিন্ন মেডিকেশন ও লাইফস্টাইলে এ পরিবর্তন আনার দ্বারা আপনার অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব। আপনার জন্য একটা সংক্ষিপ্ত গাইড এখানে উল্লেখ করছিঃ

১. জীবনযাত্রায় পরিবর্তনঃ লো টেস্টোস্টেরনের সাথে স্থূলতা ও অলসতার সম্পর্ক আছে। এ জন্য এমন একটি জীবনযাত্রা অনুসরণ করতে হবে যেন পর্যাপ্ত ঘুমানো যায়, সূর্যের আলোর সংস্পর্শে থাকা যায়, নিয়মিত ব্যায়াম করা যায় এবং কম শর্করা ও চিনিযুক্ত খাবার খেতে হবে। কারণ এগুলো মনের অবস্থায় প্রভাব ফেলে।

২. মন খুলে কথা বলুনঃ সম্পর্কে সমস্যার কারণে লো-টেস্টোস্টেরন সম্পর্কিত চাপ বা ডিপ্রেশন ঘটে, তাহলে স্ত্রীর সাথে কথা বলুন। তার সাথে উন্মুক্তভাবে কথা বলুন। কারণ টেস্টোস্টেরন শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরণের ঘনিষ্ঠতাতেই প্রভাব ফেলে।

৩. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টঃ জীবনে চাপ খুব বেশী পড়লে সেটাও টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দিতে পারে। তাই স্ট্রেস বা চাপ সামলানো জরুরী। আপনার জীবন চাপে পরিপূর্ণ থাকলে লো টেস্টোস্টেরনের সাথে সম্পর্কিত মানসিক দিকগুলো নিয়ে কাজ করা কঠিন হবে।

মুসলিম হিসেবে আমাদের কর্তব্য ইসলামি জীবনযাপন করা। ইসলামে তাজকিয়া বা আত্মশুদ্ধিকে অত্যন্ত গুরত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদেরকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন পরিচালনা করতে হবে, স্ট্রেস ম্যানেজ করতে হবে নামাজ, তিলাওয়াত, জিকির ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে। জীবনে যা-ই ঘটুক না কেন, আমাদের অবশ্যই ইসলামের শিক্ষা মেনে চলতে হবে।

What do you think?

Written by শাহেদ হাসান

আমি লেখালেখি করতে বরাবরই ভালোবেসেছি। বর্তমানে গ্রন্থ অনুবাদ ও মৌলিক লেখার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন ব্লগেও লেখালেখি করছি। পড়াশোনা করছি রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

GIPHY App Key not set. Please check settings

Budget Friendly Sunscreen SPF

১০০০ টাকার মধ্যে খুব ভালো মানের ৫টি সানস্ক্রিন সম্পর্কে জানুন

8-great-tips-to-save-money-while-shopping

শপিংয়ে খরচ বাচানোর দুর্দান্ত ৮টি টিপস